পুণ্যভূমি ভারতবর্ষ,আমাদের দেশ তথা জন্মভূমি। এই সুবিশাল দেশের উত্তরে গগনচুম্বী তুষারবৃত হিমালয়, দক্ষিণে সীমাহীন নীল সমুদ্র ,কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দেশে নানা জাতি,নানা ধর্ম ও নানা ভাষাভাষী কোটি কোটি মানুষের বাস। আহারে- বিহারে ,আচারে-বিচারে আমাদের অনেক পার্থক্য থাকলেও আমাদের পরিচয় একটাই –আমরা ভারতবাসী।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর বহু বিপ্লবীর রক্তের বিনিময় শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সরকারের কবল থেকে ভারতমাতার মুক্তি মেলে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি সেটা এককথায় খন্ডিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। আচ্ছা, এটা কি সেই স্বাধীনতা যা আমাদের পুণ্যভূমির মহাপুরুষরা স্বপ্ন দেখেছিলেন? ভারত মায়ের অঙ্গ ছেদন করে স্বাধীনতা লাভ এটা আমাদের কাছে অপমানজনক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যক্ত করেছেন,”পাঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট- মারাঠা-দ্রাবিড়- উৎকল-বঙ্গ”তারপর বর্ণিত পুরো অংশ আজ ভারতে নেই। তিনি শিবাজীর স্বপ্নে বিশ্বাস করতেন।শিবাজীর স্বপ্ন ছিল,”এক ধর্মরাজ্য পাশে খন্ড ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারত বেঁধে দেবো আমি” স্বামী বিবেকানন্দ পরখ না করে কোন বিষয় বিশ্বাস করতেন না। তিনি ভারত ভ্রমণে গিয়ে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ শেষে কন্যাকুমারীকায় এলেন। ভারতের দিকে মুখ করে কন্যাকুমারীকায় সমুদ্রের উপর একটা শিলার উপর বসে তিন দিন ধ্যানস্থ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন,”আমি দিব্য চোখে দেখিতেছি ভারতমাতা পুনরায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়াছেন”।স্বামীজি দেখলেন, ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব সমুদ্রের উপর দিয়ে পশ্চিমের দিকে হেঁটে চলেছেন। “বন্দেমাতরম্”স্তোত্র স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতবর্ষকে দেবী দুর্গা হিসেবে কল্পনা করেছেন,”ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী”
বীর সাভারকার বলেছেন,”যেদিন ভারত বর্ষ অখন্ড হবে, সেদিন আমার চিতা ভষ্ম সিন্ধু নদীতে বিসর্জন দেবে।”আজও সাভারকারের অস্থি মজুত রাখা আছে।
ঋষি অরবিন্দ দীর্ঘ ২১ বছর ধরে অখণ্ড ভারত মায়ের আরাধনা করেছেন। তিনি বলেছেন–“স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতের স্বাধীনতা আসবে কেউ আটকাতে পারবেনা।”দুর্ভাগ্যবশতঃ ১৫ ই আগস্ট ঋষি অরবিন্দর জন্মদিনেই আমরা খন্ডিত ভারতের স্বাধীনতা পেলাম। তিনি এই স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেননি।তিনি বলেছেন,”ভারত আবার অখন্ড হবে”।ভারত ভূমিকে জগৎজননীর জীবন্ত প্রতিমূর্তি হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন,”তিনি জগ্নমাতা,আদ্যাশক্তি মহামায়া ও মা দুর্গা,আমরা তাঁকে দর্শন করতে পারি ও তাঁর পূজা করতে পারি”।
বালক চন্দ্রশেখর আজাদ একজন সাহেবকে ঢিল ছুঁড়ে মারলে তাকে ১৬ ঘা চাবুক মারা হয়।তবুও দৃঢ়মনচেতা সম্পন্ন বালক বলেই চলেছিলেন,”ভারত মাতা কি জয়, বন্দেমাতরম্”।
ভারতের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম কে ফাঁসির আগে যখন তাঁর শেষ ইচ্ছের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল।তিনি তখন গীতা পাঠ করে ভারতমাতার জয়ধ্বনি দিয়ে বলেন,”আমি আবার ভারত মায়ের কোলে ফিরে আসতে চাই”।
প্রত্যেক মহাপুরুষদের চিন্তার মধ্যে ছিল অখন্ড ভারতবর্ষ। কিন্তু আজ আমরা খন্ডিত ভারতের মানচিত্র আঁকি। আজকে ভারতবর্ষের আয়তন বইতে যেভাবে দেখে আসছি বাস্তবে সেটা ভুল। পাকিস্তান ও চীন উভয়েই কাশ্মীরের দুটো অংশ দখল করে আছে। এভাবে চলতে থাকলে ভারতবর্ষ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাবে।এটা হতে দেওয়া আমার মতে উচিত নয়। যেমন দুই জার্মান এক হয়েছে তেমনিভাবে গান্ধার, পাকিস্তান, ব্রহ্মদেশ,শ্রীলংকা প্রত্যেকেই ভারতের অঙ্গীভূত হবে। তবেই আমাদের পূর্বপুরুষ তথা মহাপুরুষদের স্বপ্ন পূরণ হবে। আর এই দায়িত্ব এখন আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা যেন আবার বলতে পারি,”হিমালয় হতে কন্যাকুমারী গান্ধার হতে ব্রহ্মদেশ,সেই তো মোদের ধ্যানের ভারত সেই তো মোদের পুণ্যদেশ”।
খুব ভালো হয়েছে