জঙ্গল_ডায়েরিজ(৪)

অশোক ভট্টাচার্য
0 রেটিং
1168 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

বিগত পর্বের লিংক : 1.
https://www.saabdik.com/jungle-diaries-1/

বিগত পর্বের লিংক : 2.

https://www.saabdik.com/jungle-diaries-2/

বিগত পর্বের লিংক : 3. https://www.saabdik.com/jungle-diaries-3/

গতকাল বিকাল পেরোতেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষা ফরেস্ট বাংলোতে সন্ধ্যা নামলো একেবারে গিলে খাওয়ার মতো করে। 
মানুষ বলতে সেই ছ’জন। সারা দিন প্রতীক্ষায় ছিলুম এই বোধহয় পাশের ফাঁকা ট্রি-হাউস টাতে ব্যাগ-পত্তর নিয়ে কেউ এলো। নাহ। আসেনি। 
মানুষ ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। 
“চা’য় হোগি আভি সাদ্দাম?” সাদ্দাম জানালো  ছোটো চৌকিদার আর তার সাকরেদ নেইমার আমাদের জন্যই দেশী মোরগ আনতে গ্যাছে পাশের গ্রাম থেকে। 
নেইমার কে বেশ লাগে। জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলো,”এইটথ কেলাস মে পঢতি হুঁ”।  “তা পড়াশুনা করিস কখন, এখানে কাজ করে?” উত্তরে স্রেফ হাসলো। পিঠে সবসময় একটা জার্সি, সেখানে লেখা নেইমার জুনিয়র। আসল নাম ভোলা সিং, কিন্তু আমরা নেইমার বলেই ডাকছি।
শিশু শ্রম বে আাইনি৷ সেতো পেনাল কোডের কিতাবে আর দস্তাবেজে। যখন যা চাইছি নেইমার এনে হাজির করে দিচ্ছে প্রথম দিন থেকেই।
 “কেন এখানে কাজ করিস”। “কাম করনে সে ফুটবল অউর পঢাই কি খরচা জো মিল যাতি” 
টুং টাং টুং টাং…বাংলোর রান্নাঘরের পিছন থেকে আওয়াজ। “আ যা.. হুট হুট..”দুই কিশোরী কণ্ঠের আওয়াজ। অনেক সাধ্য সাধনার পর গোরুটাকে বাগে পেলো তারা। “আভি কাঁহা,ঘর যাওগি তুমলোগ? ” বোকার মতো দুই চতুর্দশীকে প্রশ্ন করলাম। “ঘর হি তো যানা হ্যাঁয়..আপলোগ  শ্যামকো ক্যায়া  ঘর নেহি বাপস যাতি?” মারাত্মক প্রশ্নটা তিরের মতো বিঁধিয়ে হাসতে হাসতে দুই পঞ্চদশী  কন্যে জঙ্গলের গলিতে মিলিয়ে গ্যালো।
 এরপর সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলবে, শাঁখ বাজবে বাংলার উঠোনে উঠোনে। “আমি যত দূরেই যাই ।আমার চোখের পাতায় লেগে থাকেনিকোনো উঠোনেসারি সারিলক্ষ্মীর পা” এক নিমেষে বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, নগর,জঙ্গল একেকার হয়ে যায়।
নেইমার সান্ধ্য আড্ডার জোগাড় যন্তর করে দিলো। ক্লাস এইটে পড়ে। এই বয়সে এমন সন্ধ্যায় বাবার কড়া নজরদারিতে মাদুর পেতে পড়তে বসতাম। আর আজ সান্ধ্য আড্ডার মৌজ; সেদিনের ক্লাস এইটের আমি আজ নেইমার। হাতে তার জলের জগ, ট্রেতে গরম ভেজে আনা পকৌড়া। “নেইমার ইয়ে চারো গিলাস আচ্ছা করকে সাফা করকে লে আনা।”  ফরমায়েশ তালিম করতে ছুটলো নেইমার। 
নেইমারের আনা পকৌড়া চিবুতে চিবুতে শিশু শ্রমের ভয়ংকর দিক নিয়ে গুরু গম্ভীর একটা লেখা কিম্বা  দুর্দান্ত একটা বক্তিমে কিভাবে সাজানো যায় তা ভাবছি। 
“নেইমার…আগর হো সাকে তো দো চার পিস মুরগী টা টুকরা বিনা গ্রেভিকা লে আনা”
“জি দাদা”.. নেইমার আবার ছুটলো। ব্রাজিলের বস্তি থেকে মারোমারের জঙ্গল ছুটছে নেইমার…ছুটছে…বন বাদাড়, শিশু শ্রম বিরোধী আইন, পাহাড়ের কোলের ছোটো ফুটবল মাঠ, আমার বুকের হাড় পাঁজর দুমদাম করে লাথিয়ে নেইমার ছুটে চলেছে… ছুটছে ডেরাইভার সাদ্দাম..একসাথেই…লম্বা পাস.. বল পায়ে নিলো চৌকিদার মহেন্দ্র মুণ্ডা…পাস বাড়ালো রাধুনি অজয় কে…
মনে পড়ছে…সুবোধ সরকার।
মিলোভান সাইড লাইনের ধার থেকে তারস্বরে চিৎকার করে বলছে…নেইমার…অজয়…সাদ্দাম…মুণ্ডা… মাঠ আরো বড় করো..আরো বড় করে খেলো…এটা ভারত…বর্ষ। 

অশোক_ভট্টাচার্য_রাজা/ ১৭/১০/২০১৯ ভোর ৫ টা ৩০ মিনিট

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল