“একটা বাজে গল্প”

সাগ্নিক দাস
5 রেটিং
797 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

 আমি কে কি করি সেটা বলবো।কিন্তু তার আগে মশাই আপনি বলুন তো আপনি তখন থেকে এত উকিঝুকি মারছিলেন কেনো??? কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে সামনে এসেই করতে পারতেন।এমনিই তো আমার কোনো কাজ নেই এই বসে বসে টলিপাড়ার জুনিওর আর্টিস্ট গোনা ছাড়া।কি রামবাবু বারণ করেছেন আমার সঙ্গে মিশতে?? বলেছে আমার মত বাজে আর বিশ্ব বখাটে লোক আর সারা দুনিয়ায় পাবেন না?? তা মন্দ বলেনি মশাই রামবাবু।উনি বিচ্ক্ষণ লোক ১৩-১/২ টা হিট সিনেমা বানিয়েছেন । ঐযে ওই নতুন মেয়ে টা কি যেনো নাম রিংকী না পিংকি তাকে অবশ্য বাচ্চার মা ও বানিয়েছেন।যাকগে সে কথা, ছোটো মুখে বড়ো কথা বলা পাপ। তা মশাই আপনি হঠাৎ রামবাবুর কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গেলেন কেনো?? কি আমাকে দেখে আমার কৌতুহল লেগেছিল?? হো হো হো বলেন কি?? শোনো গো তোমরা আমাকে দেখে নাকি কারোর কৌতূহল জেগেছে। আরে মশাই আমি এত জঘন্য আমার বউ অবধি দু দিন সংসার করে আমাকে ছেড়ে ওই উঠতি নায়ক বরুণের সঙ্গে ভাগল বা। আমি এসে এই তেতুঁল তলায় বসলে কুকুর গুলো অবধি নাক সিটকে নিজেদের ভাষায় খিস্তি মেরে চলে যায় আর আপনার কিনা আমকে দেখে কৌতূহল লাগলো??? নানা আমার মোটেই হাসা উচিত হচ্ছেনা,একটা সিনেমার কোন রিলের কোন দৃশ্য টা আপনার পছন্দ হবে সেটা নিশ্চয় ডিরেক্টর ঠিক করে দেবেনা।ওটা দর্শকের একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার।আপনার মুডের ওপর আপনার পছন্দ নির্ভর করবে সবসময়।ধরুন এই আপনি কোনমতে দৌড়ে এসে লাফিয়ে শেষ দুটো টিকিট কেটে কোনার সিটে বান্ধবী কে নিয়ে বসলেন,হল অন্ধকার,আর হল  এর সেই অন্ধকারে সামনের স্ক্রিনে একটা বিশ্রী আস্পিরিন মার্কা ছবি চললেও আপনার সেটা ভীষণ রোমান্টিক লাগবে এটা আমি বাজি রেখে বলতে পারি।
 কি বললেন আমি বড্ড বাজে বকি? হ্যা এইটা আপনি ঠিকই বলেছেন,ইনফ্যাক্ট সবাই তাই ই বলে।কিন্তু কি জানেন দাদা আমি বলি ওটা মোটেই বকবকানি না ,ওটা আমার লেখা আমার জীবনের শেষ সিনেমাটার বড়ো ভালো একটা স্ক্রিপ্ট।ওই দেখুন আপনি হাসছেন ভাবছেন আমি আবার কবে ছবি করলাম?? করেছি দাদা করেছি । ৭-১/২ খানা ছবি বানিয়ে ১-১/২ খানা হিট হলে কেমন লাগে তা আমি জানি,যাইহোক সেটাও বড়ো কথা না ওই সাড়ে সাতখানা ছবি ফ্লপ হয়ে গলা অবধি দেনার দায়ে ডুবে পাওনাদার দের বেদম মার খেয়ে, বউ পালিয়ে গিয়ে আমি একদিন দেখলাম মাথাটা বেশ খেলতে লেগেছে ,বেশ আতেল মার্কা সব ছবির কনসেপ্ট আমার মাথায় গিজগিজ করছে। কিন্তু হলে কি হবে? সিনে জগতে আমার তখন ভীষণ দুর্নাম।কেউ কোনো পার্টি তে ডাকেনা ডাকলেও পারতপক্ষে কথা বলতে চায়না,সুতরাং আইডিয়া গিজগিজ করলেও প্রোডিউসার এর অভাবে সব বিশ বাও জলে।কম চেষ্টা করিনি আমি, মরা মায়ের গয়না গুলো বন্ধক রেখে,বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে,কিন্তু তখন আবার বাঁধ সাধলেন আপনাদের এই রামবাবু মার্কা বড়ো ডিরেক্টর রা। যেই দেখলেন আমি আদা জল খেয়ে একটু ভালো ছবি বানাতে লেগেছি অমনি পিছনে কাঠি করতে শুরু করলেন। পুরো ইউনিট রেডি করে বসে হিরোইন কে আসতে দিলেন না। লোকে জানলো হিরোইন হয়তো রাজিই হয়নি কোনোদিন,আমি নামের লোভে আর মানসিক ভারসাম্যহীনতা র বশে এইরকম কিছু ভেবে নিয়ে ইউনিট রেডি করেছি হয় তো।কি নিদারুণ লজ্জা,এদিকে সব কিছু দাও তে লাগানো।একটার পর একটা লোক কাজ ছাড়ছে,লোকসান গলা অবধি। ধুর মশাই কি শুনছেন তখন থেকে হা করে, বলি এর একটা ন্যায্য মূল্য হয় তো নাকি?? তখন থেকে বকে বকে গলা শুকিয়ে গেলো। যান হারুর দোকান থেকে একটা চা আর দুটো কাচি সিগারেট এনে দিন তো। আরে ঐদিকে আবার কি ক্যাচাল লাগলো রে বাবা।বুঝলেন দাদা সব চিত্রনাট্যের দোষ ব্রহ্মার বদমায়েশি। আমাদের পাড়ার মুদি দোকানের হেল্পার কালু অবশ্য বলতো আলুর দোষ। ওর কাছে সারা পৃথিবীটাই আলুর দোষ জানেন তো? ও ছোড়া র ও বউ পালিয়ে গেছে তো, তাই  বোঝে আমার কষ্টটা। তা আমাকে মাঝে মধ্যে বলে বুঝলেন তো “যে দাদা সবই আলুর দোষ,মানুষ সব জিভ লকলকিয়ে মেয়ে খাবে বলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই শহরে,মুখে ফেমিনিসম এর আঁশটে গন্ধ আর রাত্রে এসে বিছানা কাপাচ্ছে অনুমতি ছাড়াই। বুদ্ধিজীবী বুঝলেন দাদা বুদ্ধিজীবী রাই সমাজের সর্বনাশ টা করেছে।সব জায়গায় ওই প্লেটনিক লাভের থিওরি মাড়িয়ে কামের বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে শহরটাই।” কালু সাহিত্যের ছাত্র ছিল,বেচারার বাপ টা মরে গিয়েই…আরে ধুর ধুর ধুর জ্বালিয়ে দিল দেখছি ঠিক আমাদের পাশের বাড়ির ওই লোকটার মতো,চিত্রনাট্যের দোষ, কাস্টিং টাও ঠিক মতো হোয়নি পাক্কা।যাকে বিয়ে করবে বলে তুলকালাম করলো বাড়িতে এখন তার সঙ্গে রেগুলার ক্যাচাল, ঝোগড়া খিস্তি মারামারি কিচ্ছু বাদ নেই আসলে ওই তখন মাথায় আলুর দোষ চেপেছিল ভালো মন্ধ আর কে বিচার করে,কিন্তু আসল দোষ টা তো ওই প্রজাপতি ব্রহ্মার,কি সুন্দর বিনা স্ক্রিপ্ট এর জঘন্য বি গ্রেড বানিয়ে হল পোড়াচ্ছে।  তা যায় হোক আমি আবার ঝুলে গেলাম টাকা পয়সা বাড়ি ঘর কিচ্ছু নেই।শুধু একটা হান্ডিকাম নিয়ে শহরে পাগলের মত ঘুরে বেড়ানো,লঙ্গর খানায় খাওয়া আর এখানে এসে ওই আর্টিস্ট গোনা। কিন্তু জানেন দাদা আমি না মাঝে মধ্যেই স্বপ্ন দেখি,আচ্ছা গরীব মানুষের কি স্বপ্ন দেখা সাজে বলুন তো?? আমি স্বপ্ন দেখি আবার কখনো একটা পূণ্য তিথিতে আমি একটা পারফেক্ট চিত্রনাট্য সাজিয়ে ক্যামেরায় চোখ রেখেছি,সামনে রেল লাইন নারকেল গাছ ওই অপু দুর্গা দাড়িয়ে আছে,বা ঘুমের মধ্যে দিয়ে আসা অন্ধকার কে দূরে ঠেলে কারখানার সাইরেন এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কাস্তে হাতুড়ি,রক্তরাঙা জয় ধ্বজা উড়ছে চারিদিকে ঐযে ঐযে ঐদিকে ক্যামেরা ঘোরান ঐযে মিথ্যে কথার শহর টাকে সাক্ষী মেনে ভালোবাসছে ওরা দুজন,ঐযে সব গরীব সব অভুক্তরা নাক টেনে ঘ্রাণ নিচ্ছে গরম ভাতের,পিছিয়ে আসুন দেখুন চেয়ে কতবড় মিছিল ঐযে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত চারিদিক কত প্রতিবাদ কত প্রতিরোধ,ঐযে পলাশীর প্রান্তর থেকে জন হেনরীর কাছে, ঐযে বিটলস থেকে কালপুরুষ ঐযে লর্ডস থেকে ইডেন,ঐযে সাইকো থেকে নেমেসিস সব জায়গায় ঘুরছে আমার ক্যামেরা আমার আতেল ছবির সাক্ষী এই একটা ব্লাডি ক্যামেরা। 
আমি খুব আশাবাদী পুরুষ জানেন আমি জানি একটা সঠিক স্ক্রিপ্ট একটা প্যান করা দৃশ্য সব ঠিক করে দিতে পারে,আবার সাজিয়ে দিতে পারে জীবন । শুধু একজন শ্রোতা থাকলেও গল্পটা সৎ ভাবে বলে যেতে হয়।

কি বললেন মশাই আপনি ওই বিখ্যাত প্রোডিউসার ঝুনঝুনওয়ালা ???কি আপনি আমাকে নিয়ে ছবি বানাতে চান??? ধুর মশায় এই দিনের বেলায় মস্করা করবেন নাতো।কি আপনি সিরিয়াস?? আমার শেষ চিত্রনাট্য টাও পড়ে ফেলেছেন???? রামবাবুর মত ডিরেক্টর কে বাদ দিয়ে আপনি আমাকে?? নানা এ ঠিক আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা?? কি কান্ড বলুন তো মশায়, এবাবা আবার টাকা পইসার কথা উঠছে কেনো?? আগে কাজটা বুঝবেন চলুন তারপর তো ওইসব দেবেন।আমি দিব্যকান্তি সাহা আজ বিকেল থেকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।আমার জীবনের সবথেকে বড়ো সিনেমাটা ই তো বাকি এখনও। আমি জানতাম একটা ঠিক স্ক্রিপ্ট…

হ্যা আসছি, যায় হ্যা শট রেডি করতে হবে,এক্ষুনি শব্দ ভেসে আসবে ক্যামেরা রোলিং,অ্যাকশন আর ক্যামেরার ওপারে তৈরি হবে আমার একটুকরো শেষ স্বপ্ন।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল