অন্ধকারে চুপ করে টেবিলে মাথা নামিয়ে বসে আছে জয়ী। আজ গোটাদিন ধরে চেষ্টা করে গেছে কিছু একটা লেখা লিখে ফেলার। যেমন হোক তেমন! পাবলিসার থেকে আজও ফোন করেছিল তমালবাবু। ভীষণই বিরক্ত। আর হবে নাইবা কেন। গতবারের পূজো সংখ্যার লেখা প্রায় শেষ মুহূর্তে গিয়ে জমা দিয়েছিলো জয়ী। তারপর টুকটাক যেকয়টা গল্প বা কবিতা লিখেছে কোনোটাই তমালবাবু প্রকাশ করতে চান নি। ওগুলোর গুনগতমান নাকি বড্ড খারাপ। তাই, এবারের পূজোসংখ্যার নাম বাছাইয়ে যখন ওর নাম নির্বাচিত হয়েছিল, তখন অনেকেরই ভুরু কুঁচকে ছিল। কিন্তু নৈতিকের জোরাজুরিতে সেসব ধোপে টেকে নি। জয়ী নিজেও নিমরাজি ছিল যেন। কি জানি এবারও যদি…
আজকাল কি যেন হয়েছে ওর। মন লাগে না কিচ্ছুতে। তাগিদ অনুভব করে না আর আগের মতো। আগের মতো গাইতে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে না আর। নতুন করে কিছু ভাবতে চায় না জয়ী। জীবনধারণের যাবতীয় উপকরন, সাজসজ্জা, প্রাচুর্য্য থাকলেও জয়ী তাতে প্রাণ খুঁজে পায় না যেন। জগতটা যেন সুনির্দিষ্টভাবে দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার একমাত্র উত্তরাধিকারী জয়ী। আর অন্যদিকে নিজেকে জড় বিশেষ ভাবা এই নতুন জয়ী। আর এই দুইয়ের মধ্যে যে সূক্ষ্ম অথচ শক্ত টানটান হয়ে আছে একটা যোগসূত্র, তারই নাম নৈতিক। গত এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে নৈতিকের সাথে আলাপ ওর। সেদিন বাবাকে রাস্তার ধার থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর সময় যতটা রক্তে জয়ী ভেসে গিয়েছিল, ঠি ক ততটাই রক্ত লেগেছিলো নৈতিকের জামায়। মাঝে মাঝে ভাবে ও, সেদিনটাই যদি না আসতো ওদের জীবনে।
ছোটো থেকে জয়ীর যাবতীয় আবদার মেনে চলতো জয়ন্তবাবু, অন্তত চেষ্টার ত্রুটি রাখতেন না। আহা, মা মরা একমাত্র মেয়ে। একটু জেদি, একটু এরোখা ঠি কই.. কিন্তু মনটা বড্ড ভালো। বাবার সাথে প্রতিটা ছোটোখাটো ইস্যুতে ঝগড়া করতো জয়ী, আসলে ইচ্ছে করে করতো। বাবার ভয় পাওয়া মুখ, পালিয়ে বাঁচতে চাওয়া মুখ .. জয়ীর শাসন, বকুনির সামনে বাবার অসহায়তা, এসব জয়ীকে আনন্দ দিতো। জিতে যাওয়ার আনন্দ। একবারও মনে হতো না, বাবা আসলে নিজে হেরে গিয়ে ওকে জিতিয়ে দিতো প্রতিবার। রাতে ঘুমের মধ্যেও টের পেতো ও, বাবা নি:শব্দে ঘরে ঢুকে কখনও চাদরটা টেনে দেওয়ার বা কখনও এসির ঠাণ্ডাটা কমিয়ে দেওয়ার অছিলায় জয়ীকে দেখে যেতো, কখনও পাগলি মেয়ে আমার বলে মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিতো।
বাবার কাছে জয়ী সব আবদার করতে পারলেও একটা ক্ষেত্রে কিছুতেই সে বাবাকে মানাতে পারতো না। সেটা হলো ওর কোনো নতুন বইয়ের পাবলিশ হওয়ার দিন সংবর্ধনা দেওয়ার যে আয়োজন হতো, তাতে কোনওভাবেই জয়ন্তবাবুকে সঙ্গী হতে রাজি করাতে পারতো না। বললেই উনি বলতেন, সন্তানের সাফল্য বাবা মা কে দূর থেকেই দেখতে হয়। কাছ থেকে চাক্ষুস করলে তাতে নজর লেগে যায়। প্রগতিশীল বাবার মুখ থেকে বারবার একথা শুনলে কখনও রাগ করেছে কিংবা কখনও হাসিতে গড়িয়ে পড়েছে জয়ী, কিন্তু জয়ন্তবাবুকে মানাতে পারে নি কোনোভাবেই। কি একটা অদ্ভূত কষ্ট কাজ করতো ওনার চোখে মুখে। হাজার প্রশ্ন করেও জয়ী তার উত্তর খুঁজে পায় নি।
সেদিন বেলা করে বিছানা ছাড়ার মুহূর্তে প্রবালের থেকে ফোনটা পেয়েছিল জয়ী। আগামী পূজোসংখ্যায় ওর একটা লেখা মনোনীত হয়েছে। প্রকাশনী সংস্হার পক্ষ থেকে ঐদিন যাদের যাদের প্রবন্ধ, কবিতা বা অন্যান্য কিছু প্রকাশ করা হচ্ছে, তাদের নিয়ে একটা গেটটুগেদারের ব্যবস্হা করা হয়েছে। লেখক লেখিকা পরিচিতির আয়োজন বলা চলে।
আচমকাই সব স্হির হওয়াতে ওরা ফোনে ফোনেই সবাইকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। প্রবাল ঐ সংস্হার একজন হিসাবে তাই কিছুটা ব্যাক্তিগত আর কিছুটা ফরম্যালিটি করেই জয়ীকে সুখবরটা দিয়েছিল। গত তিন বছর ধরে ওরা একে অপরের সাথে যুক্ত.. বন্ধুত্ব এবং পেশাগত ক্ষেত্রে। বইয়ের জগতে পুরোপুরি নিজেকে সঁপে দেওয়ার সময় থেকেই প্রবাল আর জয়ী পরষ্পরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলো। সাধারণত ওর সবকটা এই ধরনের অনুষ্ঠানে প্রবালই সঙ্গী হয় , আর তেমনটাই হয়ে এসেছে। কিন্তু সেদিনটা ছিলো একদম আলাদা।
সেদিন ছিলো জয়ীর জন্মদিন। আর তাই জন্মদিনের উপহার স্বরূপ যা কোনোদিন করে উঠতে পারে নি, সেটাই করবে বলে মনস্হির করলো। বিকেলে প্রবাল গাড়ি নিয়ে আসবে নিজে। সময় নেই বেশি। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নতুন জামা পড়ে আর সামান্য প্রসাধন করে ঘরের বাইরে এলো জয়ী। লম্বা টানা বারান্দার এককোনায় ঠাকুরদার প্রিয় ইজিচেয়ারটায় বাবা আধশোয়া হয়ে রেডিও শুনছে নিবিষ্ট চিত্তে। জয়ী সামনে গিয়ে বাবাকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালো। জয়ন্তবাবু দুচোখ মেলে দেখলেন তার একমাত্র গুণী কন্যাকে। রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী । ভুবন ভোলানো হাসিতে মাতৃহারা মেয়েটা সব কষ্ট, না পাওয়াকে আড়াল করে রেখেছে যেন। নিজের অজান্তেই চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠলো তাঁর। জয়ীর চোখ এড়ালো না বাবার এই কষ্ট। বাবার পায়ের কাছে বসে হাঁটুতে মাথা রাখলো সে। তারপর খালি গলায় গেয়ে উঠলো…
“ এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ..
আমার মুক্তি ধূলায় ধূলায় ঘাসে ঘাসে,
এই আকাশে….”
গান শেষ হওয়ার পর অনেকক্ষণ চুপ থেকে জয়ন্তবাবু আলতো করে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। জানতে চাইলেন, কি আবদার! কিছুটা যেন চমকে উঠলো জয়ী। বাবা কি তবে বুঝেছে সে কি চায়।
খানিকটা লজ্জা পেয়ে মুখ নীচু করলো। জয়ন্তবাবু হাসলেন। তারপর বললেন, বেশ। তুই তৈরি হয়ে নে, কখন গাড়ি আসবে বলিস, আমি রেডি থাকবো। যাবো আজ না হয় এই পাগলিটার আবদার রাখতে।
জয়ীর আনন্দ ধরে না আর। থ্যাংকু.. থ্যাংকু সোওওও মাচ বাপি.. বলে বাবার গলা জড়িয়ে ধরলো সে।
যথাসময়ে প্রবাল গাড়ি নিয়ে এসে পড়লে বাপবেটিতে তৈরি হয়ে নীচে নেমে এলো। গন্তব্য হালিশহরের কাছে একটি সাংস্কৃতিক সদন। বাইপাস দিয়ে গাড়ি ছুটছিল। প্রবাল নিজেই চালাচ্ছিলো। গত ১০ বছর ধরে শহরের এমাথা থেকে ওমাথা গাড়ি নিয়ে ছুটছে সে। কোনোদিন কোনো অসুবিধার কিছু হয় নি। আজও তাই অভ্যাসমতোই হাসি গল্প মজা করতে করতেই চলেছে।
আচমকা সামনে একটা ছোটো মোটরচালিত ভ্যান পড়ে যাওয়াতে সেটাকে কাটিয়ে আবার রাস্তায় উঠতে গিয়েই বিপদটা ঘটে গেলো। উল্টোদিক থেকে তীব্র ভাবে এগিয়ে আসা একটা দশচাকার দৈত্যসদৃশ ট্রাকের মুখোমুখি পড়ে গেলো ওদের গাড়িটা। তীব্র হাতে স্টি য়ারিং টা ঘুরিয়ে রাস্তার অন্য পাশে সরার চেষ্টা করতেই ডিভাইডারে সজোরে ঢাক্কা খেয়ে রাস্তার একপাশে উল্টে গেলো। ডিভাইডারে ঢাক্কার তীব্রতায় ওদের গাড়িটা রাস্তার কালো পিচ ধরে ঘেস্টে গেলো কিছুটা। জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্ত অবধি জয়ী দেখেছিলো বাবা ওকে আগলাতে নিজের সিটবেল্টের লকটা খোলার চেষ্টা করছিলো, যাতে পিছনের সিটে বসা জয়ীকে ছিটকে পড়া থেকে বাঁচাতে পারে।
…….. সারা শরীরে তীব্র যণ্ত্রনা নিয়ে জয়ী যখন চোখ খুললো, তখন চারপাশে কালো মাথার ভীড়। কি ঘটেছিল তা বুঝতে কিছুটা সময় নিলো সে। কানে শোনা চোখে দেখা আর মস্তিস্কের মধ্যেকার চিন্তা করার সূত্রটা ছিঁড়ে গেছে যেন। তারমধ্যেই চোখে পড়লো প্রবালের রক্তে ভেসে যাওয়া শরীরটা। বাবা…. হঠাৎ মনে পড়লো বাবা কই… বাবা কোথায় গেলো… এদিক ওদিক তাকাতে খেয়াল করলো অনতিদূরে একজন হাল্কা নীল রং’র শার্ট আর জিনস পড়া কেউ তার বাবাকে প্রাণপনে স্ট্রেচারে তোলার চেষ্টা করছে। হাকড়পাকোড় করে ছুটে গেলো জয়ী সেদিকে… বাবা… বাপি … বাপি …. বাপি প্লিজ … চোখ খোলো বাপি… আমি জয়ী…
ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে খানিক ধমকের সুরে বললো, ওনাকে তুলতে আগে হেল্প করুন আমায়। এখন একমুহুর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। সম্বিত ফিরে পেলো যেন জয়ী।
তারপর কোনোভাবে প্রবাল আর জয়ন্তবাবুকে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্হা করে জয়ীকে ওর গাড়িতে করেই হসপিটালে নিয়ে যায় ছেলেটি। যাবতীয় এ্যমারজেন্সি ফরম্যালিটি সম্পন্ন করে জয়ীর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে। প্রবাল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর জয়ন্তবাবু পাঁচদিনের টানাপোড়েন শেষে জয়ীকে চিরতরে একলা করে চলে যান।
….. নৈতিক সেই থেকে জয়ীর সাথে। জয়ীকে ডাক্তার দেখানো, অ্যাক্সিডেন্টের ভয়াবহ স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাউন্সিলিং করানো থেকে শুরু করে লেখালেখির জগতে ব্যস্ত করানোর সবরকমের চেষ্টা করে যাওয়া, নৈতিক বাকি রাখে নি কিছুই। কিছু জিজ্ঞাসা করলে হেসে বলে, কেন একজন মানুষ আরেকজন মানুষের জন্য বিনাস্বার্থে কিছু করতে পারে না? জয়ী চুপ করে থাকে।
আজকাল খুব প্রয়োজন না পড়লে কথা বলে না। দূর সম্পর্কের এক পিসতুতো দাদা আর তার ফ্যামিলি এসে থাকে এখন ওদের বাড়িতে। নীচতলাটা খুলে দিয়েছে জয়ী ওদের জন্য। দাদার তিন বছর বয়সী ছোট্ট পুতুলের মতো মেয়েটাকে নিয়েই যতটুকু বেঁচে থাকার চেষ্টা করা।
মাথা কাজ করে না … চিন্তারা দানা বাঁধে না এখন আর।
কিন্তু নৈতিক ছাড়বে না। জোর করে ধরে বেঁধে লিখতে বসাবেই। রোজ অফিস ফেরার পথে এসে একবার দেখে যায় কতদূর লেখা এগোলো। মাঝেমধ্যে ভীষণ বিরক্ত লাগে জয়ীর। একি নাছোড়বান্দা ছেলে রে বাবা… কিন্তু কোনোকিছুরই ধার ধরে না সে ছেলে। কতবার দাদা বা বৌদিকে দিয়ে মিথ্যা বলে পাঠিয়েছে যে, সে বাড়িতে নেই। কিংবা তার শরীর ভালো নেই। তবুও নৈতিকের জেদের কাছে হার মেনে গিয়েছে বারবার। আগামি মাসের দশ তারিখে নৈতিকের বিয়ে ঠি ক হয়েছে। পাত্রী নৈতিকের ছোটোবেলার বান্ধবী, দোয়েল। ভারি মিষ্টি মেয়ে। একদিন এসেছিলো নৈতিকের সাথে। একথা সেকথার পর জয়ী একসময় বলেছিল, হ্যাঁ রে নৈতিক, তুই যে সর্বক্ষণ আমার খোঁজখবর নিস, গার্জেনগিরি ফলাস, তো এবার কি হবে। তোর বৌ যদি রাগ করে, মুখ হাঁড়ি করে!
ওমা, জয়ীকে অবাক করে দিয়ে দোয়েল দোয়েলপাখির মতো খিলখিলিয়ে উঠে জবাব দিলো.. আমি কেন মুখ হাঁড়ি করবো? করবে তো তোমার ভাই।
জয়ীর অবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে দোয়েল আবার বললো.. আরে নৈতিকের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে। ও অফিসের কাজ সামলাবে আর আমি তোমাকে ! বারে, স্বামীর কাজের চাপ অর্ধেক করতে হবে না? তাহলে আর কি অর্ধাঙ্গিনী হলাম!!
জয়ী সেদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল রাতের অন্ধকারে বালিশে মুখ গুঁজে। যে দামাল জেদি মেয়েকে নিয়ে বাবার চিন্তার শেষ ছিলো না, আজ দুজন অনাত্মীয় মানুষ যেন বাবার আশির্বাদ হয়ে তার কাছে ফিরে এসেছে।
…… চোখের জলে কখন যেন রাইটিং প্যাডটার কোনা ভিজে গেছে। চোখ মুছে উঠে বসলো জয়ী। বোতলের ঢাকনা খুলে একটু জল খেলো। টেবিলের ওপর রাখা বাবার হাসি মুখের ছবিটার দিকে একবার তাকালো।
তারপর নতুন উদ্যোমে আবার লেখার জন্য পেনটা তুলে নিলো সে। চোয়াল শক্ত করলো… মনকে শান্ত করলো.. হারিয়ে ফেলা জেদটাকে আস্তে আস্তে মাথা তুলতে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। পারতেই হবে ওকে… যেভাবেই হোক আজ রাতের মধ্যে কিছু একটা লেখা লিখতেই হবে ওকে। সারা শরীরে কাঁপুনি দিলো। জেদ আর একরোখা মনোভাবটা তার অস্তিত্ব জানান দিলো। শব্দরা একে একে এসে জুড়তে লাগল… চিন্তার তারগুলোতে অনুভব আর ভালোলাগার সুর তুলতে লাগলো মস্তিষ্কের প্রতিটা কোষ। পারবে… নিশ্চই পারবে সে! বাবা বলতো, সন্তানের সাফল্য বাবা মা কে দূর থেকেই দেখতে হয়। সফল হতেই হবে ওকে। বাবা দেখছে যে । সে জয়ী…. নিজের অপারগতা, নিজের যাবতীয় দূর্বলতা, নিজের ভিতরের পরম আত্মাকে জয় করবে সে নিজের চেষ্টায়।
শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়।
মন ছুঁয়ে গেল, নতুন উদ্যমে পথচলার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় এই লেখায়
ভালো , বেশ ভালো ।
বাহঃ