অবসরের সাতকাহন :করোনা ও লকডাউন

ঋতুপর্ণা মাইতি
5 রেটিং
1573 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

মাসখানেক আগের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। এক ছাত্রী খুব টেনশন করছে কিনাহ্ সে chicken খেয়েছে ওর জ্বর এসেছে। তার কি করোনা হয়েছে??? ছাত্রী দের মধ্যে অজস্র কৌতূহল। চিকেন থেকেই করোনা নাকি ঠান্ডা লাগলেই করোনা হতে পারে? হাচলে কি? কাশলেই বা কি? সাধারণ সর্দি জ্বর না আলাদা উপসর্গ? এই রোগের প্রাথমিক উপশম কি? খাদ্যের মধ্যে রোগের উৎপত্তি ও প্রভাব আছে কিরকম সেই সব প্রশ্ন।  তা ইন্টারনেটের কল‍্যানে অনেক তথ্য ই হাতে আসছে আমাদের। প্রতিনিয়ত ও অবিরত। এখানে আমার যেকথা জানানো দায়িত্ব যে WHO(World Health Organization, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)নির্দেশিত ও প্রশাসন পরিবেশিত তথ্য ও নির্দশনামাই আমাদের অনুসরণ ও মানতে হবে। সেটাই হবে আমাদের  আশু-কর্তব্য বা foremost priority কারণ WHO কথা অনুযায়ী রোগটি অতীব সংক্রমণ ধর্মী ও community transmission হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যা আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। করোনার vaccine ও ওষুধ এখনো পরীক্ষা অথবা trial এর পর্যায়ে রয়েছে। এর চটজলদি নিদান বা সমাধান হল সামাজিক দূরত্ব Social Distancing যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত হল দেশযুড়ে তিন সপ্তাহের তালাবন্দি বা lockdown অর্থাৎ জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব কিছু তালাবন্ধ। নিজেকে ঘরের ঘেরাটোপে ধরে রাখা এবং সঙ্গরোধ বা quarantine করা।

স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে চলতি মাসের গোড়া থেকেই, সংক্রমণ প্রতিহত করতে ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে; কিন্তু সে কথা বলতে পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। সেজন্য,ধন্যবাদ দিই আমাদের আধুনিক ব‍্যবস্থা ও tech savvy মানসিকতা‌র যার জন্য virtual class ও ইন্টারনেট সাহায্যে আমি ও আমার মতো অনেকেই পৌঁছে যাচ্ছি আমার মেয়েদের কাছে। যেমনটা শাব্দিক পৌঁছে যাচ্ছে আপনাদের কাছে, যেখানেই থাকুন।  

সেদিক থেকে দেখলে আমি অনেকটা স্বছন্দে কাটাচ্ছি এই Social distancing এর সময়ও আমি ছাত্রী দের কথা ভাবছি ও তাদের সাথে পড়ছি। নিজের শিল্পকর্মে ব‍্যস্ত আছি, অনেক দিন পর মায়ের হাতের রান্না উপভোগ করছি ও মায়ের সাথে দেদার আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু আমার মতো বাড়ি থেকে কাজ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।  কি করবেন ভাবছেন? একটা খুব সহজ উপায় বলি। নিজেকে দেখুন। আজ্ঞে হ‍্যাঁ। বাড়িতে আয়না আছে তো। দাঁড়ান ও দেখুন। কি মনে হচ্ছে? Stressed লাগছে। ক‍্যটরিনা কাইফ বা অক্ষয় কুমারের সাথে তুলনা করতে বলছি না। নিজেকে নিজের মতো দেখুন। ত্বকের জেল্লা বাড়তে চান। রোজকার কাজ কর্মের মাঝে সম্ভব হয় না। অফিস থেকে ফিরে আর ইচ্ছা করেনা। কিংবা tone করার প্রয়োজন আছে। সব সমস‍্যার একসাথে মুক্তি পেতে পারেন। আমি gym যেতেও বলছি না, home made spa করতেও বলছিনা। বলবো যোগ করতে। একমাসে কাজে আসবেই। হালকা কিছু করুন যেমন সুর্য নমস্কার, এর থেকে সহজে আছে pilates এর কিছু move- সেলিব্রিটি ট্রেনার ও ভারতের প্রথম pilates বা পিলাটিস বিশেষজ্ঞা ইয়াস্মিন করাচিওয়ালার। বাড়িতে বসেই করা যাবে এমনসব ভালো থাকার fitness mantra at home দেখে নিতে পারেন উক্ত ব‍্যক্তির page এর ফেসবুক বা ইনস্ট্রাগ্ৰাম আ্যকাউন্টে। 

 নিজের হল। এরপর আরেকটু পাশে দেখুন, নিজের ঘরের দিকে তাকান। এখানেই এখন চব্বিশ ঘন্টা থাকতে হবে তাও অন্তত এক মাস। যেসব জিনিস খুঁজে পাননি, না পেয়ে online এ সটান আবার reorder করেছেন। খুঁজে বার করুন। পুরনো tshirt অথবা album কিংবা জন্মদিনের উপহার স্বরূপ মায়ের দেওয়া রান্নার বই ফাইল চাপা পড়েছিল। খুঁজছেন? অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে বিদেয় করুন। ঘরের আসবাবের সাজ ও স্থান বদল করতে পারেন। এতে একঘেঁয়ে ভাব কমবে। মন হবে ফুরফুরে। যারা আমার মতো জুতো নিয়ে শৌখিন তাদের বলছি, জুতো নষ্ট করা বা ফেলে দেওয়ার অভ‍্যাস আমাদের নেই আর আসেও না তাই বলি- জুতোর laundry শুরু করুন, আরেবাবা নিজের টা দিয়ে করে দেখুন না; দেদার মজা আছে। আপাতত কলকাতাতে একজনই আছেন এই কাজটি করে দেন। আপনিও শুরু করবেন কিনা ভেবে দেখতে পারেন।

যাদের একটু বাগানের শখ আছে বা খোলা জমি আছে, গাছ লাগাতে পারেন ও ভালোবাসেন। এবার অন্য ভাবে করুন। মিনিয়েচার গার্ডেনের মাধ্যমে-  উঁহু টব কিনতে হবে না। পড়ে থাকা কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল, প্লাস্টিকের খাবারের কাপ বা বাক্স বা কসমেটিকসের শিশি-বোতল দিয়ে বানাতে পারেন টব, করতে পারেন মিনি গার্ডেন।  পড়ার টেবিলের কোনায় বা বইয়ের তাকে, ড্রেসিং টেবিলের উপরে জায়গা পেতে পারে এই বাগান। এতে সাজশয‍্যার একঘেঁয়েমি কাটবে।  

ভুলে গিয়েছিলেন গিটারটা বা দেরাজে পড়ে আছে তবলা। ঝেড়ে মুছে নিন। শুরু করুন। চমকে দিন সকলকে। বহু দিন সরগম সাধেননি বা ঘুঙুর পায়ে তোলেননি। বের করে আনুন। পরবর্তী কে উৎসাহ দিন। এতে নিজের প্রতি বিমুগদ্ধতা আসবে। মন হবে শান্ত। অনেক জট কেটে যাবে।

যারা খুব প্রযুক্তি স্বাছন্দ‍্য , এখনকার ভাষায় tech savy, কিংবা একা ফ্ল্যাটে বন্দি তারা Online বিভিন্ন কোর্স আছে। ভেবে দেখতে পারেন। খুঁজে নিন মনের মতো। ঘরে বসেই কিছু রেসিপি শিখে, সাধারণ উপায়ে বানানো যাবে। করতে পারেন। আর হ‍্যা ফোটো তুলে মাকে whatsapp করতে ভুলবেন না। 

আমরা বাঙালিরা খুবই ভ্রমণ পিপাসু। নিজের প্রিয় ভ্রমণের ইতিবৃত্তের একটি দিন-পুস্তিকা বা logbook করতে পারেন।(ছবিতে দেখুন) বাঙালি শুধু ঘোরে না, নতুন জায়গা আবিষ্কার ও করে। লিখে ফেলুন। আমাদের শাব্দিকে দিতে পারেন। অত‍্যন্ত খুশি হবো। এই কাজটি অনেকেই করতে পারেন। স্মৃতিকে সততই দুখের না করে সুখের খোঁজে একবার ঝালিয় নিন। দেখবেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা যাবে। আরেকটা কাজ শুরু করা যায় তা হল diary লেখা। করোনা lockdown অভিজ্ঞতা লিখুন।থুড়ি এটা দিয়ে শুরু করুন।

আর একটা কথা অবশ্যই বলবো- ঘুমান। দিনে অন্তত আট ঘন্টা ঘুমান। আ্যালার্মের কোনো চিন্তা নেই। দৌড়ানো নেই, নেই কাজের পর কাজের deadline এর চাপ। নেই মাথায় বিশমন ভারী সেই বোঝা যা দেখা যায়না। তাই এখন বিশ্রাম করুন। নির্ভেজাল ঘুমান।  

আরেকটা কথা ছিল বলবো বলবো না করে বলেই দিলুম সেটা হল নিজস্বি  বা সেলফি (selfie)। নিজস্বির একটা সংগ্ৰহ গড়ুন। এ আবার নতুন কি ভাবছেন? এতোদিন তো বাসে-ট্রামে, গাছে-পার্কে, আইফেল টাওয়ার নীচে-ওপরে, ভিক্টোরিয়া কিংবা ময়দানে, মেট্রোর স্টেশনে-চায়ের দোকানে, শপিং মলে-দার্জিলিং ম‍্যালে অনেক হয়েছে। নিজের বাড়ির বিভিন্ন জায়গা আবিষ্কার করুন দেখি। নয়তো উপরোক্ত কোনো একটা কাজের সেলফি collection চলতে পারে। সেটাকে আবার logbook বা সাময়িক পত্রিকা বা journal এর মতো করে সাজাতে পারেন। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রান্ত বই ও বানানো যেতে পারে প্রতিদিনের দলিল হিসেবে। কে বলতে পারে আপনি হবে‌ন ফেলু মিত্রের সেই সিধু জেঠা বা জেঠিমা। 

 সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা শেষের জন্য তুলে রেখেছিলাম। নিশ্চয়ই আপনারা অনেকেই আশা করছিলেন বলছি না কেন? এই ভাবছিলেন। ঠিক তো।।। এইবার আমরা অতিরিক্ত ব‍্যসস্ততার অবসান করে sorry করোনা করেছে কাজটি – পেরেছি পরিবারকে সময় দিতে। দাদু র সাথে লুডো খেলবে আজ। ঠাকুমার গল্প শুনবো, বাবার পুরনো ডাইরির সংগ্রহ মেলে ধরবো আর ভাববো এরকম করলে হয়, মার সাথে আর ঝগড়া নই- রান্না শুরু করে দেবো, ছেলেমেয়েদের সাথে একসাথে পড়তে বসবো- ওদের আঁকার বইয়ে নিজেও হিজিবিজির মতোই হারিয়ে যাবো। আর হ‍্যঁ প্রতিজ্ঞা করবো করবোই better half এর সাথে কোনো ঝগড়া নয়, যা নিয়ে সংশয় আছে যদিও তবুও চলবে।

সব ভালো যার শেষ ভালো তার নাহ্ শেষ ভালো যার সব ভালো তার? আমরা যারা ঘরে বসে মুঠোফোনে বা কম্পিউটারের দর্পনে চোখ রেখে শাব্দিক ই-পত্রিকা পড়ছি, তাদের জন্য এতক্ষণের সমস্ত প্ল‍্যান ঠিক মনে হচ্ছে, কারণ সেই নিশ্চয়তা নিজেদের দিতে পারি আমরা। কপালে ভাঁজ আসেনা লেখাগুলো পড়তে গিয়ে। সরকারের বা প্রশাসনের জন্য অপেক্ষা না করে যদি আমরা কিছু সাহায্য তাদের দিকে তুলে ধরি এবং যারা আমাদের নিত্য রোজনামচায় যাদের ছাড়া এক পাও চলতে পারিনা তাদের যেন মর্যাদা ক্ষুন্ন না হয় সেদিকটা আমাদের সকলকে দেখতে হবে অবশ্যই। আর্থসামাজিক ব‍্যবধান ভুলে সহজ-সরলভাবে জীবন কাটাই, আতঙ্কে বাজার খালি না করে সাধারণ সচেতনতা নাগরিকতা আমাদের পাথেয় হোক। আমার বা আপনার কাছেই শুধু নয় সারা পৃথিবীর কাছে এই পরিস্থিতি এক অনাবিষ্কৃত অনন্য ভয়াবহতা। এক এশিয়ো দৈত‍্যের পর আরেক দৈত‍্যে,ভারতের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।আমাদের সামনে একটা বিরাট প্রশ্ন ও পরীক্ষা। যা শুধু চিকিৎসা শাস্ত্র অথবা বিজ্ঞানের পরীক্ষা নয়, ধৈর্য সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ঐক‍্যের প্রশ্ন। এর উত্তর আমরা সঠিক রেখে যেতে পারবো,নিশ্চয়ই পারব- এ আমাদের সমস্ত শাব্দিক পরিবারের বিশ্বাস
*ছবি সৌজন‍্যে- লেখিকা

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল