উদীয়মান

সঙ্গীতা সাহা
5 রেটিং
774 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

একদা একটি পাখি আকাশে উড়ছিল তার নাম উদী । হটাৎ দৃষ্টিগোচর হল যার ডানা গুলি রঙিন পালকে মোরা যার দ্বারা অচিরেই সে মানুষের মনকে পুলকিত করতে পারে, নীলাভ তার গ্রীবা যা দেখলে শ্যামের গাত্রবর্ণের কথা মনে করিয়ে দেয়, তীক্ষ্ণ যার ঠোঁট যার দ্বারা প্রয়োজনের আবশ্যকতাকে  হাতিয়ার করতে পারে। বলিষ্ঠ যার তনুগাত্র যার  ঝাপটে   শত্রূকুলকে অনতিবিলম্বে পরাস্ত করতে পারে। লক্ষিত হল  প্রফুল্লচিত্তে সে দিবানিশি মুক্তআকাশে ভ্রাম্যমান  থাকে। নেই তার কোনো পিছুটান, নেই তার কোনো বিঘ্নতা। হটাৎ উদী  দৈবীপাক  বসত  হোক বা কোনো দুর্যোগে হোক সে আকাশ  থেকে পরে যায় একটি অন্ধকূপ সাদৃশ্য বদ্ধগৃহে  যেখানে বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর সম্মুখীন হয় সে। বেশির  ভাগ  প্রাণীই  সেখানে বীভৎস,কারুর ডানা নেই যে তারা মুক্ত আকাশে উড়তে পারে, কেউই মনোমুগ্ধকর সংগীত  তথা অপ্সরাঃনৃত্য জানে না, এমনকি কটুভাষ্য বিনা মধুভাষ্যে তাদের রপ্ত নয়। কেওই বিনম্রচিত্তে মতি নয় আর তারা এসব বোঝেও না। মূলত তারা কেউই কোমল মনের অধিকারী নয়। 

       সেই নতুন পাখিটি অর্থাৎ উদী যেহেতু তাদের সেখানে কোনো কারণ বসত চলে গেছে ,বাকি প্রাণীরা তাকে তিষ্টোতে  দিচ্ছে না । বিভিন্ন রকম ভাবে হেনস্থা  করছে যেগুলিতে সে একেবারেই অভ্যস্ত নয়।  একদিন পাখিটির কানে আসে তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাইছে তার ডানা গুলো কেটে দিতে তাহলে সে আর আকাশে উড়তে পারবে না ,যেহুতু তারা কেউ উড়তে পারে না ,তাই অন্যকাউকে উড়তে দেখলে তারা সহ্য করতে পারে না। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন রকম ভাবে হেনস্থার পন্থা আওড়াচ্ছে।  উদী ক্ষুদায় জর্জরিত অবস্থায়  চিন্তা করতে  লাগলো বনের মধ্যে  কত সুস্বাদু ফল সে খেত,ভগবানের সৃষ্ঠ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার খেয়ে সে অভ্যস্থ কিন্তু এখানে সেই অভাব বোধ করল।  এখন  উদী  কোনো উপায় চিন্তা করতে করতে কালাতিপাত করছে ,সে তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করে না ,কারণ স্বভাব বসত সে তাদের মতো না, আবার বিরূপভাবাপন্ন হলে তার বড় ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। তাই নিরুত্তর, এবং নির্বাক থাকা শ্রেয় মনে করল। সে তার স্থুল শরীর আর পাখনার ঝাপটে সবাইকে অতিক্রম করে নিমেশেই সেই দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা থেকে  নিজেকে উদ্ধার করতে পারতো।  কিন্তু তা সে করেনি। সে সারাদিন একাগ্রচিত্তে একনিষ্ঠ ভাবে তার ইষ্টদেবতার শরণাপন্ন হল।  একদিন রাতে ইষ্টদেবতা তার  স্বপ্নে এসে বলল তোমার একনিষ্ঠতায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি,এখন আমি তোমাকে উপদেশ দেব,কিভাবে তুমি এখন  এখান থেকে উদ্ধার পাবে।একটা শর্তেই আমি তোমাকে উদ্ধার করব,শর্তটা হল এই কদিন তোমাকে নির্বাক থাকতে হবে। তোমাকে কোনো কটুভাষ্য  প্রয়োগ করা যাবেনা।তাহলে তাদের সাথে তোমার কোনো পার্থক্য থাকবে না। এইটা  তোমার প্রতি আমার একটা পরীক্ষা যাতে বোঝা যাবে তুমি কতটা ধৈর্য্যশীল,তুমি কতটা আমার প্রতি একনিষ্ঠ, তোমার কতটা বিশ্বাস আমার প্রতি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে তোমাকে আর এই নরক যন্ত্রনা  সহ্য করতে হবে না। তাহলে অচিরেই তুমি এখান  থেকে উদ্ধার  পেয়ে   আমার নিত্য সেবায় যুক্ত হবে। এবং প্রতিদিন আমার রাজভোগ প্রসাদ পাবে। তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না। এই ভাবে কিছুদিন পর  নিদ্রাদেবীর প্রভাবে বাড়ির সকলে নিদ্রায় মগ্ন ছিল ঠিক  সেই সময় ভগবানের দূত এসে সেই পাখিকে উদ্ধার করে মুক্ত করল,তার পর থেকে সে ভগবানের নিত্য সেবায় যুক্ত হল আর সুস্বাদু রাজভোগ প্রতিদিন প্রসাদ পেতে লাগল।

 একদিন আকাশ থেকে সে লক্ষ্য করল তাকে যারা একদিন আটক করেছিল তারাও বিভিন্ন কারণে একইভাবে  যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। দূর থেকে উদী  সমবেদনা জানাল। তাদের এই  রূপ পরিণতির জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করল। মনে মনে ভাবতে লাগলো প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই ভাবে উদী কালাতিক্রমে সময়ের স্রোতে ভাগ্যদেবতার সহায়তায়  ধৈর্য্য ও সময়কে সাথে নিয়ে চির অন্ধের কূপ থেকে মুক্ত হয়ে বিশাল অন্তরীক্ষে উদীয়মান হয়ে রইল। 

বি:দ্র : কল্পনাপ্রসূত রূপকথার আঙ্গিকে বাস্তবতার প্রেক্ষাপট। ঠিক যেন গল্প হলেও সত্যি। 

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল