রথযাত্রা বলতে সাধারণভাবে পুরীর জগন্নাথদেবের রথকেই বোঝালেও এরাজ্যের কলকাতার ইসকন, মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। ওই সমস্ত রথে বসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথ।কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা।
তারাপীঠের রথযাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ সঠিকভাবে বলতে পারেন না কেউ। তবে মন্দিরের সেবাইত প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই থেকে জানা যায় তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ রথের প্রচলন করেছিলেন। সেই সময় একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়। সেই রথেই আজও মা তারাকে চড়ানো হয়।
তারা মায়ের একটি “রথ ঘর” রয়েছে। যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই “রথ ঘর”-এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সারা বছর ওই “রথ ঘর”-এই পিতলের রথকে সংরক্ষিত রাখা হয়। এটি নির্মাণ করেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধুখাঁ।
প্রাচীন রীতি মেনে আজ রথযাত্রার দিন বিকেলে মা তারার মূর্তিকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হয় তারাপীঠ। বিকেল ৪টে নাগাদ মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। সাজানো হয় রাজবেশে। তারপরই হাজার হাজার পুণ্যার্থী রথের রশিতে টান দেন।
রথে তারাপীঠের মা তারার রথযাত্রা বহুকালের প্রথা। ঘড়ির কাঁটা দুপুর তিনটে ছুঁতেই চিঁড়ে, পাঁচ রকম মিষ্টি, ফল দিয়ে ভোগ নিবেদনের পরে বিশেষ পুজো। রথ উপলক্ষে দেবীকে জিলিপির ভোগও নিবেদন করা হয়।
রথ বের করানোর আগে বেনারসি কাপড় পরানো হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে মা তারাকে অপরাজিতা, জবা, রজনীগন্ধা ফুলের বড় বড় মালা দিয়ে সাজানো হয়। তারপরে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মাকে বের করে মন্দিরের মূল প্রবেশ দ্বারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা সুসজ্জিত রথে চাপানো হয়। শুরু হয় যাত্রা।
প্রথমে প্রথা মেনে মা তারাকে মূল প্রবেশ দ্বার থেকে উত্তরমুখে নিয়ে যাওয়া হয়। উত্তর মুখে রথে চেপে দ্বারকা সেতু সংলগ্ন রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তা ধরে রথ তারাপীঠের তিন মাথা মোড় হয়ে এগিয়ে যায়। এবং মা তারাকে রথে চাপিয়ে আবারও মন্দিরের মূল প্রবেশ দ্বারেই নিয়ে আসা হয়।
বিশেষ পুজো শেষে মাকে রাজবেশে তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী হন মা তারা,তারাপীঠ এলাকায় ঘোরানো হয়। রথের দড়ি টানার জন্য বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ও হয়। এছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে তারাপীঠ-সহ সংলগ্ন এলাকার মানুষজনও ভিড় করে। রথের দড়ি টানার জন্য তাঁদের মধ্যেই কাড়াকাড়ি হয়।
তারা মাতা সেবাইত সংঘের মতে, “রথ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর দিনক্ষণ এখন আর বলা সম্ভব নয়। তবে প্রতি বছর মা তারাকে রথে চড়িয়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করিয়ে সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয়।
এই রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি, বাতাসা বিতরণ করা হয়। কথিত আছে, এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না। সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুটোপুটি পড়ে যায়।
©️শঙ্খচিল
চিত্র সৌজন্য : গুগল
খুব ভালো লাগলো