ডটকম

সোমা সরকার
3 রেটিং
2085 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 2 , গড়ে : 3]

পাঠকদের পছন্দ

স্বামী স্ত্রীতে অশান্তি কোন সংসারে না হয়,তা বলে কোন বৌ এমন করতে পারে!রাস্তায়  বের হবার জো নেই।চারিদিকে ছ‍্যা ছ‍্যা পড়ে গেছে।কি কুলক্ষণে যে মা আমার গলায় এমন জদ্দাল  বৌ ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল!-হাত থেকে বাজারের ব‍্যাগটা রাখতে রাখতে মেজাজের সঙ্গে বলে চললেন পবিত্র বাবু-বুড়ো বয়সে এমন সব কান্ড শুরু করেছে যে আর সহ্য করতে পারছি না।- হঠাৎ ভেতর ঘর থেকে বাজখাই গলায় এক মহিলার গর্জন শোনা গেল -চোঅপপপ!!!সঙ্গে সঙ্গে রান্না ঘরে বাসন পরার আওয়াজ পাওয়া গেল,খাওয়ার টেবিলে অর্পনকে ডাল দিতে গিয়ে হাতার ডাল ছলকে উঠল তৃনার,মুখের ভাত গলায় আটকে চরম বিষম খেল অর্পন,আর সবচেয়ে করুণ অবস্থা হল পবিত্র বাবুর-কাচুমাচু মুখে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সে অর্থাৎ বাড়িটা যেন একটু নড়ে উঠল।এমনটাই হয়,হয়ে আসছে বিগত বছরগুলোতে।

    বাড়ির কর্তা-গিন্নি অর্থাৎ পবিত্র আর উমার রোজকার ঝগড়া অশান্তিতে ত্রাহি ত্রাহি রব সকলের।বাড়িতে কাক পক্ষীও বুঝেশুনে বসে।কোনও রান্নার বউ তিন-চার মাসের বেশি টেকেনা এবাড়িতে।মলিনা এবাড়ির পুরনো দিনের কাজের মেয়ে, অর্পণকে মানুষ করেছে কোলে পিঠে করে, নতুন বৌয়ের ঘর সাজিয়ে দিয়েছে–তাই মায়া কাটাতে পারে না,নইলে এই বাড়িতে কোন মানুষ কাজ করে!!যবে থেকে ঐ মোবাইল নামক দানব যন্ত্রটি হাতে পেয়েছেন, সারাদিন কর্তা-গিন্নি ওতে ব‍্যস্ত।কানে সবসময় ঠুলি গোজা।আর এক হয়েছে ঐ ফেসবুক.. সারাদিন ধরে ছবি তোলো,ছাড়ো,লাইক মারো…এই কাজ।কি বাজার হবে, কি রান্না হবে কর্তা-গিন্নির কোন খেয়াল আছে?এই নিয়ে এবছরে তিন নম্বর রান্নার বউ কাজ ছাড়লো।এক কমপ্লেন-রোজের রান্না বাদ দিয়ে দুনিয়ার উল্টোপাল্টা রান্না করতে বলেন-ওকি আমাদের কাজ!তবে তো আর দশবাড়ি ঘুরে মরতে হতোনা, বড় রেস্টুরেন্টেই লেগে পরতাম।অর্পণ আর তৃণাও বিরক্ত।এই বয়সে এসে মোবাইল নিয়ে যা শুরু করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব আনারও উপায় নেই।খেজুরে আলাপ করে নাম ধাম জেনেই ব‍্যাস পরের দিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়।রীতিমতো লজ্জার ব‍্যাপার।অনেক বলেও শোধরানো যাচ্ছে না এদের।

     পবিত্রবাবু একসময় ক‍্যালকাটা টেলিফোনস্ এর বড়বাবু ছিলেন।দুহাতে কামিয়েছেন।ছোট বড়ো অনেক সখ আহ্লাদ পূরণ করেছেন।মা খুঁজে বেছে সুন্দরী বৌ ঘরে এনেছিলেন ছেলেকে বৌয়ের আচলে বাধবেন বলে এবং কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন একেবারে যোগ্য পাত্রীই এনেছেন তিনি! পবিত্র বাবুর বৌ প্রীতির গল্প এ অঞ্চলে জনপ্রিয়।মোটা অঙ্কের প্রাপ্তির পর প্রথম দিকে নিজেই বৌয়ের জন্য উপহার নিয়ে আসতেন।পরে বাধ্যতামূলক উপহার নিয়ে ঘরে ঢুকতে হতো, নইলে.. অফিসে বড়োসাহেবের ঘরে বেনামে ফোন আসতো পবিত্র বাবুর নামে।প্রথম জীবনে এক মনে কট্টর রাজনীতি করতেন পবিত্র বাবু, অনেক সুযোগ সুবিধাও ভোগ করেছেন।পরিবর্তনের হাওয়ায় উনিও রং পাল্টান গদি পাওয়ার লোভে।কিন্তু ঘরে শ্রীমতি এই পরিবর্তন একেবারেই মানতে নারাজ।শুরু হয় দারুন অশান্তি এবং অদ্ভুতভাবে ভোটের আগে তার নামের দেওয়াল লিখনের উপর কে বা কারা রাতের অন্ধকারে কালো রঙ ঘষে দিয়ে যায়!এমনকি পার্টি অফিসে তার কুকর্মের কাহিনি ভরা একটা ক‍্যাসেট জমা পড়ায় তার ভোটপ্রচারও বন্ধ হয়ে যায় ।যদিও এসব কার কাজ জানতে কারো বাকি ছিল না তবুও একপ্রকার বাধ্য হয়েই দল ত‍্যাগ করেন পবিত্র বাবু।পরে যে দু-একবার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দেয়নি তা নয় তবে ঐ যে মা মনসা দোর আগলে  দাঁড়িয়ে আছে,ধুনোর গন্ধ ছড়ায় কার ক্ষমতা!

    এইরকম জোয়ার-ভাটা তো লেগেই ছিল, বানের জল ঢুকল বছর তিনেক আগে স্মার্টফোনের দৌলতে।পবিত্র বাবুর ফেসবুক আর হোয়াসআ্যপ স্ট‍্যটাসে গিন্নি আক্রান্ত হলেন আর শুরু করে দিলেন বাড়িতে অত‍্যাচার।অগত্যা পবিত্র বাবু কিনে দিলেন স্মার্টফোন আর সেই সঙ্গেই বাড়িতে প্রবেশ করল ডটকম নামক দৈত্যটি।দুনিয়ার নিয়মই হচ্ছে যে বেশি উপকার করে বাশটা এসে–থাক আর নাবললেও চলবে!দুদিন পর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে গিন্নির নাম দেখেও বুঝতে পারেননি পবিত্র বাবু হাওয়া কতটা এলোমেলো বইছে। প্রথম প্রথম সব ঠিকই ছিল-একটু আধটু লাইক, সেলফির ঘনঘটা, বাংরেজিতে ভুলভাল মন্তব্য। ছোবলটা খেলেন প্রায় এক বছর পর।নতুন রূপে নতুন নামে ময়দানে নামলেন গিন্নি।প্রথমে বেশ ঘোল খেলেন পবিত্র বাবু।কচি বান্ধবী পেয়ে একটু আধটু নরম গরম চ‍্যাটিং শুরু করেছিলেন বটে তবে অঙ্কটা জটিল হয়ে উঠছিল ক্রমেই।বান্ধবীর সবকথা কিকরে যে গিন্নি জেনে ফেলছিল বোঝবার আগেই একদিন লেগেগেল আগুন!আসলে ঐ অল্প বয়সের ছবিটা নিয়ে বৌমার কিছু বান্ধবীও একটু বেশি আওয়াজ দিচ্ছিল।আর পবিত্র বাবুও হঠাৎ করে এপে গিয়ে মাথার চুলগুলো কালো করে একদম সেলন থেকেই দিয়ে ফেললেন রোদ চশমা পরে এক ফান্টুস মার্কা সেলফি… এখনো মনে আছে সে রাতটা না খেয়েই কাটাতে হয়েছিল!স্ত্রী যে এতটা এগোতে পারে ভাবতে পারেন নি পবিত্র বাবু।এর জেরেই গিন্নি অমন সুন্দর কোমর পর্যন্ত চুলগুলোকে কেটে ঘাড় অবধি করে ফেলল আর একদঙ্গল বান্ধবীদের সাথে চলে গেল কোন এক বাগান বাড়িতে মোচ্ছব করতে।এখানেই যদি থামত তবে পারা যেত!এরপরই শুরু করল বৌমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুনিয়ার অনলাইন কেনাকাটা !আরে বাবা ওদের দুহাতে ইনকাম ওদের সঙ্গে পাল্লা দিলে কি চলে.. শেষমেশ বাটি হাতে না রাস্তায় বসতে হয়!কিন্তু কে শোনে কার কথা! এর মাঝে আবার কোথা থেকে জুটিয়েছে এক চ‍্যাংরা গোছের সাউথের বয়ফ্রেন্ড।কিএক বিচ্ছিরি নাম ইলিয়াপ্পা -আদর করে আবার তাকে ডাকা হয় ইলু।ন‍্যাকা !.ঘাটে ওঠার বয়সে ভিমরতি ধরেছে!সারাদিন ফোনে কিসব অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলে আবার মাঝে মাঝে মনে হয় ভিডিও কলিং করে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে।গতকাল সেই বন্ধুর সাথেই ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি আবার হাত ধরে ছবিও তুলেছেন..যেন কতবড় গর্বের কথা।লজ্জায় রাস্তায় বেরনো যাচ্ছে না।ছি:!তবে আজ ঠিক করে নিয়েছেন পবিত্র বাবু একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন।ভদ্রলোকের বাড়িতে থেকে এসব নোংরামি করা চলবেনা।প্রথমটা গিন্নির হুংকারে একটু থতমত খেয়ে বাথরুমে ঢুকে পরেছিলেন ঠিকই এখন আবার সাহস সঞ্চয় করে বেরিয়ে এসেছেন।

   বরাবরই নাকউচু, মুখোরা,বদমেজাজী স্বভাব উমার।বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে সে হাতের মুঠোয় রেখেছে-বড্ড ঢিলেঢালা স্বভাব লোকটার,বেহিসেবি, বাচাল, মেয়ে দেখলেই পা বাড়াতে যায়-তাই উমার নজর সবসময় সতর্ক। 

কর্তার সঙ্গে চোর পুলিশের খেলা খেলতে গিয়েই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে স্মার্টফোন।যা সন্দেহ করেছিল ঠিক তাই।এখানেও চলছে হাটুর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে খুনসুটি।ময়দানে নামতেই হয় উমাকে।আর কিছুদিনের মধ্যেই বুদ্ধিমতী উমা বুঝতে পারে এই জগৎটা কতটা বর্নময়।যাইহোক বর্তমানে উমার এক বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে অশান্তি।গতকাল বন্ধুদের সাথে উমা গিয়েছিল বেড়াতে আর সেখানেই বন্ধুর সঙ্গে হাত ধরে পোজ দিয়েছে উমা।ভাইরালের মতো ছড়িয়ে পরেছে সেই ছবি।কপালে ভাজ পরেছে কর্তামশায়ের।সকাল থেকেই চলছে কথা কাটাকাটি।

     গিন্নির এককথা-নিজে চুরি করে অন‍্যকে চোর বলা!ছোট ছোট মেয়েদের সাথে ঢঙ করতে খারাপ লাগে না আর আমি আমার বন্ধুর সাথে ছবি তুললেই দোষ।বেশ তবে আবার তুলব,বারবার তুলব,দেখি কে কি বলে!

    এতবড় কথা!লাজ লজ্জা সব জলাঞ্জলি দিয়েছে!বাড়ির বৌ কোথায় মুখ লুকিয়ে থাকবে তা না!চলবেনা ভদ্রলোকের বাড়িতে এসব চলবেনা।

     কে ভদ্রলোক শুনি?সারাজীবন শুধু ছোকছোকানি!রাজনীতি করতে গেল- সেখানেও সারাক্ষণ মহিলা মহলে বসেথাকা।ঐ খেদি মন্দিরার হাত ধরে রাতারাতি দলই পাল্টে ফেলল!বাড়ির মাথা হবার মুরোদ নেই গিয়েছিলেন দলের মাথা হতে, তারপর কোনদিন মন্দিরা থেকে সঙ্গীতাতে মন মজত, নে আবার পাল্টা দল।হে:!ওমন নেতার কাথায় আগুন দিয়েছি কেমন!আবার ফেসবুকে  অল্প বয়সী সব মেয়েগুলোর ছবিতে কি কমেন্ট দেওয়া!বুড়ো বয়সে ছুরো সেজে বৌমার বান্ধবীদের সাথে কি রসের গল্প!এসব নোংরামিগুলো বাড়ির মানসম্মান বাড়িয়েছে বুঝি!

   আমার সঙ্গে নিজের তুলনা করছ আবার?আমি হলাম গিয়ে..

   কাচকলা।তুমি একটা আস্ত কাচকলা।এতোই যখন নিজেকে নিয়ে দেমাগ তোমার তবে থাকো তুমি, এই আমি চললাম।আমি তো বরাবর তোমার পথের কাটা, মা মনসা।বেশ আজ থেকে তোমার জীবন থেকে সরে যাচ্ছি আমি।এমনিতেই ইলু অনেক দিন ধরে বলছে ওর কাছে চলে যাওয়ার জন্য, আমিই মায়া ত্যাগ করতে পারছিলাম না।আর না, এই আমি চললাম।

     সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে গিন্নির পা দুটো চেপে ধরে প্রায় কাদতে শুরু করলেন পবিত্র বাবু-ভুল হয়ে গেছে উমা,অন‍্যায় হয়ে গেছে,খুব বাজে করেছি আমি, অন‍্যায় করেছি।কথা দিচ্ছি আর কখনও এরকম হবে না।আর ফোনে হাত দেবনা আমি, কোন ভুলভাল কাজ করবো না।শুধু তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা।এ সংসার তোমার, বাড়ি তোমার, আমি তোমার,সব তোমার-এসব ফেলে কোথায় যাবে তুমি?বুড়ো বয়সে আমায় এতবড় শাস্তি দিওনা উমা। আজ থেকে আমি সব বন্ধ করে দেব,এই তোমার দিব‍্যি,না আমারও দিব‍্যি।বল যাবেনা তো,এ্যআ যাবে না বল।

  দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে টিপে হেসে চলেছে অর্পণ আর তৃণা।সত্যি মা পারেও বটে!বাবাকে জব্দ করতে রুম্পা মাসি আর মেসোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল মা।প্রতিজ্ঞা করেছিল ডটকমের কবল থেকে বাবাকে উদ্ধার করবেই,আজ সেটা করেই দেখালো।সত্যি মা তুমি উমাই বটে।

চিত্র সৌজন্য : গুগল, photofunny.net

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল