আজ থেকে প্রায় বছর সাতেক আগে যেদিন চাকরি নিয়ে প্রথমে দুবাই আর তারপর ফ্রান্সের এই ছোট্ট শহরটাতে এসে সৌপ্তক ঠাঁই নিয়েছিল সেইদিনটার কথা খুব মনে পড়ছে ওর। এই সাতবছরে কম করে খান চারেক জব পাল্টে বর্তমানে খুব বিখ্যাত একটা পোশাক কোম্পানীর রিটেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছিল সে। অসম্ভব ভালো মাইনে। মনে মনে ভেবেছিল, এইবার শীতে দেশে গিয়ে ছুটকির ইন্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি আর সেশন ফি বাবদ পুরো টাকাটাই বাবার হাতে দিয়ে আসবে। আর.. তারপর না হয় কোনো একদিন রিমির বাবামা’র সাথে কথা বলে ওদের বিয়ের ব্যাপারটাও ফাইনাল করে আসবে। কিন্ত বিগত কয়েকটা সপ্তাহের ঘটনা পরম্পরা ওর সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে। আজ প্রায় দশ দিন হয়ে গেল বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ওদের এই ছোট্ট শহরটাতেও প্রবলভাবে হানা দিয়েছে। গত তিনদিনে রাষ্ট্র থেকে মহামারী ঘোষনা করে সব নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বেড়োনো বন্ধ করে দিয়েছে। জনজীবন একপ্রকার স্তব্ধ। অদ্ভুত একটা মৃত্যুভয় আর শূন্যতা গ্রাস করেছে প্রাণচ্ছোল ছবির মতো শহরটাকে। সৌপ্তকের কোম্পানীর রিটেল শপগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। কবে খুলবে আর খুললেও কজনের চাকরী থাকবে তা কেউই বলতে পারছে না।একসময় বিদেশে চাকরী করা,আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে ঈর্ষা জাগানো সৌপ্তকের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সব স্বপ্ন আজ এলোমেলো, দিশাহীন। প্রাণের তাগিদে এই কবছরের জমানো পুঁজি নিয়ে অসহায়ের মতো দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে সৌপ্তক বা তারই মতো হয়তো আরও অনেকে।