থিম

প্রসূন রঞ্জন দাসগুপ্ত
4.9 রেটিং
3371 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 7 , গড়ে : 4.9]

পাঠকদের পছন্দ

অন্ধকারে ঝড়ের বেগে বাইপাস ধরে আসছে একটা গাড়ি। গাড়ি চালাচ্ছে সুরঞ্জন, বয়স আনুমানিক চল্লিশ পেছনে রয়েছে তার নয় বছরের মেয়ে সুস্মিতা ও পাশের সিটে স্ত্রী তানিয়া। মন্দিরতলায় একটা পার্টি থেকে আসছে তারা। একটু বেশিই রাত হয়ে গেছে। ড্যান্সপার্টি শেষ হতে রাত বারোটা পার হয়ে গেছে। ওদের ফ্ল্যাট যদিও বারাসাত কলোনিমোড়ে কিন্তু আজ ওরা কাকার ফ্ল্যাটে উঠবে ওর অসুস্থ বাবা ও মা  এখন ওখানেই আছেন । আসলে পার্কসার্কাস থেকেই ওর মেয়ের পেটে ব্যথা করছে , তাই সুরঞ্জন একটু জোরে ড্রাইভ করছে। বিল্ডিং মোড়ের কাছে একটা Pay & Use Toilet দেখে মেয়ের অনুরোধে সুরঞ্জন গাড়ি থামালো। ওর স্ত্রী মেয়ে কে নিয়ে ভেতরে গেলো সুরঞ্জন গাড়িতে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। হালকা মাথা ঝিমঝিম করছিলো, বাইরে বেশ একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, কালকে কালীপুজো গেছে, অদূরে টুক টাক বাজি পুড়ছে, শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, সুরঞ্জনের বেশ ভালো লাগছিলো। ও ভাবলো রাত হচ্ছে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দি, কিন্তু ফোন বের করে দেখলো তাতে সিগন্যাল নেই, সে ফোন পকেটে রেখে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো। হঠাৎ ও চমকে গিয়ে দেখলো প্রায় ওর মেয়ের বয়সী একটা বাচ্চা মেয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও মিটিমিটি হাসছে। বাচ্চা মেয়েটাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর, একটা টুকটুকে লাল ফ্রক পরে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, যদিও মাথার চুল অবিন্যস্ত, চোখের কাজল যেন ঘেঁটে গেছে ও চোখ দেখলে মনে হচ্ছে কতদিন যেন ঘুমায়নি। 

                 সুরঞ্জন জিজ্ঞাসা করলো এই মেয়ে তোমার নাম কি ? তোমায় দেখে তো ভালো ঘরের মেয়ে বলে মনে হচ্ছে , এতো রাতে এখানে কি করছো ? তোমার বাড়ি কোথায় ? বাবা মা ই বা কোথায়। মেয়েটি কিছুই বললো না শুধু মিটিমিটি হাসতে লাগলো। মেয়েটির চোখ দুটিতে এতই মায়া ছিল যে সুরঞ্জন যেন চোখ ফেরাতে পারছিলো না। হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো। সুরঞ্জন তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়লো ও মেয়েটিকে বললো উঠে যায় নাহলে ভিজে যাবি তো ? কিন্তু মেয়েটি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এরমধ্যে ওর বৌ ও মেয়ে এসে গেছে , দৌড়ে এসেছে কিন্তু তাও অনেকটাই ভিজে গেছে। উঠে সুরঞ্জন কে বললো কিগো দাঁড়িয়ে আছো কেন তাড়াতাড়ি চালাও, একে মেয়ের পেট ঠিক নেই এরমধ্যে জ্বর এলে আর দেখতে হবেনা। সুরঞ্জন বললো দেখো ওই বাচ্চা মেয়েটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে, ওকে বললাম গাড়িতে এসে বসতে, কিন্তু এলো না, তানিয়া বললো কোন মেয়ে ? কেউ তো নেই। সুরঞ্জন ও তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না , ভাবলো মনে হয় চলে গেছে। 

               আর একটু এগোতেই ও দেখতে পেলো দত্তাবাদ এর কাছে 7 – 8 জন ছেলে বাইক নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রেস্ করছে, সুরঞ্জন মনে মনে  ভাবলো হয় এরা নিজেরা মরবে নাহয় লোককে মারবে। তাও ও সাবধানে চালাতে লাগলো, বেঙ্গল কেমিক্যাল ছাড়াতেই হঠাৎ দুটো বাইক সামনে এগিয়ে দুম করে সজোরে ইউ টার্ন নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে এলো, সুরঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ডানদিকে চেপে এগোতে গেলো।  হঠাৎ দেখলো সামনে রাস্তার মাঝখানে ওই লাল ফ্রক পড়া মেয়েটা দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুরঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষলো কিন্তু বৃষ্টির বধ্যে ছোট গাড়ি স্কিড্ করে পাশের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে গেলো। 

              সুরঞ্জনের সিটবেল্ট বাঁধা ছিল। কিন্তু ও বুঝতে পারলো ওর বৌ আর মেয়ে অচেতন, ওর মাথা ফেটেছে, রক্তে চোখ জ্বলছে কিন্তু তারমধ্যে দেখলো ওই মেয়েটা গাড়ির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখের অদ্ভুত হাসিটা তখন রয়েছে। সুরঞ্জন জ্ঞান হারালো।       


বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধ্যায় দমদমের সার্বজনীন ক্লাবের বসার ঘরে গভীর আলোচনা চলছে।  ক্লাবের সভাপতি হারুবাবু চিন্তিত ভাবে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে বললেন ” তোরা যা বলছিস তাতে তো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে , এত বছরের কালীপুজো আমাদের , কত প্রাইজ  পেয়েছি আমরা , আর সেই পুজোর নাকি বাজেট হচ্ছেনা। অতীতে যেখানে আমরা দক্ষিণের ” স্বামীনারায়ণ মন্দির “, গুজরাটের ” সোমনাথ মন্দির ” এমনকি ” অক্ষরধাম “ও ” স্বর্ণ মন্দিরের ” আদলে প্যান্ডেল বানিয়েছি সেখানে সাদামাটা ভাবে পুজো করতে হবে ? না না এ হতে পারে না ? তোরা ঠিক করে চেষ্টা করছিস না।  এতো স্পনসর ছিল আমাদের, তাদের সবার সাথে কথা বল। এরকম ভাবে হয় নাকি ?

            ক্লাবের কোষাধক্ষ্য রতন এর উত্তরে বললো বাজারের যে কি খারাপ অবস্থা তুমি জানোনা কাকু, তুমি অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী, সময়মত পেনশন ঠিক ঢুকে যায় এদিকে তোমাদের সংস্থা যে কতজনকে বসিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সে খবর রাখো ? দীপক কাকুর ছেলে অনিমেষ ” গেট এয়ারওয়েজ ” এর পাইলট ছিল, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিমার খরচ একা ওই দিত, এবছর ওদের সংস্থা ব্যবসা গুটিয়েছে, ও এখনো কোথাও জয়েন করতে পারেনি, যেখানেই যায় অর্ধেক স্যালারি অফার করে, ডিপ্রেশনে চলে গেছে ছেলেটা। ওর কাছ থেকে কি চাঁদা চাইতে যাবো ? আমাদের সবচেয়ে বড় স্পনসর ছিল ” সুপার্ব মোটরস ” ও ওই ফোনের সার্ভিস সেন্টার, ওরা মিলে প্রত্যেক বছর লক্ষাধিক টাকা দেয়।  এ বছর গাড়ি শিল্পে এমন মন্দা যে ওরা বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে , ওরা আগেই আবেদন জানিয়েছে যে এবছর সেরকম কিছু পারবে না আর সার্ভিস সেন্টার তো উঠেই গেছে , আসলে ওদের সংস্থাই উঠে গেছে । এই একই সমস্যা ঘরে ঘরে। আমাদের ও বাড়িতে একই অবস্থা। এছাড়া আমাদের ক্লাবের গায়ে তো বরাবরই বিরোধী পার্টির তকমা লেগে রয়েছে তাই সরকারি সাহায্য ও সেরকম কিছু পাওয়া যায় না, আর তাছাড়া দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে যেরকম অনুদানের বন্যা বয় কালীপুজোর ক্ষেত্রে তা হয় না, এখন তুমিই বোলো আমরা কোথায় যাবো ? আর তাছাড়া আমাদের ক্লাবের এরিয়ার বেশিরভাগের লোকই পুরোনো বাসিন্দা, অনেকদিনের চেনা বন্ধুস্থানীয় , চাঁদার জন্য জোরজুলুম তো করা যায় না।         

হারুবাবু বললেন না না আমরা কোনোদিনই চাঁদার জন্য কারোর ওপর জোরজুলুম করিনি , সবাই আন্তরিক ভাবে যা দেয় ও স্পনসরশিপ এর টাকায় আমাদের হয়ে যায়। কিন্তু তোরা যা বলছিস তা তো গভীর চিন্তার বিষয়।  আমি বুড়ো মানুষ টিভি ও নাতি- নাতনি কে নিয়ে থাকি,সত্যিই এত খবর জানতাম না। কিন্তু রতন, সুজয় তোরা একটু দেখ, যারা প্রত্যেকবার আমাদের ক্লাবের পুজো দেখে আসছে তারা কি বলবে ? খুব ছোট করে পুজো করলে ক্লাবের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পরে যাবে যে।  

          সুজয় বাবু বললেন আপনি ঠিকই বলেছেন কাকু , সেই চিন্তাতেই তো আমরাও অস্থির হয়ে যাচ্ছি। কি করবো না করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। বড় না হোক ছোটোর মধ্যে একটা কিছু থিম ঠিক করতে না পারলে কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাবে ব্যাপারটা। 

          রতন বললো আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ও তো কত মন্দির আছে, কলকাতাতেই ঠনঠনিয়া, কালীঘাট, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি আছে, এগুলোর মধ্যে কিছু একটা করা যায় না সুজয় দা ?

         সুজয় বাবু বললেন  এটা তুই ঠিকই বলেছিস রতন, কিন্তু আমাদের পুজো তো আর নতুন না, কলকাতার ও আশেপাশের অনেক কিছুই আমরা আগে করেছি, আর তাছাড়া অল্প বাজেটে আমরা এরকম কোনো মন্দিরের বা অন্য কোন স্থাপত্যের ডিটেলিং এত কম বাজেটে হবে না, শেষে একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে যাবে তারথেকে অন্যরকম কিছু একটা করতে পারলে ভালো হত যেমন আমি ভাবছিলাম কোনো পুরোনো জমিদার বাড়ির আদলে করবো , সবাইকে জানিয়েওছিলাম কিন্তু এত অল্প সময়ে কিভাবে সেরকম একটা বাড়ীর খোঁজ পাবো জানিনা। এখন দেখছি আন্দাজেই কিছু একটা করতে হবে।   

এবার ক্লাবের তরুণ সদস্য সৌতিক বলে উঠলো, আমি হয়ত এরকম একটা বাড়ির সন্ধান দিতে পারি। 

একথা শুনে সবাই চমকে উঠলো। সুজয় বললেন, কোন বাড়ির কথা বলছিস একটু খুলে বল। সৌতিক বলল আরে আমার বৌদির কাছে শুনেছিলাম   ওদের পূর্বপুরুষেরা নাকি মির্জাপুরের জমিদার ছিলেন , সেখানে নাকি বৌদিদের বিরাট বাড়ি রয়েছে , যার ভেতরে হয়ত মন্দির ও ছিল , এখন পুরোটাই কনডেম্ড কেউ থাকে না। বৌদির মা বাবা তো কাঁকুড়গাছিতে একটা হাইরাইজে একটা ফ্ল্যাটে থাকেন, আর এক জ্যাঠা ও এক কাকা আছেন তবে ওনারা দুজনেই সপরিবারে বাইরে থাকেন। তো বৌদির বাবাকে বলে ওই বাড়িতে একবার গিয়ে দেখবে নাকি ? 

            হারুবাবু বললেন মির্জাপুর মানে তো উত্তরপ্রদেশে ? এখন অত দূরে কে যাবে ?

           সৌতিক বললো না না জেঠু, এ মির্জাপুর হল আমাদের হুগলির মির্জাপুর, সিঙ্গুরের কাছে , আমিও প্রথমে নামটা শুনে অবাকই হয়েছিলাম। দমদম থেকে ডানলপ হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ঘন্টা দেড়েকের পথ।  এছাড়া ট্রেনেও যাওয়া যায়। তো কি বলছো বৌদির সাথে কথা বলবো ?

            সুজয়বাবু বললেন হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চই কি বলো সবাই ? , এত কাছে যখন একবার ঘুরেই আসা যাক না। সবাই একযোগে সম্মতি জানালো। সুজয়বাবু  বললেন তোর বৌদি এখন কোথায় আছে ? একবার কি কথা বলা যাবে ? বুঝতে তো পারছিস সময় তো বেশি নেই। সৌতিক বললো দাড়াও এখনই ফোন করে নিচ্ছি। 

            সৌতিকের বৌদি বিনীতা সেই সময়ে বাবার বাড়িতেই ছিল। সৌতিকের ফোনে এই প্রস্তাব শুনে সে বেশ চমকেই গেলো, বললো দাড়াও বাবাকে জিজ্ঞেস করে ফোন করছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফোন এসে গেলো, বৌদির কথা শুনে সৌতিক বললো , বুঝলে রতন দা, সুজয় দা বৌদি বাপের বাড়িতেই আছে , আমার কথা শুনে নিজের বাবার সাথেও কথা বলেছে , বৌদির বাবা আমাদের প্রস্তাব শুনে বেশ আগ্রহী হয়েছেন , এবং যদি সম্ভব হয়ে পরের রোববার আমাদের দেখা করতে যেতে বলেছেন। 

          হারুবাবু বললেন বাহ্ খুবই ভালো কথা তাহলে রতন, সুজয় তোরা রোববার একটু চলে যাস, আমার গাড়িটা  নিয়ে যাস আর সৌতিক তোর বৌদিকে কিন্তু থাকতে বলিস বাবা ওখানে।  


পরের রবিবার সকাল দশটায় রতনরা সৌতিক কে নিয়ে কাঁকুড়গাছিতে ওর বৌদি বিনীতার বাপের বাড়িতে পৌঁছলো। বিনীতা তার স্বামী অর্থাৎ সৌতিক এর দাদা সৌভিক কে নিয়ে আগেরদিন রাতেই সেখানে চলে এসেছিলো। কাঁকুড়গাছির মতন জায়গায় বিলাসবহুল হাইরাইজে 17 তলায় 2200 বর্গফুট এর ফ্ল্যাট এ থাকেন বিনীতার বাবা সমরেশ বাবু। ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবে ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ও বিত্তের চাপ সুস্পষ্ট। রতন ও সুজয় এসব দেখে বেশ কুন্ঠিত বোধ করছিলো। কিন্তু পরে সমরেশ বাবুর সাথে কথা বলে সেই আড়ষ্টতা একেবারেই চলে গেলো।  অত্যন্ত অমায়িক মানুষ, ওদেরকে সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। জানা গেলো যে সত্যিই মির্জাপুর-বাঁকিপুর এ ওনাদের পৈতৃক ভিটে ছিল, ওনারা জমিদার ছিলেন না কিন্তু বংশপরম্পরায় ব্যবসায়ী পরিবার ছিলেন বলে অর্থের অভাব ছিল না, এবং আশপাশের লোকের কাছে ওনার বাবা ঠাকুরদা জমিদারের সম্মান ই পেতেন। সেখানে ওনাদের বিরাট বাড়ি ছিল, নাটমন্দির সহ। সমরেশবাবুর ঠাকুরদা একবার ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। বাড়ি ঘর নিলাম হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছিলো। তখন তিনি সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরে বিখ্যাত ডাকাতে কালী মন্দিরে মানত করেন ও তারপরেই ওনাদের অবস্থা আবার ফেরে। তারপর থেকেই উনি প্রত্যেক বছর বাড়িতে কালীপুজোর আয়োজন করেন। দীর্ঘদিন সে পুজো চলেছিল। সেই পুজোর বিশেষ ব্যাপার হল কালীমূর্তি হত  ওই পুরুষোত্তমপুরের ডাকতে কালীমূর্তির আদলে। 

সৌতিক জিজ্ঞাসা করলো সেই পুজো কি এখনো হয় নাকি মেসোমশাই ?

সমরেশ বাবু বললেন না গো সেই পুজো দীর্ঘদীনই বন্ধ, আসলে আমার মা চলে যাওয়ার পর থেকেই আর পুজো হয়না। 

সুজয় বললো সেকি ? এতদিনের ঐতিহ্যবাহী পুজো বন্ধ হয়ে পরে রয়েছে। 

সমরেশ বাবু খানিক্ষন চুপ থেকে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন আসলে এই পুজোর সাথে আমাদের একটা খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমার 12 বছর বয়সে কালীপুজোর পরের দিন আমার মা মারা যান। হয়ত আগের দিনের প্রচুর কাজের ধকল তার নির্জলা উপবাস করা শরীর নিতে পারেনি , মাথা ঘুরে ওপর থেকে নিচে পরে যান। এর পর থেকেই আমাদের পুজোর উৎসাহে ভাঁটা পরে। বাবাও কেমন একটা হয়ে যান , তাও উনি যতদিন ছিলেন ততদিন খানিকটা ছোট করে হলেও পুজো হয়েছে। উনি চলে যাওয়ার পর থেকে আর হয়নি। আমরা তিন ভাই-ই টাইলস-মার্বেল এর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমার শো-রুম উল্টোডাঙায়, আমার দাদা সুবীরেশ থাকে গুজরাটে। জানেন ই তো গুজরাট ও রাজস্থান হলো এই ব্যবসার আঁতুর ঘর। ও ঐদিক থেকে সাপ্লাই এর ব্যাপার টা দেখে। প্রধানত ওর উদ্যোগেই আমাদের এই ব্যবসায় আসা। আর আমাদের ভাই সোমনাথ উত্তরবঙ্গের মেয়েকে বিয়ে করে শিলিগুড়ি তেই সেটল করেছে , ওখানে ওর বিরাট শো-রুম। আমাদের কারোর ই আর ওই মির্জাপুরের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়না , যদিও আমাদের তিনজনের কাছেই চাবি রয়েছে। দুজন লোক ও রাখা আছে দেখাশোনার জন্য কিন্তু কতটা দেখে জানা নেই , আস্তে আস্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে বাড়িটা। 

                    উনি উঠে গিয়ে এক সেট চাবি নিয়ে এসে সৌতিক এর হাতে দিয়ে বললেন , তোমরা যাও, ভালো করে ঘুরে দেখো , কিন্তু সাবধানে যাবে, সাপ -খোপের আস্তানা হতে পারে। তোমরা যদি সত্যিই ওই বাড়ি ও বাড়ির ঠাকুরের আদলে মণ্ডপসজ্জা ও পুজো করতে পারো আমি খুব খুশি হবে, মনে হবে যেন আমার ছোটবেলাটা তোমরা ফিরিয়ে এনেছো। যাইহোক দুপুরে কিন্তু খেয়ে যেও, খাসির মাংস ও চিতল মাছ আনিয়ে রেখেছি। 

                    ওরা সমস্বরে বলে উঠলো আরে এসবের আবার কি প্রয়োজন ছিল। ফেরার সময় সুজয় জিজ্ঞেস করলো কিরে সৌতিক কবে যাবি বল ? সৌতিক বললো দেখো সুজয়দা জোট তাড়াতাড়ি সম্ভব চলো , শুনছি তো পুজোয় বৃষ্টি হতে পারে , তাহলে সব মাটি হবে যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় ততই মঙ্গল। রতন বলছিলো দারা তো ঝন্টুকে একটা ফোন করি , ও বলছিলো ওদিকে কি একটা কাজ আছে ওর। 

                  সার্বজনীন ক্লাবের অন্যতম সদস্য সুব্রত ওরফে ঝন্টুর একটা ম্যাটাডোর আছে, সেটাতে বিভিন্ন মাল সাপ্লাই হয়, জানা গেলো পরশুই ঝন্টু ধনেখালি যাবে একটা মালের ডেলিভারি দিতে ফেরার পথে মির্জাপুর যেতে ওর কোন আপত্তি নেই । রতন এবার সৌতিক কে জিজ্ঞাসা করলো কিরে ম্যাটাডোরে  করে যেতে পারবি ? সৌতিক বললো বিন্দাস পারবো , তুমি পারলে একটা ডিজে বক্সের ব্যবস্থা কর , তাহলেই ব্যাপারটা জমে যাবে। সুজয় বললো এটা মন্দ বলিসনি তো। 

                  রাত্রে সমরেশ বাবু প্রথমে ভাইকে ও পরে দাদাকে ফোন করে সব জানালেন। ভাইয়ের সেরকম কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না , আসলে যখন মির্জাপুর ছেড়ে চলে আসা হয় তখন সোমনাথ বাবু খুবই ছোট তাই সেরকম কোন স্মৃতি ওনার ওই বাড়ির সাথে নেই , কিন্তু দাদা সুবীরেশ বাবু যেন কথাটা শুনে একটু শকড ই হলেন। ভাইকে বললেন সমু এটা কি তুই ঠিক করলি , পুরোনো ঘা খুঁচিয়ে তোলার দরকার কি ছিল ? আমি আবার ভাবছিলাম ওই সময়টা সবাইকে নিয়ে কলকাতায় তোর কাছে গিয়ে থাকবো। সমরেশ বাবু খুব খুশি হয়ে বললেন দাদা অত  চিন্তা না করে চলে, কবে কার কি ঘটনা মনে করে বসে থাকলে হবে। 

                 ভাইয়ের ফোনটা ছেড়ে সুবীরেশ বাবু একা চেয়ারে বসে পুরোনো কথা ভাবলে লাগলেন , পুরোনো সেই ঘটনা মনে করে তার বুকটা আশংকায় যেন কেঁপে উঠলো। ওটা তার জীবনের ভয়ঙ্করতম ঘটনা। চাইলেও যেন তিনি তা ভুলতে পারেন না।  


কথামত সেই মঙ্গলবার রতন, সৌতিক ও ঝন্টু বেরিয়ে পড়লো মির্জাপুরের উদ্দেশ্যে পেছনে মালের সঙ্গে বসেছিল ঝন্টুর দুই কর্মী লিটন ও সঞ্জয়। শেষ মুহূর্তে কাজ এসে পড়ায় সুজয় আস্তে পারেনি ওদের সাথে , তবে কথা হয়েছে যে ভিডিও কলে ওরা যোগাযোগ করে নেবে। যথাসময়ে ওরা ধনেখালিতে গিয়ে মাল ডেলিভারি করে রাস্তায় জলখাবার সেরে মির্জাপুরে পৌঁছে গেলো। তবে আগে তারা সিঙ্গুরের বিখ্যাত ডাকাতে কালী মন্দির দর্শন করে এসেছিলো। কথিত আছে এই মন্দির নাকি প্রায় 550 বছরের পুরোনো এবং অত্যন্ত জাগ্রত। তবে ওদের অন্য উদ্দেশ্য ও ছিল , ওরা  আসতে আসতে ঠিক করেছে যে পুজো মণ্ডপ টা তৈরী করবে এই জমিদার বাড়ির আদলে ও প্রতিমা টি তৈরী করাবে এই ডাকাত কালির মূর্তির আদলে। 

             তবে মির্জাপুরে এসে ওরা  একটা সমস্যায় পড়লো, বাড়ির নাম বা সমরেশ বাবুর নাম বলতেও কেউই বাড়ি চিনতে পারছিলো না এবং উনি বাড়ির কেয়ারটেকারের যে নম্বর দিয়েছিলেন সেটা সুইচড অফ , কিছুক্ষন পরে একটা লোকাল পান-সিগারেটের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ওই দোকানদার বুঝতে পারলেন ও বললেন ” যে দাদা কেন যাবেন ওই ভুতুড়ে বাড়িতে, ওই বাড়ি অশুভ , কেউই সন্ধ্যার পর ওখান দিয়ে যায় না, ওই বাড়ির নাম ও কেউ মুখে আনে না ” , এই কথা শুনে ওরা চমকে গেলো , মনে মনে ভাবলো একে পুরোনো জমিদার বাড়ি তার ওপর ভুতুড়ে, পুজোর থিম একেবারে জমে যাবে। ওরা মিথ্যে বললো যে ” আমরা আসলে  B.D.O অফিস থেকে এসেছি, বাড়িটা কত বিপজ্জনক সেই ব্যাপারে রিপোর্ট তৈরী করতে, বুহতে পারছেন সরকারি কাজ আমাদের যেতেই হবে, যদি একটু সাহায্য করেন, আর ওই বাড়িকে ভুতুড়ে কেন বলছেন কি হয়েছে “? দোকানদার বাড়ির নির্দেশ দিয়ে বললেন ” ঠিক আছে তাহলে যান , তবে সাবধানে যাবেন, লোকমুখে শুনেছি ওই বাড়ি নাকি লোককে টানে , কিন্তু লোকে গেলে আর ফিরে আসে না, ভেতর থেকে মানুষের আর্তনাদ ও শুনেছে অনেকে, আর শুধু বয়স্ক লোক না ওই বাড়ি অনেক বাচ্চাকেও খেয়েছে বলে শুনেছি। যাইহোক গেলে তাড়াতাড়ি যান, আলো থাকতে থাকতে চলে আসবেন আর পারলে একটু কার্বলিক এসিড নিয়ে যাবেন, যা জঙ্গল ভুতের হাতে না হোক সাপের কামড়ে মারা যেতেই পারেন “। 

               ভুতের কথা শুনে লিটন ও সঞ্জয় যেতে চাইছিলো না, ঝন্টু বললো যে আগে গেট থেকে উঁকি দিয়ে দেখি সেরকম বুঝলে তোরা ঢুকবি না। ওরা ওই দোকানদারের নির্দেশ মত  সমরেশ বাবুর বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো , বাড়ির সামনে এসে আবার ওই কেয়ারটেকার কে ফোন করে দেখলো যথারীতি ফোন সুইচড অফ। সৌতিক বললো আমাদের কাছে তো চাবি রয়েছে চলো দেখি নিজেরা ঢুকতে পারি কিনা, কতক্ষন ঐ লোকটাকে ফোন করে যাবো। ওরা  দেখলো মেসোমশাই কে জানাতে হবে এই লোকটা শুধু শুধু পয়সা নিয়ে যাচ্ছে কোনো কাজ করে না 

ওরা দেখলো যে ওদের কাছে যে চাবি আছে সেটা দিয়ে বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় মেন্ গেট খুলে গেলো, বাড়িতে ঢুকে দেখলো সত্যিই বিরাট জঙ্গল হয়ে রয়েছে বাড়ির মধ্যে, মেইনটেনেন্স যে একেবারেই হয় না সেটা স্পষ্টই বোঝা গেলো। রতন সঙ্গে করে বেশ কয়েক বোতল কার্বলিক অ্যাসিড নিয়ে এসেছিলো, সেটা ছড়িয়ে ওরা এগোতে লাগলো। সৌতিক নিজের Action Pro ক্যামেরা সাথে করে নিয়ে গেছিলো, ভেতরে ঢুকেই সেটাকে Head-strap দিয়ে মাথায় বেঁধে নিলো যাতে পুরো বাড়ির ভিডিও রেকর্ড হয়ে যায়। বাড়িটা সত্যি খুব সুন্দর ছিল , দেওয়ালের গায়ের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। দোতালা U শেপের বাড়ি, বোঝা গেছে সামনে বাগান ছিল ও বাড়ির মধ্যে দিয়ে গিয়ে পেছনে নাটমন্দির। সিঁড়ির যা অবস্থা তাতে  দোতালায় যাওয়ার সাহস না দেখিয়ে ওরা নাটমন্দিরের দিকে এগোতে লাগলো। 

                  বাড়ির পেছনে এসে প্রথমে লিটন মন্তব্য করলো, দাদা কেমন ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ খেয়াল করেছো ? ওরা সবাই সেটা টের পেয়েছিলো , ওরা  বললো সত্যিই তো এতো বাজে গন্ধ তো আগে পাইনি। ওরা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে দেখলো চারিদিকে জঞ্জালের স্তুপ হয়ে রয়েছে ও তার আসে পাশে বেশ কিছু কুকুর বিড়াল ইত্যাদির পচা গলা দেহ পরে আছে ও সেগুলিকে ঘিরে মাছি ভনভন করছে, সব মিলিয়ে পুঁতিগন্ধময় পরিস্থিতি। 

গন্ধে রতন ও সৌতিক বমি করে ফেললো। লিটন বললো দাদা এতো দেখছি ভুতের কারবার চলো পালাই। ঝন্টু বললো ভুত না ছাই, ফাঁকা বাড়ি দেখে লোকে যত আবর্জনা ও পশুর মৃতদেহ সব এই বাড়িতে ছুঁড়ে মেরেছে, চলো এগিয়ে দেখি। 

                                     নাটমন্দিরে গিয়ে ওরা বেশ অবাক হলো, গোটা বাড়ির তুলনায় নাটমন্দিরটি বেশ ভালো অবস্থায় আছে এবং নাটমন্দিরের মধ্যে এক কোনায় দেখা গেলো বেশ কয়েকটি খালি মদের বোতল। সেদিকে ইঙ্গিত করে রতন বললো ওই দেখ ভুত আছে কিনা জানা নেই তবে মাতাল আছে , সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ঝন্টু বললো দেখো দাদা চারিদিকে আবার বাচ্চাদের পায়ের ছাপ রয়েছে। ওরা সবাই দেখলো নাটমন্দিরের ভেতরে ও বাইরে সত্যিই ছোট ছোট পায়ের অনেক ছাপ রয়েছে , ওরা বেশ অবাক ই হলো যে এই আবর্জনার মধ্যে কোন বাচ্চা খেলতে আসবে ? ওরা আরো দেখলো নাটমন্দিরের পেছন দিকে আরেকটি গেট রয়েছে এবং সেটি খোলা, মানে তালা দেওয়ার জায়গাটি জং ধরে ভেঙে গেছে , ঝন্টু উঁকি দিয়ে বুঝলো পেছনের রাস্তাটিই সরাসরি হাই রোডের দিকে গেছে, ও সৌতিক কে বললো, সঞ্জয় তো গাড়িতেই আছে ওকে বলি গাড়ি ঘুরিয়ে পেছন দিকে নিয়ে আসতে। এই বলে ফোন বের করে দেখে ফোনে কোনো টাওয়ার ই নেই, যাহ শালা বলে, ও সৌতিক কে বললো দেখতো তোর ফোনে টাওয়ার আছে কিনা ? সৌতিক ও পকেট থেকে ফোন বের করে অবাক হয়ে দেখলো ওর দুটি সিমের কোনোটাতেই টাওয়ার নেই। ঝন্টু কে দেখতে ও বললো এতো অদ্ভুত ব্যাপার, যাই বাইরে গিয়ে দেখি। এই বলে ও পেছনের গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। 

                এমন সময়ে পেছন থেকে রতন চেঁচিয়ে উঠলো, দেখ দেখ কি অদ্ভুত ব্যাপার। সৌতিক ও লিটন আওয়াজ লক্ষ্য করে দৌড়ে গিয়ে দেখলো, রতন একটা কালীমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রতন বললো আরে আমি হিসু করতে এই কোনার দিকে এসেছিলাম, এসে দেখি মা কালী দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে ফোন সেরে ঝন্টু ও এসে পড়েছে। ওরা তখন নাটমন্দিরের বাঁদিকের কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল , এই দিকটা আলাদা পার্টিশান করে পেছনের দরজা ও মূল বাড়ির থেকে আলাদা করা রয়েছে, যার ফলে প্রথমে ওদের চোখে পড়েনি, এমনকি মাথার ওপর ছাদ ও রয়েছে । সেদিকে একটা কুয়ো ও রয়েছে এবং দেওয়ালে ও আসে পাশে প্রচুর কাঁচা মাটির আস্তরণ হালকা হলেও চোখে পরে। রতন বললো মনে হচ্ছে এখানেই মূর্তি তৈরী হত ও পরে নাটমন্দিরে নিয়ে যাওয়া হত, এটা মনে হচ্ছে শেষ বারের প্রতিমা, দেখ না কেমন ফ্রেশ অবস্থায় আছে, এতো বছর বাদেও যেন চকচক করছে। না সৌতিক ভালো ভাবে ছবি তুলে নে, ওই মন্দিরে তো ভেতরে ছবি তুলতে দেয়নি। সৌতিক দেখলো এই প্রতিমা আরো বড় এবং যেন আরো ভয়ঙ্কর রূপ। ও বললো চিন্তা করো না আমার মাথার ক্যামেরায় সব রেকর্ড হয়েছে, চলো এখন থেকে বেরোই  এখন, অনেক হয়েছে রেইকি । 

                 এমন সময়ে ঝন্টু বললো আমার মাথায় একটা খেয়াল এসেছে, যেহেতু এবারের বাজেট কম তাই ভাবছি , এই বলে ও সবাইকে নিজের খেয়ালের কথা বললো, শুনে সবাই চমকে গেলেও পরে রাজিই হলো। সেই মত কাজ সেরে ওরা সবাই বাড়ির দিকে এগোলো। বেশ খানিকটা চলে আসার পর সৌতিকের মনে পড়লো যে মেন্ গেটের তালা যে তারা খুলেছিলো সেটা আর লাগলো হয় নি , হাট করে খোলাই রয়েছে দরজাটা, আবার কেয়ারটেকার কে ফোন করে দেখলো তখন সুইচড অফ। ও ভাবলো থাকে বাড়ি ফিরে সমরেশ বাবুকেই জানাবে। 

                অবশ্য ওই বাড়িতে ঝোপ ও নাটমন্দিরের আড়ালে আরো অনেক কিছুই ছিল যেগুলো ওদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো।   


কালীপুজোর দুদিন আগেই সার্বজনীন ক্লাবের পূজামণ্ডপের উদ্বোধন হয়ে গেলো, হারুবাবু সহ পাড়ার অনেকেই অবাক হলো এত কম বাজেটে রতন রা কি সুন্দর ভাবে সব কাজ করেছে। সমরেশ বাবুকে বিশেষ অতিথি করে আনা হয়েছিল, উনিও বেশ অবাক হয়েছেন। সৌতিক কে বলেই ফেললেন, তোমরা তো আমায় ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিলে। সৌতিক হারু বাবুর সাথে সমরেশ বাবুর পরিচয় করিয়ে দিলো, এবং ঘটনাচক্রে জানা গেল ওনারা দুজনেই প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ও সমরেশ বাবুর দাদা সুবীরেশ বাবু হারুবাবুর ব্যাচমেট। কলেজ জীবনে দুজনে খুবই ভালো বন্ধু ছিলেন তবে পড়াশুনা শেষ করার পর হারুবাবু সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ও সুবীরেশ বাবু ব্যবসায়। তার পরেও কিছুদিন দুই বন্ধুর যোগাযোগ ছিল কিন্তু পরে সময়ের নিয়মে আর সেটা বজায় থাকেনি। সমরেশ বাবু জানালেন পরেরদিন ভোরের ফ্লাইটেই তার দাদা কলকাতায় আসছেন। হারুবাবু সজল চোখে সমরেশ বাবুর দুহাত ধরে বললেন আজ সৌতিকের জন্য তোমার সঙ্গে আমার আলাপ হলো, এ সবই মায়ের ইচ্ছে নাহলে এত বছর পরে এভাবে সুবী-র সাথে আমার যোগাযোগ হবে এতো আমি ভাবতেই পারছিনা। ভাইফোঁটা অব্দি আমাদের পুজো চলবে, এবং এ পুজো হচ্ছে তোমাদের বাড়ির আদলে তাই এ শুধু আমাদের পাড়ার পুজো নয় এ তোমাদের ও পুজো , তাই আমার বিশেষ অনুরোধ ভাইফোঁটা অব্দি তোমরা আমাদের অতিথি হয়ে এখানেই থাকবে, আমাদের সাথে আনন্দ করবে, অনুষ্ঠান দেখবে, আর আমার বন্ধুকে আমি নিজে গিয়ে গিয়ে আসবো, না করতে পারবে না কিন্তু। সমরেশ বাবু একটু বিব্রত হয়ে পড়লেন, ওনার মেয়ে অর্থাৎ সৌতিকের বৌদি বিনীতা বললো বাবা এত চিন্তা করছো কেন থাকো না আমাদের সাথে , আমি এ বছর পাড়ার অনুষ্ঠানে গান করছি, নাটক করছি দেখবে, আর উনি তো বলছেন জেঠু কে উনি নিয়ে আসবেন, কি মজা হবে। সমরেশ বাবু হেসে বললেন ঠিক আছে আজ বাড়ি যাই, কাল তোর জেঠু তারপর বিকেলের দিকে আমরা একসাথে চলে এসব না হয়।  হারুবাবু বললেন তাহলে দুপুরেই আমি যাচ্ছি তোমাদের বাড়ি, আমার বন্ধুকে আমি নিজে নিয়ে আসবো। সবাই হৈহৈ করে উঠলো। 

                  সৌতিক কে ওর গার্লফ্রেন্ড রিতিকা ফোন করে জানালো সে ওদের পাড়ার দিকেই আসছে, ওকে রিসিভ করার জন্য সৌতিক খানিকটা এগিয়ে গেলো, দেখলো ক্লাবের পেছনদিকে সুজয়, লিটনরা গোল হয়ে বোতল নিয়ে বসেছে, ওকে দেখেই সবাই ডাক দিলো ” কিরে খোকা আসবি নাকি “? ও হেসে বললো বিয়ের আগেই ডিভোর্স হোক সেটা চাও নাকি ? সুজয় ওকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই হিরো তো কামাল করে দিয়েছিলো, মাথায় ক্যামেরা বেঁধে ওই বাড়িতে গেছিলো, পুরোবাড়ির নাকি ভিডিও তুলে আনবে, ভিডিও যা এনেছে ফাটাফাটি, পুরোটাই ঝিলঝিল ও ব্যাকাতেরা, শেষে রতন,লিটন ও ঝন্টুর সাথে বসে স্মৃতি থেকে স্কেচ বানিয়ে প্যান্ডেল তৈরী হয়েছে, ওরে ফেলে দে ওই ক্যামেরা। সৌতিক এখন কিছু বললো না কিন্তু মনে মনে অবাক ই হয়েছিল, ওর বেশ দামি ক্যামেরা ওই দিনের পরেও ও দেখেছে খুব ভালো রেকর্ডিং হয়, সেদিন যে কি হলো কে জানে। ও হেসে বললো কিন্তু স্টেজে তো মেকআপ করে দিয়েছি বলো, ভাঙা বাড়ি, নাটমন্দির, প্রতিমা জঙ্গল সবই দুর্দান্ত হয়েছে , সাথে নীল-সবুজ আলোতে ও সাউন্ড এফেক্টে পুরো কিন্তু হরর ফিল্মের সেট বানিয়ে ফেলেছি। লিটন বললো শুধু ওই দুর্গন্ধটাই যা কপি করা গেলোনা বলো ? সবাই হেসে উঠলো। 

              রিতিকা ওদের পুজো দেখে বেশ ইম্প্রেসড হলো, বলল বাহ্ দারুন করেছো তো, চলো ঠাকুরের সামনে কয়েকটা সেলফি নিই। সৌতিক  বললো চলো, তুমি নাকি এই সেল এ নতুন ফোন কিনেছো, তাতেই তোলা হোক। রিতিকা বললো ঠিকআছে।  

              ঘন্টাখানেক পর সৌতিক রিতিকাকে অটোস্ট্যান্ডে ছাড়তে এলো, রাত হওয়ায় যথারীতি অটো কম, বিরাট লাইন। সৌতিক লাইনে দাঁড়িয়ে ঋত্বিকাকে বললো কৈ ছবিগুলো পোস্ট করো, দেখি।  রিতিকা ফোন বের করে ছবিগুলো দেখতে গিয়ে হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে গেলো, সৌতিক ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলো প্রত্যেক ছবিই কেমন যেন বেঁকে গেছে। রিতিকা বললো ছবি তোলার সময় তো সব ঠিক ছিল বোলো ? সৌতিক বললো হ্যাঁ আমিও দেখেছি, তখন তো সব ঠিকই ছিল মনে হচ্ছে। রিতিকা বললো পেছনে আবার লাল লাল মত কি দেখতো ? যদিও ছবিগুলো অস্পষ্ট তবুও ওরা  দেখলো যে বেশ কয়েকটা ওদের পেছনে লাল পোশাক পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

              রিতিকা বললো এই মেয়েটা আমাদের পেছনে কখন এলো ? আমার তো মনে পড়ছে না, যখন ছবিগুলো তুললাম, প্যান্ডেল তো ফাঁকাই ছিল, সৌতিক বললো আমারও তো মনে পড়ছে না। 


সুবীরেশ বাবু সকাল 9:30 এর মধ্যে ভাইয়ের বাড়ি পৌঁছে গেলেন। ওনার বড় ছেলে সপরিবারে কাছেই থাকে কিন্তু ছেলের ফ্ল্যাটে এখন ওর শশুর-শাশুড়ি চিকিৎসার কারণে রয়েছেন, এবং ওনাদের সাথে সুবীরেশ বাবুর বিশেষ বনিবনা হয়না, তাই তিনি আপাতত ভাইয়ের কাছেই উঠলেন। সেখানে হারুবাবুর কথা শুনে উনি অত্যন্ত অবাক হলেন। পুরোনো দিনগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। দুপুরে হারুবাবু পৌঁছে গেলেন। দুই বন্ধু দীর্ঘক্ষণ ধরে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়ে রইলেন। সুবীরেশ বাবু ধরা গলায় বললেন দেখ হারু এভাবে যে তোর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়ে যাবে এতো স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি। কেমন আছিস ভাই ?

                  বেশ কিছুক্ষন পরে সুবীরেশ বাবু বললেন দেখ হারু, সত্যি কথা বলতে প্রথমে ওই পুজোতে আমার কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না, কারণ বাড়ির ওই পুজোর সাথে আমাদের এক খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে আছে, কারণ অতীতে এক কালীপুজোর পরের দিন আমার মা মারা যান, আমি সমুর কাছে শুনেছি তোরা আমাদের বাড়ির আদলে প্যান্ডেল বানিয়েছিস, গেলেই আমার পুরোনো দিনের কথা আরো বেশি করে মনে পরবে। কিন্তু আজ তোর সাথে এভাবে যোগাযোগ হয়ে আমি সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হচ্ছি আর শুনছি সমুও নাকি মেয়ের কাছেই যাচ্ছে।  হারুবাবু বললেন খুব ভালো, খুব ভালো তোর ভাই মেয়ের কাছে থাকে আর তুই আমার সাথে থাকবি, ওদের দুটো বাড়ি পরেই আমার বাড়ি, কোনো চিন্তা নেই দুই বন্ধু চুটিয়ে আড্ডা দেব। 

               সন্ধ্যে বেলায় সমরেশ বাবু দাদা, বৌদি , ভাইঝি ও  স্ত্রী কে নিয়ে মেয়ের বাড়ি পৌঁছে গেলেন। বিনীতার খুবই আনন্দ হচ্ছিলো ও ভাবতেই পারেনি এভাবে ওর বাবা মা ও জেঠু জেঠিমা ও বোনকে  একসাথে পাবে। সুবীরেশ বাবুর মেয়ে শাপলা বিনীতার প্রায় সমবয়সী, তাই ছোটবেলা থেকে দুজনের খুব মিল। দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো। ঠিক হলো এই দু-তিন দিন বিনীতা, শাপলা ও শাপলার মা এক ঘরে থাকবে, সমরেশবাবু সস্ত্রীক এক ঘরে, সৌতিকের বাবা মা এক ঘরে ও সৌতিক ও তার দাদা ডাইনিং এ। সুবীরেশবাবু থাকবেন হারু বাবুর বাড়িতে, উনি সুবীরেশ বাবুর স্ত্রীকেও থাকতে অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু উনি রাজি হননি। এতে অবশ্য দুই বন্ধু খুশিই হয়েছেন মনে মনে, চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। সুবীরেশ বাবুর ছেলে ও ফোন করলো, ওর আবার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর ব্যবসা, পুজোর সময়ে খুব কাজের চাপ, বললো পরের দিন সপরিবারে এসে দেখা করবে। 

                  সৌতিক ও রিতিকা বেড়িয়েছিল আসে পাশের ঠাকুর দেখতে। রিতিকা বললো কিগো বারাসাত যাবে নাকি ? সৌতিক বললো মাথা খারাপ, গতবার গেছিলাম যা ভিড় হয়, একটা ঠাকুর দেখতেই রাত কাবার হয়ে যায়। তার থেকে চলো পাড়ায় যাই। পাড়ার দিকে আসতে আসতে সৌতিক রিতিকাকে ঘরের পরিস্থিতির কথা বললো। বললো যেন আমার সাথে ডাইনিং এ শুতে হবে শুনে দাদার মুখটা যা হয়েছিল না।  রিতিকা বললো দেখো রাতে আবার তোমায় না জড়িয়ে ধরে। সৌতিক হেসে বললো কি যে বল। এর মধ্যে ওরা প্যান্ডেলের প্রায় সামনে চলে এসেছিলো। দেখলো পাড়ার ছোট ছেলে মেয়েরা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে কি যেন আলোচনা করছে। সৌতিক পাশের বাড়ির ক্লাস 5 এর ছেলে অনির্বান কে জিজ্ঞেস করলো কিরে কি হয়েছে, তোরা এতো চিন্তিত কেন ? 

                  অনির্বান ও আরো দু তিনজন একসাথে বলে উঠলো জান কাকাই কি অদ্ভুত ব্যাপার আমরা প্যান্ডেলের পেছনে বাজি ফাটাচ্ছি , দেখি কি একটা মেয়ে প্যান্ডেলের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে , আমরা কত করে বললাম সরে যাও, বাজি ফাটাচ্ছি, পুড়ে যেতে পারে, মেয়েটা একটুও সরলো না শুধু কেমন অদ্ভুত ভাবে মিটিমিটি হাসছিলো, শেষ আমরাই সরে গেলাম। যেন কাকাই ওই মেয়েটাকে এর আগে আমরা কোথাও দেখিনি, আমাদের কারো স্কুলেও পড়েনা। এরপরে শুনলাম সুচিস্মিতা দি ও নাকি ওকে দেখেছে। সুচিস্মিতা পাশের গলিতে একটা ফ্ল্যাটে থাকে, অনির্বানের থেকে বেশ বড়, ক্লাস 9 এ পড়ে। সেও বললো জানোই তো আমার কাকা দারুন তুবড়ি বানায়, আমরা ছাদে তুবড়ি জ্বালাচ্ছি, দেখলাম ওই মেয়েটা মানে অনির্বান যার কথা বলছে গো, ও দাঁড়িয়ে আছে, আমি ভাবলাম হয়ত ফ্ল্যাটে কারো বাড়ি বেড়াতে এসেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি ? কার বাড়ি এসেছো ? কোনো উত্তর দেয়না, খালি হাসে।  আমি বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে তুবড়ি জ্বালাতে গেলাম, তার পরে আর মেয়েটাকে দেখিনি। আমার তো চিন্তা হচ্ছে চোর টোর না তো। সৌতিক জিজ্ঞাসা করলো তোদের ফ্ল্যাটে তো সিকিউরিটি গার্ড আছে, ও কিছু দেখেনি, মেয়েটা ছাদে গেলো কিকরে ? সুচিস্মিতা বললো আমার কাকা গার্ড কাকুকে জিজ্ঞেস করেছে, উনি বলেছে এরকম কোনো মেয়েকে নাকি ফ্ল্যাটে ঢুকতে বা বেরোতে দেখেনি। সুচিস্মিতার কাকা মনীশ পাশেই চেয়ারে বসে ছিল। সৌতিক ওর দিকে তাকাতে ও বললো, ওই গার্ড অর্ধেক সময়ে মদ খেয়ে ঢুলতে থাকে, ওকে এবার ছাড়াতে হবে। রিতিকা জিজ্ঞেস করলো মেয়েটাকে দেখতে কেমন ? কি পরে ছিল ? বয়স কত হতে পারে ? সুচিস্মিতা বললো অনির্বান দেড় বয়সীই হবে মনে হয় ফর্সা খুব সুন্দর দেখতে, আর, অনির্বান এর দিকে তাকিয়ে দুজনে একসাথে বলে উঠলো লাল রঙের ফ্রক পরে ছিল। সৌতিক ও রিতিকা দুজনেই চমকে উঠলো। 

               রাত্রে হারুবাবু সুবীরেশবাবু সহ সবাইকে নিয়ে মণ্ডপে এলেন, সৌতিকরাও ছিল সেখানে, সুবীরেশবাবু আশ্চর্য হয়ে দেখলেন কি নিখুঁত ভাবে এরা সুবীরেশ বাবুদের বাড়ির খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে। শিল্পীর তারিফ করতে  করতে উনি প্রতিমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। প্রতিমার দিকে তাকিয়ে উনি যেন চমকে উঠলেন, এ তিনি কি দেখছেন, মনে হচ্ছে পায়ের তলা থেকে যেন জমি সরে যাচ্ছে , ঘুরে তাকিয়ে ভাইকে যেন কিছু বলতে গেলেন কিন্তু পারলেন না, ওখানে সঙ্গাহীন হয়ে উল্টে পড়ে গেলেন, যদিও ক্লাবের ছেলেরা সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো নাহলে বড় কোন বিপদ হতে পারতো। হারুবাবু সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ফোন বের করে ডাক্তার কে ফোন করতে গেলেন কিন্তু পারলেন না দেখলেন ফোনে কোনো টাওয়ার নেই। উনি চিৎকার করে সেকথা বলতে সমরেশবাবু, সৌতিক, রিতিকা ও সবাই ডাক্তার কে কল করার জন্য নিজের নিজের ফোন বের করলো, কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দেখা গেলো প্যান্ডেলের ভেতরে কারোর ফোনেই টাওয়ার নেই।  


সবাই মিলে সুবীরেশবাবু কে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো। ডাক্তার দেখে জানালেন, খুব ভালো করেছেন সাথে সাথে নিয়ে এসেছেন, ওনার একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে গেছে, ওনার প্রিভিয়াস মেডিক্যাল হিস্ট্রি কিছু জানা আছে আপনাদের ? সমরেশ বাবু বললেন হ্যাঁ আমি জানি বাড়িতেই দাদার ফাইল আছে, দাদা দীর্ঘদিন ধরেই প্রেশারের ওষুধ খায়, সুগার নেই কিন্তু ফ্যাটি লিভারের সমস্যা আছে, তার মধ্যে আজ ই গুজরাট থেকে এখানে এসেছেন। ডাক্তারবাবু বললেন এখন উনি আউট অফ ডেঞ্জার, আমি একটা মাইল্ড সিডেটিভ দিয়েছি আজ রাতটা উনি এখানেই থাকুন। আপনি ওনার ফাইল নিয়ে কাল সকালে আমার সাথে দেখা করবেন ও ওনাকে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে যাবেন। 

                  হারুবাবু একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন, উনি সমরেশবাবুর হাত ধরে বললেন, আমি ভাবতেই পারছি না আজ এত বছর পর সুবী র সাথে আমার দেখা হলো, কত কিছু করবো ঠিক করলাম আর আমাদের পাড়ায় এসে ওর কি হয়ে গেলো। সমরেশ বাবু বললেন অত চিন্তা করো না, আমাদের সবার বয়স হয়েছে, এরকম টুকটাক তো লেগেই থাকবে আর তাছাড়া দাদা একেবারেই কিছু কন্ট্রোল করে না, আমি-বৌদি কত বার বলেছি। ওনারা ইতিমধ্যে আবার পাড়ায় পৌঁছে গেছিলেন, এসে দেখলেন প্যান্ডেলের সামনে অনেকে অপেক্ষা করছেন ওদের জন্য। সবাইকে সব কথা জানিয়ে যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। সমরেশবাবু মেয়ের বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে নিজের বৌদি কে সব বললেন। উনি বললেন দাড়াও তোমার দাদা ঘরে আসুক ওনার ওই ভাজাভুজি খাওয়া আর ছাইপাঁশ গেলা আমি বন্ধ করছি। 

                   একটা ব্যাপারে সৌতিকের মনটা খচখচ করেই যাচ্ছিলো যে প্যান্ডেলের মধ্যে কারোর ফোনে টাওয়ার পাওয়া গেলো না কেন ? ওদের ওখানে অনেক ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়ায় কানেকটিভিটির একটু সমস্যা আছে, কিন্তু কারোর ফোনে টাওয়ার থাকবে না এটা কিকরে হয় ? ওদের প্যান্ডেলে নিশ্চই জ্যামার লাগানো নেই। ও ভাবলো পরেরদিন সকালে এই ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখবে। এই ভাবতে ভাবতে ও সোফা-কাম -বেডে শুয়ে পড়লো, ওর দাদার সেদিন ও অফিস ছিল, সারাদিনের ক্লান্তিতে সে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওদের হলঘর টা  রাস্তার দিকে এবং কালীপুজোর জন্য চারিদিকে যা ভয়ঙ্কর বাজি ফাটছিলো ও দূর থেকে যা গানের আওয়াজ ভেসে আসছিলো তাতে কিছুতেই ওর ঘুম আসছিলো না। ও ভাবলো দেখি রিতিকা কি করে, বলে একটা ফোন করলো। রিতিকা ও জেগেই ছিল। সৌতিক বেশ খুশিই হলো, ও আস্তে করে উঠে ডাইনিং এর বক্স জানলার ওপর বসে প্রেমালাপ করতে শুরু করলো। কথায় কথায় অনেক্ষন কেটে গেল, হঠাৎ করে নিচের দিকে তাকিয়ে ও চমকে গেলো, ওদের প্যান্ডেলটা ওদের জানলার থেকে কোনাকুনি পুরোটা দেখা যায়, ওই বাড়ির আদলে কেউ শেপের বড় এনক্লোজার করা হয়েছে মাঝে ফাঁকা জায়গা যেখানটা জঙ্গলের মত করা হয়েছে  ও তার পরে নাটমন্দিরের আদলে মূল মণ্ডপ যার মধ্যে প্রতিমা রয়েছে। ও অবাক হয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে এতো রাতে ওই প্যান্ডেলের মধ্যে এক এক্কা-দোক্কা খেলার মোট লাফাতে লাফাতে এগোচ্ছে এবং ও স্পষ্ট দেখতে পেলো মেয়েটির পরনের পোশাক টকটকে লাল। চমকে গিয়ে ও একটু বেসামাল হয়ে গেলো এবং কাঁচের জানলায় সজোরে ওর মাথাটা ঠুকে গেলো, ও জোরে চেঁচিয়ে উঠলো তবে ওর দাদার ঘুম ভাঙলো না, পাশ ফিরে শুয়ে নাক ডাকতে লাগলো। 

            সমরেশ বাবু যেই ঘরে ছিলেন, সেই ঘরের সাথে ব্যালকনি ছিল, আসলে এটা ডাইনিং এর পাশের ঘর তাই ডাইনিং এর সাথে টানা ব্যালকনি দিয়ে জোড়া। উনি তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে, ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে প্রথমে সুবীরেশ বাবুর ছেলেকে ও পরে শিলিগুড়িতে নিজের ভাইকে ফোন করলেন, আগেও চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু লাইন পাননি, ছেলে খুবই উদগ্রীব হয়ে পড়লো, সমরেশ বাবু অভয় দিয়ে বললেন সব ঠিকই আছে তুই কাল আসিস। ছেলে বললো ও কাল সকালে সোজা হাসপাতালে চলে আসবে। সোমনাথ বাবু অবশ্য বেশ চিন্তিত হয়েই পড়লেন, উনি সমরেশ বাবুকে বললেন, জানিস মেজদা তুই তো কলকাতার কমিউনিস্ট চিন্তাধারার মানুষ কোনোদিনই পুজো-আচ্ছায় তোর ইন্টারেস্ট ছিলোনা, আমি কিন্তু শিলিগুড়িতে বড় করে কালীপুজো করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বড়দা বারণ করায়, সেটা করা হয়নি। বড়দা খালি বলতো এই পুজো নাকি আমাদের বাড়ির পক্ষে শুভ না। আর দেখ সেই পুজোর দিনেই বড়দার সাথে কি হয়ে গেলো। শোন আমার এমনিতেই নভেম্বরের শুরুতে কলকাতায় আসার কথা ছিল, আমার ছেলে জেগেই আছে ও নেটে চেক করলো কাল বাগডোগরা থেকে সকাল 9:40 এর ফ্লাইটে সিট্ আছে, আমি কাল দুপুরের মধ্যে কলকাতা ঢুকছি, এখন শুতে যাই তুই ও ঘুমোনোর চেষ্টা কর। 

           সমরেশ বাবু ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে ইজিচেয়ারে বসে ভাইয়ের কথা ভাবতে লাগলেন, দাদা বলেছিলো পুজো শুভ নয়, এ কি করে হতে পারে ? এই ভাবতে ভাবতে ওনার চোখ লেগে গেলো, উনি চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়লেন। এটা ওনার পুরোনো অভ্যেস তাই ওনার স্ত্রী ও ওনাকে ডাকলেন না, উনি জানতেন যে সমরেশ বাবুর ঘুম ভাঙলে উনি ঘরে চলে আসবেন। হঠাৎ একটা আওয়াজে ওনার ঘুম ভেঙে গেলো, দেখলেন  পাশের ঘরে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে সৌতিক মাথায় হাত বুলোচ্ছে। উনি ডেকে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে সৌতিক ডাইনিং থেকে ব্যালকনির দরজা খুলে সেখানে চলে এলো। এসে ওনাকে জিজ্ঞেস করলো মেসোমশাই আপনি এখনো জেগে ? উনি বললেন আরে আমি এই চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু তোমার কি হলো ? এতো রাতে ব্যথা পেলে কিকরে ? সৌতিক মেয়েটির কথা বলতে সমরেশ বাবু বললেন আশ্চর্য তো ?দাড়াও চশমা টা নিয়ে আসি, মনে হচ্ছে ঘুমোতে দেখে গিন্নি চোখ থেকে খুলে নিয়ে গেছে । 

            চশমা পরে সমরেশ বাবু স্পষ্ট দেখলেন লাল জামা পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে একা প্যান্ডেলের মধ্যে খেলছে। হঠাৎ যেন মেয়েটা দাঁড়িয়ে পড়লো এবং সরাসরি সমরেশ বাবুর দিকে তাকিয়ে কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে হাসলো। সমরেশ বাবুর মনে হলো উনি যেন মেয়েটিকে কোথাও দেখেছেন এবং এই হাসি ও তার পূর্বপরিচিত। 

          

সকালে উঠে সমরেশবাবু মেয়ে বিনিতাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন, বাড়ির থেকে দাদার মেডিক্যাল ফাইল নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন ভাইপো সুরঞ্জন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছে, সৌতিক ও সৌভিক ও পাশে বসে আছে।  ওরা সুবীরেশ বাবুর ঘরে গিয়ে দেখলেন উনি বেডে বসে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছেন, ওদের দেখে বললেন নে নে তাড়াতাড়ি সব ফর্মালিটি শেষ কর বাড়ি যাবো আর ভালো লাগছে না। ডাক্তারবাবু ও বললেন যে সুবীরেশবাবু বাড়ি ফিরতে পারেন, উনি সুবীরেশবাবুর ফাইল দেখে ওষুধ লিখে দিলেন ও বললেন কোনো চিন্তা নেই, নির্দ্বিধায় বাড়ি যান খালি এই ওষুধ গুলো খাবেন, খাওয়াদাওয়া একটু কন্ট্রোল করবেন, বয়স তো হলো ও কয়েকদিন রেস্ট নিন, দিন দশেক বাদে এসে আরেকবার চেক আপ করিয়ে যাবেন। হারুবাবু ও এসেছিলেন হসপিটালে, সুবীরেশ বাবুকে বললেন আমাদের পাড়ায় এসে তোর কি হয়ে গেলো বল দিকিনি ? আমার যে কি খারাপ লাগছে, সুবীরেশ বাবু হেসে বললেন ও কিছু না বুড়ো হয়েছি এরকম ব্যামো লেগেই থাকবে, চিন্তা করিস না ভাইয়ের ওখানে গিয়ে একটু বিশ্রাম নি, আজকে তো তোরা পুজোয় ব্যস্ত থাকবি আমি কাল যাবো তোর সাথে আড্ডা দিতে, হারুবাবু খুব খুশি হয়ে বললেন সত্যি আসবি তো ? সুবীরেশ বাবু বললেন নিশ্চই যাবো। তারপর সৌতিক কে উদ্দেশ্য করে বললেন তোমাদের কিন্তু ক্রিয়েটিভিটি আছে, আমাদের বাড়িটা তো নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছই, প্রতিমা ও একেবারে অবিকল আমাদের বাড়ির মত, মানে ডিটেলিং সত্যিই প্রশংসনীয়। হারুবাবু উত্তর দিলেন আরে আমাদের দমদমেই তো আর্ট কলেজ আছে আমাদের পাড়ার বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ওই কলেজে পড়ে প্যান্ডেল ওরাই বানিয়েছে আমাদের সৌতিকের তত্ত্বাবধানে। আর আমাদের প্রতিমা বরাবরই গোরাবাজারের বিভাস পাল বানায়। এই শেষ কথাটা শুনে সৌতিক ঢোঁক গিললো। 

                   দুপুরে সমরেশবাবুর বাড়িতে তিন ভাই সুবীরেশ, সমরেশ ও সোমনাথ একসাথে খেতে বসেছেন, সঙ্গে সুবীরেশ বাবুর স্ত্রী ও মেয়ে ও রয়েছে, সমরেশবাবুর স্ত্রী, বিনীতা এবং সৌতিক ও সৌভিক ও রয়েছে। ওরাই বাড়ি গিয়ে সবাইকে নিয়ে এসেছে, আবার বিকেলে সুবীরেশবাবু ও তার স্ত্রীকে ছাড়া সবাইকে নিয়ে ফিরবে। সমরেশ বাবু বললেন কত বছর যে কালীপুজোয় আমরা তিন ভাই একসাথে রয়েছি, আজকে দাদা অসুস্থ না হলে কিন্তু সোম আসতো না, সবাই হেসে উঠলো। সোমনাথ বললেন, প্যান্ডেলে গিয়ে তোমার হঠাৎ মাথা ঘুরে গেলো ? আগের থেকে কিছু বুঝতে পারোনি ? সুবীরেশবাবু  বললেন আসলে হঠাৎ ওই কালীমূর্তি দেখেই আমার ছোটবেলার এক ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা মনে পরে যায়, তখনি মাথাটা ঘুরে যায়। সমরেশবাবু বাঁ হাত দিয়ে দাদার বাঁ হাত চেপে ধরে বললেন আসলে ছোট বেলায় এই পুজোর দিনেই মা মারা যান তো, দাদা সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারে না। সুবীরেশবাবু অল্প হেসে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘাড় নাড়লেন কিন্তু মনে মনে তিনি জানেন কালীমূর্তি দেখে মাতৃবিয়োগের স্মৃতি তার মনে পড়েনি। উনি আরো ঠিক করলেন পরেরদিন হারুর সাথে কথা বলে ওই প্রতিমা শিল্পীর সাথে একবার দেখা করবেন, এতটা ডিটেলিং ও কি সম্ভব ?

                    এমন সময়ে বাড়ির বেল বেজে উঠলো, বাড়ির পরিচারিকা দৌড়ে এসে বললো বাবু তাড়াতাড়ি আসুন বাড়িতে পুলিশ এসেছে। পুলিশ শুনেই সবাই চমকে উঠলো, সমরেশ বাবু সবাইকে আস্বস্ত করে বললেন চিন্তার কিছু নেই মনে হয় দেবজিৎ এসেছে আমি গিয়ে দেখছি। সোমনাথ বাবু বললেন আমাদের দেবজিৎ ? সমরেশবাবু বললেন হ্যাঁ। সোমনাথবাবু বলে উঠলেন কি আশ্চর্য , আর কত চমক অপেক্ষা করে আছে কে জানে ?

                     এই দেবজিৎ বাবুর বাবা সুরজিৎ বাবু ছিলেন মির্জাপুরে সমরেশ বাবুদের প্রতিবেশী, দেবজিৎ বাবু ছোটবেলায় সোমনাথ বাবুর বন্ধু ছিলেন, আজ সোমনাথ বাবুকে এখানে দেখে খুবই অবাক হলেন, সোমনাথ বাবুও খুব খুশি হলেন। সমরেশ বাবু বললেন কয়েকমাস আগে একটা কাজের সাইট থেকে ওনার মোবাইল চুরি হয়ে যায়, নিকটবর্তী নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে দেবজিৎ বাবুর সাথে ওনার দেখা হয়, উনি ওখানে ইন্সপেক্টর পদে রয়েছেন, যদিও সমরেশ বাবু চিনতে পারেননি কিন্তু উনি ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন। দুজনে অনেক কথা হয় ও দেবজিৎ বাবু বলেন কখনো কোনো সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় জানাতে এবং নিজের পার্সোনাল নম্বর ও দিয়ে দেন সমরেশ বাবুকে। মাসখানেকের মধ্যেই নিজের মোবাইল ফোনটিও ফেরত পেয়ে যান সমরেশ বাবু। সেদিন সৌতিক রা মির্জাপুরে গিয়ে কেয়ারটেকার কে না পেয়ে সমরেশ বাবুকে জানায়, সমরেশ বাবুও অনেক চেষ্টা করেন কিন্তু কেয়ারটেকারের সাথে যোগাযোগ হয়নি, তখন উনি দেবজিৎ বাবুকে ফোন করেন। দেবজিৎ বাবু প্রতিশ্রুতি দেন খোঁজ নিয়ে জানাবেন।  সকালে সমরেশ বাবুরা যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন দেবজিৎ বাবু ফোনে জানান মারাত্মক ব্যাপার, একবার থানায় এসে দেখা করতে, তখন সমরেশ বাবু নিজের পরিস্থিতির কথা জানান। দেবজিৎ বাবু বলেন তাহলে দুপুরের দিকে পারলে একবার ঘুরে আসবেন। 

               দেবজিৎ বাবু প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা সেদিন ওই বাড়িতে কারা গেছিলো বলো তো ? ওদের সাথে একটু কথা বলা দরকার। সৌতিক পাশেই ছিল, বললো আমি ছিলাম, আর সাথে আরো কয়েকজন ছিল। কেন বলুন তো ? সমরেশ বাবু বললেন ও হলো আমার মেয়ের দেওর। দেবজিৎ বাবু সৌতিকের পা থেকে মাথা অব্দি মেপে নিয়ে বললেন ও তোমরা ছিলে, তো ওই বাড়িতে গিয়ে কিছু দেখোনি ? সৌতিক আমতা আমতা করে বললো কি দেখবো মানে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না ? আশ্চর্য বাড়ির দোতালার সিঁড়িতে কেয়ারটেকারের ডেডবডি পরে ছিল আর তোমরা দেখনি, এ কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো, সৌতিক ঘাবড়ে গিয়ে বললো কি বলছেন ডেডবডি ? আসলে দোতালায় ওঠার সিঁড়িটা এমনই ভাঙাচোরা অবস্থা যে আমরা ওপরে ওঠার সাহস দেখাইনি, আর তাছাড়া গোটা বাড়িতে এমন জঙ্গল ও দুর্গন্ধ ছিল যে আমরা কয়েক মিনিটের মধ্যে সব দেখে পালিয়েছি ওখান থেকে। দেবজিৎ বাবু বললেন সেদিন সমুদা ফোন করার পর আমি লোকাল থানায় ফোন করে খোঁজ নিতে বলি, ওরা ওই কেয়ারটেকারের বাড়ি গিয়ে জানতে পারে ও নাকি কলকাতা থেকে বাবুরা আসবে বলে সমরেশ বাবুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল আর ফেরেনি এবং ফোনের শেষ লোকেশন অনুযায়ী ওই বাড়ির কাছাকাছিই দেখাচ্ছিল। এর পরে ফোর্স নিয়ে গিয়ে সার্চ করতে ডেডবডি পাওয়া যায়। সোমনাথ জিজ্ঞেস করছেন কজ অফ ডেথ কি বেরিয়েছে ? দেবজিৎ বললেন ম্যাসিভ হার্ট এট্যাক, তারপর সৌতিকের দিকে তাকিয়ে বললেন নাহলে কিন্তু তোমরা বিপদে পরে যেতে। ওদের সবার খুব খারাপ লাগলো একটা লোক এভাবে মারা গেলো, সমরেশ বাবুরা তিন ভাই ঠিক করলেন ওই কেয়ারটেকারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটা ভালো রকম অর্থসাহায্য করবেন। সুবীরেশ বাবুর একটু দুর্বল লাগছিলো উনি সবার থেকে বিদায় নিয়ে একটু শুতে গেলেন। 

            দেবজিৎ বাবু বেরোতে বেরোতে বললেন সমু দা ওই বাড়িটা এবার ডেমোলিশ করে ফেলো, কেয়ারটেকারের মৃত্যু তো ওই বাড়িতে প্রথম না, তোমাদের পুরোনো কেয়ারটেকার তো সাপের কামড়ে ওই বাড়িতেই মরেছিল। সৌতিক চমকে গিয়ে তাকাতে বিনীতা বলে 15-16 বছর আগে ওই ঘটনা হয়েছিল, তখন ও ছোট তাও  অল্প মনে আছে অনেক ঝামেলা হয়েছিল, সমরেশবাবুরা চেয়েছিলেন তার পর বাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে কিন্তু ভুতুড়ে বাড়ির তকমা লেগে যাওয়ায় কেউ কিনতে রাজি হয়নি। আর যারা রাজি হয়েছিল তারা যে দাম অফার করছিলো তা চার ভাগের এক ভাগ, তাই বিক্রি করা হয় নি। দেবজিৎ বাবু হেসে বললেন দিনের বেলায় ওই দিকে কেউ ভয়ে যায় না, এদিকে লোকাল কয়েকজন বললো লাল জামা পড়া একটা বাচ্চা মেয়েকে নাকি রাত বিরেতে ওই বাড়িতে ঢুকতে বা বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গেছে। যত্তসব গুজব। 

             এই কথা শুনে সৌতিক ও সমরেশবাবু পরস্পরের দিকে তাকালেন। সৌতিকের মনে হলো ওর হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। আগেই শুয়ে পড়ে সুবীরেশবাবুর কানে এই কথা পৌঁছায়নি। 


পাড়ায় ফিরে সবাই বাড়িতে ঢুকলেও সৌতিক ঢুকলো না এবং ওর দাদাকেও দাঁড়াতে বললো। ফোন করে সুজয় ও রতন কেও ডাকলো। সুজয় জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার সৌতিক আমাদের সবাইকে ডাকলি কেন ? কি হয়েছে ? সৌভিক বললো আমিও তো জানি না। সৌতিক বললো দেখো দাদা একটা ব্যাপারে আমার মনটা খচখচ করছে, হয়ত আমার মনের ভুল কিন্তু নিজেরা হাতে কলমে পরীক্ষা না করলে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। সৌভিক বললো কি ব্যাপার ? সৌতিক রতনের দিকে তাকিয়ে বললো মনে আছে রতনদা সেই মির্জাপুরের বাড়িতে ঝন্টুদা যখন সঞ্জয়কে ফোন করতে গেলো তখন দেখেছিলো টাওয়ার নেই, আমরা সবাই তখন পকেট থেকে নিজের নিজের ফোন বের দেখেছিলাম কারোর ফোনেই টাওয়ার ছিলোনা। রতন বললো হ্যাঁ মনে পড়েছে, তারপর তো ঝন্টু বাইরে বেরিয়ে ফোন করলো। সৌতিক বললো হ্যা ঠিক বলেছো, তারপর নিজের দাদার দিকে ঘুরে বললো তারপর দাদা তুই তো জানিস আমার Action Pro ক্যামেরাটা কত ভালো, ট্রেকিং এ গেলে ওটাই নিয়ে যাই, সৌভিক বললো হ্যাঁ জানি তো, কেন কি হয়েছে ? সৌতিক বললো সেদিন আমি ওই ক্যামেরাটা দিয়ে ওই বাড়ির পুরো ভিডিও করেছিলাম, কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখি পুরো ভিডিও distorted, রতন দা রা কত হাসাহাসি করলো, আমার মন খারাপ হয়ে গেছিলো, ভেবেছিলাম ক্যামেরাটা বুঝি খারাপ হয়ে গেলো , কিন্তু তার পরে একাধিকবার চেক করে দেখেছি ক্যামেরা ঠিকই আছে শুধু ওই দিন ওই বাড়িতেই ক্যামেরা কাজ করেনি। এর পর কালকে, যখন মেসোমশাই এর দাদা অসুস্থ হয়ে পড়লেন আমরা অন্তত কুড়ি জন প্যাণ্ডেলে ছিলাম, খেয়াল করে দেখো কারোর ফোনে টাওয়ার ছিল না, তারপর তুমি বাইরে বেরিয়ে ডাক্তারবাবুকে ফোন করো। সৌভিক বললো তাতে কি প্রমান হয় ? হতে পারে সেই সময় টেলিকম কোম্পানিগুলো কোনো জেনারেল সমস্যা হয়েছিল, আর তাছাড়া ওই বাড়ি আর এই প্যান্ডেল তো আর এক না। সৌতিক বললো শোনো তোমায় আর একটা ঘটনা বলি, পরশু আমি আর রিতিকা প্যান্ডেলে কয়েকটা সেলফি তুলি, যখন ছবি তোলা হয় তখন স্পষ্ট দেখেছি সব ছবি ঠিক আছে, কিন্তু পরে আপলোড করার সময় দেখি সব ছবি distorted এবং পেছনে ওই লাল পোশাক পড়া বাচ্চাটা আছে, আমি তো কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছি না। সৌভিক বললো লাল পোশাক পড়া বাচ্চার কেসটা কি ? সৌতিক বললো পরে বলছি আগে চল এক্সপেরিমেন্ট করি একটা। 

                 ওরা সৌতিক এর কথা মতো ঠিক করলো, দুজন প্যান্ডেলের সামনে দিয়ে ও দুজন পেছন দিয়ে প্যান্ডেলে ঢুকবে ও টাওয়ারের ওঠা নামা খেয়াল করবে, ওদের 4 জনের 8 টা সিম, এবং এই মুহূর্তে সবারই ফোনে ফুল টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া ঠিক হলো সবাই প্যান্ডেলের ভেতর নিজের নিজের ফোনে ফটো তুলবে এবং পরে ক্লাবে বসে সব ছবি দেখ হবে। ঠিক হলো সৌতিক ও রতন সামনে দিয়ে যাবে এবং সৌভিক ও সুজয় পেছন দিক দিয়ে। সৌতিক ইচ্ছে করে রতনের সাথে থাকলো কারণ মির্জাপুরে ওরা  দুজনেই ছিল। 

                 সৌতিক ও রতন হাতে ফোন নিয়ে পাশাপাশি এগোতে লাগলো, রতন মনে মনে ভাবলো সৌতিক বুঝি পাগল হয়ে গেছে। যেই তারা প্যান্ডেলের গেট দিয়ে ঢুকলো সঙ্গে সঙ্গে দুজনের ফোন থেকে টাওয়ার অদৃশ্য হয়ে গেলো, যেন দুজনের ফোনেই কেউ Aeroplane Mode অন করে দিয়েছে, রতন চমকে উঠলো। এবার সে সৌতিকের কথা বিশ্বাস করলো, সে বললো সৌতিক একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখি তো,ওরা  অবাক হয়ে দেখলো কয়েক পা পিছতেই ফোনে টাওয়ার ফিরে এলো, আবার এগিয়ে যেই প্যান্ডেলের গেট দিয়ে ঢুকলো আবার টাওয়ার চলে এলো। ওরা কয়েকবার বেরিয়ে ও ঢুকে দেখলো প্রত্যেকবারই একই জিনিস হয়েছে, ভেতরে গিয়ে দেখলো সৌভিকরা দাঁড়িয়ে আছে ও কারোর ফোনেই টাওয়ার নেই। সৌভিক জিজ্ঞাসা করলো হ্যাঁরে কেউ জ্যামার লাগে নি তো ? সৌতিক বললো আমাদের প্যান্ডেলে কে জ্যামার লাগবে আর পুরো প্যান্ডেল আমরা দাঁড়িয়ে বানিয়েছি, আমাদের অলক্ষ্যে কেউ করলেও টের পেতাম, আর তাছাড়া আমি যতটুকু জানি, কোথাও জ্যামার লাগালে তার আশেপাশে ও সিগন্যাল প্রবলেম হয়, আর এক্ষেত্রে তো গেটের বাইরে গেলেই ফুল টাওয়ার ফিরে আসছে। ব্যাপারটা অত্যন্ত সন্দেহজনক। 

              ক্লাবে বসে ওরা 4 জন নিজেদের ফোন পাশাপাশি রেখে নিজেদের তোলা ছবি দেখতে গেলো, আশ্চর্যজনক ভাবে দেখলো যে প্যান্ডেলের অন্য জায়গার ছবি ঠিকই উঠলেও কারোর ফোনে প্রতিমার ছবি স্পষ্ট ওঠেনি, হয় বেঁকে গেছে অথবা Blur হয়ে গেছে। 4 জনই যেন অদ্ভুত ভয়ে কেঁপে উঠলো। সৌতিক বললো দেখো দাদারা তোমরা শুনলে হয়ত হাসবে, আর তোমরা কেন আমায় কেউ বললে আমিও হাসতাম, আমি অনেক english horror ফিল্মে দেখেছি যে যদি কোনো জায়গায় paranormal force এর অস্তিত্ব থাকে তাহলে সেখানে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট ঠিক করে কাজ করে না, কারণ paranormal force নিজেই একটা তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র বা স্ট্রং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরী করে যার ফলে অন্যান্য ওয়েভ ঢুকতে পারে না। Youtube এও এই সংক্রান্ত ভিডিও আছে। কিন্তু এসব আমি কোনোদিন বিশ্বাস করিনি, নিছক বিনোদন হিসেবেই দেখেছিলাম কিন্তু আজ আমার নিজের বিশ্বাসই ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় রতন চেঁচিয়ে উঠলো এই তো, সবাই চমকে উঠে দেখলো সুজয়ের ফোনে একটা ছবিতে বোঝা যাচ্ছে কালীপ্রতিমার পাশে যেন একটা বাচ্চা মেয়ে লাল পোশাক পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। 

              সুজয় চেঁচিয়ে বললো এ অসম্ভব আমি যখন ছবি তুললাম তখন তো প্রতিমার পাশে কেউ ছিল না, আমার স্পষ্ট মনে আছে, সৌভিক ও বললো ঠিকই বলেছে ও, আমি ওর পাশেই ছিলাম, সত্যিই কেউ ছিল না, কিন্তু ও ফটোর মধ্যে কি করে এলো ? আর ভাই তুই এক্ষুনি কি এই বাচ্চাটার কোথায় বলছিলি। সৌতিক বললো হ্যাঁ দাদা, আর শুধু ফটো কেন বলছো পাড়ার বাচ্চারাও ওকে দেখেছে, আর আরেকটা কথা, এই বলে সৌতিক একটু ঢোঁক গিললো, জানো বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা কাল অনেক রাতে আমি এরকম একটা বাচ্চা কে প্যান্ডেলের ভেতর একা একা খেলতে দেখেছি, আর শুধু আমি না মেসোমশাই মানে বৌদির বাবা ও দেখেছেন। তারপর পুলিশ অফিসার দেবজিৎ বাবুর কথা সবাইকে জানিয়ে বললো উনি বলেছেন মির্জাপুরেও নাকি লোকে এরকম ডেস্ক্রিপশনের একটা বাচ্চাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে বেরোতে দেখেছে। সবার মুখ কেমন যেন শুকিয়ে গেলো। এমন সময় পাড়ার একটা ছেলে এসে জানালো পুজো শুরু হচ্ছে তাড়াতাড়ি সবাইকে মণ্ডপে আসতে। 

              সুজয় প্যান্ডেলের দিকে চলে গেলো, সৌভিক বাড়ি গেলো বৌকে আনতে। রতন সৌতিককে বললো কাজটা মনে হয় আমরা ঠিক করিনি রে, একেবারেই ঠিক করিনি। সৌতিক বললো আমারও তাই মনে হচ্ছে রতন দা।  


রাতে সমরেশ বাবু ভাইপো সুরঞ্জনের গাড়িতে সৌতিকদের পাড়ায় চলে এলেন। হারুবাবু ওদের সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে মণ্ডপের মধ্যে এনে বসালেন। হারুবাবুকে জানালেন যে ঘরে দাদা ওষুধ খেয়ে ঘুমোচ্ছেন, সাথে ওনার স্ত্রী ও ভাই সোমনাথ আছে। ওরা পরেরদিন সকালে আসবেন বলেছেন। সুরঞ্জনের স্ত্রী তানিয়া বারাসাতের মেয়ে, ও খুবই কালীভক্ত, এবছর শশুরমশাইয়ের হঠাৎ অসুস্থতার জন্য পাড়া ছেড়ে কাঁকুড়গাছিতে চলে আসতে হয়েছিল বলে ওর মন বেশ খারাপ হয়ে ছিল। তারপর যখন শুনলো যে সমরেশবাবু এই পাড়ায় কালীপুজোয় আসছেন ও সেই পূজামণ্ডপ তাঁদেরই পৈতৃক বাড়ির আদলে তৈরী, তখন আসার লোভ সামলাতে পারেনি। হারুবাবু খুব খুশি হয়ে বললেন খুব ভালো করেছো মা, মনে করো এ তোমাদেরই বাড়ির পুজো, চলো মণ্ডপে চলো। সুরঞ্জন বললো মেয়ে কি করবে ? ওকে তোমাদের বাড়িতে রেখে আসি।  সুরঞ্জনের মেয়ে সুস্মিতা প্যান্ডেল দেখে খুব খুশি, সে কিছুতেই বাড়ি যেতে রাজি হলো না। সৌতিক বললো চিন্তা করবেন না দাদা, এখানে তো ওর সমবয়সী অনেকেই আছে, আমরাও সারারাত এখানেই থাকবো। আপনারা পুজোয় বসুন। 

                পুজোর আয়োজনে সৌতিকের যা আগ্রহ, পুজোতে ততটা কোনোদিনই ছিল না, ও অনেকক্ষন রিতিকার সাথে গল্প করে, প্যান্ডেলের কোনায় একটা চেয়ারে বসে, কানে হেডফোন গুঁজে ফোনে একটা অ্যাকশন ফিল্ম দেখতে লাগলো, ঘন্টাখানেক বাদে ওর মনে হলো কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে, যেন নিঃস্বাশ নিতে পারছে না, ও তাড়াতাড়ি পুজোর ওখানে গিয়ে দেখলো সবাই ক্লাবের একজন কে বকাবকি করছে, যে কি বাজে ধুনো এনেছিস যে সবার মড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, ও বলছে না গো খুব ভালো ধুনোই এনেছি, কিন্তু ওর কথা কেউ শুনছে না। ঠাকুরমশাই বললেন এভাবে পুজোয় বিঘ্ন ঘটলো, খুব একটা ভালো হলো না ব্যাপারটা। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো, তবে সৌতিক এর মনে হলো এই অস্বস্তি ধুনোর জন্য হয়নি, ধুনোর গন্ধ ও খুব ভালো চেনে, এ যেন দুর্গন্ধ, হঠাৎ ওর মির্জাপুরের বাড়ির দুর্গন্ধের কথা মনে পড়ে গেলো। এমন সময় তানিয়া জিজ্ঞাসা করলো, দাদা মেয়ে কে বাড়িতে দিয়ে এসেছেন ? সৌতিক চমকে গেলো, ও একেবারেই ভুলে গেছিলো, বললো কৈ না তো, নিশ্চই এখানেই আছে আমি দেখছি, তানিয়া বললো আমিও আসছি। 

                সুস্মিতা প্যান্ডেলের মধ্যে কোথাও ছিল না, যথেষ্ঠ রাত ও হয়েছে প্যান্ডেলে কোনো বাচ্চাই এখন আর নেই, সৌতিক বেশ ভয় পেয়ে গেলো। প্যান্ডেলের সামনে কেউ নেই, ক্লাবঘরে উঁকি দিয়েও কাউকে দেখা গেলো না, তানিয়া বললো মেয়েটা যে কি দুষ্টু হয়েছে, কোথায় যে চলে গেলো, প্যান্ডেলের পেছন দিকটা একটু দেখা যায় না ? সৌতিক তানিয়াকে নিয়ে প্যান্ডেলের পেছন দিকে এসে দেখলো সুস্মিতা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ও কার সাথে যেন কথা বলছে, সৌতিকের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। তানিয়া মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার তুই পুজো ছেড়ে প্যান্ডেলের পেছনে কি করছিস। সুস্মিতা বললো আরে মা এখানে আমার নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে, ওর সাথে কথা বলতে বলতে আমি এখানে চলে এসেছি , জানো মা ওর সাথে নাকি কেউ খেলে না, আমি বলেছি কোনো চিন্তা নেই, আমি খেলবো। তানিয়া জিজ্ঞেস করলো তা তোমার নতুন ফ্রেন্ডের নাম কি ? সুস্মিতা বলল ওর নাম বেশ ইন্টারেস্টিং, ওর নাম হলো ভবতারিণী, তানিয়া বললো কি? এযুগের মেয়ের নাম ভবতারিণী, স্ট্রেঞ্জ। সুস্মিতা অনর্গল বলেই চলছিল যেন মা ফ্রেন্ড বলেছে আগে নাকি ও অনেক বড় বাড়িতে থাকতো এখন নাকি খুব ছোট জায়গায় থাকে ওর খুব কষ্ট হয় আমাকে বলেছে ওর নতুন বাড়ি দেখতে নিয়ে যাবে।  তানিয়া ভাবলো হয়ত গ্রামের মেয়ে তাই এরকম নাম, এখন কলকাতার পাখির বাসার মত ফ্ল্যাটে এসে হয়ত কষ্ট হচ্ছে, অনেকটা ওর নিজের মত। 

               সৌতিক সুস্মিতাকে জিজ্ঞাসা করলো তোমার সাথে ওই ফ্রেন্ডের কোথায় দেখা হলো, ও বললো কেন প্যান্ডেলে ? সৌতিকের খটকা লাগলো কারণ প্যান্ডেলের মধ্যে যতগুলো বাচ্চা ছিল তাদের সবাইকেই ও চেনে, এবং ও ভালোভাবে জানে কারোর নাম ভবতারিণী নয়। ও হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা তোমার ওই ফ্রেন্ড কে কেমন দেখতে বলতে পারবে ও সে কি রঙের পোশাক পরে ছিল। সুস্মিতা হেসে বললো ওকে দেখতে লক্ষী ঠাকুরের মত এবং ও একটা লাল রঙের ফ্রক পরে ছিল। সৌতিকের শিরদাঁড়া দিয়ে যেন একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। 

              রাত 3:30 র মধ্যে পুজো মিটে গেলো, দুয়েকজন বাদে সবাই বাড়ি ফিরে গেলেন, সৌতিক ও সুরঞ্জন ও তানিয়া কে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে এগোলো, সুস্মিতাকে তখনই সমরেশ বাবুর সাথে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলো। বাড়ির গেটে পৌঁছে সৌতিক একবার পেছন ফিরে প্যান্ডেলের দিকে তাকালো, স্পষ্ট দেখতে পেলো প্যান্ডেলের গেটের ভেতর লাল জামা গায়ে কেউ একটা ঘুরছে , ও দৌড়ে প্যান্ডেলের মধ্যে চলে এলো, ওর সাথে আরো দুএকজন ছিল কিন্তু প্যান্ডেলে ও তার আশেপাশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাউকে পাওয়া গেলো না। 

১০

আগেরদিন রাত জাগায় সবারই উঠতে অনেক দেরি হলো। সৌতিক ঘুম থেকে উঠে দেখলো 9:30 টা বেজে গেছে। সেদিন সে বেডরুমেই শুয়েছিল, ডাইনিং এ এসে শুনলো কিছুক্ষন আগে সুরঞ্জনরা বেড়িয়ে গেছে, ওরা কাঁকুড়গাছিতে সুবীরেশবাবুর সাথে দেখা করে হাওড়ার মন্দিরতলার দিকে যাবে ওখানে নাকি বিশাল দিওয়ালি পার্টি আছে। সমরেশবাবু সেখানেই ছিলেন বললেন ড্রাইভারের সাথে কথা হয়েছে, সুরঞ্জনরা কাঁকুড়গাছি থেকে বেরিয়ে গেলেই, ড্রাইভার সবাইকে নিয়ে এখানে চলে আসবে। সৌতিকের তখনো ঘুমের ঘোর কাটেনি, ও চেয়ারে বসে বসে আগেরদিন রাতের কথা ভাবত লাগলো। সমরেশ বাবু সৌতিক কে বললেন, আচ্ছা হারুদা র নম্বর কি তোমার কাছে আছে ? দাদা চাইছিলো।  আমি এতক্ষন কথা বললাম, নম্বর টা নেওয়া হয়নি। সৌতিক ওনাকে হারুবাবুর নম্বর দিয়ে দিলো। 

                দুপুরের আগেই সুবীরেশ বাবুরা সবাই চলে এলেন, সেদিন সৌতিকদের ক্লাবে বিরাট খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হয়, ভোগের খিঁচুড়ি, আলুরদম বেগুনি তো থাকেই, তার সাথে ফ্রায়েড রাইস, চিলি পনীর, বেবিকর্ন ,চাটনি পাঁপড় , মিষ্টি সব মিলিয়ে বিরাট ব্যাপার। সৌতিক, রতন, সুজয় সবাই পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত ছিল। বিকেল 4 টের পরে সব সেরে নিজেরা খাওয়াদাওয়া করে বাইরে এসে ওরা দেখলো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে। কারণ ক্লাবের সামনে সমরেশবাবুরা তিন ভাই, হারুবাবু, সৌতিকের বাবা মা ও আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন ও তাদের সঙ্গে আছেন ক্লাবের বরাবরের প্রতিমা শিল্পী বিভাস পাল। সৌতিকের বাবা ওদের দেখে বললেন হ্যাঁরে বিভাস কি বলছে ? এবারের প্রতিমা তোরা ওকে দিয়ে বানাস নি ? সুবীরেশ বাবুর অনুরোধে হারুদা ওকে ডেকে এনেছে। তাহলে কে বানালো এই প্রতিমা। চুপ করে আছিস কেন ? উত্তর দে। 

               সৌতিকের যেন গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না, রতনই প্রথম উত্তর দিলো, আসলে কাকু এই প্রতিমা কেউ বানায়নি, বানানোই ছিল। হারুবাবু বললেন বানানো ছিল মানে ? কোথায় বানানো ছিল। রতন বললো আসলে মির্জাপুরের বাড়িটায় এই প্রতিমাটা ছিল, আমরা দেখে বুঝেছিলাম যে ওই প্রতিমায় কোনোদিন পুজো হয়নি, সাথে গাড়ি ছিল আমরা ওই প্রতিমাই তুলে নিয়ে চলে এসেছি, সময়ের কারণে যেটুকু ধুলো ময়লা পড়েছিল বা সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, সেটা আমরা ঠিক করে নিয়েছি। এবং সেই জন্যেই এই প্যান্ডেলের সাথে এই প্রতিমা এতো রিয়ালিস্টিক লাগছে। সুবীরেশবাবুকে দেখে মনে হলো ওনার বুঝি দ্বিতীয় বার হার্ট এট্যাক হয়ে যাবে। উনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন এ তোমরা কি করেছো ? আমাদের বাড়ির প্রতিমা তুলে এনেছো , কেন, কেন করেছো এরকম ? রতন বললো দেখুন কাকু আসলে এবছর আমাদের বাজেট কম, তার মধ্যে সম্পূর্ণ কাকতালীয় ভাবে আমাদের সাথে সেদিন একটা ম্যাটাডোর গাড়ি ছিল এবং দেখলাম প্রায় নতুন একটা প্রতিমা ওখানে পরে রয়েছে, তাই খানিকটা মায়ের ইচ্ছা মনে করেই আমরা ওই প্রতিমা নিয়ে এসেছি, আর দেখুন আপনাদের বাড়ির ঠাকুর এতবছর তৈরী হয়ে জঞ্জালে পরে ছিল, আজ তিনি পুজো পেলেন, এতে তো আপনার ভালো লাগার কথা। সুবীরেশবাবু খুব রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে গেলেন, সমরেশ ও সোমনাথ বাবু একসাথে বলে উঠলেন অযথা রাগ করছো কেন দাদা ও তো ঠিকই বলেছে, আমাদের তো মনেও ছিলোনা যে ওই বাড়িতে একটা প্রতিমা তৈরী হয়ে পরে রয়েছে। আজকে ওরা সেই প্রতিমাকে নিয়ে এসে পুজো করছে এতে তো আমাদের খুশি হওয়ার কথা , আমাদের তো মনে হচ্ছে এই পুজোটা যেন আরো বেশি করে আমাদের বাড়ির পুজো হয়ে উঠলো।  তবে সৌতিক তোমরা একটু জানাতে পারতে। না জানিয়ে আনাটা তোমাদের ঠিক হয়নি, দেখছো দাদা কেমন শক পেয়েছে, বুড়ো মানুষ বুঝতেই তো পারছো। সৌতিক বললো সত্যি মেসোমশাই আমরা এতটা ভাবিনি, আমাদের ক্ষমা করে দিন। সুবীরেশবাবু খানিকটা বিড়বিড় করে বলে উঠলেন ” মায়ের ইচ্ছা, সবই মায়ের ইচ্ছা “।    

            রাতে মেয়ের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে সমরেশবাবু সৌতিককে জিজ্ঞাসা করলেন ওই লাল জামা পড়া মেয়েটাকে আর দেখেছো নাকি ? সুবীরেশ ও সোমনাথ বাবু ও পাশেই ছিলেন, তারা জিজ্ঞেস করলো কোন মেয়ে ? ওদের কে সৌতিক সংক্ষেপে সব জানিয়ে সমরেশ বাবুকে বললেন হ্যাঁ মেসোমশাই দেখেছি কিন্তু খুঁজতে গিয়ে পাইনি, সত্যি ব্যাপারটা সন্দেহজনক , তার মধ্যে সে আবার আপনাদের নাতনি সুস্মিতার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে, ভারী অদ্ভুত একটা নাম বলেছে ভবতারিণী, আজকের দিনে ওই নামই তো বেমানান।  ওই নাম শুনে সুবীরেশ বাবুর মুখ যেন রক্তশূন্য হয়ে গেলো, তিনি যেন চেয়ার থেকে ওঠার বা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। সোমনাথ বাবু সাথে সাথে উঠে দাদার জন্য জল আনতে গেলেন। সমরেশ বাবুও যেন খানিকক্ষণের জন্য মৌন হয়ে গেলেন। 

              সুবীরেশবাবু একটু সুস্থ বোধ করলে, সোমনাথবাবু জিজ্ঞাসা করলেন আচ্ছা এই ভবতারিণী নামটা কেমন চেনা চেনা লাগছে না। মনে সমরেশবাবুর ও পড়েছে কিন্তু তিনি কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বললেন সোম তোর মনে নেই, বাবার এক কর্মচারী আমাদের বাড়িতেই থাকতেন ওনার মেয়ের নাম ছিল ভবতারিণী, তোর সঙ্গে খুব ভাব ছিল। প্রায় তোরই সমবয়সী ছিল, আমরা ঠাট্টা করে বলতাম তোর সঙ্গে ওর বিয়ে দেব। সোমনাথ বাবু যেন বিদ্যুতের শক খাওয়ার মত চমকে উঠে বললেন, মনে পড়েছে, কিন্তু যতদূর মনে পড়েছে যেবার পুজোয় মা মারা যান, সে বছরই তো দিন 15 আগের থেকে ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। সমরেশ বাবু বললেন হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিস।  আমারও সব মনে পরে গেছে, কাকু অনেক খুঁজেছিলেন কিন্তু কোথাও মেয়েকে পাননি। সোমনাথ বাবু বললেন যে কিন্তু ওই নাম তো যে কারো হতে পারে, আমার পরিচিত অন্তত কুড়ি জনের নাম অভিষেক। সোমনাথ বাবু বললেন না রে পরশু রাত্রে আমি ওই মুখ স্পষ্ট দেখেছি, ফর্সা পানপাতার মোট মুখ আর সেই মিষ্টি হাসি, ও ওই ভবতারিণী, সুন্দর একটা লাল পোশাক করে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। সোমনাথ বাবু বললেন না তুমি ভুল করছো ওই ভবতারিণী হলে তো ওরও আমার মত ষাট ছুঁই ছুঁই বয়স হবে, আমরা বুড়ো হয়ে যাবো আর ও কি বাচ্চাই থেকে যাবে। এতক্ষনে সুবীরেশবাবু মুখ খুললেন। না রে সোম, সমু ঠিকই বলছে লাল জামাপড়ে ওটা ভবতারিনীই ছিল, সেদিন প্যান্ডেলে শুধু প্রতিমা দেখে আমার মাথা ঘুরে যায়নি, আমার মনে হয়েছিল প্রতিমার পেছন থেকে ও যেন হাসিমুখে উঁকি দিচ্ছে। এরপরে ফিসফিস করে বললেন ঠিক যেমনটা মা দেখেছিলো।          

                 বিনীতার অনুষ্ঠান হয়ে যেতে সমরেশবাবুরা তিন ভাই সৌতিকদের বাড়িতে চলে গেলেন। রাত্রে ব্যান্ড এর পারফর্মেন্স ছিল বলে সৌতিক বসে ছিল। অদূরে রতন ও সুজয় ও ছিল। হঠাৎ সৌতিক খেয়াল করলো, পাশের চেয়ারে একটা ফোন বেজে চলেছে। ও বুঝলো তিন বুড়োর মধ্যে কেউ ফেলে গেছে। ও ফোনটা ধরতে গিয়ে দেখলো সুবীরেশ বাবুর ছেলে সুরঞ্জনের নম্বর, সৌতিক হেসে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় কেউ বললেন ” হ্যালো কে বলছেন ?” সৌতিক নিজের পরিচয় দিতে ওপাশ থেকে বললো পুলিশের পেট্রল ভ্যান থেকে বলছি , যার ফোন , তার গাড়ির একসিডেন্ট হয়েছে, সবাইকে হসপিটালে ট্রান্সফার করা হয়েছে, আপনারা বাড়ির লোকেরা এসে দেখা করুন। 

১১

ভোররাতেই সবাই হাসপাতালে পৌঁছে গেলো গিয়ে দেখলো সুরঞ্জনরা 3 জন ইমার্জেন্সিতে শুয়ে রয়েছে। সুরঞ্জনের মাথায় সেলাই পড়েছে, ব্যান্ডেজ বাঁধা তবে সবার মধ্যে ওই অপেক্ষাকৃত সুস্থ, ওর মেয়ে সুস্মিতার নাকের হাড় ভেঙেছে, অপারেশন করতে হবে। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ওর স্ত্রী তানিয়া, সে তাড়াহুড়ো করে সিটবেল্ট বাঁধেনি, ওর মাথা ফেটেছে, নাকের হাড় ভেঙেছে, আবার দুটো দাঁত ও দেন হাতের কব্জির হাড় ও ভেঙে গেছে। R.M.O ডাক্তার বাড়ির লোকের সামনেই সুরঞ্জনকে বললেন, আপনার মাইল্ড ইনজুরি আপনাকে সকালেই ছেড়ে দেবে, আপনার মেয়ের নাকের হাড় কালকেই আমরা সেট করে দেব , ও পরেরদিন ডিসচার্জ পেয়ে যাবে, তবে আপনার মিসেস এর ইনজুরি কিন্তু ডিপ, ওনার রিকভারিতে কিন্তু যথেষ্ঠ সময় লাগবে। তবে কারোর কোনো ইন্টারনাল হেমারেজ নেই এটাই অনেক ভালো কথা। 

               সুবীরেশবাবু ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন যে তুই এক্সিডেন্ট কিভাবে করলি, তুই তো খুব ভালো ড্রাইভ করিস। সুরঞ্জন বললো  আরে বাবা আর বোলো না একে তো হালকা বৃষ্টি নেমেছিল ঐদিকে ,তার ওপর কয়েকটা ছেলে বাইক নিয়ে রেস্ করছিলো, তার মধ্যেও সাবধানেই চালাচ্ছিলাম , হঠাৎ করে ওই বাচ্চা মেয়েটা সামনে চলে এলো, আমি আর তাল সামলাতে পারিনি। সৌতিক প্রায় সঙ্গেসঙ্গে বলে উঠলো মেয়েটা কি লাল জামা পড়া ছিল আর মুখে অদ্ভুত হাসি ? সুরঞ্জন চমকে উঠে বললো হ্যাঁ, তুমি কিভাবে জানলে ? সুরঞ্জন আর্তনাদ করে উঠলেন ও ফিসফিস করে বললেন সবই আমার পাপের ফল কিন্তু আমার পাপের শাস্তি আমার ছেলে-নাতনি কেন পাচ্ছে । সোমনাথ বাবু সৌতিক কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের বিসর্জন কবে ? সৌতিক জানালো আজ রাতেই , সোমনাথ বাবু বললেন যত তাড়াতাড়ি হয় ততই  মঙ্গল। 

                সকালে ওরা সুরঞ্জন কে নিয়ে কাঁকুড়গাছির বাড়িতে ফিরে এলো। তানিয়া ও সুস্মিতাকে বেডে ট্রান্সফার করা হয়েছে। তানিয়ার প্লাস্টার হয়ে গেছে, বিকেলে দুজনের নাকের অপারেশনের টাইম পাওয়া গেছে। 

                 বিকেলে সুবীরেশবাবুরা তিন ভাই, ও সুবীরেশবাবুর স্ত্রী ও সুরঞ্জন হাসপাতালে এলো। সৌতিক ও ওনাদের সাথেই ছিল।  ওর খালি মনে হচ্ছিলো সবকিছুর জন্য ওই যেন দায়ী। তানিয়ার সাথে দেখা করে ওরা চাইল্ড ওয়ার্ডের দিকে গেলো। ওখানে গিয়ে দেখলো বাচ্চারা কিচিরমিচির লাগিয়ে রেখেছে, সবাই রয়েছে কিন্তু সুস্মিতার বেড খালি। ওরা ভাবলো হয়ত টয়লেটে গেছে কিছু বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও না ফেরায় ওরা নার্স কে জিজ্ঞাসা করলেন। নার্স কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করলেন যে ওরা সুস্মিতাকে দেখেছে কিনা , একটা বাচ্চা বললো ও তো ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেছে। সৌতিক চমকে গিয়ে বললো ফ্রেন্ড ? কোন ফ্রেন্ড ? বাচ্চাটি বললো কেন ওর যে ফ্রেন্ড দেখা করতে এসেছিলো, ও বললো যে খুব ছোট জায়গায় থাকে, এই বেডের মেয়েটা তো বললো চল তোর ছোট বাড়ি দেখে আসি, বলে ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেলো। সৌতিক জিজ্ঞেস করলো ওর ফ্রেন্ড কে তুমি দেখেছো ? কেমন দেখতে ? বাচ্চাটি বললো কেমন আবার দেখতে ভালোই দেখতে, একটা রেড কালারের ড্রেস পরে এসেছিলো। এই কথা শুনে সৌতিকের মনে হচ্ছিলো ওই এবার এডমিট হয়ে যাবে হাসপাতালে।  নার্স কে বললো আপনাদের CCTV ফুটেজ একটু দেখা যাবে। 

                  সৌতিক যা ধারণা করেছিল তাই দেখা গেলো, আনুমানিক যে সময় থেকে সুস্মিতা ফ্রেন্ডের সাথে বেরিয়ে গেছে, সেই সময় থেকেই CCTV ফুটেজ ডিস্টর্টেড, কিন্তু তার মধ্যেও  বোঝা গেলো সুস্মিতা লাল পোশাক পড়া কারো সাথে হাত ধরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে 

                   সুবীরেশ বাবু চেঁচিয়ে বলে উঠলেন এভাবে প্রতিশোধ নিলি আমার সাথে, ওরে নিতে হয় আমায় নিয়ে যা বাচ্চা মেয়েটা তো কোনো দোষ করেনি। 

১২

সুরঞ্জন বাবার হাত ধরে কেঁদে বললো, বাবা আমার মেয়ে কোথায় গেলো ? তানিয়াকে কি বলবো আমি ? আর তুমি এটা কেন বলছো যে ও তোমার সঙ্গে প্রতিশোধ নিয়েছে, কি করেছো তুমি ? সোমনাথ বললেন হ্যাঁ দাদা ভবতারিণী তো আমার সাথে খেলতো, তোমার থেকে তো ও অনেক ছোট ছিল, তোমার ওপর ওর রাগ হলো কেন ? এমন সময় আরেকজন নার্স জানালেন তানিয়াকে MRI করতে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওরা গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে দেখলো, রেডিওলোজি সেকশনের গেট বন্ধ,ওরা বাইরে এসে দাঁড়ালো। সুরঞ্জন বলেই চলেছে বাবা তুমি এখনো চুপ করে আছো ? আচমকা যেন সমরেশবাবুর ছোটবেলার চাপা পড়া স্মৃতি মনে পরে গেলো। উনি সুরঞ্জনের দিকে একবার তাকিয়ে, নিজের দাদা কে বললেন আমার অস্পষ্ট মনে পড়ছে, সোম যখন ভবতারিনীর সাথে খেলতো তখন তুমি ওই ওপর নজর রাখতে, মা এই নিয়ে তোমায় একবার খুব বকাবকি করেছিল, তার সাথে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই তো ?

                         সৌতিক দূরে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিলো, যদিও তার ভালো লাগছিলো না এর মধ্যে ঢুকতে, তাও সে বললো এসব পুরোনো কথা রেখে আমাদের তো আগে পুলিশে একটা ফোন করা দরকার, সমরেশ বললেন ঠিক বলেছো এক্ষুনি দেবজিৎ কে একটা ফোন করি, বলে পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করতে গিয়ে দেখলেন ফোনে কোনো টাওয়ার নেই। উনি বললেন ফোনটা গেছে দেখছি, এই তোমরা একটু ডায়াল করো তো দেখি, নম্বর বলছি। কিন্তু সবাই চেক করে দেখলো কারোর ফোনেই সিগন্যাল নেই। সবাই সভয়ে সবার দিকে তাকালো, হঠাৎ রাস্তার সব আলো  নিভে গেলো। এরমধ্যে হঠাৎ সুরঞ্জন আর্তনাদ করে উঠলো, বললো ওই তো ওই মেয়েটা, কালকে গাড়ির সামনে ওই ছিল, সবাই দেখলো পার্কিং এ লাল জামা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুবীরেশ বললেন এই ডাইনি কোথায় নিয়ে গেছিস আমার নাতনিকে বল, তাড়াতাড়ি বল, নিতে হলে আমায় নে, ও তো কোনো দোষ করেনি, ওকে ছেড়ে দে। মেয়েটি হেসে বললো বলবো সব বলবো, আগে সবার সামনে স্বীকার করো তুমি আমার সাথে কি করেছিলে, তারপর বলবো। এই বলে সে মিলিয়ে গেলো।  

            সোমনাথ বাবু বললেন বলো দাদা ও কি বলতে বলছে বলো। সুবীরেশ বাবু বললেন সব জানাজানি হলে আমার এতদিনের পরিচিতি, মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে, আমায় জেলে ও যেতে হতে পারে। সুরঞ্জন দৌড়ে এসে বাবার কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো তোমার নাতনির থেকে মান সম্মান বড় হলো ? বলো বাবা বলতে তোমায় হবেই ?

               সুবীরেশবাবু কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, বাবার দীর্ঘদিনের কর্মচারী ছিলেন রামপ্রসাদ বাবু, ভিন জাতে বিয়ে করায় ওনাকে ওনার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো, তখন থেকে উনি আমাদের বাড়িতেই থাকতেন, যদিও কয়েকবছর বাদে ওনার স্ত্রী মারা যান তাও উনি অভিমানে নিজের বাড়ি ফেরেননি, বাবার খুব বিস্বস্ত লোক ছিলেন। ওরই মেয়ে ছিল ভবতারিণী, ভারি সুন্দর দেখতে ছিল, ফর্সা গায়ের রং আর পুরো পানপাতার মত মুখ, আমাদের সোমের বয়সী ছিল, ওর সাথে খেলে বেড়াতো। আমার ওকে খুব ভালো লাগতো, তখন আমি কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখছি, শরীরে একটা অন্যরকম উন্মাদনা ছিল, সেবার পঞ্চমীর দিনে সবাই পাড়ার ঠাকুর আনতে গেছিলো, কোনো কারণে আমি বাড়ি ছিলাম, হঠাৎ দেখি ভব নাটমন্দিরের পেছনের কুয়োয় স্নান করছে। ওই দেখে আমার শরীরের মধ্যে কেমন যেন করে উঠেছিল,আমি দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তারপর………… সোমনাথ বাবু রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন তারপর কি দাদা তুমি ওই মেয়েটার সর্বনাশ করলে ? ছিঃ ছিঃ সবাই তোমার এতো সম্মান করি আর তোমার কিনা এই ইতিহাস। আচ্ছা তারপর কি হলো ? সেদিনের পর ও গুম মেরে থাকতো ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো, আমি ওকে অনেক মিষ্টি, লজেঞ্চুস,খেলনা উপহার দিয়েছিলাম ওই লাল জামাটা ও আমিই দিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু কাজ হয়নি। ও মনঃস্থির করে দশমীর দিন যখন বাড়ির ছেলেরা বেড়িয়ে যাবে, তখন আমার মা কে সব খুলে বলবে। সেদিন আমি ওকে নাটমন্দিরের পেছনে চেপে ধরি, সেদিন ও লাল জামাটাই পড়েছিল, ও কিছুতেই মানতে চাইছিলো না, ঝগড়ার মধ্যে আমি ওকে জোরে ধাক্কা দিই, কাদায়  ওর পা স্লিপ করে যায় ও ও ছিটকে পরে ও মাথার পেছনটা কুয়োয় সজোরে ঠুকে যায়। ও সজোরে চিৎকার করে ওঠে, আমি লোকে শুনতে পাবে এই ভয়ে ওর মুখ চেপে ধরি, ও (বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন ) তারপর ওর মৃত্যু হয়। সোমনাথ মাথায় হাত দিয়ে বললেন তুমি শুধু রেপিস্ট নও, সাথে একজন খুনিও, মানে আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। তারপর কি হলো ?

              ওই আওয়াজ শুনে প্রবীর দৌড়ে আসে। সমরেশ জিজ্ঞাসা করলেন ওই তো আমাদের ঠাকুর বানাতো না ? সুবীরেশ বললেন হ্যাঁ, এবং ও আমাদের বাড়িতেই থাকতো।  নাটমন্দিরের পেছনটা বেশ পিছল ছিল। ও এসে এসব দেখে উল্টে পরে যায় , এরপর চিৎকার করে উঠতে আমি ওকে বলি যে ” দেখো তোমার হাতেও রক্ত লেগে আছে, তুমি চেঁচালে আমি কিন্তু লোককে বলবো তুমি ওকে মেরে ফেলেছো, এখন তুমিই বলো যে লোকে কার কথা বিশ্বাস করবে বাড়ির ছেলের না আশ্রিতের, উকিল রাখার তো পয়সা হবে না, সারা জীবন জেলে কাটাতে হবে,যদি ভালো চাও তাহলে লাশ গায়েব করো “, ও ভয়ে ভয়ে রাজি হয়ে যায়। এমন সময়ে সবাই বাড়ি ফিরে আসে ও আমার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। আমি ওখান থেকে চলে আসি। 

            সমরেশ বাবু বললেন কিন্তু ওই বডি ও কোথায় লুকিয়েছিল ? আমার মনে আছে, বাবা নিজের সব কর্মচারীদের নিয়ে ও পুলিশের সাথে আমাদের বাড়ি ও গোটা এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলো কোথাও তো পাওয়া যায় নি। সুবীরেশ বাবু বললেন পাবে কি করে ? লাশ তো রয়েছে কালীমূর্তির মধ্যে।  সবাই যেন চমকে উঠলো, বললো কি বলছো কালীমূর্তির মধ্যে কিন্তু কিভাবে ? সুবীরেশ বললেন বাজার থেকে বাড়ির পুজোর জন্য যে লক্ষী-সরস্বতী মূর্তি কেনো, নিশ্চই দেখেছো সেগুলো ফাঁপা হয়। আমাদের বাড়ির মূর্তি অনেকটা ঐভাবেই বানাতো প্রবীর, যেহেতু বড় মূর্তি তাই খড়-বাঁশ- কাঠ থাকতো কিন্তু নিচের দিকটা ফাঁপাই থাকতো। রং করা ছাড়া মূর্তি প্রায় রেডিই ছিল, ও তড়িঘড়ি মূর্তিটি পেছন দিকের ফাঁপা অংশটা ভেঙে বডি ঢুকিয়ে খড়-মাটি দিয়ে জ্যাম করে দেয়। 

           সুরঞ্জন বললো তারপর সেইভাবে মূর্তিটা পরে রইলো, কেউ কিছু বুঝতে পারলো না ? নারে মা ঠিক বুঝতে পেরেছিলো, আমায় প্রচন্ড বকাবকি করেছিল, কিন্তু আমি তো বড় ছেলে তাই আমার ওপর মায়ের অন্ধ ভালোবাসা ছিল। মা প্রবীর কে ডেকে পাঠায় ও নিজের একটা সোনার চেন ওকে উপহার দেয় ও নির্দেশ দেয় যে আরেকটা মূর্তি যেভাবে হোক তৈরী করতে হবে, ওই লাশওয়ালা মূর্তি দিয়ে বাড়ির পুজো হবে না। প্রবীর দেশ থেকে নিজের ছোট ভাইকে এনে দশদিনের মধ্যে আরেকটা মূর্তি তৈরী করে দেয়, তাতেই সেবছর আমাদের পুজো হয়, ওই মূর্তি টা  ওভাবেই পরে থাকে। সোমনাথ জিজ্ঞাসা করলেন সেই পুজোতেই তো মা মারা যান ? আচ্ছা দাদা সত্যি করে বলো তো মার মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল ?

          সুবীরেশ বললেন, না। মায়ের একদম শেষ সময়ে আমিই পাশে ছিলাম, মা কোন কাজে ছাদে উঠেছিল, নাটমন্দিরের দিকে চোখ যেতে মা নাকি দেখেছিলো কুয়োর পাশে ও দাঁড়িয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছিলো, এই দেখেই নাকি মা উল্টে পড়ে যান। এবং শুধু মা না, আমিও দেখেছিলাম, যখন মাকে দাহ করে বাড়ি ফিরি, আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম ওই একই জায়গায়। আমাদের প্রথমে প্ল্যান ছিল বিসর্জনের দিন দুটো মূর্তি একসাথে বিসর্জন দেওয়ার, কিন্তু আমরা কেউই আর ওই মূর্তিকে ছোঁয়ার সাহস দেখাইনি। তারপর থেকেই আমি ওই বাড়ি থেকে দূরে থাকি, আর শুধু বাড়ি কেন, আমার সুদূর গুজরাটে গিয়ে থাকার এটাই মূল কারণ। 

          সমরেশ বাবু বললেন আমি আরেকটু যোগ করি, আমাদের আগের যে কেয়ারটেকার মারা গিয়েছিলো সেই হচ্ছে প্রবীর, আর এবার যে মারা গেলো সে হল ওর ছোটভাই প্রতাপ। দাদাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওদেরকে কেয়ারটেকার করে গিয়েছিলো, মাসে ভালো মাসোহারাও পাঠিয়ে এসেছে এত বছর ধরে, আমরা ভেবেছিলাম এ দাদার বড় মনের পরিচয়, কিন্তু আজকে জানতে পারলাম আসল ব্যাপার টা কি ? সুরঞ্জন কাঁদতে কাঁদতে বললো ওরা ভবতারিনীর ক্ষতি করেছিল তাই হয়ত মারা গেছে কিন্তু সুস্মিতা তো কিছু করেনি ওর ক্ষতি কেন হলো। 

            হঠাৎ আড়াল থেকে একটা বাচ্চার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো, আমার ফ্রেন্ডের কোনো ক্ষতি এখনো হয়নি গো, ও ভালো আছে, তবে কতক্ষন থাকবে জানি না, আমার ছোট বাড়িতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। সুবীরেশ চেঁচিয়ে বললেন কোথায় তোর বাড়ি ? সে হেসে বললো সেকি তুমিই আমায় আমার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করলে আর তুমিই জানোনা। তাড়াতাড়ি এসো, অন্য কেউ এলে হবে না কিন্তু।

১৩

সুবীরেশ বাবু বললেন বুঝতে পেরেছি, সবাই বিনিতাদের পাড়ায় চলো, সুস্মিতা ওখানেই আছে প্রতিমার পেছনে। সৌতিক বললো দাঁড়ান একটু পাড়ায়  ফোন করে নিই, ফোন ধরে ও পাংশু মুখে বললো প্রতিমা তো বিসর্জনের জন্য বেড়িয়ে গেছে , সবাই তাড়াতাড়ি গোরাবাজার চলুন। ওরা  গোরাবাজারের রাস্তায় এসে দেখলো পরপর প্রতিমার লাইন পড়েছে, রাস্তা পুরো জ্যাম। সুবীরেশবাবু ওর মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে কাটিয়ে এগিয়ে চললেন, ও ওনার পেছনে সবাই। পুকুর পারে এসে সৌতিক দেখলো এই মাত্র ওদের প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে, এখনো জলে ভাসছে। সুবীরেশবাবু পুকুরে ঝাঁপ দিলেন। 

              এমনসময় এলাকায় লোডশেডিং হয়ে গেলো। সুবীরেশ দেখলেন যে প্রতিমাটা উল্টো হয়েই পড়ে রয়েছে, উনি জানতেন কোন জায়গাটা ফাঁপা ছিল, উনি জোরে জোরে ওই খানে আঘাত করতে লাগলেন। যেহেতু পুকুরে বেশ কিছু প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে গেছিলো, তাই ওনার সাপোর্টের অভাব হলো না। হঠাৎ প্রতিমার পেছন দিকটা ভেঙে গেলো ও উনি কিছু বোঝার আগেই প্রতিমার ভেতর থেকে দুটো ছোট হাত বেরিয়ে সুবীরেশ বাবুর গলা চেঁপে ধরলো , উনি অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলেন না ধীরে ধীরে ওনার চেতনা হারিয়ে গেলো। স্থানীয় লোকেরা যখন ওনাকে উদ্ধার করলো তখন ওনার দেহে আর প্রাণ ছিল না। তবে সুস্মিতাকে ওখানে পাওয়া গেলো না। 

              অনেক খোঁজাখুঁজির পর, সুরঞ্জন কাঁদতে কাঁদতে দুই কাকার সাথে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলো। সৌতিক পাড়ায় ফিরে এলো। তখন প্রায় মাঝ রাত, রাস্তায় কেউ নেই প্যান্ডেল টাও ফাঁকা। সৌতিক হেঁটে আসতে আসতে রিতিকাকে ফোনে সব রিপোর্ট জানাচ্ছিলো। হঠাৎ সৌতিকের ফোন কেটে গেলো, সে আবিষ্কার করলো যে সে কথা বলতে বলতে প্যান্ডেলের ভেতর চলে এসেছে, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো কোনো সিগন্যাল নেই, ও অত্যন্ত ভয় পেয়ে বাড়ির দিকে এগোতে গেলো এমন সময়ে ভেতর থেকে একটা কান্নার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে ভয়ে ভেতরের দিকে গেলো, গিয়ে দেখলো যেখানে প্রতিমা ছিল সেখানে একটা চালচিত্রের সামনে শুধু একটা প্রদীপ জ্বলছে। অল্প আলোয় ও দেখলো সেখানে সুস্মিতা বসে কাঁদছে  এবং তার কাঁধে হাত রেখে লাল পোশাক পরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে ভবতারিণী। সৌতিক জ্ঞান হারিয়ে উল্টে পরে গেলো।  

————————————————-সমাপ্ত—————————————————–

—— প্রসূন রঞ্জন দাশগুপ্ত (7890819602)

——————————————————————————————————————-

চিত্র সৌজন্য: গুগল             

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল