আমার পাগলী

চিরণ্জিত সাঁতরা
0 রেটিং
1113 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

#আমার_পাগলী

#চিরঞ্জিত_সাঁতরা

ছোটোবেলা থেকেই অত্যন্ত দুরন্ত আর ডাকাবুকো স্বভাবের মেয়ে রাই, মুখে কোনো কথাই আটকায় না l বড়োদের সম্মান দেওয়াতো দূরে থাকে কারোর কথাই শোনেনা, নিজে যা মনে করে তাই করে l যেদিন রাইকে প্রথম গার্লস স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল সেদিনই একজনের সঙ্গে বই নিয়ে ঝগড়া করে আসে l তারপর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই একজনকে পেনসিল বক্স দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়, স্কুলের বড়দি রাই এর বাবা-মা কে ডেকে বলেছিলেন শুধুমাত্র রাই কে রাইবাগিনী বলে রাগিয়েছিলো বলে সেই মেয়েটাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে l তিনি আর তাদের ঐ মেয়েকে স্কুলে রাখবেন না, বাধ্য হয়েই জয়দেব বাবু আর নীলিমা দেবী তাদের মেয়েকে কোয়েট স্কুলে ভর্তি করান l

এই মেয়ে যতই বড়ো হচ্ছে ততই ওর গুন্ডামি আর বেপরোয়া ভাব সমানে বেড়ে চলেছে l অন্যায় দেখলে রাই কাউকেই ছাড়েনা,কতবার ছেলেদের কেউ ধরে পিটিয়েছে; এই জন্য পাড়ার ছেলেরাও ওকে দেখে ভয় পায় l মাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার কিনে দেওয়া লাল স্কুটিতে করে দিন-রাত  টো-টো করে ঘুরে বেড়ায় l

17 বছর ধরে নীলিমা দেবী মেয়ের নামে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নালিশ শুনে শুনে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন l এমনকি মেয়ের জ্বালায় প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, এই সবের জন্য নীলিমা দেবী জয়দেব বাবুকেই দোষ দেন কারণ তিনিই নাকি তার একমাত্র মেয়েকে শাসন  না করে আদর দিয়ে বাঁদর করে তুলেছেন;  যদিও এর জন্য জয়দেব বাবুকেই মনে মনে পস্তাতে হয় l মেয়ের মাথা ঠান্ডা করার জন্য নীলিমা দেবী কত ঠাকুরকেই না পুজো দিয়েছেন কিন্তু না কমে উল্টে বেড়েছে l আর যাই হোক এমনিতে রাই ওর মা-বাবা কে খুব ভালোবাসে l

দেখতে দেখতে 17 বছর  হয়ে গেল আজ রাই এর কলেজের প্রথম দিন,আজ আবার কি ঝামেলা বাধাবে সেই চিন্তাতেই সকাল থেকে অস্তির হয়ে উঠেছেন নীলিমা দেবী;  কিন্তু মেয়েটা সেই সকালবেলা বেরিয়েছে এখনো ফেরার নাম নেইl কিছুক্ষন পর রাই বাড়ি ফিরলো,স্কুটিটা কোনো রকমে স্ট্যান্ড করেই মেজাজ দেখিয়ে গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকলো l মেয়ে কে দেখেই নীলিমা দেবী বললেন –

–ওই যে ডাকাত মেয়ে রাইবাগিনী আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে ঘরে এলেন, সকালে অমলবাবু বলে গেলেন তুই নাকি ওনার ছেলেকে চড় মেরেছিস কিন্তু কেন ?

— তোমার ওই অমলবাবুকে বলে দিও যে তার কুলাঙ্গার ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়েকে টিস্ করছিলো তাই চড় মেরেছি,ওর ভাগ্য ভালো যে আমার সঙ্গে ওরকম করেনি নাহলে এক ঘুষিতেই মুখ ফাটিয়ে দিতাম l

–আচ্ছা বলতো তুই আমাকে আর কত জ্বালাবি? আমি মরলে কি তোর শান্তি হবে !

একথা শুনেই রাই এর অকপট উত্তর

–তুমি মরলে বাবার আবার বিয়ে দেব l

আর কথা না বাড়িয়ে মেয়েকে কলেজে যাবার  জন্য রেডি করিয়ে দিলেন, কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন এই মেয়ের সাথে তর্ক করে জিততে পারবেন  না l অফিস যাবার সময় জয়দেব বাবু মেয়েকে বার বার করে বলে গেলেন যেন কোনো ঝামেলা না পাকায়, নীলিমা দেবীও ওই একই কথা বুঝিয়ে মেয়েকে পাঠালেন l

পায়ে স্নিকার্স, জিন্স, লাল রঙের কুর্তি, চোখে গোল ফ্রেমের সানগ্লাস আর কানে এয়ার ফোন দিয়ে রাইবাগিনী চললো কলেজে, রাস্তায় যেতে যেতে দেখলো চারজন মিলে একটা ছেলেকে মারছে;  তখন রাই স্কুটিটা দাঁড় করিয়ে কাঁধের সাইড ব্যাগটা রেখে ছেলেটাকে বাঁচাতে গেলো, রাস্তার পাশেই পরে থাকা একটা গাছের ডাল দিয়ে ওই ছেলেগুলোকে এমন মারলো যে দুজন তো তাদের বাইক ফেলে রেখেই পালালো l

— এই যে ক্যাবলারাম আপনিকি হাতে চুড়ি পরে আছেন, ছেলেগুলো এতো মারছিলো আপনি একটাও মারতে পারলেন না ?

— দেখুন প্রথমত আমি ক্যাবলারাম নই আমার নাম সুমন, আর দ্বিতীয়ত আজ আমার কলেজের ফার্স্ট ডে এক সাইড দিয়েই বাইক চালাচ্ছিলাম ওই ছেলেগুলো রাফ ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল বলে আমি প্রতিবাদ করায় সবাই মিলে আমাকে মারতে লাগলো l আর আমাকে বাঁচানোর জন্য থ্যাংক ইউ …..

–হ্যা ঠিক আছে ঠিক আছে, এবার আপনি যান l

এইসব ঝামেলা মিটিয়ে কলেজে পৌঁছতে রাই এর ঘন্টাখানেক দেরি হয়ে গেলো, গিয়েই দেখলো কলেজের গেটের সামনেই কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ঈশান l রাই কে দেখেই বললো

— ওই পাগলী এতক্ষন কোথায় ছিলিস ? ফোনটা দেখ পাঁচ বার ফোন করেছি একবারও ধরিসনি, এদিকে আমার টেনশন হচ্ছে যা জোরে গাড়ি চালাস ভাবলাম হয়তো যমরাজ তোকে তুলে নিলো l

— হ্যা রে ছাগলটা! তোর যমরাজও আমাকে ভয় পায়, এতক্ষন তো ওই যমরাজের সাথেই মারামারি করছিলাম l

রাই-এর মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে ঈশান হো হো করে হেঁসে বললো

–এ আবার নতুন কথা কি, এতো অনেক বারই হয়েছে l

— ছাড় তোকে আর জ্ঞান দিতে হবেনা এবার ক্লাসে চাল l

এই ঈশান হলো সেই নার্সারি ক্লাস থেকে রাই-এর বন্ধু, দুজনেই একে-ওপরের প্রাণ l একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারেনা, রাই এর কত কুকর্মের সাক্ষী থেকেছে ঈশান;  এরজন্য অনেকবার বিপদেও পড়তে হয়েছে ঈশানকে l একবার হারাধন জেঠুর আমগাছে ঈশানকে তুলে দিয়ে রাই নিচে দাঁড়িয়ে আমি গুড়াচ্ছিলো যখন শব্দ পেয়ে হারাধন জেঠু বাইরে বেরিয়ে এলো রাই তখন

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল