এক থালা ভাত সাথে মাছের ঝোলের বাটি টেবিলের ওপর ঠকাস করে নামিয়ে রেখে মা বললেন, এবার এই ব্যাকডেটেড খাবার টুকু মুখে তুলে আমাকে উদ্ধার করো, তারপর সারাদিন ক্যান্টিনে যত ইচ্ছে পোড়া তেলে তৈরী মডার্ন খাবার গুলো আঙ্গুল চেটেপুটে খেও ।কানে এসব শুনলেও উন্মেষ তখন মোবাইলে মাথা গুঁজে কি যেন করছিলো। পরক্ষনেই কথা না বাড়িয়ে বাধ্য ছেলের মতন খেয়ে,অফিসে দিকে রওনা হলো।আজ সকাল থেকেই মা ছেলের মধ্যে প্রবল ঝড় শুরু হয়েছে।প্রজন্মগত পার্থক্যের জন্য আধুনিক ছেলের কাছে মা অনেকক্ষেত্রেই যেমন ব্যাকডেটেড, তেমনি মার কাছে ছেলের আধুনিক বিষয় গুলো কেবলই অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাস্থ্যকর বলে মনে হয়। ওগুলো নাহলেই বা কি এমন অসুবিধা হচ্ছিল, এরকম এক ভাব।যদিও এ ঘটনা বাংলার ঘরে আকছার ঘটে চলেছে, তা আর বলে বোঝাতে হয় না।যাইহোক, সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরেই উন্মেষ একটু যেন ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। মা জলখাবার গোছাতে গোছাতে উন্মেষ কে গম্ভীর গলায় বললেন, তোর কি যেন একটা আজ এসেছে,তোর ঘরে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছি।প্রাইভেট অফিসের কর্মক্লান্ত দিন, অনেক তিক্ততার ইতিহাসকেই ম্লান করতে পারে।উন্মেষ ও তাই সকালের সবকিছুই ভুলে গেছিলো। কিন্তু মায়ের তাচ্ছিল্য ভরা উক্তি উন্মেষ কে টেনে ফ্ল্যাশব্যাক এ নিয়ে গেল।যদিও ওর গোপন অভিসন্ধির ফলাফল কি হতে চলেছে তা ভেবেই মনে মনে উল্লসিত হলো এবং চুপ করে থাকলো।শুধু ক্লান্ত মুখের ঠোঁটের কোনায় তৃপ্তির স্নিগ্ধ আলো একচিলতে উঁকি মেরে চলে গেলো।তৎক্ষণাৎ ঘরে গিয়ে উন্মেষ প্যাকেট টা খুলেই জোরে হাঁক দিলো, মা ,ও মা তাড়াতাড়ি এসো।দাঁড়া ,নিয়ে আসছি ; মা ভাবলেন ছেলের বুঝি জোর খিদে পেয়ে গেছে। না, না খাবার নয় ।তুমি এসো এক্ষুনি।আঁচলে হাত মুছতে মুছতে দৌড়ে এসে, উৎকণ্ঠা ভরা চাহনিতে মা বললো, কি হয়েছে?উন্মেষ বললো, বলতো কটা বাজে এখন? মা বললো কেন?কি হবে এখন?কোথাও যাবি?উন্মেষ মিষ্টি করে বললো , বলোনা।মা ,দ্বারা দেখে আসছি বলে বৈঠকখানার দিকে যেতে গেলেন।
উঁহু, যেতে হবে না।আচ্ছা বলো ,what is time?উন্মেষের গলায় তখন চাপা জিঘাংসার স্বর।অবাক চোখে কিন্তু বিরক্তির সুরে মা বললো, কী?
উন্মেষ এই অবাক চাহনিটাই তো দেখতে চেয়েছিল মায়ের মুখে।তাই নিজেই বললো Alexa,what is time?সামনে পরে থাকা চোঙাকার যন্ত্রটা সুরেলা গলায় মিস্টি করে বললো, Now time of kolkata is 7:05 pm.মা একইভাবে দাঁড়িয়ে ছেলের এই কীর্তি দেখতে থাকলেন। উন্মেষও বলে চললো, এবার দেখো মা, তোমার প্রিয় শিল্পী মান্না দে তো? Alexa paly all bengali songs of manna de .যন্ত্রটাও বাধ্য মেয়ের মতন কথা শুনে, মান্নাদের চিরনতুন গান গুলো বাজাতে শুরু করলো।মা, ছেলের আর নবাগত ফলতঃ মেয়ের সম্মুখে অবাক বদনে দাঁড়িয়ে প্রিয় গান গুলো শুনতে থাকলো।কি হলো মা? খেতে দেবে না, উন্মেষ বলে উঠলো।আবদারের এই কয়েকটি কথা সুরের মজলিশে হটাৎ ছন্দ পতন ঘটালো।মা তৎক্ষণাৎ হ্যাঁ দিচ্ছি বলে , মাথা ঘুরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। উন্মেষ খেয়াল করলো, মা যেন হেরেও জিতে যাওয়ার প্রশান্তি নিয়ে ফিরে গেলেন।মা কে একটু আনন্দ দিতে কোন সন্তানের না ভালো লাগে।আজকের এই জয়টাও তাই উন্মেষ তার মাকে মনে মনে উৎসর্গ করলো ।মা চলে যাওয়ার পর, প্রশান্তির অলীক চাদর গায়ে জড়িয়ে দুই হাত আকাশপানে ছুড়ে উন্মেষ খাটের ওপর ধপ করে শুয়ে পড়লো।মান্না দের স্মরণীয় গানগুলো সব ,প্রেখ্যাপটে একেরপর এক বেজে যেতে থাকলো।
এই ছোট্ট যন্ত্রটির ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পেতে মা’কে বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয় নি।পরদিন ভোর বেলা আলেক্সার দেওয়া এলার্মে মায়ের ঘুম ভাঙতেই, উন্মেষ ও ছুটে এসে স্নিগ্ধ্য ভোরবেলাকে সুমধুর রবীন্দ্রসংগীতের আবহে মাতিয়ে দিয়ে গেল।আজ সকাল থেকেই তাই খুশির ছাপ ছিল মায়ের চোখেমুখে,কিন্তু হঠাৎ বড় কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে এরকম উৎবিঘ্নতায় মা জোরে বলে উঠলেন, আজকেই তো ইলেক্ট্রিক বিল দেওয়ার শেষ দিন ছিল! তোর বাবা তো বেরিয়ে পড়লো।বাবু তুই আজ অফিস যাওয়ার পথে অবশ্যই বিলটা দিয়ে যাস।উন্মেষ অবহেলার স্বরে মাকে বললো ওনিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।মা এবার উন্মেষের বেপরোয়া আচরণে বিরক্ত হয়ে দু এক কথা বলতে যাচ্ছিল।এমনসময়, উন্মেষ বলে উঠলো alexa pay the electric bill. বিল মিটিয়ে দেওয়ার জটিল পদ্ধতি, এত সহজে সম্পন্ন করে , উন্মেষ মা কে বললো দেখলে মা আগে থেকে বিলের তথ্য দেওয়া থাকলে ,ইলেক্ট্রিক বিল কেন, যেকোনো অনলাইন উটিলিটি বিল এর মাধ্যমে দেওয়া কোনো ব্যাপারই না।মন মানতে না চাইলেও ছেলের কীর্তি মাকে বারবার হতবাক করেছে, তা বোঝাই গেল।
মায়ের নির্বাক স্থির দশাকে নাড়িয়ে দিয়ে উন্মেষ বললো আরো দেখবে , alexa কি করতে পারে? alexa call baba। কিছুক্ষন পরই রিং এর শব্দ এবং বাবার গলার স্বর। মা হ্যালোর উত্তর কেন যে একটু পরে দিয়েছিল, তা উন্মেষের বুঝতে বাকি রইল না।
যন্ত্রটাও ধীরে ধীরে মায়ের বন্ধু হয়ে উঠেছিল।এমনটাই তো উন্মেষ চেয়েছিল, প্রগতির সুবিধেগুলোকে এক এক করে বাড়িতে নিয়ে আসতে।
***************************************************************************
এই গল্পের পাঠকদের উদ্দেশ্যে,এবার যন্ত্রটি সম্পর্কে একটু ধারিনা দিই । যন্ত্রটি AMAZON এর eco dot 3rd generation, একটি smart speaker ।আর ফলতঃ সুরেলা কণ্ঠী মহিলাটি হলেন ALEXA, virtual lady.WiFi বা bluetooth এর সংযোগ ঘটলে, Alexa বক্তার আদেশ পালন করে নিমেষে।তবে বক্তার আদেশ english বা হিন্দিতে হতে হবে।নিকট ভবিষ্যতে হয়তো বাংলা ভাষায় ও আদেশে সারা দেবে।বর্তমানে amazon shoping app-এ এই যন্ত্রটির দাম ছাড় দিয়ে ₹3499।বাড়ির নানান কাজের মাঝে আলেক্সা বন্ধুর মতন সঙ্গ দেয় ,যেমন আদেশ অনুসারে গান, গল্প, আবহাওয়া, recent trend এমনকি কাউকে ফোন করা আলেক্সার কাছে এক তুড়ির কাজ। প্রথম থেকে তথ্য দিয়ে রাখলে alexa সঠিক সময়ে বকেয়া বাড়ির যাবতীয় অনলাইন বিল গুলো মিটিয়ে দিতে পারে, কেলমাত্র একটি আদেশে।বস্তুত, বর্তমান যুগের এক অত্যাবশ্যকীয় সাংসারিক সদস্য বললেও বেশী বলা হবে না।
**************************************************************************
এর কিছুদিন পর।একদিন, সন্ধ্যেবেলায় মা আর উন্মেষ একসঙ্গে ডাইনিং রুমে বসে টিভি দেখছিল । বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান নাহলেও, দু চার কথায় মা ও ছেলের সময় অনেক সহজেই কেটে যাচ্ছিল। অসময়ে কলিং বেলের আওয়াজে উন্মেষ উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই সামনে বাবাকে দেখে জিজ্ঞেস করল আজ এত তাড়াতাড়ি বাবা? বাবা ঘরে ঢুকে মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে শুধু বললেন, হ্যাঁ। মা উন্মেষ কে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন,তোর বাবাকে খুব ক্লান্ত লাগছে না, শরীর ঠিক আছে তো!উন্মেষ বললো, হয়তো সারাদিনের ধকল আজ একটু বেশীই গেছে। হাতমুখ ধুয়ে আজ আর বাবা ডাইনিং টেবিলে না বসে, সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। শরীরটা সত্যিই হয়তো খারাপ।মা চা নিয়ে বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এসেই শুয়ে পড়লে, শরীর কি খারাপ লাগছে?বাবা বললেন , না ঠিকই আছে, দুপুরের খাওয়ার পর থেকেই একটু অস্বস্তি হচ্ছে, গ্যাস হয়েছে মনেহয়। আমাকে বেলের একটু শরবত দাওনা। আজ আর চা খাব না । সব শুনে মা ঠিক আছে বলে ওখান থেকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই এক গ্লাস বেলের শরবত নিয়েএসে বাবাকে বললেন, এটা খেয়ে নাও।আজ আর টিভি দেখা না, এখানেই শুয়ে থাকো।
অল্প সময়ের মধ্যেই বাবা ঘুমিয়ে পড়লেন।মাও এই অবস্থায় আর বাবাকে রাতের খাবারের জন্য ডেকে তুললেন না।
রাত তখন 3 টে হবে, মায়ের হঠাৎ চিৎকারে উন্মেষ ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে এলো বাবা-মায়ের ঘরে ।দেখলো বাবা মেঝেতে শুয়ে আছে আর মা জোরে জোরে বাতাস করার চেষ্টা করছে তাঁর আঁচল দিয়ে। বাবার সারা শরীর দরদর করে ঘামছে জোরে ফ্যান ঘুরলেও এরকম হচ্ছে দেখে উন্মেষের বুঝতে বাকি রইল না কারণটা কি হতে পারে। তাই সাথে সাথে উন্মেষ অ্যাম্বুলেন্স কে ফোন করে জানাতেই কাছের প্রাইভেট নার্সিংহোমে বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হল। সাড়ে চারটে নাগাদ ডাক্তারবাবু প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে জানালেন, মাইনর একটা স্ট্রোক হয়ে গেছে। সকালে রিপোর্টগুলো পেলে ভালো করে তখন বলা যাবে কি হয়েছিল। তবে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই এখন উনি বিপদমুক্ত। তবে একটু সতর্ক হতে হবে এরপর থেকে। ওনার যে প্রেসার ছিল তা কী আগে আপনারা জানতেন? মানে কোনদিনও প্রেসারের ওষুধ খেয়েছেন ,ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাস করলেন। উন্মেষ বলল ,না সেরকম কোনদিনও কিছু অসুবিধা হয়নি তাই ওষুধ কিছুই কোনদিনও খেতে হয় নি। ডাক্তারবাবু বললেন না এবার থেকে প্রেসারের ওষুধ খেতে হবে নিয়ম করে, ভুলে গেলে চলবেনা। আর আপনারা একটা প্রেসার মাপার যন্ত্র কিনে রাখবেন বাড়িতে তাতে মাঝেমধ্যেই ওনার প্রেশারটা মেপে দেখবেন ।বাড়াবাড়ি বুঝলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন। উন্মেশের মা বললেন প্রেসার মাপার যন্ত্রে ;আমরা কি মাপতে পারবো ?ডাক্তারবাবু বললেন, কেন পারবেন না !আমি আপনাকে ইলেকট্রনিক্স প্রেসার যন্ত্রের কথা বলছি ।এখন তো দোকানগুলোতেও এগুলো রাখছে, ওতে মাপতে কোনো অসুবিধা নেই ।তেমন কিচ্ছু করতে হয় না ।হাতে প্যাডটাকে রোল করে দিয়ে যন্ত্রটাকে অন করলেই ও নিজের থেকে প্রেশার মেপে নেয়।উন্মেষ দেখেছিল আগে এটা,তবে গুরুত্ব তখন অতটা দেয়নি। বললো সত্যিই আগে জানলে এই দিনটা হয়তো আজ দেখতে হতো না।
হসপিটালের সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে দুদিন পর বাবাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে উন্মেষ একটা ভালো প্রেসার মাপার ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের খোঁজে লাগাতে শুরু করলো। কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবকে জিজ্ঞেস করে ও সাথে ইন্টারনেটে সার্চ ও সমস্ত রিভিউ ভালো করে যাচাই করে omron এর একটি প্রেসার মাপার ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র অর্ডার করলো।সাথে এক সহকর্মীর পরামর্শে বাবার জন্য MI এর স্মার্ট ওয়াচ ও অর্ডার করলো।
অনলাইনে অর্ডার করায়, 1 দিনের মধ্যে দুটোই বাড়িতে পৌঁছে গেল।বাবাকে ঘড়িটা হাতে পরিয়ে দিয়ে, সবাই মিলে টেবিলে বসে প্রেসার মাপার যন্ত্রের কার্যপ্রণালী ,সাথে দেওয়া ম্যানুয়াল দেখে শিখতে লাগলো ।খুব অল্প সময়ে বুঝতে পারল যন্ত্রটার কার্যপ্রণালীতে তেমন বিশেষ কঠিন কিছুই নেই।প্যাডটাকে রোল করে হাতে পরিয়ে ভেলক্র টাকে ভালো করে টেনে এঁটে দিয়ে সুইচ অন করলেই যন্ত্রটি নিজের থেকেই অল্পসময়ে প্রেশার মেপে তার রেজাল্ট ডিসপ্লে করে।সাথে হৃদস্পন্দনেরও জানান দেয় ।উন্মেষ বাবার প্রেশার মেপে দেখল এখন একদম নরমাল। এটা প্রেসারের ওষুধ নিয়ম করে খাওয়ারই ফল।
******************************************************
এই Omron portable pressure monitor যন্ত্রে প্রেসার মাপার সাথে সাথে চাইলে ওর virtual মেমরিতে কমপক্ষে 50 টি প্রেসার এর পূর্বনির্ণীত তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে পারা যায়। এই বিভিন্ন সময়ে নেওয়া তথ্যগুলো একসাথে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার বাবুরও রোগীর দীর্ঘ সময়ে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে সুবিধা হয় ।তাছাড়াও যন্ত্রটি নিতান্তই হালকা ও ছোট হওয়ায়, প্রয়োজনে সাথে করে বাইরেও নিয়ে যেতে চাইলে কোনো অসুবিধা হয় না।এই যন্ত্রটি চালাতে হলে প্রয়োজন 4 টি পেন্সিল ব্যাটারী, অথবা ব্যাটারি ছাড়া চালাতে হলে প্রয়োজন 6 volt এর একটি ac adopter।বাজারে omron কোম্পানির বিভিন্ন মডেল আছে, প্রয়োজনীয়তা ভিত্তিতে কিনলেই হলো।আর দামও মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে , যেমন omron HEM 8712 automatic blood pressure monitor এর দাম ₹2278 ।
******************************************************
উন্মেষের বাবার বর্তমান অবস্থায় এটা নিতান্তই প্রয়োজনীয় ছিল। ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে বাবা জানতে চাইলেন এটা আবার এখন কেন কিনতে গেলি!এইতো কত টাকা ব্যায় হলো আমার জন্য।বাবা , মা তার সন্তান স্নেহে এমন কিছু কথা কখনো বলে ফেলেন, যা সন্তান কে খুব কষ্ট দেয়, যা তাঁরা বুঝতে পারেন না।বিরক্ত হয়েও বাবার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে উন্মেষ বলল , তুমি এই ঘড়িটা আজ থেকে সব সময় পড়বে শুধুমাত্র রাতে শোবার আগে খুলে রাখবে। স্নানের সময় না খুললেও কোন অসুবিধা নেই ;এটা ওয়াটারপ্রুফ। বাবা বললেন সবসময় পরার দরকার কি আছে আমি তো এমনিতেই ঘড়ি কম পড়ি। উন্মেষ বলল ,না, এটা সেই ঘড়ি নয় যা তুমি ভাবছো। এটা স্মার্ট ওয়াচ । সারাদিনে তোমার হার্ট রেট কেমন আছে বা কত পা হাঁটছো, কত ক্যালরি খরচা করছো তার সব হিসাব এতে পাওয়া যাবে। তোমার জন্য এটা এখন খুব দরকার।তাছাড়াও ডাক্তারবাবু তোমাকে হাটতে বলেছেন, তাই বাইরে যদি কিছু বিপদ হয় বা হতে পারে বলে বুঝতে পারো বা কোনো হঠাৎ শারীরিক অসুবিধায় এই ঘড়িতে দেওয়া sos বাটনে চাপ দিলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা খবর পাবো। শুধু তাই নয় তুমি কোথায় তখন আছো অর্থাৎ লোকেশন কি তাও জানতে পারবো এই বলে উন্মেষ বাবাকে sos বোতাম ও ঘড়ির বিভিন্ন function বিঝিয়ে দিলো।এবার বল ঘড়ি টা পড়া প্রয়োজন কি না ?বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নাড়িয়ে বলল সত্যিই কত নতুন নতুন জিনিস বাজারে এসে গেছে। তবে এখন না নিলেও পারতিস। উন্মেষ বাবার দিকে তাকিয়ে এবার হেসে ফেললো।
********************************************************************
Mi Band smart watch রূপে ও গুনে সয়ংসম্পূর্না। unisex এই ঘড়িটিকে আমি নারী রূপে অবতরণ করলাম, তার দিনে দিনে নিজেকে স্লিম করে নেওয়ার গতি দেখে।হাতে ব্যান্ডের মতন জড়িয়ে থেকে হাঁটা, দৌড়ানো সমস্ত কিছুর লক্ষ্য রাখে।এমনকি রাতে কতক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমানো হয়েছে তারও হিসাব রাখে। আর সাথে যদি কারোর MI এর ফোন থাকে তাহলে ফোনে কল আসলে তার খবরও পাওয়া যায়এই ঘড়িটিতে। কোন কারনে ভুল করে মোবাইলটিকে ঘরের কোথাও হারিয়ে ফেললে এই ঘড়ির সাহায্যে অনেক সহজেই তাকে খুঁজে বার করা যায়। ভারতের অনলাইন বাজারে এই ঘড়িটির দাম সর্বসাকুল্যে 3000। এই ঘড়িটি মোবাইল চার্জ এর মতন ইলেকট্রিক চার্জে চলে এবং একবার ফুল চার্জ করালে 30 দিন পর্যন্ত টানা চলতে পারে।শরীরের সঙ্গে সংস্পর্শে থাকা কালীন, এর মধ্যে থাকা aluminium alloy sensor নিখুঁতভাবে ঘড়িকে বার্তা পাঠাতে পারে ফলে দৈনন্দিন জীবনশৈলীর সঠিক তথ্যটি মেলে এবং ঘড়ির ব্যান্ডটি hypoallergenic silicon band হওয়ায় দীর্ঘক্ষন পড়ে থাকলেও শরীরের ওপর তার কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না।
*****************************************************************************************
আধুনিক মূল্যবান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় এইসকল যন্ত্রপাতি তে উন্মেষের বাড়ি এখন ভরে উঠেছে ।উন্মেষের বাবা তার বন্ধু-বান্ধবদের,সহকর্মীদের সুযোগ পেলেই গর্ব করে তার ছেলের এই সমস্ত কীর্তির কথা বলে থাকেন। এই বলা তার কাছে এক তৃপ্তির বিষয় । ছেলে তার বাবা-মায়ের জন্য করেছে বলে কথা, তাও আবার এই কলিযুগে।
যাইহোক খবর ছড়াতে বেশি সময় নিলো না ।একদিন সকালবেলা পাশের বাড়ির সুনীল জেঠু উন্মেষের বাড়িতে এসে omron এর প্রেসার মাপার যন্ত্র টি চাইলেন। নিজের প্রেসার সামনেই মপিয়ে নিয়ে, জেঠিমার প্রেসার মাপার জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেন।বাবা খুশি হয়ে আরও যেসকল ইলেকট্রনিক্স এর নতুন যন্ত্রপাতি উন্মেষ কিনে এনেছিল সেগুলো সব দেখিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তার দীর্ঘ ভাষণ শোনালেন বন্ধু সুনীলকে।উন্মেষ তখন বাড়ি ছিল না। কথায় কথায় সুনীল বাবু বললেন দিনকাল যা পড়েছে তাতে সুস্থ থাকা আর সুরক্ষিত থাকা একই রকম দুঃসাধ্য ব্যাপার,বোঝলে অনুপ ।বাবা জিজ্ঞেস করলেন সুরক্ষিত থাকা বলতে ?কিছু ঘটেছে? সুনীল বাবু বললেন ,আজকের খবর দেখেছেন? এই গতকাল সামনের পাড়ার এক বাড়িতে মারাত্মক ডাকাতি হয়ে গেছে।ঘটনাটা ঘটেছে কলির সন্ধ্যেবেলায়। মাত্র তিন ঘন্টার জন্য বাড়ির লোকজনেরা বাজারে গেছিল তারই মধ্যে এসব, ভাবা যায়। আবার আরেক দিকে খবর দেখুন নিউক্লিয়ার পরিবারে বাবা-মা কর্পোরেটের কর্মী, আর তাই সারাদিন তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান মানুষ হচ্ছে পাঁচ, সাত হাজার দিয়ে রাখা গৃহ পরিচালিকার কাছে।সে কিনা পড়াতে বসে বাচ্চা মেয়েটিকে বেধড়ক মেরেছে।ভাগ্যিস ঐ পরিবারের ভিডিও ক্যামেরা ছিল, তাই ঘটনাটা জানাজানি হলো।বাবা বললেন ভিডিও ক্যামেরা না ওটা সিসি ক্যামেরা ।এখনতো সব সরকারি, বেসরকারি দফতরেই এগুলো থাকে। তবে অনেক দাম শুনেছি, বড়লোকদের বাড়িতেই সম্ভব।সুনীল বাবু আক্ষেপ করে বললেন, তবে যাই বলুন দিনকাল কিন্তু বড়ই বদলে গেছে।বিশ্বাস করার মতন লোকের খুবই অভাব।
সন্ধ্যাবেলায় উন্মেষ বাড়ি ফেরার পর কথায় কথায় সুনিল জেঠুর আসা এবং ঐ ঘটনাগুলোর পুনঃপ্রচার আবার হলো। যথারীতি উন্মেষ ও সব শুনে তার মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পরেই বলল, না না বেশি দাম তো নয় ।রিভিউ ও বেশ ভালোই। এইতো এটা কিনলেই হয় ।বাবা জিজ্ঞেস করলেন কত দাম? ছাড় না দিয়ে ₹2899, ছাড় দিলে নিশ্চয়ই আরো কম হবে।MI 360° 1080p wifi smart security camera, । বাবা বলে উঠলেন, এবারের টাকাটা আমি দেবো,এটা অর্ডার করে দে তো। ইলেকট্রনিক্স আধুনিক যন্ত্রপাতি বাবার যে বেশ ভালোই মনে ধরেছে, উন্মেষ টের পেল।যেমন কথা তেমন কাজ। দু’দিনের মধ্যেই সিকিউরিটি ক্যামেরাটা বাড়িতে পৌঁছে গেল এবং পছন্দ মতন জায়গায় ওটা কে বসিয়ে চললো চেকিং করা।
****************************************************
এই সিকিউরিটি ক্যামেরা টি সম্পর্কে যান্ত্রিক বিবরণ একটু দিই।নাম MI 360° 1080p wifi smart security camera।Mi ব্রান্ডের এই security ক্যামেরাটি তার নামেই স্পষ্ট যে, wifi সংযোগ যেমন করা যায়, তেমনি ঘরের মধ্যে 360° অর্থাৎ প্রায় সবদিকেরই 1080p HD ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব। ক্যামেরাটি smart হওয়ায় মোবাইলের সাথে সহজেই নির্ধারিত app এর সাহায্যে wifi সংযোগে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। সারা দেশে যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো সময় ক্যামেরায় তোলা live ভিডিও দেখাও যায়, অল্প ইন্টারনেটের খরচ করে।কাজের নিরিখে দামটা কমই বলা চলে।
এই ক্যামেরার মধ্যে আছে 64 GBমেমোরি chip যা, 24 ঘন্টা করে টানা 7 থেকে 8 দিন ভিডিও রেকর্ড করে রাখতে পারে এবং পরে memory full হলে, সব থেকে পুরোনো ভিডিও গুলোকে নিজের থেকে মুছে, নতুন ভিডিও কে save করে রাখে। সাথে আছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দুটো ব্যবস্থা যার একটি infrared high quality night vison এবং আরেকটি AI motion detection alert. অর্থাৎ এটি যেমন অন্ধকারে ভিডিও স্পষ্ট তুলতে পারে(apperture f2.1)অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। ঠিক একইসাথে বন্ধ ঘরে হঠাৎ কোনরকম motion detect করতে পারলে তৎক্ষণাৎ গৃহকর্তার মোবাইলে alart পাঠিয়ে তাকে সতর্ক করে দিতে পারে ।এই সিকিউরিটি ক্যামেরাটির storage চাইলে বাড়িয়ে নেওয়া যায়, কারণ এর সাথে NSA(Network Storage Access) এর যোগাযোগ আছে।যন্ত্রটিকে চালাতে 220v ac তড়িৎ সংযোগ এর প্রয়োজন এছাড়া ইনস্টলেশনের জন্য বাড়ির যে কোন দেওয়ালে, ছাদে, দরজায় একে ফিট করে দেওয়া যায় অত্যন্ত সহজে।
********************
চিত্র সৌজন্য :গুগল
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়…..
অনেক কিছু জানলাম