কাঁকিনারা স্টেশনের একদম শেষ প্রান্তের বেঞ্চি টায় বসেছিল দিয়া। পড়ন্ত বিকেলের রোদে আশপাশ টা কেমন লালচে হয়ে এসেছে। তার চোখের রঙের মতো কি? পাশে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একটা বাঁশি ওয়ালা তার বাঁশি তে সুর তুলেছে “ tu hi re, tu hi re, tere bina main kyase jiyu…”…উফফ, কেন যে এই মোক্ষম সময়ে এই সুর টা ধরলো লোক টা। নাঃ, অনেকক্ষণ ধরে দাঁতে দাঁত চেপে আটকে রাখা চোখের জল এবার বাঁধা হীন ভাবে গড়িয়ে পড়লো দু গাল বেয়ে। কাল সারা রাত কেঁদে কেঁদে এমনিতেই চোখ লাল হয়ে গেছে দিয়ার। বাড়িতে জানে মেয়ে সারা রাত জেগে পড়েছে, না ঘুমিয়ে চোখ লাল, কারণ চোখে প্রবল ঘুম। কিন্তু কাল সোহমের সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেম ভেঙে যাওয়ায় কাল থেকে শুরু হয়েছে দিয়ার বিনিদ্র রাত। পাঁচ বছরের সব স্মৃতি এক নিমেষে কি করে মুছে দিতে পারলো সোহম? সেই সোহম, ক্লাস 11 এ যার প্রেম প্রস্তাব পেয়ে এতটাই ঘাবড়ে গেছিলো দিয়া, যে ভয়ের চোটে এক সপ্তাহ স্কুল যেতেই পারেনি। তারপর একটু একটু করে সোহম ওকে বুঝিয়েছে শুধু তাই নয়, কলেজের থার্ড ইয়ার এ দুজনেই দুবাড়িতে অল্প স্বল্প হিন্টস ও দিয়েছে। আর এখন ফাইনাল এক্সাম হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ কি করে সোহম এত অচেনা হয়ে গেল দিয়ার কাছে, তবে কি দিয়ার কোনো দোষ ছিল কোথাও? সৈকতের সাথে দিয়ার বন্ধুত্ব টা কি তাহলে সত্যি দোষের? বাঁশিওয়ালা গান বদলেছে, “সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে…” । লোকটার বাঁশিতে জাদু আছে। দিয়ার মনের সব কথা কেমন জানি লোক টার বাঁশিতে সুর হয়ে বেরোচ্ছে।
দিয়া দেখলো সৈকত আসছে। সৈকত কে একটা বই ফেরত দেওয়ার ছিল। পরীক্ষা শেষ। বই টার ও প্রয়োজন শেষ। তাই ফেরত দিতে এসেছে দিয়া। সৈকত এর সাথে কলেজে আলাপ দিয়ার। এক কলেজেই পড়তো দিয়া সোহম সৈকত। সোহমের সাথে দিয়ার সম্পর্ক টা কলেজে সব বন্ধুরাই মোটামুটি জানে। সৈকত ও জানে। আর সোহম সৈকতের ও ভাল বন্ধু। তবে দিয়ার বেশি ভালো বন্ধু। সেটাই হয়তো সোহমের পছন্দ হয়নি। কাল যে দিয়া কে সোহম ব্রেক আপ এর কথা বলেছে সেটাও সৈকত জানে। সৈকত কে দেখে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ফেললো দিয়া। সৈকতের চোখে মুখেও একটা কেমন অপরাধী ভাব। কিছু না করেও সে কি করে জানি দোষী হয়ে গেল।
“সরি রে” ,বললো সৈকত।
“তুই কেন সরি বলছিস? তুই তো কিছু করিস নি”।
“না আমার জন্যই তো..”
“তোর জন্য কি? তুই আমার খুব ভালো বন্ধু সৈকত। সেটুকু যদি ও না বুঝতে পারে, তাহলে 5 বছর ধরে আমাকে কি ভালোবাসলো?”
সৈকত তবুও অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছে।
“তুই মন খারাপ করিস না রে, এটা হওয়ার ই ছিল” দিয়া বললো। উত্তরে সৈকত বললো,
“আমি আর তোর সাথে আজকের পর কোনো যোগাযোগ রাখবো না। দেখ তাতে যদি সোহম ফিরে আসে”।
“ যে যায়, সে আর ফেরার জন্য যায় না রে।তুই আমার খুব ভালো বন্ধু সৈকত। আমি এক সাথে প্রেম বন্ধুত্ব সব কিছু হারাতে পারবো না রে”।
বাঁশি ওয়ালা তখন সুর তুলেছে, “তুহি তো মেরা দোস্ত হ্যায়…”
কিছুটা চমকে গেল দিয়া।
“এই বাঁশিওয়ালা টা কি এখানে রোজ বসে?”
“কি জানি রে, খেয়াল করিনি কখনো। বসে হয়তো। কেন বলতো?”
“ না, আমার কেন জানি মনে হলো… না, থাক, কিছু না”-দিয়া চেপে গেল ব্যাপারটা।
দিয়ার বাড়ি খড়দা। এতটা রাস্তা ফিরবে। তাই আর দেরি না করে বাড়ির পথে পা বাড়ালো দিয়া।
বছর খানেক কেটে গেছে। দিয়া এখন অনেক টাই ভার মুক্ত। সৈকতের কারণেই সোহম ওকে এত বড় আঘাত দিলো কিনা এই অপরাধ বোধ ওকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। কিন্তু গত মাস ছয় আগে ও একটা শপিং মলে সোহম কে আরেকটি মেয়ের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে। আর সেদিন থেকেই মন কে অনেক শক্ত করে নিয়েছে। ও বুঝেছে, সৈকতের ব্যাপার টা সোহমের শুধুমাত্র অজুহাত ছিল। ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহলে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে এই মেয়েটির সাথে সোহমের সম্পর্ক ওদের ব্রেক আপ এরও প্রায় বছর খানেক আগে থাকতে। অথচ দিয়া এক মুহূর্তের জন্য ও টের পায়নি ব্যাপারটা। কি প্রবঞ্চনা!! কষ্ট হয়। খুব কষ্ট হয়। কাকিনারা স্টেশনে বসে পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে আজ আবার গলা রুদ্ধ হয়ে আসছিল ওর। আজ সৈকতের জন্মদিন। দিয়ার ইচ্ছে প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন সেলিব্রেশন করার। তাই এখানে আসা। সোহম চলে যাওয়ার পর সৈকত যেভাবে দিয়া কে সামলেছে, ভেঙে পড়া দিয়া কে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে, সেই ঋণ সারা জীবনেও শোধ করতে পারবে না দিয়া। কখনো কখনো মনে হয়, ঈশ্বর যেন দিয়ার জন্যই পাঠিয়েছেন সৈকত কে। সেটা ভাবলেই মন টা কি ভীষণ ভালো হয়ে ওঠে। হঠাৎ চমকে উঠলো দিয়া। বাঁশিতে সুর উঠেছে “ kabhi kabhi mere dil mein, khayal aata hain, ke jayse tumko banaya gaya hain mere liye… ” ওমা, এই লোক টা কোথেকে এলো। এতক্ষন তো খেয়াল করেনি দিয়া। লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে দিয়া। লোকটা কিন্তু একবার ও তাকাচ্ছে না। চোখ বুঁজে বাঁশি বাজিয়েই চলেছে। কাঁধে একটা ঝোলা। তাতে বিক্রি করার জন্য আরো বেশ অনেক গুলো বাঁশি রাখা আছে, সেগুলো ঝোলার ফাক দিয়ে উঁকি মারছে। লোকটা খুব ভালো বাঁশি বাজায়, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দিয়ার মনের মধ্যে যা চলে, ঠিক সেটার সাথে মানান সই গানের সুর তোলে কি করে?? এটা কি নিছক কাকতলীয় ?? ভাবতে ভাবতেই দেখলো সৈকত আসছে। সাথে আবার আরেকটা মেয়ে। সৈকতের হাত ধরে। এটা আবার কে রে বাবা! সৈকত এর গার্ল ফ্রেন্ড নাকি?? সৈকত তো বলেনি কখনো!! সোহমের সাথে দূরত্ব সৈকত কে কখন যেন দিয়ার খুব কাছে এনে দিয়েছিল। সব কথা শেয়ার না করে থাকতে পারতো না। তার কারণ সৈকত খুব বুদ্ধিমান ছেলে, যেকোনো সমস্যা থেকে বেরোনোর রাস্তা সবসময় বাতলে দিয়েছে দিয়া কে। নিজের অজান্তেই কখন যেন খুব নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দিয়া ওর ওপর। আজ কি তবে এই সম্পর্ক টা ও শেষ হতে চলল?? অন্য একটা মেয়ে, যার সম্পর্কে দিয়া এতটুকু শোনেনি কখনো, সেই মেয়েটা ওদের দুজনের মাঝে বসে আজ সেলিব্রেশন এর ভাগ নেবে। কেকের প্রথম টুকরো টা কি সৈকত ওই মেয়ে টা কেই খাওয়াবে?? এত নিষ্ঠুর কেন দিয়ার জীবন দিয়ার প্রতি ?? এত খারাপ কপাল কেন ওর?? যাকেই আঁকড়ে ধরে, সেই কেন দূরে সরে যাবে? চোখ ছলছল করে ওঠে দিয়ার। কাকে আর দোষ দেবে ও , ওর নিজের কপাল ই খারাপ। বাঁশি তে তখন বাজতে শুরু করেছে “তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি, হয়রান হু ম্যায়..” নাঃ, আর দাঁড়াতে পারবে না দিয়া কিছুতেই। না হোক সৈকত ওর প্রেমিক, কিন্তু বন্ধুত্বের ভালোবাসা টুকু তেও অন্য কাউকে ভাগ বসাতে দেবে না ও। উল্টো দিকে একটা ডাউন ট্রেনএর খবর হয়েছিল একটু আগে। সেটাই এখন ঢুকছে স্টেশন এ। সৈকত রা আরো কাছাকাছি আসতেই দৌড়ে গিয়ে দিয়া উঠে পড়লো ডাউন ট্রেন টায়। ফোন টা সুইচ অফ করে দিল। দিব্বি দেখেছিল সৈকত
“ দিয়া দিয়া” করে চেঁচাচ্ছে। আর ওই মেয়ে টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। বাঁশিতে তখন সুর উঠেছে “kahi na ja, aaj kahi maat ja…” দিয়ার মনে হলো, বাঁশি যেন তাকে যেতে বারণ করছে।
ধুর ,তাতে কি। দিয়ার পক্ষে এখানে দাঁড়িয়ে সৈকত আর ওই মেয়েটার প্রেম দেখা আর এক মুহূর্তের জন্য ও সম্ভব নয় ।
আজ আর অন করবে না ফোন টা। তাতে কি কারো কিছু যাবে আসবে? সৈকত কি একটুও আর মিস করবে দিয়া কে?? আগের মতো ওদের বন্ধুত্ব কি আর হাসি ইয়ার্কি তে ঝলমল করে উঠবে?? গানের লাইন গুলো মনে পরে গেল হঠাৎ, “মুসকুড়ায়ে তো, মুশকুরানে কে কর্জ উতারনে হোঙ্গে…”
আচ্ছা, ওই বাঁশিওয়ালা লোক টা এরকম অদ্ভুত কেন !! যা যা দিয়ার মনের মধ্যে হয়, লোক টা সেটা বাজায় কি করে ?? মনের মধ্যে উশখুশ করতে লাগলো। অন্য দিন হলে এখুনি সৈকত কে ফোন করে জিজ্ঞেস করতো। আর এখুনি মুশকিল আসান করে দিত সৈকত। ধুর , আজ তো তাও হবে না। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল দিয়া। ঘুম ভাঙলো মায়ের চিৎকারে। “বেনু উঠবি না নাকি? কত বেলা হলো সে খেয়াল আছে? এই হয়েছে এক রাত জেগে কম্পিউটার এ কাজ আর এই বেলা অবধি ঘুমানো”…মা আদর করে বেনু বলে ডাকে দিয়া কে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সত্যি মায়ের মতো নিরাপদ আশ্রয় আর কোত্থাও নেই, সবাই ঠকাতে পারে, কিন্তু এই মানুষ টা কখনো ঠকাবে না। ধড়মড় করে উঠলো দিয়া। বেলা 9 টা বেজে গেছে। ইউনিভার্সিটি যেতে হবে। দেরি হয়ে গেল। উফফ আবার দেখা হবে আজ, কাল তো পালিয়ে এলো, আজ সৈকত মুখোমুখি হলে কি যে বলবে.. কলেজের শেষে একই ইউনিভার্সিটি তে দুজনেই স্নাতকোত্তর করছে। ইউনিভার্সিটি ঢোকার মুখে গেটে দাঁড়িয়ে মনে পড়লো সকাল থেকে তাড়াহুড়ো তে ফোন টাই এখনো অন করা হয়নি। ফোন টা সারা রাত অফ ছিল। অন করতেই এক গাদা মেসেজ ঢুকলো। না, একটাও সৈকতের মেসেজ নয়। অভিমানে গলা আটকে আসলো আবার। ঠিক তখনই, একটু দূরে কেউ যেন বাঁশি তে সুর তুলল “dushman na kare dost ne wo Kam kiya hain, umrah var ka gham hume inam diya hain”… আবার!! এই লোক টা আজ আবার এখানে কোথেকে এলো!! এতদিন তো একবারও দেখেনি দিয়া লোক টা কে। লোক টার দিকে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো দিয়া। ইচ্ছে করছে গিয়ে জিগ্যেস করবে, আপনি এখানে কেন? কিন্তু একথা তো জিগ্যেস করা টা ও বেমানান। সে তার রুজির টানে যেখানে খুশি যেতে পারে। ওমা, এটা ভাবতে ভাবতেই লোক টা সুর ধরল “jina yahan, marna yahan, iske siwa jana kaha….” লোকটা এই প্রথম বার দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে সুর তুলেছে বাঁশিতে আর চোখের কোন অদ্ভুত একটা হাসি ঝলক দিচ্ছে লোকটার। এবার বেশ ভয় পেয়ে গেল দিয়া। একছুটে সোজা ভেতরে। হাঁপাতে হাঁপাতে দুতলায় ক্লাসরুমে। সৈকত এর সামনে পরে গেল একবারে।
“কাল ওভাবে চলে যাওয়ার কারণ টা কি?”গম্ভীর গলায় সৈকত প্রশ্ন করলো।
“কালকের প্রশ্ন আজ করছিস কেন?” কঠোর ভাবে দিয়ার উত্তর।
“করছি কারণ কাল তো তুই উত্তর দেয়ার জন্য ওখানে ছিলিস না।“
“পরে মেসেজ ফোন করেও জানা যেত”- দিয়া বললো।
“তোর পেছনে ছুট তে গিয়ে বুঝলাম ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, আর সম্ভব নয় তোকে ধরা।ফোন করতে গিয়ে বুঝলাম, ট্রেনে উঠছিলো যারা তাদের সাথে ধাক্কা ধাক্কির ফাঁকেই আমার ফোন টা ছিনতাই হয়েছে। কি করে মেসেজ করতাম। তবে এর থেকে এটা স্পষ্ট যে তুই ও আমাকে ফোন করিসনি। করলে হয়তো বুঝতে পারতিস যে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। রুপু কেও তোর সাথে আলাপ করানো হলো না”।
রুপু !! আদর করে রুপু বলে?? বাবা, কি আদিখ্যেতা !! অবশ্য, ডাকতেই পারে, দিয়া বারণ করার কে ! ও থোরাই না সৈকত এর গার্লফ্রেন্ড।
সৈকত বলে চলেছে, “খুব বাজে গেল কালকের দিন টা, বাড়ি থেকে বেরিয়েই জুতো টা ছিঁড়ল রুপু, ও তো আসতেই চাইছিল না অমন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছেড়া জুতো নিয়ে। আমি জোর করে বললাম স্টেশনে মুচি পেয়ে যাব, ওমা, সে মুচিও কাল বসেনি। রুপু তো খেপেই গেল আমার ওপর। বেচারা কে হাত ধরে কোনো রকমে টানতে টানতে নিয়ে এসেছিলাম আর তুই চলেই গেলি”।
একটু গড়বড় লাগলো দিয়ার.. “রুপু কি তোদের ওখানেই থাকে?”
“আরে, রুপুর কথা ভুলে গেলি নাকি, তোকে বলেছিলাম তো ! ওরা তো হালিশহর থাকে, পরীক্ষা শেষ, তাই মাসি আর ও এসেছে, থাকবে কদিন। আমার মুখে তোর কথা শুনেছে তাই দেখা করতে চেয়েছিল”।
এবার চেতনা ফিরলো দিয়ার। রুপু মানে রূপাঞ্জনা। সৈকতের মাসির মেয়ে। নাম শুনেছিল। ছবি দেখেনি কখনো। ওদের থেকে খুব ছোট নয়। কলেজে পড়ছে।
নিজের মূর্খামির কথা ভেবে নিজেরই খারাপ লাগছিলো। কথা ঘোরাতে বলল “চল আজ আর ক্লাস নয়, কালকের জন্মদিন টা আজ সেলিব্রেট করবো”। বলেই টানতে টানতে সৈকত কে নিয়ে বেরিয়ে এলো। মেন গেট এর কাছে এসে সৈকত জিগ্যেস করলো, “তুই কিন্তু বললি না কাল কেন চলে গেলি হঠাৎ”… কি বলবে দিয়া.. বেশ ভেবে চিনতে উত্তর দিল, “খুব পেট ব্যাথ্যা করছিল রে হঠাৎ.. বাথরুম যেতে হতো..
এই জানিস, তোদের ওখানের বাঁশি ওয়ালা টা আজ একটু আগে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজাচ্ছিল। এখন তো আবার দেখতে পাচ্ছি না”। কিন্তু দিয়া স্পষ্ট শুনলো, খুব কাছেই কোথাও বাঁশি বাজছে, “jhut bole kaua kate, kaale kaue se dorio…” কিন্তু এই বাঁশি মাহাত্ব সৈকত কে এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তাতে বিপদ, সৈকত বলবে, “ও তার মানে তুই আমাকে মিথ্যে বলছিস, তাই তোর কথা অনুযায়ী ওরকম গান বাজছে বাঁশিতে”। তার চেয়ে বরং ওর নিজের সেই প্রশ্ন টা করেই ফেলুক দিয়া। নিজের মনের এত টানা পোড়েন ওর আর ভালো লাগছে না। সোহম এর মতো এবার ওর ও একটা আশ্রয় বড় দরকার হয়ে পড়েছে, আর কতদিন সোহম এর স্মৃতি নিয়ে বোকার মতো কেঁদে বেড়াবে। সোহম তো দিব্বি নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সৈকতও কি ওকে নিয়ে ততটা পসিসিভ বোধ করে, যত টা ও করে সৈকত কে নিয়ে? এটা কি শুধুই নিছক বন্ধুত্ব?? নাঃ আর চাপ নেয়া যাচ্ছে না।
“রুপু কেন দেখা করতে চাইলো রে আমার সাথে, কি বলেছিস তুই ওকে আমার কথা?”
“কি বলবো আবার , এই তুই আমার ভালো বন্ধু সেটাই বলেছি”।
“ভালো বন্ধু তো অনেকেই, তাদের সবার সাথে দেখা করাবি তাহলে??”
“ না” দৃঢ় ভাবে বললো সৈকত।
“কেন? না কেন?” চাপা কৌতূহল দিয়ার গলায়।
“জানিনা যা। কিছুই কি বুঝিস না?” সৈকত মুখ ঘুরিয়ে বললো।
উত্তর টা পেয়ে গেছে দিয়া, শুধু আরেকটু… পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শক্ত করে সৈকতের হাত টা চেপে ধরলো দিয়া। সৈকত তাকালো দিয়ার দিকে। প্রশ্রয় কোথাও একটা আশ্রয় পেলো। এতদিন শুধুমাত্র সোহম কে হারানোর কষ্টেই চোখের জল ফেলতো দিয়া। কিন্তু আজ সোহম কে হারানোর কষ্ট আর সোহম কে হারিয়ে সৈকত কে পাওয়ার আনন্দ -এই দুয়ে মিলেমিশে দিয়ার চোখের কোনায় জল হয়ে চিকচিক করে উঠলো। আর ঠিক তখনই দিয়া ওরফে মায়ের আদরের বেনু পেছন ফিরে দেখলো বাঁশিওয়ালা টা ঠিক আগের মতোই গেটে দাঁড়িয়ে, সুর তুলেছে..
“Kuch paakar khona hain
Kuch khokaar pana hain
Jeevan ka matlab to
Aana aur jaana hain,
Do pal Ke jeevan se,
Ek umrah churani hain,
Zindegi aur kuch bhi nehi,
Teri meri kahani hain…ek pyar ka nagma hain…”
আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:
দারুন