সেই সময় পূজোর গান। এইচ এম ভি থেকে গানের বই বেরোবার আগেই কি আগ্রহ ছিল আমাদের। বন্ধ কবে হল তা মনে করতে পারছিনা।ছয় আর সাতের দশকে পুজোর আর একটি অন্যতম আকর্ষণ ছিল, পুজোর গান। সেই সময় পেয়েছিলাম মন মাতানো কিছু শিল্পী সুরকার আর গীতিকারদের।সলিল চৌধুরী , নচিকেতা ঘোষ , অনিল বাগচি। সুধীন দাশগুপ্ত , রতু মুখোপাধ্যায় , অনল চট্টোপাধ্যায় , অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সুরকারদের।আর শিল্পীরা ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় , মান্না দে , প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, , মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, বনশ্রী সেনগুপ্ত আরও অনেকে।
তাঁরা এসেছিলেন তাঁদের সব অবিস্মরণীয় সুর আর গানের ডালি নিয়ে।
আর ছিলেন গীতিকারেরা যাঁরা কোনদিন কবির স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু তাঁদের অসাধারণ কথার ওপর বাংলা গান রূপ পেয়েছিল একদিন। আজ তাঁরা অনেকেই বিস্মৃতপ্রায়।- অজয় ভট্টাচার্য, প্রণব রায় , মোহিনী চৌধুরী , শ্যামল গুপ্ত ,প্রবীর রায় , গৌ্রীপ্রসন্ন মজুমদার , পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় , মুকুল দত্ত-এঁরা বাংলা গানের কথাকে নতুন চেহারা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া সলিল চৌধুরী তো ছিলেনই। সেই সব গীতিকারদের কথাও একই সঙ্গে মনে পড়ে
একজন বলেছিলেন “সেই সময়ের ডিস্কে প্রকাশিত পূজোর গান নিয়ে একটি আলাদা করে ইতিহাস রচিত হলে সেই সব গুণী মানুষদের প্রতি কিছুটা সম্মান জানান হত । কিন্তু বাঙালিতো নিজেদের ইতিহাস রচনায় ভয়ানক অনীহা, হয়তো কোনও সাহেব এসে সেটাও লিখে যাবেন।”
সেই সময় বাঙালি সারা বছর অপেক্ষা করে থাকত পুজোর গানের জন্য। কিছুদিন আগে থেকেই প্রচারিত হত রেডিওতে সেই সব গান। তখন আরও একটি অন্যতম আকর্ষণ ছিল, এইচ এম ভি প্রকাশিত শারদ অর্ঘ্য। পুজোর গানের বই।তখন বলতে গেলে রেডিওই এক মাত্র প্রচার মাধ্যম ছিল।শনিবার স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফেরার পথে প্রত্যেক ঘর থেকে ভেসে আসত অনুরোধের আসরের সেই সব মাতাল করা সুর। বাড়িতে ফিরেও শুনতাম চলছে সেইসব গান। তখন কিছু বাঁধা ধরা অনুষ্ঠানের প্রতি ছিল সব বাঙালির এক অদম্য আকর্ষণ। যেমন শনিবার তিনটে থেকে সাড়ে তিনটে অনুরোধের আসর। রবিবার দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটে আবার অনুরোধের আসর।সেই যুগটা ছিল শোনার যুগ। তখন দেখার চেয়ে শোনাই হতো বেশি। কাজেই শারদ অর্ঘ্যের বইটিতে শিল্পীদের ছবিই ছিল শিল্পীদের চেনার একমাত্র মাধ্যম।পরিচিত বেশি ছিলাম তাঁদের গান আর কণ্ঠস্বরের সঙ্গে।
এখন ঠিক উল্টো, টিভির দৌলতে গান চিনি না, শিল্পী চিনি। দেখলেই মানুষ বলে দিতে পারেন ইনি কে। কিন্তু তাঁর চারটে গান মনে করতে দিনের বেলাও তারা গুনতে হবে। কিন্তু তখন যে কোনও শিল্পীর বহু গান মনে থাকত। এখনও আছে।
অবসান হয়েছে সেই যুগের। সেই অনুরোধের আসর নিশ্চয়ই আর নেই। পুজো প্যান্ডেলে পুজোর গান বাজছে তা এখন ধূসর স্মৃতি। এখন মোবাইল আর আইপডে ডাউনলোড করা থাকে শ’খানেক গান। পথ চলতে কানে ইয়ারপ্লাগ গোঁজা আধুনিক প্রজন্ম, ধারণাই করতে পারবে না একটি ৭৮ আর পি এমের গালার চাকতিতে ধরা দুটি মাত্র গানও তখন কী উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারত।
প্রায় একশো বছর আগে শুরু হওয়া পুজোর গানের যুগটা হারিয়ে গেছে কবেই। এখনও শুনি নতুন পুরনো মিলিয়ে কিছু শিল্পীর কিছু গান পুজোয় প্রকাশিত হয়, কিন্তু কে তার খবর রাখে? আর সেই উন্মাদনাই বা কোথায়?কখনো কখনো ইতিহাসও বর্তমানকে নিষ্প্রভ করে দেয়।
সেই যুগ হারিয়ে গেলেও সেই সব পাগল করা কথা, মাতাল করা সুর আর আবেশ ধরানো কণ্ঠের গান আজও অধিকার করে আছে বহু মানুষের মন।যে গান শুনলেই দুলে ওঠে হৃদয় মন।আবেশ ধরায় মনে।।অস্বীকার করার জায়গা নেই আমাদের স্বাদ bodleche..বদলেছে সমাজের ভাবধারা,চিন্তা…তৈরী হচ্ছে সুর,আসছে কথার অতিসহ্য,কিন্তু কম্পিটিশন র আওতায় পরে প্রয়োজনের থেকে আয়োজন বেশি হয়ে পড়াতে কোনো কথা,কোনো সুর ই কালজয়ী হয়ে উঠতে পারছে না..কিন্তু তার মানে যে ভালো সংগীত,ভালো মিউজিক তৈরী হচ্ছে না..এটা সর্বৈব ভুল..
সংগীতের অবস্থান ভালো লাগাতেই আছে,কিন্তু স্বর্ণযুগের মতো দীর্ঘস্থায়ী নয়;বরং তা ক্ষণস্থায়ী..