হাজার বছর ধরে মানুষ ভূমিকম্প পরিমাপ বা ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করার উপায় খুঁজেছে হন্যে হয়ে।
যদিও আমরা এখনও ভূমিকম্পের সঠিকভাবে পূর্বাভাস দিতে পারি না। প্রায় ২০০০ বছর আগে চীনে প্রথম সিসমোস্কোপ আবিষ্কারের সাথে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল।
১৩২ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কারক, ইতিহাসবিদ এবং জ্যোতির্বিদ ঝাং হেন হ্যান রাজবংশের আদালতে তার আশ্চর্যজনক ভূমিকম্প সনাক্তকারী যন্ত্র বা সিসমোস্কোপ প্রদর্শন করেছিলেন। ঝাং এর সিসমোস্কোপ একটি দৈত্যাকার ব্রোঞ্জের পাত্র,যা অনেকটা মদ রাখার পিপের মতন দেখতে। এর ব্যাস প্রায় ৬ ফুটের মতো। আটটি ড্র্যাগন পিপের বাইরে মাটির দিকে মুখ করে ছিল। প্রতিটি ড্রাগনের মুখের মধ্যে একটি ছোট ব্রোঞ্জের বল ছিল। ড্র্যাগনগুলির নীচে আটটি ব্রোঞ্জের ব্যাঙ ছিল। যখনি কম্পন হত,ড্রাগনের মুখ থেকে ধাতব বল ব্যাঙের প্রশস্ত মুখে খসে পড়ত।ভূমিকম্পের ফলে একটি বলের পতন কিভাবে ঘটতো তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। একটি তত্ত্ব বলে যে একটি পাতলা লাঠি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পিপের কেন্দ্রে নিচ পর্যন্ত রাখা হয়েছিল। ভূমিকম্পের ধাক্কা যে দিক থেকে আসছে, সে দিকের লাঠি খসিয়ে ফেলবে, ফলে ড্রাগনগুলির মধ্যে একটির মুখ খুলবে এবং ব্রোঞ্জ বল নীচে পড়বে।
আরেকটি তত্ত্ব হ’ল, যন্ত্রটির ঢাকনা থেকে একটি পেন্ডুলামকে একটি দন্ড বা লাঠি দিয়ে স্থির রাখা হয়েছে। যখন পেন্ডুলাম পিপের পাশে আঘাত করবে,সবচেয়ে কাছের ড্রাগনের মুখ থেকে বল পড়ে যাবে। বলের শব্দ ভূমিকম্প পর্যবেক্ষকদের সতর্ক করবে। এটি ভূমিকম্পের মূল সূত্রের একটি উল্লেখযোগ্য ইঙ্গিত দেবে।তবে এটি কম্পনের তীব্রতা সম্পর্কে কোন তথ্য সরবরাহ করে না।ঝাংয়ের বিস্ময়কর যন্ত্রটিকে হাউফং দিদং ইই বলা হতো, যার অর্থ “বায়ু পরিমাপের জন্য এবং পৃথিবীর আন্দোলনের পরিমাপের জন্য একটি যন্ত্র।” ভূমিকম্পপ্রবণ চীনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসাবে গণ্য হত।
এক উদাহরণে বলা যায় যন্ত্রটি উদ্ভাবনের মাত্র ছয় বছর পরে, একটি ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা যন্ত্রে প্রকাশ পায়। ১,০০০ মাইল দূরে হান রাজবংশের রাজধানী লুয়োয়াং-এর লোকেরা এই ভূ-কম্পন অনুভব করে নি। যাইহোক, সিসমোস্কোপ সম্রাটকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে ভূমিকম্প পশ্চিমে কোথাও আঘাত করেছে। কয়েকদিন পরে গনসু প্রদেশে একটি বড় ভূমিকম্পের খবর নিয়ে দূতেরা লুয়াইয়াং এ এসে পৌঁছেছিল।