ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ধীর বিনিয়োগ উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির সম্ভাবনায় এক প্রবল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। আশা করা হয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার 2019 সালে 2.6% থাকবে যা গত তিন বছরে সর্বাপেক্ষা ধীর গতির বৃদ্ধি। যদিও 2020 সালে আবার তা বৃদ্ধি পাবে ধরা হচ্ছে। এই দুর্বল বৃদ্ধির মধ্যেও 82 টি রাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির গড় অপেক্ষা দ্রুততর বৃদ্ধি দেখাবে যদিও 7 টি রাষ্ট্র ঋণাত্মক GDP’র কবলে পড়বে।
এখন বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির খোঁজ নেওয়া যাক।
Gayana
2018 থেকে 2021, এই চার বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে সর্বাধিক দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে Gayana 16.3 শতাংশ হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, 3.3 বিলিয়ন ডলার জিডিপির (2018 সালে স্থান 160) Guyana’র অর্থনীতি 2018 সালে যার উন্নতির হার 4.1 শতাংশ, 2019 সালে 4.6 শতাংশ, দুই হাজার কুড়ি 2021 সালে যথাক্রমে 63.5 শতাংশ এবং 22.9 শতাংশ উন্নীত হবে।
Guyana’র মাথাপিছু আয় 5194 ডলার এবং দেশটিকে মধ্যম আয়ের দেশ বলা যেতে পারে। গভীর অরণ্য সমৃদ্ধ এই দেশটি উর্বর কৃষিজমি এবং বিবিধ প্রাকৃতিক উপাদানের প্রাচুর্যে পূর্ণ। সোনা, বক্সাইট, চিনি, ধান, কাঠ এবং চিংড়ির রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি অগ্রগণ্য।
2020 সালে US Geological Survey Guyana – Surinam Basin টিকে বিশ্বের অনাবিষ্কৃত তেল অববাহিকা গুলির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। Exxonmobil (U.S), Esso (U.S), Hess, Repsol (Spain), Anadarko (U.S), Total (France), Tullow Oil (U.K) এবং CGX Energy (Canada) প্রভৃতি কম্পানি গুলি বেশ কিছু বছর ধরেই এই খননকার্যে অংশগ্রহণ করেছিল। Exxonmobil, Guyana 2015 সাল থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত 13টি আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করেছে এবং 2020 সালের শুরুর দিকে Liza phase 1 development project থেকে দৈনিক 120000 ব্যারেল তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে। 2025 সালের মধ্যে Guyana বিশ্বের বৃহত্তম মাথাপিছু তেল উৎপাদক দেশ হিসেবে গণ্য হতে চলেছে।
Ethiopia 80.28 বিলিয়ন ডলার GDP’র (2018 সালে 70 তম স্থানাধিকারী) ইথিওপিয়া আফ্রিকার দ্রুততম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত। 2006/2007 সাল থেকে 2016/17, এই দশটি অর্থবর্ষে ইথিওপিয়ার বৃদ্ধির গড় হার ছিল 10.3 শতাংশ, যেখানে আঞ্চলিক বৃদ্ধির গড় হার ছিল 5.4 শতাংশ। 2018 সাল থেকে 2021 সালের মধ্যে ইথিওপিয়ার এই বৃদ্ধির হার 8.1 শতাংশ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদেশি মুদ্রার স্বল্পতা এবং ক্রমবর্ধমান আর্থিক ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে আনা এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার 2017/2018 সালে 7.7 শতাংশে নামিয়ে আনে। এই মুহূর্তে দেশের মাথাপিছু আয় দুর্বল হলেও 2025 সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি নিম্নমধ্যম আয়ের এর অবস্থান এ উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এবং এই লক্ষ্যে দেশের সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে এবং সে দেশকে একটি উন্নত উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য জরুরী পরিকাঠামোর প্রস্তুতির জন্য অর্থনীতির দ্বিতীয় পর্যায়ের বৃদ্ধি রূপান্তর প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছে।
Rwanda Rwanda চতুর্দিকে প্রতিবেশী দেশ দিয়ে ঘেরা একটি ছোট পাহাড়ি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশটির GDP প্রায় 10 বিলিয়ন ডলার (2018 সালে 143 স্থানাধিকারী)। হাজার 994 সালের কুখ্যাত গণহত্যা সে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয় যার পরিণতিতে সেদেশের হতদরিদ্র জনসাধারণ যেকোনো ধরনের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়। তা সত্ত্বেও দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হয়। পরবর্তীকালে সে দেশে কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়নি, এমনকি হাজার 994 সাল পূর্ববর্তী অর্থনীতির তুলনায় উন্নততর ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়। 2017 সাল পর্যন্ত এক দশকে সে দেশের আর্থিক উন্নয়নের গড় হার ছিল 7.5 শতাংশ। Rwanda’র আর্থিক পুনর উন্মেষের সাথে সাথে সে দেশের জীবনধারণের মান ও সামাজিক উন্নয়নেরও প্রকৃত উন্নতি ঘটে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী একদিকে যেমন সে দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল 2000 সালে 49 থেকে বৃদ্ধি পেয়ে 2017 সালে 66.6 অংকে পৌঁছয়, অন্যদিকে দারিদ্র ও 2000 সালের 60.4 শতাংশ থেকে কমে 2016/17 সালে 38.2 শতাংশে পৌঁছয়। আশা করা হচ্ছে, দেশটি 2035 সালে মাঝারি উপার্জনক্ষম এবং 2050 সালে উচ্চ উপার্জনক্ষম দেশ হিসেবে স্বীকৃত হবে। 2018-2021 সালে এ দেশের গড় বৃদ্ধির হার 8 শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনায় এবং শক্তিশালী বৃদ্ধির হাত ধরে সে দেশের GDP 2019 এ 10.2 বিলিয়ন ডলার এবং 2024 সালে 15.81 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
বাংলাদেশ অতীতের গৌরবজনক সাফল্যই বাংলাদেশকে 2018 সালে তার 50 তম জন্ম বর্ষেএক মধ্য মধ্যমউপার্জনক্ষম অর্থনীতিতে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব সাফল্য হাজার 991 সালে 44.2 শতাংশ দারিদ্র্য সীমা কে 2016-17 সালে 14.8 শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সর্বাপেক্ষা কম উন্নত দেশগুলির তালিকাভুক্ত হতে বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তন প্রতিটি নির্দিষ্ট শর্তই পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার সময় কালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তন ছিল 8.75 বিলিয়ন ডলার। 2018 সালে সে দেশের GDP ছিল 287.63 বিলিয়ন ডলার (2018 সালে 70 তম স্থানাধিকারী) এবং 2024 সালে তা 500 বিলিয়ন ডলার স্থানাঙ্ক ছুঁতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে। দেশের আশাব্যঞ্জক উদ্দীপিত অভ্যন্তরীণ চাহিদা, রপ্তানি কেন্দ্রিক শিল্পের বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির পরিবেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে (রাজস্ব ঘাটতি GDP’র 5 শতাংশের কম) দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হিসেবে গণ্য করেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের বৃদ্ধির গড় ছিল 6.5 শতাংশ এবং তা 2018-21 সালে 7.5 শতাংশ বৃদ্ধিতে পৌঁছানোর আশা করছে। The Asian development Bank দুই হাজার উনিশ কুড়ি সালে আরও বৃদ্ধির (8%) ইঙ্গিত দিয়েছে।
ভারত বর্ষ ক্রয় শক্তির ক্ষমতা এবং nominal GDP’র প্রশ্নে ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় 5 টি দেশের মধ্যে একমাত্র ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ। বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ- ভারতের GDP’র দীর্ঘস্থায়ী বৃদ্ধি এখন আরো বেশি স্থিতিশীল ও দৃঢ়, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সহনশীল। 1990’র দশকে মুক্ত অর্থনীতির শুরু থেকেই ভারত এক তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষণীয় উন্নতি প্রত্যক্ষ করেছে। ভারতের GDP’র 17 শতাংশ অবদান সে দেশের কৃষি মৎস্য চাষ এবং বনজ শিল্পের, 29 শতাংশ শিল্প, 16 শতাংশ উৎপাদন কেন্দ্রিক শিল্প, এবং 54% পরিষেবা শিল্পের। ভারতীয় অর্থনীতি তার ভারসাম্য এবং শক্তিশালী বৃদ্ধিকে অক্ষত রাখলেও অসম উন্নয়ন, বেকারত্ব, নিম্ন মাথাপিছু আয় প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক সংস্কার, দৃঢ় সামষ্টিক অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ ব্যয়, উৎপাদনশীলতায় জোর, জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ এবং বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্র ভিত্তিক উদ্যোগ 2018 -21 সালে সেদেশের বৃদ্ধির হারকে 7.4 শতাংশে পৌঁছে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। হেয় আশা করা হচ্ছে 2.71 ট্রিলিয়ন ডলার GDP’র ভারতীয় অর্থনীতি (2018 সালের সপ্তম স্থানাধিকারী) 2025 সালে 5 ট্রিলিয়ন ডলার GDP’র লক্ষ্যে এবং 2030 সালে উচ্চ – মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে ছুটে চলেছে।
শীর্ষ দশটি দেশের অবস্থান :
Cote d’ivory (7.3%), 7. Djibouti (7.1%), 8. Cambodia (7.1%), 9. Senegal (6.9%), 10. Mongolia (6.8%)
এই তালিকায় চীন 20তম, যে দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার 2018 থেকে 2021 এই চার বছরে 6.2 শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপরের ক্রমতালিকা 2018 থেকে 2021 এই চার বছরের গড় বৃদ্ধির ভিত্তিতে (2018’র হিসাব এবং 2019-20-21 সালের অভিক্ষেপ) তৈরি করা হয়েছে। ‘বৃদ্ধির হার’ World Bank’s Global Economic Prospects, June 2019 থেকে পাওয়া তথ্য থেকে সংগৃহীত।