#ভূমিকা—
বত্তমানে গোরু একটি সাম্পোদায়িক শব্দ, রাজনইতিক বকতব্ব! গোরু লিয়ে যারা ভাল ভাল কথা কয় তারা সব ওরাদ্যার লোক, আর গোরু লিয়ে যারা খারাপ খারাপ কথা কয় তারা সব এরাদ্যার লোক৷ শুদু আমি মদ্যিখানে, ক্যানে না আমি গোরুর দুদ’ও খাই আবার মাষটারের পেছুন মেরে চাট্টি মদও খাই৷
#আমাদ্যার_গোরু
যাইহক, যেটা বলছিনুম৷ আমাদ্যারও গেদ্দে গোরু ছিল, এখন গেদে নাই ঠিকি তব্যে কম হোলেও আছে, আমাদ্যার এখেনের সবারই ঘরে গোরু আছে৷ মেইছ্যানা গরুগুলান দুদ দ্যায়, সেই দুদে অনোককিছু থাকে য্যামন লুহা, পিতল, পোটিন, ভিটামিন এই সব আরকি৷ তবে সনা থাকে নাকি আমি জানিনি, পনচুর মা জান্যে, তা নাইল্যে রাত্তেব্যালা দুদ চুরি কত্তে এসবে ক্যান্যে গুয়ালে? আমাদ্যার বারটার মদ্যে ছটা গোরু দুদ দ্যায়, আর সার দ্যায় সবাই৷ আমার ঠাগমা সকালব্যালা উঠ্যে সরষার ত্যালের শিশি আর দুটা বড় বড় বালতি লিয়ে দুদ দুইত্যে যায়৷ গোরুগুলান আমাদ্যার সব লক্ষীমন্ত, কাউকে ঢুঁসায়নে, আমাকে ত গেদে ভালবাসে, আমার ঠাগমাকেও ভালবাসে৷ ঠাগমা যখন গাইগোরুটার বাঁটে সরষার ত্যাল মাখিয়ে দুদ দুয়ে, তখন চ্যাঁ চঁ কোরে কি সুনদোর শব্দ হয়৷ আমি তখন গোরুটার গলাটায় হাত বুলি দিই, গোরুটাও খুব আদর খায়, চোখ বুজ্যে থাকে, আমার গায়ে গা ঘষে ৷ আমারও দমে ভাল্লাগে৷ ঠাগমা একমাথা থিকে ছটা গরুর দুদ দুইলে এগবালতি দুবালতি দুদ হয়৷ পাড়ার বদনকাকা, জীবন্দা, মদন্দার মা, এরা সবাই ঘটি টিফিনখাড়ি লিয়ে এসে দাঁড়ি থাকে, টাটকা দুদ লিবে বলে৷ ঠাগমা গরুর দুদ দুয়ে তাদের পাত্তগুলানে সব মেপে মেপে ঢেলে দ্যায়! কারও একপুয়া, কারো দুপুয়া, টাটকা দুদ একফঁটা জল মিশায়নি৷ সবাই বলে ঠাগমা বেবসায়ি গয়লাদ্যার থিকে দাম টুকুন বেশি ল্যায়, ত্যামন য্যা দুদে কুনু ভ্যাজাল নাই! আমাদ্যার ঘরে কেউ দুদ খায়নে, দীপেন মাষ্টারও খায়নে! তাই ঠাগমা পোতিদিন দুদ বিক্কি করে দ্যায়, ঠাগমা দুদ বিক্কি করে একটু একটু পয়সা জমিয়ে দুটা ছুটু ছুটু কানের আর একটা নাকের কিনেচে, সনার৷ ঠাগমা বলচে, গরুর দুদে নাকি সত্যি সত্যি সনা থাকে, সেখেন থেকেই ত ঠাগমার সনার কানের আর নাকের হল৷
#গোরু_লিয়ে_গাল
হাই দ্যাখ! তমরা যারা শিকখিত লোক তারা নিঘ্ঘাত আমার ঠাগমাকে গাল দিব্যে? গরুর বাচ্চা বলবে? অ, আমি ত ভুলেই গেইনুম এখন গোরুর বাচ্চা একটা গাল, এরাদের লোক ওরাদের লোকদ্যার গাল দ্যায় অমন বলে বলে৷ আমাকেও #দীপেন_মাষটার গাল দ্যায়, ভুলভাল কাজ কোল্লেই ‘গরু’ বলে৷ ছুটুব্যালায় ইসকুল্যার মাষটারগুলাও বলত, ‘গ্যাঁড়া, তুই একটা আস্ত গরু! তোর দ্বারা পড়াশুনা হবে না’! এখনো লোকে গোরুর নামে গাল দ্যায়, তব্যে সেটা পুরাই রাজনইতিক গাল৷ এই য্যামন ‘গোসন্তান, গোমাতা’ও একটা রাজনইতিক শব্দ, এরাদের লোক ভাল বলে আর ওরাদ্যার লোক খারাপ৷
#গোমাতা
আমাদে ছোটব্যালায় আমরাও গোমাতা বলতুম, যে গোরুগুলান দুদ দিত সেই গাইগোরু গুলানকে৷ আমার দাদু বলত ‘গোরু ভগবান, ভগবতী’৷ তাই ত আমরা গোরুগুলানকে ভালবাসতুম কত! কালিপুজার পরদিন্যে আমাদ্যার ছ্যানাগোরু গুলানের সন্নে মেইছ্যানা গোরুগুলানের বিয়া দ্যায় এখনো৷ আমাদ্যের পাড়া গাঁয়ে সব গিহস্থ ঘরেই দুটা চাট্টা করে গোরু আছে! গাইগোরু দুদ দেয়, হেলা গোরু দিয়ে জমিয়ে হাল দ্যেয়! গোরুর সার, যেটাকে তমরা গোবর বল, উটা দিয়ে আমাদ্যার চাষবাস হয়, মাটির ঘর উঠান লিকানা হয়৷ ঘরের লোকের মতনই গোরু থাকে আমাদে ঘরে, আলাদা ঘর থাকে গোরুর লেগে! জ্বরজালা হলে ডাকতর দেখানা হয়, ওসুদ খাবানা হয়৷ বিন্দাবনে দেখিচি, সেখেনে গোরু পিছু একটা করে কারেনের ফ্যান! সেখেনের গোরুগুলানের গতরও বেশি, দুদও দেয় বেশি তাই তাদ্যের আরামও বেশি৷ আমাদ্যার গরুগুলান যখন বুড়্যা হয়, তখন কারাও কারাও গোরু বিক্কি করে দ্যায়! আবার কারাও কারাও গোরুগুলানকে নিজ্যার ঘরের লোক মনে করে কষাইখানায় পাঠায়নে, তাদের ঘরেই রাখে! তারপর মরে গেলে তাকে মাটির লিচে পুঁত্তে দ্যায়৷ সে তমরা গোরু লিয়ে যতই পাটি পলিটিস কর, রাজ্নিতি কর, রাগ কর গঁসা কর! আমরা ত জানি, গোরু আমাদ্যার কত দামি, তাই আমাদ্যার অনেক লোকের কাছেই গোরু ভগবান৷ সে তমরা মান আর না মান, এয়ে তায়ে করে তমরাও আমাদে গোমাতার কাছে উপকার লিইচই লিইচ৷
#উপকারী_গোরু
দীপেন মাষটারও বলতে পাল্লনি যে গোরু সালকসংশেলেষ করে নাকি, তাই জানতে পাল্লুমনি গোরু অকসিজেন দ্যায় না দ্যায়নি! তবে আমাদ্যার চ্যানাপরিচিত গোরুগুলান দুদ দ্যায়, সার দ্যায়৷ গোরুর দুদ থিকে ঘি, ছানা, মাখন, রসগল্লা আরও গেদে রকম্যার মিষটি হয়৷ যারা গোরুগুলানকে এখন একটুও ভালবাসেনি তারা এগুলানের কুনুই খায়নে, আর যারা গোরুকে গেদে ভালবাসে তারা অন্য খাবার ছেড়ে শুদু এগুলানই খায়৷ আমি মদ্যিখানের লোক, দুদ খাই আবার ঠাগমার দুদ বিক্কির টাকা ঝেঁপে মদও খাই৷
#গোরুর_পকারভেদ
গোরু এমনিত্যা তিন পকার৷ ১)গাইগোরু, এগুলান মেইছ্যানা গোরু! এরা শুদু খায় দায় আর দুদ দ্যায়, বছর বছর বাচ্চা বিয়ায়৷ সার দ্যায়৷
২)এঁড়া গোরু! এরাদ্যার কাজ হচ্চে শুদু গাইগোরুগুলান্যার পেছুন পেছুন ঘুরা আর পেছুন দিয়ে গায়ে উঠা৷ শিবঠাকুরের মন্দিরের সুমুখ্খানে দেখবে, এরাদের পাকা মুত্তি থাকে৷ এরা পথে রাস্তায় ঘুরে শুদু, এখে তাখে গুঁতায়৷ এরাও সার দ্যায় আর টেনশান দ্যায়৷
৩)হেলাগোরু৷ এরাদ্যার দাম সবথিকে বেশি, ত্যামন এরারা কাজও বেশি বেশি করে৷ এই য্যামন ধর, জমিয়ে হাল দিয়া, গাড়ি টানা, মাল বয়া, এমন অনোক কাজ করে হেলাগোরু৷ এরাও সার দ্যায়৷
এগুলান ছাড়াও আরো অনোক ধরনের গোরু আছে, য্যামন কালগোরু সাদাগোরু ভালগোরু খারাপগোরু! তবে এখন সবথেকে বেশি চলচে #পাটিগোরু৷
#উপসংহার
সে তমরা গোরু দিয়ে যতই আদিখ্যেতা কর, হিংসা মারপিট কর, রাজ্নিতি পলিটিস কর, যা ইচ্ছা তাই কর! কিন্তুক আমাদ্যার পাড়া গাঁয়ের চাষিবাসি মানুষগুলানকে গোরু লিয়ে জ্ঞান দিতে এসনি বাপু৷ উটা আমাদ্যের ভালই আছে, তমরাদ্যের থেকে খানিক বেশিই আছে৷ আমাদ্যের দীপেন মাষটার বলে, ‘সৃৃষ্টির সেই প্রথম লগ্ন থেকেই গরু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে আছে৷ বিনিময় প্রথার সময়েও আমরা দেখেছি গরুর প্রাধান্য৷ আগেকার দিনে দুরদেশে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গরুর গাড়ির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম! এখনও বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবে সাজানো গরুর গাড়ি আমরা বাস্তবে এবং সিনেমার পর্দায় লক্ষ করি৷ শুধু তাই নয়, গরুর গুরুত্ব অনুধাবন করে ভগবানের আসনেও বসানো হয়েছে৷ কখনও বাবা ভোলানাথের বাহন ষাঁড় হিসেবে, কখনও ধরিত্রি মাতার রূপকে গোমাতা! এছাড়া বৃন্দাবনের গোচারণ ভূমিতে শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সুদামা সহ অন্যান্ন সহচর দের লীলা আমাদের শিশু মনে অনাবিল আনন্দের জায়গা করে আছে৷ যে গরুর প্রয়োজনীয়তা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে, আজ সে রাজনীতির বাকযুদ্ধে আবার কখনও সরাসরি যুদ্ধ এবং মৃত্যূর কারন! যেটা গোটা একটা সমাজের পক্ষে ভীষণ রকম অনভিপ্রেত, অমঙ্গলজনক’!
যাইহক, মদ্দা কথা হল শুন বাপু! মানুষ বেইমানি করে, গোরু কুনোদিন বেইমানি করেনি৷ আর সাবদান কচ্চি, গরু লিয়ে ইয়ারকি ফাজলামি করনি, গোরু মোটেও হালকা জিনিস লয়! অনোক লোককে সিন্যামায় ত দেখেচো, ছাগলবাচ্চা কোলে করে লিয়ে লাচগান করে! কুনোদিন গরুর বাচ্চা কোলে লিয়ে লাচগান কত্তে দেখেচ?
=সমাপ্ত=
©DipenBhunia, চন্দ্রকোনা৷
(ও হ্যাঁ, শেষ পজ্যন্ত পড়ে যোদি ভাল্লাগে থাইলে শুদু লাব দিবে! নাইলে লাল এংরি! নাহলেই বুজে লুব, না পড়ে ঠুকেচ