মরচে ধরা রহস্য-তৃতীয় পর্ব

শান্তনু দাস
0 রেটিং
1414 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

বিগত পর্বের লিংক :
https://www.saabdik.com/morche-dhora-rohosyo-part1/ https://www.saabdik.com/morche-dhora-rohosyo-part2/

( ৩ )

অনুসন্ধান

“ না থাকবে কেন ? এখনি বলো কে ফোন করেছিল ? ” …

 সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ইন্দ্রদাকে প্রশ্নটা করলাম । ও বলল ইন্সপেক্টর হাজরার ছিল । ইন্দ্রদাকে একবার সোমনীলবাবুর ঘরটা সার্চ করে দেখতে হবে কোনো ক্লু যদি মেলে যা দিয়ে জানা যেতে পারে নিশীথ রাতের ওই আগন্তুক মেয়েটি কে ছিল ? ইন্দ্রদা অবশ্য পুলিশকে কাল রাতে মার্টিনার আসার ঘটনাটা জানায়নি । বিপিনবাবু এখন বন্ধুর বাড়িতেই আছেন । তদন্তের জন্য পুলিশ ওনার বাড়ির চাবি থানায় রেখেছে ।

ফোন আসার পর আমাদের দুজনের রেডি হতে কয়েক মিনিট সময় লেগেছিল মাত্র । আমরা হাঁটতে হাঁটতে স্টার থিয়েটার ক্রস করে গেলাম । অনেকক্ষন থেকেই খালি ট্যাক্সির জন্য ওয়েট করছি । পাশে একটা বটবৃক্ষের নীচে সূর্যের গোল গোল প্রতিবিম্বগুলো নড়াচড়া করছে । দু চারটে বাস আর ট্রাম পেরিয়ে গেল । দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে থেকে খুব বিরক্ত লাগছিল । কানের পাশ দিয়ে বো করে একটা মৌমাছি উড়ে গেল । ইন্দ্রদা গোল্ড ফ্লেকটা ধরিয়ে উপর দিকে মুখ করে ধোঁয়া ছাড়তেই গাছের ডালে চড়ুইগুলো কিচির মিচির করে উড়ে গেল । ধোঁয়ার জন্য নয় , একটা লাল টাটা সুমো অসম্ভব জোরে ব্রেক কষে আমাদের সামনে দাঁড়াল , আর তাতেই পাখিগুলো ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল । এবার টাটা সুমোর নীল কাঁচটা নেমে এল ।

ড্রাইভার এক মাঝবয়সী পাঞ্জাবী , চোখে টাইটানের সানগ্লাস , পুরু কালো দাড়ি গোঁফ , ঠোঁটটা সামান্য নড়তেই বুঝতে পারলাম আস্তে আস্তে কিছু বলছেন … “ যাবেন ?”

ইন্দ্রদা হাত দেখিয়ে বলল … “ অফ কোর্স , শ্যামবাজার থানা চলুন । ”

উঠে পড়লাম । ভিড় সত্ত্বেও পাঁচ মিনিট লাগল যেতে । ইন্দ্রদা ড্রাইভারকে ওয়েট করতে বলে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে থানায় সোমনীলবাবুদের বাড়ির চাবি আনতে গেল । কেন জানি না আমার ভয়ে বুক ধুকধুক করছিল । সামনের আয়নায় ড্রাইভারকে দেখছিলাম । মাথায় একটা বিশাল পাগড়ি । ইন্দ্রদা চলে যেতেই একটা ইংরেজি গানের মিউজিক বাজিয়ে দিল । কান আমার ঝাঁ ঝাঁ করছে । দু ফোঁটা ঘাম কপাল থেকে টপটপ করে পায়ে পড়ল । ড্রাইভার সামনের বাক্স থেকে একটা চকচকে ছোরা বের করে ঘাড়ের কাছে নিজের ঘামগুলো চাঁছতে শুরু করল । আমি ঘনঘন ঢোক গিলছিলাম । এবার আমার হাতে একটা জলের বোতল ধরিয়ে দিয়ে ড্রাইভার বলল …

“ জল , মিনারেল ওয়াটার । ”

গলাটা অদ্ভুত রকম , চাপা স্বরে যেন কথাগুলো বলছে । ততক্ষনে ইন্দ্রদা চলে এসেছে ।

“ চলুন মেনরোড ধরে । ”

ড্রাইভার পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে হাতের ঘাম মুছে গাড়িতে স্টার্ট দিল । আরো আধঘন্টা লাগল সোমনীলবাবুর বাড়ি পৌঁছতে । ইন্দ্রদাকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে । তবে ড্রাইভারকে দেখে আমার কেন জানি না সন্দেহ হল । কোনো মতলব নিয়ে আসেনি তো ?

বিশাল গোলাপি কালারের বাড়িটা । সকালের মিষ্টি রোদ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে । সিমেন্ট বাঁধানো একটা রাস্তা চলে গেছে ঘরের দরজা পর্যন্ত । দুধারে মখমলি ঘাস সবুজের বান ডেকেছে । টবের গাছগুলোতে রংবেরঙের ফুলের সমারোহ । কতকগুলো ঝাউগাছ আছে , তাছাড়া আম কাঁঠালের শাখা প্রশাখায় দোলা হাওয়া , সবমিলিয়ে পরিবেশটা মনের মত । চারপাশে বিশাল ইঁটের প্রাচীর থাকলেও এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়া খুব কঠিন নয় ।

প্রথমে বাগানটা ঘুরে দেখা স্থির করলাম । ইন্দ্রদা একটা অর্কিড গাছের কাছে এসে বসে পড়ল । আমিও বসতেই মনে হল ঝোপঝাড়ের মধ্যে ডুবে গেছি । ইন্দ্রদার দৃষ্টি দুটো ছোট ছোট গর্তের দিকে । হাতে তৈরি গর্ত নয় সেটা দেখলেই মনে হয় । এবার আমি পাশেই পরে থাকা একটা কৌটো তুলে নিয়ে ইন্দ্রদার হাতে দিলাম । কৌটোটা নাকের কাছে নিয়ে এসে ইন্দ্রদা বলল …

“ ওডোমস । ”

আমি বললাম … “ তার মানে কেউ এখানে অপেক্ষা করছিল । রাতে মশার হাত থেকে বাঁচতে স্কিনে ওডোমস লাগাতে ভোলেনি । আর অনেকক্ষন ধরে এক জায়গায় দুপায়ে ভর দিয়ে বসেছিল বলে বড় বড় দুটো ঢালু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে , কারণ তখন বৃষ্টি হচ্ছিল । ”

সামনে পাতাবাহার গাছের গুঁড়ির ঠিক পাশে এবার বেশ চওড়া একটা গর্ত নজরে এল । আমি না বলে পারলাম না …

“ এখানে এত বড় একটা গর্ত কেন বলোতো ইন্দ্রদা , গুপ্তধন এখানে নেই তো ? ”

ইন্দ্রদা হা হা করে হেসে উঠল । আবার পরমুহূর্তেই চুপ হয়ে গেল । ও কিছু একটা দেখেছে । ঝাউগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রোদের আলোয় চকচক করছে একটা সানগ্লাস । গলা নামিয়ে আমি বললাম …

“ কেউ বোধহয় আমাদের ফলো করছে , ইন্দ্রদা । ”

আমরা সাদা মোজাইক করা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলাম । সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একটা সরু বারান্দার মত অংশ । রেলিংয়ে ঝুঁকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেকটা নিচু । একটা চিল বিকট আওয়াজ করে অনেকটা উপর দিয়ে উড়ে গেল । পেছনে তাকাতেই দেখি ইন্দ্রদা নেই । এবার ওপাশ থেকে ইন্দ্রদার গলা শোনা গেল ।

“ আমি রুমের তালা খুলছি ।  সমু তুই বাইরেটা একটু দ্যাখ , কিছু পাস কিনা । ”

মনের মত কিছু না পেয়ে ঘরে ঢুকলাম । ঘরের ভেতর কেমন যেন ভ্যাপসা গরম । আমি গিয়ে জানালাগুলো খুলে দিলাম । ইন্দ্রদা তখন একটা ডায়রি নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল । রুমটা বেশ বড় , বোঝাই যাচ্ছে এটা সোমনীলবাবুর ঘর । ডাইনিংটা সাজানো গোছানো , ঘরের দেওয়ালে প্রয়াত স্ত্রীর ছবি , এককোণে টেবিলে হারমোনিয়াম তবলা ভেলভেটের ক্লথ দিয়ে ঢাকা । অনেকগুলো স্বরলিপি আর গানের বই মিলল । থাকাটাই স্বাভাবিক কারণ শুনেছি সোমনীলবাবু বেশ ভাল গায়ক ছিলেন । টিভিতে বেশ কয়েকবার গানও করেছেন । একপাশে একটা সিঙ্গেল খাট , আলমারি , আলনা , সোফা । কাঁচের আলমারিগুলোতে অনেক বই সাজানো । বেশ কয়েকটা ইংরেজি বইও রয়েছে ।

পাশের রুমটা বিপিনবাবুর । বেশ অগোছালো , একটা টিভি রয়েছে । রিমোটটা বিছানার উপর পড়ে আছে । টেবিয়ের ওপর একগাদা কাগজপত্রের জঞ্জাল , একটা ডেলের ল্যাপটপ আধখোলা অবস্হায় পড়ে আছে ।

এবার জানলার ধারে ফুরফুরে বাতাসে এলাম । ইন্দ্রদা খাটের তলাগুলো , ক্যালেন্ডারের পেছনগুলো , গান করার সরঞ্জামগুলো নেড়েচেড়ে পর্যবেক্ষণ করছে । এত বড় চৌহদ্দির মধ্যে গুপ্তধন কোথায় আছে কে জানে । জানলা দিয়ে মেঘমাখা রৌদ্রস্নাত বাগানটাকে অপূর্ব দেখাচ্ছিল । সেই চিলটা ক্রমশ ছোট হতে হতে আকাশে মিলিয়ে গেল । দুটো সবুজ ঝাউগাছের আলিঙ্গনের ঠিক ওপর থেকে সাদা ধোঁয়া দেখতে দেখতে কাল রাতের কথা মনে আসছিল । সচেতন হলাম পাতার ফাঁকে একটা কালো সানগ্লাস দেখে । দেখলাম সেই ড্রাইভারটা ঝাউগাছের পেছনে দাঁড়িয়ে । ইন্দ্রদার সঙ্গে জানলায় চোখে চোখ পড়তেই টাটা সুমোটা নিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল । আমি ড্রয়ারের মধ্যে কিছু আছে কিনা দেখার চেষ্টা করলাম । পাওয়া গেল একটা কৌটো , আর তার মধ্যে অদ্ভুত দেখতে একটা রুপোর হার । সোমনীলবাবুর লাস্ট ওয়ার্ডগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল … গুপ্তধন , জুল , হার … হার ।

ইন্দ্রদা বলল …

“ চল যা দেখার দেখা হয়ে গেছে । আর কিছু দেখার নেই এখানে । এখন গুপ্তধন পেতে গেলে সন্ধান পেতে হবে গাধার । ”

(ক্রমশঃ)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল