পাঁচ
কথোপকথনঃ 1
26 শে জানুয়ারি, 2000 , সকাল 8.15
সঙ্গীতা বসে আছে সুধাংশুশেখরের বসার ঘরে , উনিও এসে বসেছেন। সঙ্গীতা বলল “স্যার আমি আপনাকে বেশী প্রশ্ন করব না, আপনি নিজের মত করে আপনার গল্প বলে যান, আমি আপনার ফ্লো নষ্ট করব না, কোথাও অতিরিক্ত কিছু জানার থাকলে তবেই আপনাকে বিরক্ত করব”।
সুধাংশুশেখর খুশিই হলেন। বললেন “ ঠিক আছে শুরু করি, আমার জন্ম পুরববঙ্গের খুলনা জেলায় কয়রা তে 1914 সালে, আমরা এক ভাই ও এক বোন ছিলাম, আমার বোন বর্তমানে আর নেই, খুলনার দক্ষিনে আছে ধরলা নদী এবং তার দক্ষিনে হল বঙ্গোপসাগর, সেই সময়ে কলকাতা বন্দর থেকে রোজ পণ্যবাহী জাহাজ আসতো আর ছোট ছোট নৌকায় ধরলা, পশুর, ইত্যাদি নদী দিয়ে সেই পন্য মুল ভুখন্ডে আসতো। আমার বাবার দুটো নৌকা ছিল, বেশ স্বচ্ছল অবস্থা ছিল আমাদের, তাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের খাওয়া পরার চিন্তা ছিল না, পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, আর একটা ঝোঁক ও ছিল।“ একথা বলে সুধাংশুশেখর একটু থামলেম, থেমে হেসে বললেন “ আর সেটাই ছিল আমার আসল ঝোঁক, সেটা হল অভিনয়ের “।
চমকে উঠলো সঙ্গীতা, বলল “ কি বলছেন স্যার, আপনি অভিনয় করতেন ?”
সুধাংশুশেখর বলতে থাকলেন “ হ্যাঁ, গ্রামে বিভিন্ন পালা লেগেই থাকতো, আমি ছোট থেকেই সেসবে ছোট বড় রোলে অভিনয় করতাম, যত বড় হতে লাগলো অভিনয়ের নেশা বাড়তেই থাকতে লাগলো, এবং সত্যি বলতে কি এই অভিনয়ের টানেই আমার কলকাতায় আসা, আর দেখ আজ আমি এতটাই কলকাতার লোক হয়ে গেছি যে পূর্ববঙ্গের কথার কোন টানই আমার মধ্যে আর নেই”।
সঙ্গীতা বলল “সত্যিই ইন্টারেস্টিং, আচ্ছা স্যার আপনি একাই আপনার বাড়ি বা পাড়া থেকে অভিনয় করতেন না আপনার কোন বন্ধুবান্ধব বা সঙ্গিসাথী ছিল “?
সুধাংশুশেখর হেসে বললেন “ আরে ছিল ছিল, বলছি, দেখ পালা বা যাত্রা তো আর একদু জনের কাজ না, দলগত প্রচেষ্টা , তবে আমার বাড়ির কেউই এ বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না, পাড়াতুতো এক দাদা ও কাকা ছিলেন, বলতে গেলে ওই কাকার হাত ধরেই আমার অভিনয় জীবনের হাতে খড়ি।
এইভাবে সুধাংশুশেখর বলে চললেন তার ছোটবেলার বিভিন্ন স্মৃতি এবং সঙ্গীতা প্রয়োজন মত নোট করে চলতে লাগলো, এভাবে প্রায় ঘন্টাদুই চলল। সঙ্গীতা আচমকা বলল “স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করছি, আপনি ছোটবেলায় ইব্রাহিম বলে কাউকে চিনতেন”।
সুধাংশুশেখর যেন একটু চমকে উঠলেন, তারপর হেসে বললেন “হ্যাঁ চিনতাম বৈকি, সে তো ছিল আমার সবসময়ের সঙ্গী, আমরা পড়া, খেলা , অভিনয় একসাথেই করতাম, সে ছিল আমার ছোটবেলার প্রানের বন্ধু, তবে তুমি ওর কথা কোথায় শুনলে “।
সঙ্গীতা বলল “ স্যার আমিও খানিকটা রিসার্চ করেই এসেছি, তো তার সম্পর্কে একটু বলুন না”।
সুধাংশুশেখর খানিকক্ষন চুপ করে রইলেন তারপর বললেন “ ওর কথা তো বলতেই হবে, ওর কথা না বললে তো আমার গল্পই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, আমার মুখের এই পোড়া দাগটা যে ওরই দেওয়া “।
সঙ্গীতা বলল “ কিন্তু স্যার শ্বশুরমশাই যে বলেছেন যে এই আঘাতটা একজন দেশদ্রোহীর সাথে লড়াই তে আপনার লেগেছিল, আপনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তারপরে”।
সুধাংশুশেখর বললেন “ অভ্র থিকই বলেছে মা, সেই দেশদ্রোহীই হল আমার বাল্যবন্ধু ইব্রাহিম, এই হাতেই যার প্রান নিতে হয়েছে আমায়। আজও চোখ বন্ধ করলেই ওর মুখটাই ভেসে ওঠে”।
সঙ্গীতা বলল “ স্যার একটা অনুরোধ আছে, আপনি নিজের হাতে একটা মেসেজ বা মুখবন্ধ লিখে দেবেন, এই ইন্টারভিউ টার সাথে দেব ।“
সুধাংশুশেখর বললেন “ ঠিক আছে পরের দিন নিয়ে যেও “।
ছয়
গোয়েন্দা
24 শে আগস্ট 1999, সকাল 7 টা
মামনি তখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেনি, আরতি একটা ট্রে তে দুকাপ চা ও বিস্কিট নিয়ে মেয়ের ঘরে এলেন , এসে মামনি কে ডেকে বললেন “ কিরে এখনও উঠিসনি ? অফিস যাবি না ?”। মামনি চা টা নিয়ে বলল, “ মা তোমার জেঠু তো জিনিয়াস লোক ছিলেন গো, ওনার খাতা টা সারারাত ধরে দেখেছি, এই তো ঘন্টাদুয়েক আগে শুলাম, কি সুন্দর করে ছবি এঁকে রেখেছেন প্রত্যেক অভিনেতার,চেহারার মাপ, পোশাকের মাপ, সব লেখা আছে, এত ভালোভাবে যেন মনে হচ্ছে ফটো তলা হয়েছে, আর ভাবো, এতদিন আগের কাগজ, প্রায় একই রকম আছে।“ আরতি হেসে বললেন “এসব ইংরেজ আমলের কাগজ, এত সহজে কি আর নষ্ট হয় রে , ও হ্যাঁ আর শোন তুই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে, শুভ ফোন করেছিল, ও আসছে, এখানেই জলখাবার খাবে, আর বলল তোকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে ও বেড়িয়ে যাবে বলল”।
মামনি খুবই খুশি হল, কারন মামনি ও ওর বর শুভ দুজনকেই কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, কারন দুজনের কেউই ডেস্কজব করে না, তাই নিজেদের জন্য সময় খুব কমই পায়, তাই এরকম একসাথে জলখাবার খাওয়া ও গল্প করার সুযোগ কমই হয় ওদের। মামনি ঠিক করলো, শুভ এলেই এই খাতাটা দেখাবে।
শুভ খাতাটা দেখে খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়লো, বলল “ এ তো নিছক নাটকের খাতা নয় এ এক অমুল্য সৃষ্টি, এক কাজ কর তুমি তো রাতে বাড়িই ফিরবে, বাবা কে এটা দেখিও, বাবা এখন রিটায়ার করার পর যে আড্ডায় যান, আরে আমাদের বাড়িতেও তো একবার এসেছিলেন সবাই, ওখানে এক ভদ্রলোক আছেন , আমি জানি উনি আর্ট কলেজের সাথে যুক্ত, বাবাকে বলবো এটা ওনাকে দেখাতে, উনিই এটার সঠিক মুল্য নির্ধারণ করতে পারবেন”।
সব শুনে মামনি বলল “ সে তে ঠিকই আছে কিন্তু তুমি রাতে ফিরবে না কেন? কোথায় যাবে আবার ?”। শুভ বলল “ সব কথা বলা যাবে না, পুলিশ রা সব কথা ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারে না “।
মামনি ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলল “ ন্যাকামো মারার যায়গা পাও না, সব কথা বলা যায় না, তারপর শেষে জট পাকিয়ে ফেললে তখন তো আসো আলোচোনা করতে, বল না বল না কি হয়েছে ? অনেকদিন ভালো কোন স্টোরি কভার করিনি”।
শুভ বলল “ এখানে না মা আছেন, দুদিন বাদেই ফিরে আসবো, তখন সব খুলে বলবো, ঠিক আছে আমার মিস মারপল”
আসলে সত্যিই শুভ বেশ চিন্তায় আছে হাড়োয়া থেকে বসিরহাটের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে একটা লাশ পাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে, এই এলাকা গুলো প্রধানত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এবং বেশিরভাগ এলাকাতেই অত্যন্ত গরিব মানুষের বাস , বিদ্যুৎ ও নেই অনেক এলাকাতেই। এই চক্রের লোকেরা চারিদিকে খোঁজ রাখে , কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার পর রাতের অন্ধকারে সেই মৃতদেহ তুলে অন্য কোথাও পাচার করে দেয়, কেউ কেউ বলে ডাক্তারি ছাত্ররা ওই দেহ কেনে, আবার কেউ কেউ বলে তান্ত্রিকেরা শব সাধনার জন্য। এখানেই এদের কাজ শেষ নয়, ডাক্তারি ছাত্রদের কাজ শেষ হলে সেই মৃতদেহ আবার ওখান থেকে নিয়ে লোপাট করতেও তারা সিদ্ধহস্ত। প্রথমে অ্যাসিডের সাহায্যে সব গলিয়ে ফেলে তারপর আবার সেই কঙ্কালও আলাদা ভাবে বিক্রি করে ডাক্তারি ছাত্র, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি এবং আর অনেক জায়গায় কঙ্কাল তথা হাড়ের প্রয়োজন আছে , এই জন্য এরা কবর খুঁড়ে পচা গলা লাশ পেলেও ছারে না, কঙ্কাল বানিয়ে বেচে দেয়। এতদিন এরা আবার নতুন ব্যবসা শুরু করেছে, সেটা হচ্ছে খুনের লাশ গায়েব করা , সম্প্রতি শাসক দলের এক নেতার ছেলেকে খুন করে তার বডি গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে এদের বিরুদ্ধে, পুলিশের ওপর প্রচুর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে , মিডিয়াতেও ব্যপারটা খুবই আলোচিত হচ্ছে, এবং শুভ সেই নিয়েই মিটিং করতে আজ যাচ্ছে বসিরহাট। আগের সপ্তাহেই অনেক কে সাদা পোশাকে বিভিন্ন জায়গায় ছরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিছু সন্দেহভাজন টেলিফোন নম্বর ট্যাপ করা হয়েছে , এলাকার লোকদের সতর্ক করা হয়েছে ইত্যাদি। এখন শুভ এটাই জানতে যাচ্ছে যে কোন খবর পাওয়া গেল কিনা, আর এই মুহূর্তে এটা ওর বউ জানতে পারলে সর্বনাশ হবে।
সাত
রেমিডিয়াল ক্লাস
8 ই আগস্ট 1999, বিকাল 5 টা
পার্থরা পাঁচ বন্ধু হাসনাবাদ লাইনের মালতিপুর স্টেশনে নামলো, উদ্দেশ্য মনসুর আলমের সাথে দেখা করে বডির ব্যপারে খোঁজ নেওয়া। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর মনসুর এলো একটা অটোরিক্সায় চেপে এবং ওদের সবাইকে উঠে পরতে বলল। তারপর এগোলি-সেগোলি ঘুরে অটো 45 মিনিট পরে একটা বাঁশবাগানের পেছনে একটা বাড়িতে এনে ওদের নামালো, সেখানে কয়েকজন লোক বসে কিছু আলোচনা করছিল, ওদের দেখে একজন হেঁসে বলল “ আরে দেখ হবু ডাক্তারবাবুরা এসে গেছে, আরে কেউ চেয়ার দে, চা বল”। তারপর ওদের বলল বলুন কটা বডি লাগবে আর কি কন্ডিশনে লাগবে ? পার্থর বন্ধু হিতেন বলল “ স্যার আপনাদের কিছু জানাননি? “ ওরা বলল যে ওদের স্যার মানে অশোকনগরের ডাক্তার সুব্রত মণ্ডল বাবু শুধু দুটো বডির কথা জানিয়েছেন কিন্তু কি কন্ডিশনের লাগবে সেটা জানাননি , বিভিন্ন কন্ডিশনের বডি আছে, একদম ফ্রেশ থেকে পচা সবই। হিতেন বলল “ না না আমাদের বেস্ট জিনিশই লাগবে কিন্তু রেট কত লাগবে “? দলের মাথা আনিসুর বলল “ ভাল মাল আছে কিন্তু পনের হাজার করে লাগবে, নিতে পারবেন তো কম হবে না, ডিমান্ড প্রচুর “ পার্থরা আগেই দাম জানতো তাও বলল “ দুটো নেব একটু কম হবে না “।আনিসুর বলল “ না কম হবে না ফরমালিন এর দাম বেড়ে গেছে, আর কাজে ঝুঁকিও বেরেছে আগের থেকে, টাকা দিলে নির্দিষ্ট সময়ে অশোকনগরের চেম্বারে বডি পৌঁছে যাবে, আর যদি আপনারা আর হাজার টাকা করে দেন তাহলে আমরা পরেরদিন গিয়ে বডি নিয়ে আবার হাপিস করে দেব, রাজি থাকলে বলুন ও হাফ টাকা দিয়ে যান “। পার্থরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে হাফ টাকা দিয়ে আবার অটো করে স্টেশনে এসে পৌঁছল । ট্রেনে বারাসত এসে পাবলিক বুথ থেকে সুব্রত বাবুকে ফোন করে সব জানালো। সুব্রত বাবু জানালেন যে “ আনিসুর আগেই ফোন করেছে 16 তারিখ আসবে বলেছে, তোমরা ওইদিন বেলা 12 টার মধ্যে চলে এসো , ওইদিনই তোমাদের প্রথম রেমিডিয়াল ক্লাস নিয়ে নেব, চিন্তা কোর না , দুটো এরকম ক্লাস করলেই তোমরা পেপার টা ক্লিয়ার করে ফেলতে পারবে আশাকরি “।
আট
আবিষ্কার
25 শে আগস্ট 1999, সকাল 7.30
আগেরদিন রাতে মামনি আর শ্বশুরমশাই কে বিরক্ত করে নি, এখন ও বসে বসে চা খাচ্ছিল ও ওর শ্বশুর অভ্রবাবুর জন্য অপেক্ষা করছিল, উনি ভোরে উঠে মর্নিং ওয়াকে বেড়িয়েছেন। অভ্রবাবু মাসছয়েক হল পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, ওনারই পথাদর্শে ছেলে সুভও পুলিশের চাকরিই বেছে নিয়েছে। তবে ওনাকে এখন দেখলে কেউ বলবেই না যে উনি এই চাকরি করতেন, এখন ওনার রুটিন হল মর্নিংওয়াক সেরে এসে স্নান খাওয়া সেরে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি তে যাওয়া ও বিভিন্ন বইপত্র পড়া, বিকেলের দিকে পাড়ার বাচ্চাদের একটু শরীরচর্চার ট্রেনিং দেওয়া ও পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, মামনি কে উনি এতটাই স্নেহ করেন যে মামনি ওনার মধ্যেই নিজের বাবাকে দেখতে পায়। আটটা নাগাদ উনি ফিরলেন, মামনি এক কাপ চা, বিস্কুট ও প্রদ্যুত লাহার খাতাটি অভ্রবাবুর হাতে তুলে দিলোএবং সব কথা জানালো। অভ্রবাবু অত্যন্ত আগ্রহের সাথে খাতাটা দেখতে লাগলেন। উনি বললেন “কি জিনিস খুঁজে বের করেছো বৌমা, এতো শুধু খাতা নয় এ হল বাঙ্গালির ইতিহাসের এক অংশ, একটু কর্ডলেস টা দাও তো এক্ষুনি গনেশ আর উজ্জ্বল কে ফোন করি, বাড়িতেই আছে সবাই, তুমি তো বেরোবে অফিসে? আমি আর আজ লাইব্রেরি যাব না, ওদের আর এই খাতাটা নিয়ে দুপুরে বাড়িতেই বসবো “। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে গনেশ বাবু হলেন ইতিহাসের প্রাক্তন শিক্ষক ও উজ্জ্বল বাবু ছিলেন আর্ট কলেজের প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক এবং দুজনেই অভ্রবাবুর স্কুলফ্রেন্ড ।
9 টা নাগাদ মামনি রেডি হয়ে রাঁধুনিকে সবার রান্নার কথা বলে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল, আজ আবার অফিসে মিটিং আছে।
রাতে মামনির ফিরতে একটু দেরিই হল, মিডিয়ার চাকরিতে সময়ের কোন হিসেব থাকে না, ওর ওপর আবার কো- অরডিনেশনের বাড়তি দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। এসে দেখে বাড়িতে বিরাট আড্ডা বসেছে, শ্বশুরমশাই এর বন্ধুরা এখনও আছেন ও জোর গলায় আলোচনা চলছে, ও ঘরে ঢুকতেই গনেশবাবু বলে উঠলেন “ আরে বৌমা কি জিনিস খুঁজে বের করেছো গো, এত এক অমুল্য সম্পদ যদিও অনেক পাতা নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু অন্তত 70-80 জনের বর্ণনা কি সুন্দর পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আঁকা ও দেওয়া আছে এটা নিয়ে তো একটা সেমিনার এর আয়োজন করতে , আর সবচেয়ে বড় কথা দেখ তোমার শ্বশুর আবার এই খাতা থেকে কোন পরিচিত কে আবিষ্কার করেছে, ওর তো উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছে গেছে “। মামনি খুবই অবাক হল ওর মায়ের জেঠুর খাতায় অভ্রবাবু আবার কাকে খুঁজে পেলেন ? অভ্র বাবুকে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন “আরে বৌমা এ এক আশ্চর্য ব্যপার, আমার চাকরীর শুরুর দিকে নকশাল পিরিয়ডে আমি তৎকালীন এক বিধায়কের দেহরক্ষী ছিলাম , তো তোমার এই খাতায় দেখি তার নাম। ছবি দেখে চেনা অসম্ভব, কবেকার ছবি পুরো আবছা হয়ে গেছে , কিন্তু নাম, শরীরের মাপ ও ট্যালি করে মনে হচ্ছে অবশ্যই সেই লোক , আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না, অমন রাশভারী নেতা , প্রথম জীবনে অভিনেতা ছিলেন “। সবাই হেসে উঠলো।