—ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না এটা আমার সিট
…মানে?কি বলছেন আপনি?এটা আপনার সিট?
–হ্যা আমার তাই মনে হচ্ছে ।
…আপনার মনে হওয়া দিয়ে তো আর হবে না,।
— বিশ্বাস না হলো , আমার টিকিট বের করে দেখাচ্ছি দেখুন
…হ্যা দেখান।।
–দেখুন বি ওয়ান। এবার বিশ্বাস হলো তো?
…না বিশ্বাস হলো না?।এই দেখুন আমার টিকিট বি ওয়ান , কোথা থেকে ডুপ্লিকেট টিকিট নিয়ে এসেছেন।যান তো মশাই ।
— আমি নিজে ওন লাইনে টিকিট কেটেছি আর আপনি বলছেন এটা ডুপ্লিকেট?
মেহুল আর উজানের মধ্যে সিট নিয়ে ঝগড়া বেধে গেলো ।ঝগড়া দেখে কন্ডাক্টার জিজ্ঞেস করলো
–এখানে এত হইচই কিসের ?কি সমস্যা আপনাদের?
মেহুল বলল দেখুন না আমার সিটে আমি বসে আছি আর উনি বলছে এটা নাকি ওনার।মেহুলের কথা শেষ হতে না হতেই উজান বলল আচ্ছা মুশকিলে তো,এই দেখো ভাই এটা আমার সিট । নিজের সিটে বসতে চাওয়া টা কি অন্যায়?
কন্ডাক্টর বলল দেখি আপনাদের টিকিট দুটো দিন তো দেখি।এক টিকিট কখনো আবার দুজনের হয় নাকি , টিকিট দুটো দেখা মাত্রই কপালে ভাঁজ পড়লো কন্ডাক্টারের ,দুটোই বি ওয়ান আর বিকেল পাঁচটা র বাস ,কলকাতা টু শিলিগুড়ি ।কন্ডাক্টার নিজেও অবাক।কারো কোথাও ভুল হচ্ছে কিন্তু এরা তো কেউ ভুল স্বীকার করতে রাজি নয়।কন্ডাক্টার উপায় না পেয়ে উজান কে বলল “ বুঝতেই পারছেন একটা ভুল হয়ে গেছে ,আপনি যদি রাতের বাসে যান,উনি মহিলা মানুষ।”
উজান বলল “ও উনি মহিলা তাই সময়ের দাম আছে আর আমার নেই তাই না?না হবে না।”আমি দাঁড়িয়েই যাবো।আর মেহুল তো সেই থেকেই বসে আছে।ভীষণ মিষ্টি দেখতে মেহুলকে, ঘুমন্ত তার সৌন্দর্য যেন উজানকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে,কিন্তু যা সাংঘাতিক দজ্জাল মেয়ে , যে ছেলে এই মেয়েকে বিয়ে করবে তার জীবন থেকে শান্তির ঘুম উবে যাবে তাকানোর দরকার নেই বলে চোখ ঘুরিয়ে নেয় উজান।কিছু দূর যাওয়ার পর মেহুল ঘুমিয়ে পরে ,ঘুমন্ত মেহুলের দিকে ইচ্ছে না থাকলেও বার বার চোখ যাচ্ছে নীলের।মেহুল কে খুব নিষ্পাপ লাগছে কে বলবে একটু আগে ঝগড়া করে উজানের সিট এই মেয়েটাই দখল করে নিয়েছে।
কন্ডাক্টার উজানকে ড্রাইভারের সিটের পেছনে সিটে বসতে বলল।উজান আই টি ইন্জিনিয়ার শিলিগুড়ির ছেলে কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকে। বাড়িতে দুর্গা পুজো হয় তাই ষষ্ঠীর দিন অফিস শেষ করে রওনা দেয় বাড়ির দিকে।
মেহুল কলকাতার মেয়ে এম বি শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছে।শিলিগুড়ি মেহুলের মামা বাড়ি ।এবছর পুজো ওখানেই কাটাবে।ভোরের আলো ফুটে গেছে, ঘুম ভাঙ্গলে মেহুল দেখে ড্রাইভারের পেছনের সিটে কষ্ট করে বসে আছে উজান।খুব মায়া হলো উজানের,ছেলেটা আর যাই হোক না কেন অভদ্র না,দেখতেও্র বেশ সুপুরুষ।উজান লক্ষ্য করলো মেহুল বার বার তাকে দেখছে।সকাল হতে হতে বাস শিলিগুড়ি পৌঁছেও গেলো।বাস থেকে নেমে মেহুল উজানের সামনে গেলো কিছু বলত।কিন্তু উজান ওকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
বাড়ি ফিরে শোনে উজানের ঠাম্মা ওর জন্য পাত্রী ঠিক করে রেখেছে,এদিকে উজানের চোখে যে বার বার শুধু মেহুলের মুখ টা ভেসে চোখে, ঠাম্মা উজান কে ডেকে একটা মেয়ের ফোটো দিয়ে বলল কিরে কেমন পছন্দ করেছি তোর জন্য বল?উজান ফোটো দেখে ভাবলো শেষে ঠাম্মাই আমার জীবন থেকেই শান্তির ঘুম উবিয়ে দিল। ঠাম্মার পছন্দের মেয়ে টি যে সেই দজ্জাল মেয়ে মেহুল…।
©️শঙ্খচিল
চিত্র সৌজন্য : গুগল