নিস্কৃতি

জয়ন্ত বাছাড়
0 রেটিং
25 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

ছুটি শেষ করে ক্যাম্পের ফিরছি । ভোর পাঁচটায় বেরিয়ে ট্রেন ধরে হাওয়ায় সেখান থেকে শিয়ালদহ সেখান থেকে বাসে চেপে সকাল দশটার মধ্যে বাসন্তী খেয়াঘাট পৌঁছে গেলাম । ওখান থেকে নৌকায় চেপে বসলাম পাঠানখালীর উদ্দেশ্যে । যখন পাঠানখালী পৌঁছলাম ঘড়িতে তখন বারোটা বাজতে বেশি দেরি নেই ।

নৌকা থেকে সবার আগে নেমে হাঁটা দিলাম । ঘাটে নদীর পাড় বরাবর রাস্তা, রাস্তার অন্য পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েক টা মাটির বাড়ি, প্রতি টা বাড়িতে বাবলা গাছের বেড়া দিয়ে ঘেরা কিছুটা করে অল্প ঘর সংলগ্ন জমি। প্রতি বাড়িতেই হাঁস মুরগির চাষ তাই বেড়ার বাইরে জাল দিয়ে ঘেরা। যাতে হাঁস মুরগি পালাতে না পারে। ওদিকে অনেক টা দুরে থেকে নৌকার যাত্রীরা নেমে ঐ রাস্তায় লাইন দিয়ে এগিয়ে আসছে। 

আমার ডান দিকে নদী এবং বাম দিকে এ বিক্ষিপ্ত জাল ঘেরা বাড়ি গুলো। নৌকা অনেক টা দূরে ছেড়ে এসেছি । ইতিমধ্যে পেটে ছুচোয় ডন দিতে শুরু করেছে । ইতস্তত ভাবে উঁচু নীচু রাস্তা পেরিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলেছি । এমন সময় বামদিকে রাস্তার ধারেই আমার থেকে কিছুটা দূরে দেখলাম কিছু একটা নড়ছে । 

ভালো করে লক্ষ্য করতে দেখলাম  একটা চার পাঁচ ফুট লম্বা কালো সাপ ফনা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । দেখেই মনে হলো প্রচন্ড রেগে আছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাশের বেড়া ঘেরা জালটা খুব অস্বাভাবিক ভাবে ঝটপট করে নড়ে উঠলো। ভালো করে দেখলাম আরেকটি প্রমাণ সাইজের কালো সাপ সেই জালে আটকে গেছে । সম্ভবত তারই সঙ্গিনী কিছু করতে না পেরে ফনা তুলে রাগে ফুঁসছে । ওদিকে সঙ্গী টি যত জাল ছাড়াতে চাইছে ততই আরো জড়িয়ে যাচ্ছে। 

কি করবো সাতপাঁচ ভাবছি । ঘাবড়ে না গিয়ে ভাবলাম যদি সাপটাকে ছাড়িয়ে দিতে পারি তো খুব ভালো হয়। পাগলা দাশুর মতো না হলেও আমার পিঠ ব্যাগে অল্প বিস্তর কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন ছুরি বা ব্লেড কিছু না কিছু একটা থাকতো। দেখলাম একটা ব্লেড রয়েছে । ভাবলাম এটা দিয়েই অপারেশন টা চালাতে হবে , এদিকে প্রচন্ড খিদে পেয়েছে । তাই হোক এদেরকে মুক্তি দিয়েই তবে ক্যাম্পে ফিরবো , আপাতত ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড ।

সাবধানে জালের দিকে এগোতে লাগলাম কিন্তু তার সঙ্গিনী টি আমাকে ফনা তুলে রাগে ফোঁস ফোঁস করে এমন তেড়ে আসতে লাগলো যে যেকেউ ধারে কাছে যাওয়ার সাহস পাবে না । কিছু টা সাহস সঞ্চয় করে এগোলাম । 

এরকম একটা কান্ড দেখে আমার পিছনে নৌকার নেমে আসা বাকি যাত্রীরা দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাপটা সরে গেল না । আমি নির্দিধায় সাপ টাকে স্পষ্ট বাঙলায় বললাম – সরে যা ,আমি তোর সঙ্গীর কিছু ক্ষতি করবো না , একটু সময় দে , দূরে গিয়ে দাঁড়া । সাপটা বাংলা বুঝলো কি না জানিনা দেখলাম মন্ত্রমুগ্ধের মত সে একটু দুরে সরে গেল । 

ক্যাম্পের লোক বলে যাত্রীদের অনেকেই আমাকে চেনেন । আমাদের এখানে হলে লোকজন সব লাঠি সোটা নিয়ে সাপ দুটোকে মারতে চলে যেতো কিন্তু সুন্দর বনের লোকেদের জীবনের সঙ্গে সাপের বসবাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ওরা এতটা মারমুখী নয়। তাই আমাকে অনেকেই সাবধান করতে লাগলেন। 

কোন কথা কানে না তুলে তাদের কে ইশারায় চুপ করতে বললাম। বলে ধীরে ধীরে জালের কাছে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু যে ফাঁদে পড়েছে সে আমার কথা শুনবে কেন । আমি কাছে যেতেই সে দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে জাল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। দেখলাম নাইলনের জালের দুই তিন পাট সুতো সাপটার মুখের ভিতর দাঁতের ফাঁকে আটকে গেছে খানিক রক্ত বের হচ্ছে, বাকি দেহের অন্যান্য অংশেও জাল জড়িয়ে আছে যা ছাড়ানো অসম্ভব।

আবার মন্ত্র পড়লাম, চুপ কর, তোকে বাঁচাতে এসেছি, চুপ কর , কিছু টা দুরে থেকে তার সঙ্গিনী আমাকে লক্ষ্য করতে লাগলো । সম্ভবত আগের রাতে মুরগির বাচ্চা শিকার করতে এসে থেকেই আটকে পড়েছে । অনেক ক্ষন আটকে থাকায় কিছু টা শক্তিও কমে এসেছে । 

কিছু ক্ষণ পরে সাপটা চুপ করে গেল। ব্যাগ ঘেঁটে ব্লেড বের  করলাম, লেজের দিকে হালকা হাত বুলিয়ে আরেকবার চুপ করতে বলে ব্লেড দিয়ে খুব সন্তর্পনে প্রথমে শরীরের অংশের জাল কাটতে লাগলাম। সে বুঝে গিয়েছিলো যে আমি তাকে বাঁচাতেই এসেছি । আস্তে আস্তে জালের সব সুতো  কাটা হয়ে গেলে শেষে মুখের ভিতর খুব সাবধানে ব্লেড চালালাম। তিনটে দাগ মারতেই সুতো কেটে গেল। জাল  কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাপটা পোষমানা জন্তুর মতোই চুপ করে শুয়ে রইলো ।

সব সুতো কাটা হয়ে গেলেও সাপটা আর নড়ছিলো না। হাত দিয়ে আবার হালকা গায়ে হাত বুলিয়ে বললাম যা তুই মুক্ত। বলতেই সে ধীরে ধীরে নড়াচড়া শুরু করলো । ভাবখানা এমন যেন এতক্ষন আমার আদেশের অপেক্ষায় ছিলো । 

ধীরে ধীরে সোজা সঙ্গীনির দিকে এগিয়ে গেল। দুজনে মুখে মুখ মিলিয়ে কিছূ কথা বিনিময় করে  আমার দিকে দুজনেই ফনা তুলে আরেকবার  ফিরে তাকালো । কি জানি হয়তো নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য আমাকে অভিবাদন জানালো কিনা। তার পর খুব দ্রুত ঝোপের মধ্যে মিলিয়ে গেল। 

উপলব্ধি করলাম যে পৃথিবীটা শুধু আমাদের নয় ওদেরও। বিষধর কি না জানিনা তবে ওরাও যে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারে সেই ফিরে দেখা চাহনি থেকেই বুঝেছিলাম । জনতার স্বতঃস্ফূর্ত হাততালিতে আমার সম্বিত ফিরলো । এবার ফেরার পালা ।

নিজের গ্ৰাম থেকে কোথায় আমি প্রায় একশো মাইল দূরে একদিকে দুটি অবলা প্রানী ও অন্য দিকে একদল নৌকা যাত্রীর অভিবাদন আমাকে কতটা আপ্লুত করে ছিলো যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যেটা আজও ভুলতে পারিনি ।

If you wanna buy uk best quality replica rolex watches, you cannot miss this website:www.rolexreplicaswissmade.com. It must make you feel regret it!
আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল