প্রেগনেন্সি প্রতিটা নারীর জীবনে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তন ই নয়, মানসিক প্রচুর পরিবর্তন ও হয় এই সময়ে। তাই বাড়তি যত্ন এবং সাবধানতা অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন। সামান্যথম অজ্ঞতাও সন্তান এবং মা উভয়ের জন্যই হতে পারে মারাত্নক ঝুঁকির কারণ। ফলবশত এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো এই সময় করা উচিত এবং উচিত নয়। দেখে নেওয়া যাক, কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এই সময়ে,
■ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান ও এলকোহল সেবন থেকে বিরত থাকুন।
■ প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে পেটের এক্সরে শিশুর birth defect কারণ হতে পারে। যদি কোনো ইমার্জেন্সি কারণে X-Ray করতে বলা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারকে প্রেগনেন্সির ব্যাপারে জানান।
■ পূর্বে কোনো এবরশন করিয়ে থাকলে ডাক্তারকে জানান। এর আগে কোনো মৃত শিশু জন্ম দিলে বা জন্মের পর কোনো শিশুর মৃত্যু ঘটলে সেই বিষয়টিও অবগত করুন।
■ ভ্রমণ করার সময় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। গর্ভবতী অবস্থায় কোনো লং ট্রিপে যাওয়া চয়ন করতে পারবেন না। অল্প দূরত্বে ভ্রমণ করা বা দূরের সফরে যাওয়া যাই হোক না কেন, ভ্রমণ শুরু করার আগে প্রচুর বিষয়ের বিবেচনা করে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় সমস্ত ওষুধ ও খাবার জল কাছে রাখা দরকার। মসৃণ এবং সুরক্ষিত রাস্তায় যেন গাড়ি চলে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
■ শিশুর নড়া চড়া বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা কমে গেলে, ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষার ঝুঁকি নেবেন না। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
■ স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থায় যে ঔষধ আমরা গ্রহণ করি, প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে সেই একই ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য হুমকি স্বরুপ হতে পারে। অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্যাসের ওষুধ, যন্ত্রণার ওষুধ খেয়ে নেয়। সেই ওষুধগুলোও গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুতরাং এই সময়ে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যে কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
এবার, চলুন দেখে নেওয়া যাক কী কী করতে হবে, কী কী করা উচিত, এই গর্ভাবস্থায়…
● প্রেগনেন্সি পিরিয়ডের প্রথম থেকেই ফলিক এসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পাশাপাশি ফলিক এসিড ও আয়রনের ট্যাবলেট যা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সেগুলো গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর ব্রেইন এবং স্পাইনাল কর্ডের ডিফেক্ট হতে পারে।
● প্রথম ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে কমপক্ষে ১ বার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ২ সপ্তাহ পরপর চিকিৎসক দেখাতে হবে। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যদি আপনার ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থেকে থাকে সেগুলো পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
● ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে পারেন, আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। এর মাধ্যমে শিশুর বেশিরভাগ জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব।
● নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।কেগেল পেশী হল যোনি অঞ্চলে থাকে যা আপনাকে আপনার মূত্রত্যাগ এবং অন্যান্য গতিবিধিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সরবরাহ করে, যার মধ্যে অনেকগুলিই প্রসবের সময় প্রয়োজন। যেহেতু প্রসবের সময় এই পেশী গুলির প্রয়োজন হয়, তাই পেশীর সংকোচন প্রসারণে এই ব্যায়াম সাহায্য করে।
● যদি এমন কোনো ওষুধ থাকে যা আপনি নিয়মিতভাবে দীর্ঘদিন খেয়ে আসছেন, তাহলে এ বিষয়ে আপনার চিকিৎসককে অবহিত করুন।
● পরিমিত পরিমাণ জল পান করুন। গর্ভাবস্থায় মহিলারা প্রায়শই ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, প্রতিদিন ৮–১০টি পূর্ণ গ্লাস জলপান হল আদর্শ।পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান কেবল ডিহাইড্রেশনই প্রতিরোধ করেনা, পাশাপাশি মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
● খাওয়া-দাওয়ার ভারসাম্য বজায় রাখুন। সাধারণ অবস্থার থেকে একটু বেশিই খাওয়ার প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের সবরকম মুখরোচক খাবারের প্রতি খুব আসক্তি জন্মায়। কিন্তু এটা সবসময় করা উচিত নয়, কারণ এতে মায়ের শরীরে ও বাচ্চার শরীরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রত্যেকদিনের ডায়েট আপনার এবং শিশুর জন্য পুষ্টিকর ও পরিপূর্ণ হওয়া দরকার।
● প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তন মায়ের শরীরকে খুব সহজেই ক্লান্ত করতে পারে। শরীরে অযৌক্তিক চাপ দেওয়া শিশুর পক্ষেও উপকারী নয়। তাই দুপুরে পাওয়ার ন্যাপ বা হালকা ঘুমিয়ে নেওয়া যেতেই পারে।
● মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক রাখাও ভীষণ প্রয়োজন।
● গর্ভাবস্থা মায়ের শরীরে একাধিক পরিবর্তনের সাথে সাথে খিটখিটে মেজাজ, ডিপ্রেশন, হতাশা, এরকম অনেক মানসিক সমস্যা নিয়ে আসে। মানসিক প্রশান্তির জন্য হালকা গান শোনা, ধ্যান, যোগাসন করার অভ্যেস করুন, এটি সরাসরি আপনার মন ও সন্তানের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সুতরাং, এইসব নিয়ম গুলো মেনে চলুন। মনে রাখবেন আপনার সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটা প্রাণ। তাই সাবধানে চলাফেরা করুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ও নিজের আগত সন্তান কে সুস্থ রাখুন। অনেক শুভকামনা প্রত্যেক আগামী মায়ের জন্য।