বিগত পর্বের লিঙ্ক:-
www.saabdik.com/sarod-protibedon-porbo-1
www.saabdik.com/sarod-protibedon-2
www.saabdik.com/sharod-protibedon-3
www.saabdik.com/sarod-protibedon-porbo-4/
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে দেবী দুর্গা পরম ভক্তিময়। তাঁর এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মমতাময়ী মাতার। তিনি অশুভর প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে অন্যায়-অশুভর বিপরীতে ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হয়েছিল, আমাদের বিশ্বাস।তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধারই নন, অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয়ের আশ্রয় দানকারী বলেও গণ্য হন।
মাতৃ আরাধনা তখনই স্বার্থক হয়ে উঠবে, যখন ঘরে ঘরে দূর্গার মত মেয়েদের প্রকাশ ঘটবে। সেটা কি হয়েছে? বছর বছর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দূর্গতিনাশিনীর আরাধনা করেও কেন আমাদের দূর্গতি দূর হচ্ছে না। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, :
” পূঁজা পার্বন তুই যতই করিস,
ফুল, তুলসী, গঙ্গা জলে
অনুশীলনী কৌশল ছাড়া,
ফল পাবে না কোন কালে।”
তাই, দূর্গা পূজাঁ কেবল মাত্র পুস্পবিল্বপত্রের এবং ঢাক-ঢোলের পূজাঁ নয়। এ পূঁজা মানবতার এক বিরাট মিলন উৎসব। মাতৃ আরাধনায় রত যারা তাদের উদ্দেশ্যে করে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন:
“মা সবারই মা,
কাউকে ছেড়েঁ দিয়ে নয়,
কাউকে বাদ দিয়ে নয়,
কাউকে পরিত্যাগ করে নয়।”
এই হ’ল মায়ের স্বভাব প্রকৃতি। তিনি যেন জীবজগতের একত্ববিধানের এক স্বরূপ। সব সন্তান যেমন মায়ের নাড়ীছেঁড়া ধন,তেমনি সেই সন্তানরা যদি আবার মায়ে তৃপ্তি ও স্বস্তি বিধান করতে আগ্রহান্বিত হয়, তাঁকে ভালবেসে, তাঁর সেবা করে , তখন সেই সন্তানরাও আবার পারস্পরিক সম্প্রীতি নিয়ে মিলেমিশে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে বিক্ষোভ বা বিচ্ছেদ মাথা চাড়া দিতে পারে না। এমন ভাবে থাকলেই পূঁজার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। সবাইকে নিয়ে উদ্বর্দ্ধনার পথে এগিয়ে চলা। প্রতিমাকে পুতুল মনে করে পূঁজা করলে পূঁজার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় না। দেবতাকে মাটি বা পাথরের পুতুল ভাবতে ভাবতে আমাদের অন্তরটাও ঐ রকম মাটি বা পাথর হ’য়ে উঠে।
ভগবতী দূর্গা। ভগ মানে ঐশ্বর্য্য। তাই, ভগবতী মানে ঐশ্বর্য্যশালিনী। ঐশ্বর্য্য, বীর্য্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি ঐশ্বর্য্যরে নাম “ভগ”। এই ছয়টিই মা-দূর্গার মধ্যে পূর্ণ মহিমায় বিরাজিত। আবার তিনি “মহামায়া”। মায়া কথাটি এসেছে মা-ধাতু থেকে, অর্থ পরিমাপ করা। মহামায়া মানে মহাপরিমাপনকর্ত্রী। পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ”এই যে মায়া দেখছ, মায়ার যা’ সব খেলা, এ মায়া কিন্তু আমারই” । অর্থাৎ মায়াও তাঁরই সৃষ্টি। ঈশ্বর স্বীয় মহাশক্তি দ্বারা জগৎ পরিমাপিত করেন। মায়া আবার প্রকৃতি নামেও আখ্যায়িত হয়।
দেবীপূঁজার প্রক্কালে বিল্লবৃক্ষে বোধন হয়। বোধন মানে জাগরণ,চেতন ক’রে তোলা। বিবেক জাগ্রত না হ’লে বিশ্ব মানবতার সন্তান হ’য়ে ওঠার যোগ্যতা লাভ করা যায় না। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, “বোধন মানে বোধসূত্র, যা’কে আশ্রয় ক’রে অন্তরে বাহিরের যা’ কিছুকে বুঝে সুঝে চলতে পারা যায়।”
পূঁজা মানেই তো সংবর্ধনা অর্থাৎ যার পূজা করি তাঁর মহনীয় গুনাবলীকে সুনিষ্ট অনুশীলনের দ্বারা নিজেকে চরিত্রগত ক’রে তোলা এবং ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে তোলা।
বলি হ’ল উৎসর্গ। আমাদের নিজেদের হিং¯্রতা ও লালসাকে পোষণ করতে যেয়ে এরকম নিষ্ঠুর ভাবে পশুহত্যা আমরা ক্রমাগত ক’রে চলছি, তাতে পূজাঁর উদ্দেশ্য কতখানি সিদ্ধ হচ্ছে ? মনটা কতটা ভাগবৎমূখী হ’য়ে উঠছে ? পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকের ওপর দরদী হয়ে ওঠার এই ক্রিয়া কতটা সহায়তা করছে ? ইন্দ্রিয়গুলি আমাদের কতটা তীক্ষè ও তরতরে হয়ে উঠছে? কোনটিই হচ্ছে না। কারন, আমরা বলি- শব্দের প্রকৃত অর্থ জানিনা। তাই, বলিদানও হয় না। বলি- শব্দ এসেছে বল্ – ধাতু থেকে, মানে বর্দ্ধন। মায়ের পূজাঁ যে বলি হয় তার মানে বেড়ে ওঠা, বা বলীয়ান ক’রে তোলা, মায়ের পূজাঁ করে মানুষ সংবধিক হয়ে ওঠে।
বিসর্জ্জন শব্দটি বি-সৃজ ধাতু থেকে উৎপন্ন, বিশেষ প্রকারে সৃষ্টি করা। যে মাতৃপূজাঁ করলাম, সেই মায়ের সর্ব মঙ্গলকারিণী মায়ের সুন্দর ভাবে ও চরিত্রকে নিজের অন্তরে বিশেষ ভাবে সৃষ্ট, অর্থাৎ দৃঢ়নিবন্ধ করে তোলা চাই। মায়ের সেবায় আমাদের বৃত্তিগুলিকে নিয়োজিত করি, তখনই হয় বিসজ্জনের স্বার্থকতা।
মা দুর্গা সাধারণের কাছে দেবী দুর্গা, মহাময়া, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী, শ্রী চন্ডী প্রভৃতি নামে পরিচিত। সর্বশক্তি স্বরূপিনী আদ্যাশক্তি হলেন এই মা দুর্গা। তাঁর দুর্গা নামটির মধ্যেই অসুর শক্তি নাশের পরিচয়। তিনি দুর্গ নামের এক দৈত্যকে বধ করে দুর্গা নামে খ্যাত হন। যুগে যুগে দেবতাদের কল্যাণের জন্য দেবী দুর্গা অত্যাচারী ভোগলোলুপ অসুরদের নিধন করেছিলেন। মা দুর্গা শত্রু বিনাশে যেমন ভয়ঙ্করী আবার ভক্ত বা সন্তানের কাছে তিনি তেমনি স্নেহময়ী জননী, কল্যাণ প্রদায়িনী। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-‘ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে বাঁ হাত করে শঙ্কা হরণ। দুই নয়নে স্নেহের হাসি ললাট নেত্র আগুণবরণ।’
বাংলাদেশ প্রেম ধর্মের দেশ। মাকে সৌন্দর্যময়ী, প্রেমময়ী, করুণাময়ীরূপে প্রত্যক্ষ করতে। তাই তো মার্ক-ুয়ে পুরাণের কাহিনীর সঙ্গে সংগতি রেখে দেবী দুর্গার অসুর-নাশিনীরূপে প্রতিমা গড়ে পূজার আয়োজন করা হলেও বাঙালি ভক্ত জানেন, আসলে ওই পূজা আর কিছু নয়, এক বছর বর উমা স্বামীগৃহ কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে এসেছেন। তারপর আবার ফিরে যাবেন কৈলাসে স্বামী শিবের কাছে।
এখানে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষণীয়। ভক্ত ভগবানকে তাঁর আপনজন হিসেবে পেতে চান। তাই তো দেখা যায়, ভক্তিমার্গের সাধক কেউ ভগবানকে প্রভূরূপে, সন্তানরূপে, সখারূপে, প্রেমিকরূপে ভজনা করে থাকেন।
দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল–তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের, তারা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের গঠন, দায়িত্ববোধ ও উর্বরতা শক্তির সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করে অনার্য সমাজে গড়ে উঠে মাতৃপ্রধান দেবী সংস্কৃতির ধারনা। ভারতে অবশ্য মাতৃরূপে দেবী সংস্কৃতির ধারনা অতি প্রাচীন। প্রায় ২২,০০০ বছর পূর্ব ভারতে প্যালিওলিথিক জন গোষ্ঠি থেকেই দেবী পূজা প্রচলিত। হরপ্পা ও মহেন্জোদারো সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতায় এসে তা আরো গ্রহণযোগ্য, আধুনিক ও বিস্তৃত হয়। মাতৃপ্রধান পরিবারের মা-ই প্রধান, তার নেতৃত্বে সংসার পরিচালিত হয়। এই মত অনুসারে দেবী হলেন, শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম। শাক্ত মতে, কালী বিশ্ব সৃষ্টির আদি কারণ। অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপে প্রকাশ মাত্র। মহাভারত অনুসারে, দূর্গা বিবেচিত হন কালী শক্তির আরেক রূপে।
পরিব্রাজক, বৌদ্ধ পন্ডিত হিউয়েন সাংকে নিয়ে দূর্গাপূজার একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। চীনা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাখায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের মূল পান্ডুলিপি সংগ্রহে ৬৩০ সালে ভারত সফরে আসেন। ভারত বর্ষের নানা বিহারে বিদ্যা অর্জন করেন। ৬৩৫-৬৪৩ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর তিনি হর্ষবর্ধনের রাজ সভায় ছিলেন। তবে তার কাহিনী দূর্গা, কালী, কালীর আরেক রূপ চন্ডি নাকি বন দেবীকে নিয়ে-তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে তার রচনায় উল্লেখ করেছেন, হর্ষবর্ধন এর সময়ে দস্যু তস্কর এর উপদ্রব খুব বেশি ছিল এবং তিনি নিজেও একাধিক বার দস্যুর হাতে নিগৃহিত হয়েছিলেন।
মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দূর্গা পূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে আছে দুই ধরনের স্থাপত্যরীতি মন্দির। ১১শ বা ১২শ শতক থেকে এখানে কালী পূজার সাথে দূর্গা পূজাও হত। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে।
যতটুকু জানা যায়, কারো মতে, ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দূর্গা পূজা করেন। আবার কারো মতে, ষোড়শ শতকে রাজশাহী তাহেরপুর এলাকার রাজা কংশ নারায়ণ প্রথম দূর্গা পুজা করেন। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন। অনেকে মনে করেন, ১৬০৬ সালে নদীয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দূর্গা পূজার প্রবর্তক। ১৬১০ সালে কলকাতার সুবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার দূর্গার ছেলে মেয়ে সহ সপরিবারে পূজা চালু করেন ।
১৭১১ সালে অহম রাজ্যের রাজধানী রংপুরের শারদীয় পূজার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের দূত রামেশ্বর নয়ালঙ্কার। নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌল্লার আক্রমনে কলকাতার একমাত্র চার্চ ধ্বংশ হবার পর সেখানে কোন উৎসব করা অবস্থা ছিল না। পলাশীর যুদ্ধে বিজয় লাভের জন্য ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভা বাজার রাজবাড়িতে রাজা নব কৃঞ্চদেব লর্ড ক্লাইভের সন্মানে দূর্গা পূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন।
আধুনিক দূর্গা পূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ম শতকে নানা বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে জমিদার, বড় ব্যবসাযী, রাজদরবারের রাজ কর্মচারী পর্যায়ে প্রচলন ছিল। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরতœ মন্দিরে দূর্গা পূজা হত। পাটনাতে ১৮০৯ সালের দূর্গা পূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। ওরিষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। বর্তমানে দূর্গা পূজা দুইভাবে হয়ে থাকে, ব্যক্তিভাবে, পারিবারিক স্তরে ও সমষ্ঠিগতভাবে, পাড়া স্তরে বারোয়ারি বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত।
সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে আখ্যাত হয়। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন অর্থাৎ পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজার দিন হিসাবে গণ্য হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।
দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুমারী পূজা। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত ১ বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। এদিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। দেবীর মত সাজিয়ে হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক এবং পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে পূজাঙ্গণ মুখরিত থাকে । শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে দেবী বেশি প্রকাশ পায়। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পূত-পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন, শ্রদ্ধাশীল ।
১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে ৯ জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ, সতীদাহ, চিরবিধবাসহ নানা অবিচারে নারীরা ছিল নিপীড়িত। চিরকুমার বিবেকানন্দ নারীকে দেবীর আসনে সন্মানীত করার জন্যেই হয়তো পুনঃপ্রচলন করেন। ১৯০১ সালের পর প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। আধ্যাত্মিক ও জাগতিক কল্যাণ সাধনই কুমারী পূজার মূল লক্ষ্য।
দূর্গাপূজার আরো একটি অংশ সন্ধিপূজা। অষ্টমীর দিনের শেষে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় দেবী দূর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে, তান্ত্রিক মতে এই পূজা সম্পন্ন হয়। এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়, দেবীর উদ্দেশ্যে হয় পশুবলি, সেই বলিকৃত পশুর মাংস ও রক্ত, মদ দেবীকে প্রদান করা হয়। এককভাবে চামুন্ডা, চন্ডি বা কালী পূজায় পশুবলি দেখা গেলেও বাংলাদেশের কোথাও দূর্গা পূজায় পশুবলি হয় না।
সরকারী বা জাতীয়ভাবে এই উৎসবকে দূর্গা পূজা বা দূর্গা উৎসব হিসাবে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় এটাকে শরৎ কালের বার্ষিক মহা উৎসব হিসাবে ধরা হয় বলে ইহাকে শারদীয় উৎসবও বলা হয়। রামায়ন অনুসারে, অকালে বা অসময়ে দেবীর আগমন বা জাগরণ বলে শরৎকালের দূর্গা উৎসবকে অকালবোধনও বলা হয়। বসন্তকালের দূর্গা পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়।
©️শঙ্খচিল
নিয়মিত চোখ রাখুন শাব্দিকের পেজে,প্রতিটি পূর্ববর্তী পর্বের লিংক পরবর্তী পর্বের সাথে পেয়ে যাবেন..তাই মিস করার কোনো অবকাশ নেই..
চিত্র সৌজন্য : গুগল