সেই দামাল ছেলেটি

কুহেলী বিশ্বাস
0 রেটিং
800 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে হৈ-হট বই চলছে। চেঁচামেচি যেন হাট বসেছে। শিক্ষক মশাই কক্ষে এসে দেখেন মেঝেতে বাদামের খোসা ছড়ানো। শিক্ষক মশাই খুব গম্ভীর ও রাগী প্রকৃতির ছিলেন। তিনি আদেশ দিলেন_         যারা বাদাম খেয়েছো, এখনি এসে আগে ঘর পরিষ্কার করো।
শিক্ষকের নির্দেশ মতো সবাই কাজে লেগে গেল কেবল একজন ছাড়া।ঐ বালকটিকে তখনও বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখে আরো রেগে গেলে শিক্ষক মশাই। তিনি বললেন,
সকলের সঙ্গে কাজ করার জন্য তোমাকে কি বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানাতে হবে?
ছাত্রটি দাঁড়িয়ে শান্তভাবে বলল—স্যার আমি বাদাম খাইনি তাই এ খোসা আমি তুলবো না।
অন্য ছাত্ররা একযোগে চেঁচিয়ে উঠলো–না মাস্টার মশাই ও মিথ্যে কথা বলছে আমাদের সঙ্গে ও বাদাম খেয়েছে।
বালকটি তখন নিশ্চুপ ও নিরুত্তাপ। তখনশিক্ষক মশাই অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,—-তাহলে তুমি বলতে চাও সকলে মিথ্যা কথা বলছে? তুমিই একমাত্র সত্য বলছো?
বালকের উত্তর–হ্যাঁ,আমি আবার বলছি আমি বাদাম খাইনি।
শিক্ষক মশাইয়ের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। বেত দিয়ে নির্মমভাবে মারতে লাগলেন বালকটিকে।কিন্তু সে নির্বিকার, বিনা প্রতিবাদে মার খেতে লাগল। শেষে একসময় মার বন্ধ করে শিক্ষক মশাই আদেশ দিলেন,        –বইপত্র নিয়ে বাড়ি চলে যাও।
বালকটি বইপত্র নিয়ে বাড়ি চলে গেল। অন্য ছাত্ররা হতবাক হয়ে বন্ধুটির দিকে তাকিয়ে রইল।
শিক্ষক মশাই এবার ঐ বালকটির বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে সব কথা জানালেন ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন বালকটির মা। শিক্ষক ভেবেছিলেন, বালকটির মা এসেনিশ্চয়ই বালকটিকে ভীষণ বকুনি বকুনি ও মারধর করবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে বালকটির মা শিক্ষক মশাইকে বললেন,
–ও যখন বলেছে যে ও বাদাম খায়নি তখন নিশ্চয়ই খায়নি। ওর কথা মিথ্যে হতে পারে না। আমার পুত্র কখনো মিথ্যা কথা বলে না। আমি তাকে সে শিক্ষা দিইনি।
কিন্তু কে এই ছোট্ট ছেলেটি?
এবারে সেই দামাল ছেলেটির পরিচয় দেব। বালকের এই সত্যনিষ্ঠা ও চারিত্রিক দৃঢ়তাই তাকে পরাধীন ভারতের বীর যোদ্ধা স্বাধীনতা সংগ্রামী বালগঙ্গাধর তিলকে পরিণত করেছিল।তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র হুংকার দিয়ে বলেছিলেন,        “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমরা তা আদায় করবই।”

১৮৫৬ সালের ২৩শে জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে চিতপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নাম ছিল কেশব গঙ্গাধার তিলক।অত্যন্থ মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে পাস করেন এবং পরবর্তীতে আইন পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন। কর্মজীবন শুরু হয় গণিতে শিক্ষার মধ্যে দিয়ে।     এরপর শুরু হয় সমাজসংস্কার মূলক কাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন। তিনি বাল্যবিবাহের বিরোধী ও বিধবা বিবাহের সমর্থক ছিলেন। তিনি গণপতি উৎসব ও শিবাজী উৎসব এর মাধ্যমে দেশবাসীকে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন।
১৮৯৭ সালে তাঁর লেখার মধ্যে আইন ও শান্তি ভঙ্গ হবার অপরাধে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে।১৮৯৮ সালে জেল থেকে বেরিয়েই তিনি স্বদেশী আন্দোলনেসক্রিয়ভাবে যোগ দেন।এরপর ১৯০৬ সালে বাল গঙ্গাধর তিলক আবার রাজদ্রোহীতার অপরাধে দীর্ঘ  আট বছরের জন্য কারাবন্দী হন।এই সময়ে তিনি রচনা করেন “গীতা রহস্য”নামে একটি গ্রন্থ।
তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় পন্ডিত, জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক ও আইনজীবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম নেতা। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘ভারতের অস্থিরতার পিতা’ বলে অভিহিত করেন। তাঁকে সম্মানসূচক “লোকমান্য” বলা হয় যার অর্থ জনগণ দ্বারা স্বীকৃত নেতা।১৯২০ সালের ১লা আগস্ট এই মহান বিপ্লবীর জীবন নির্বাপিত হয়।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল