কবিকথা ও প্রেম (পর্ব- ৫)

অর্পণ (শঙ্খচিল) ভট্টাচার্য্য
5 রেটিং
5838 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

বিগত পর্বগুলোর লিঙ্ক:-
১.www.saabdik.com/kobi-katha-o-prem
২.www.saabdik.com/kobikotha_o_prem_part_2
৩.www.saabdik.com/kobikotha_o_prem_part_3
৪.www.saabdik.com/kobikotha-o-prem-part-4
কিশোরী বউ দিদির সাথে বালক রবির খুনসুটির শেষ ছিল না। জাঁতি দিয়ে ফাইন করে সুপুরি কাটার গুণ সম্পর্কে বউদিদি যেমন দেবরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন, ঠিক তেমনি ফ্লার্ট করে বলতেন, “কবি বিহারীলালের মতো যদি কবিতা লিখতে পারতে, তবে বুঝতাম।” অর্থাৎ তিনি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনায় উৎসাহ দিতেন লেখার সমালোচনা করে।

পান্তাভাত, লঙ্কা আর বউদি এই ত্রয়ী কবির মনে দাগ ফেলে দিয়েছিল সারা জীবনের মতো। আর তাই বুঝি “ভগ্নহৃদয়” কাব্গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছিল সেই গভীরতা। বৌঠানের চোখ দুজোড়া ভুলতে পারেননি কবি। চোখ আঁকতে ইচ্ছে করলেই তিনি আঁকতেন বৌঠানের চোখ আর সেই চোখের অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা না করতে পেরেই বুঝি লিখেছিলেন —

” বড় বড় কাজল নয়ানে 
অসংকোচে ছিল চেয়ে
নব কৈশোরের মেয়ে
ছিল তারই কাছাকাছি বয়স আমার।”

কবির প্রচুর সাহিত্য সৃষ্টি, কবিতা ছিল এই নিঃসঙ্গ, রিক্ত নারীটিকে ঘিরেই। কবি নাতনী নন্দিতার স্বামী কৃষ্ণ কৃপালনীও দিল্লীর “মালঞ্চ” থেকে প্রকাশিত তাঁর “টেগোর, এ লাইফ” নামক রবীন্দ্রজীবনীতে বলেছেন……. 
“A playmate and gurdian angel…. no other loss had so profound an impact on his mind and his genius. It didn’t break him, it made him.”

এবারে আসি কবি-পত্নী মৃণালিনী দেবীর কথায়। বিয়ের পরের দিন ঠাকুর বাড়িতে নতুন বর-কনে যখন প্রবেশ করছে, সেই সময় বিয়ের বরণডালায় মঙ্গলহাড়ির চাল-কড়ি সহ মাটির ভাঁড়গুলিকে ইচ্ছে করেই উল্টে দিলেন যুবক রবি। ছোট কাকীমা ত্রিপুরাসুন্দরী শুধোলেন – “এ কি করলি, রবি…?? ” উত্তরে রবি বলেছিলেন – “সবই তো আজ থেকে ওলটপালট হয়ে গেলো, কাকীমা।”

বহুবার তিনি নিজের স্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু সেগুলোর সবকটিই ছিল কেজো চিঠি। রোমান্টিকতার ঝুলি ঝেড়েও এক ফোঁটা প্রেম ঝরেনি সে চিঠিতে। স্ত্রীকে লিখলেন একবার – “এখন আমার ক্রমশ বিশ্বাস হয়ে আসছে তোমার কাছে আমার চিঠির কোন মূল্য নেই এবং দুছত্র চিঠি লিখতেও তুমি কেয়ার করো না।” এর থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয় তাঁদের মানসিক দূরত্বের কথা। অন্যত্র মৃণালিনীর লেখায় উঠে আসে তাঁর মানসিক ক্ষোভের কথা – “আমি এখন সংসারের কাজের লোক হয়ে গেছি। ” মৃণালিনী দেবী হয়তো তাঁকে শারীরিক সুখ থেকে বঞ্চিত করেননি। পাঁচটি সন্তান উপহার দিয়েছিলেন কবিকে। কিন্তু তিনি আর কি কিছু কবিকে দিতে পেরেছিলেন??

©️শঙ্খচিল

ক্রমশঃ

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল