লাল কাঁকড়া বিচে…

সঞ্জীব দত্ত
5 রেটিং
577 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

ছ এ ছুটি, ছ এ ছুট… সত্যি অনেক দিন পর তিন দিনের জন্যে পাওয়া অবসর টুকুকে উপভোগ‍্য করে তুলতে শুক্রবার সকাল 5:30 উঠে বসলাম দিঘা গামী বাসে, গন্তব্য মন্দারমনি(দঃ পুরুষোত্তমপুর)। ঐ দিন সকালে আকাশের মুখভার, জালনার কাচে বৃষ্টির আঁকিবুকি, পূর্বাভাসে অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত, তবুও…

অবশেষে সকাল 9:25 এ আমরা এসে পৌঁছালাম চাউলখোলা মোড়ে, মহারাজের নির্দেশে হরিদা অটো নিয়ে পূর্বেই উপস্থিত হয়েছিলেন। উষ্ণ অভিবাদন সেরে আমরা রওনা হলাম…

রাস্তাটা অনবদ্য… চোখ জুড়িয়ে গেল সবুজের সমারোহে, তারই সাথে বিস্তীর্ণ ভেড়ি, জলাভূমি, আর বিক্ষিপ্ত ভাবে বিন্যস্ত গ্রামের অতি পরিচিত বাড়িঘর। তা ছাড়াও নির্মিয়মান নৌকাগুলি সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ ভাবে কালো আলকাতরায় মুড়ে পড়ে রয়েছে এদিকে ওদিকে। একদিকে সবুজাভ ধান ক্ষেতে লেগেছে হিল্লোল, অন্যদিকে হলুদাভ বিস্তীর্ণ শস‍্য ক্ষেত্রে আলো ছায়ার নকশিকাঁথা, আবার কোথাও বাঁশবাগান, কলাবনের ছায়া ঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মোলায়েম কালো রাস্তা। সেই রাস্তা ধরেই 25 মিনিটে 10:15 নাগাদ পৌঁছে গেলাম সুন্দর দ্বিতল মিশন প্রাঙ্গনে। সবুজ মোড়া পরিবেশের মধ্যে এক চিলতে আশ্রয়। মহারাজের সঙ্গে কুশল বিনিময় পর্ব সেরে আমরা আশ্রয় নিলাম দ্বিতলের বড়ো একটি ঘরে। তার পর চা ও টা পর্ব সেরে বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্র দর্শনের উদ্দেশ্যে…

মিনিট পাঁচেকের মেঠো পথ, তার পরেই উন্মুক্ত সমুদ্র। যে দিকে চোখ যায় অনন্ত বিস্তৃতির মাঝে যেন ক্ষণিকের অতিথি আমরা…একাকী। জোয়ার-ভাটায় স্পন্দিত সমুদ্রে তখন যৌবনের উন্মত্ততা, বেলাভূমির উপর ফেনিল জলরাশির উদ্ধত পদচারণ। এই অনাঘ্রাত সৈকত ভূমির যারা মূল অধিবাসী তাদের দেখা মিলল দু পা এগোতেই, পুরো বেলাভূমিকে লাল কার্পেটে মুড়ে রেখেছে লাল কাঁকড়ার দল, অদ্ভুত সেই দৃশ্য… আমরাও বাকরুদ্ধ। নতুনত্বের স্বাদ নিয়ে ফিরে এলাম আশ্রমে, পঞ্চব্যঞ্জন এ সারা হলো মধ্যাহ্নভোজ, এর পর দিবানিদ্রা, অবশেষে আশ্রমে সন্ধ‍্যারতি শুনে যখন বাইরে এলাম নিকষ কালোঅন্ধকারে ঢেকেছে সমগ্র চরাচর। দু একজন সাইকেল আরোহী বা সাধারণ মানুষ চলেছে টর্চ হাতে নিয়ে,আমাদের ভরসা মোবাইলের আলো, এই অনভ‍্যস্ত অন্ধকারে আমরাও অপ্রস্তুত। বাইরে জোনাকির আলো আর ঝিঁঝিঁর একটানা  ডাকে আমরা স্মৃতিমেদুর ।

পরের দিন সকালটা কিছুকটা বৃষ্টিভেজা হলেও আমাদের বেলাভূমি ধরে শৌলা-নদীর মোহনা পর্যন্ত হাটার সময়সূচি ছিল অপরিবর্তিত। লাল কাঁকড়া দের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আর নানান আকার, আকৃতি, গঠন ও গ্রথনের ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে আমরা হারিয়ে গেলাম নিরুদ্দেশের পথে, সম্বিৎ ফিরলো ঘড়িতে চোখ পড়ায়, ফিরে এসে প্রাতরাশ  সেরে আবার গেলাম সমুদ্রস্নানের উদ্দেশ্যে, অনেকটা সময় কাটলো সমুদ্রে, বালিপ্রাসাদ নির্মাণ বা লবনাক্ত জলের স্বাদ ফিরিয়ে নিয়ে গেলো অতীতের ছেলেবেলার দিনগুলিতে।

সে দিন বিকেলে আমরা গেলাম মন্দারমনি ও তার নিকটে চম্পা নদীর মোহনায়, মন ভরে গেলো নির্নিমেষ প্রকৃতি দর্শনে, যেখানে সূর্যাস্তের ফাগ রং ধরালো দিগন্তপ্রান্তে, চোখ সাক্ষী থাকলো এক অনির্বচনীয় শোভার।

পরেরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে বেরোলাম গ্রাম পরিদর্শনে,হলুদ ফুলে পূর্ণ আকাশ মণি গাছগুলো যেন ডালি সাজিয়ে অপেক্ষারত… মধ্যেদিয়ে এক সরল মেঠো পথে আমরা ঢুকে পড়লাম গ্রামে  অনাহূত অতিথির মতো। সহজ সরল মানুষ গুলি নিজেই আলাপি হয়ে এগিয়ে এলো,গ্রাম্য সরলতা মিশলো নাগরিক সভ্যতার সঙ্গে, আতিথেয়তা তৈরী করলো ভবিষ্যতের  পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি।

ঐ দিন মধ‍্যহ্নভোজ সেরে বেলা 1:00 মহারাজের আন্তরিক আতিথেয়তাকে কুর্নিশ করে বেড়িয়ে পড়লাম কলকাতার উদ্দেশ্যে, ভারাক্রান্ত মন…ঢেউ গোনা অসম্পূর্ণ থেকে গেলো… আমরা তখন বাসের জালনায় , দেখি বিষন্নতার কালোমেঘ ঢেকে দিয়েছে চারি-পাশ, চাউলখোলা মোড় ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে আবছায়ায়…

যাতায়াত: দিঘা গামী বাসে চাউলখোলার মোড়, সেখানে মাথা পিছু ৩০টাকা অথবা অটোয় 150 টাকায় আশ্রম, ওখানে প্রতি দিন থাকা, খাওয়া নিয়ে জন প্রতি 500 টাকা,মন্দারমনি বা দিঘা ঘোরার খরচ আলাদা।

যোগাযোগ: মহারাজ (8116793234)

বিঃ দ্রঃ :  লাল কাঁকড়া বিচ কে প্লাস্টিক ও বর্জ্য মুক্ত  রাখতে সবাইকে অনুরোধ করছি।সুনির্মল প্রকৃতি               আমাদের সম্পদ, আমাদেরই গর্ব।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল