দুগ্গাপুজো ২০১৯ পর্ব ১
ছেলের প্যাকিং করতে করতে মায়ের নির্দেশ।
একদম টো টো করে ঘুরবি না।
বাইরের খাবার খাবি না।তোর তো খাবার দেখলেই শুঁড়ে জল ঝরে।
সান্সস্ক্রিন মাখবি আর অবশ্যই ছাতা সানগ্লাস নিবি।
এখনকার মেয়ে গুলো সব হাড় বজ্জাত! ওদের পাত্তা দিবি না। ভোলাভালা ছেলে দেখলেই ওরা নাকানিচোবানি খাওয়ায়।
জাঙ্ক ফুড খাবি না।দিন দিন তো কুমড়াপটাশ হচ্ছিস।একটু জগিং করবি…….
আর শোন ক’ বছর ধরে বাংলাও দেখছি তোকে খুব ডাকছে! ওদের এতো কি যে মচ্ছব ওরাই তা জানে! ক’ দিন পর ই তো আমার সাথে যাবি! তাও দু’ বার করে ডাকাডাকি….. কাজকম্ম না করলে যা হয়।
মেয়ে দুটো দু’ বার যায়! কার্তিকও দু’ বার! এবার তুইও।
বাংলাতে গিয়ে ব্রিজের তলায় একদম দাঁড়াবি না! আহাম্মক গুলো ব্রিজ সারাবার নাম করে না এ দিকে আমার জন্য টাকা ওড়াচ্ছে! আমার যেনো টাকার কিছু কমতি আছে! মা উমা গজগজ করে আর গণেশের ব্যাগ প্যাক করেন।
গণেশ মা অন্ত প্রাণ। সে একটু আদুরে বাচ্চা। ঘি লাড্ডু দেখলেই শুঁড়ের তলায় চালান।ফল যা হবার তাই! দিন দিন কুমড়াপটাশ হচ্ছে।এইবার উমার টনক নড়েছে। কিন্তু যা হবার তা তো হয়ে গ্যাছে! এখন কমানো বহুত ঝকমারি! মা ব্যাটা দুজনেই বিলক্ষণ বুঝছেন।
গণেশ মাকে জড়িয়ে — মা বাংলাতে যেখানেই যাবো টো টো,মানে এ টোটো সে টো টো নয়,ওটা একটা গাড়ি।
উমা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে ওরা অটো নিয়েই যান জটে মরছে আবার রাস্তায় টো টো নামিয়েছে?
উফফ এই বাংলার লোক গুলোর ঘিলুতে কি গোবর ভরা? গণেশ মুচকি হেসে– মা শুধু নেতাদের।
উমা গণেশের গায়ে হাত বুলিয়ে — অতো সত্যি কথা বলতে নেই বাবা। চুপচাপ পুজো নিবি আর বাড়ি চলে আসবি। ওদের মিডিয়া’ হয়’ কে ‘নয়’ করে ছাড়ে। ওদের বিশ্বাস নেই! ওরা সব পারে। তোর শুঁড়ই হয়তো কেটে নেবে।
আর কোন ব্রিজের তলায় খবর্দার নয়। গণেশ শুঁড় দিয়ে মাকে আদর করে মর্ত্যলোকের দিকে পা বাড়ালে।
আড়ালে নন্দীভৃঙ্গী — দুগগা, দুগগা!
দুগ্গাপুজো ২০১৯ পর্ব ২
গিন্নি মা মহাদেব বাবুকে — তুমি হেলিকপ্টার বুক করে দাও। নইলে সময়ে পৌঁছোতে পারব না।
উমার এ হেন আবদারে মহাদেবের ঘিলু গরম হয়ে যায়!
মহাদেব– আরে বললেই হল নাকি? ওটা বাজেটে নেই।
উমা–নেই বললেই হল? পুজোর এতো আগে ডাক দিল না গেলে চলবে কি করে?
মহাদেব কাতর হয়ে — হ্যাঁ গো গিন্নি এসব কি হচ্ছে? পুজো ছিল চার দিন! তা বাড়তে বাড়তে এতো আগে কেন আসছে? এখনো মহালয়া হয়নি!!! ভক্তি নেই ভালবাসা নেই! কিছুই নেই! এ কেমন পুজো?
উমা রাঙ্গা ঠোটে হাসি এনে– ডিয়ার এরে কয় করপোরেট! ও তুমি বুঝবে না, সারাদিন নেশা ভাঙ করে ছাই ভস্ম মেখে তুমি কোন দিন করপোরেট হতে পারবে না তার চে এক খান হেলিকপ্টার ডাকো।
মহাদেব উদাস হয়ে– ট্যাকা নেই!
আর ধুর তোমার টাকা আমি চাইছি নাকি? এবার পুজো কমিটি এক গুচ্ছ টাকা পেয়েছে, মচ্ছব এবার খাবলা খাবলা!
কত বিশাল সব হোডিং পড়েছে,বড়ো বড়ো সব কম্পানি টাকা ঢালছে, আরে বাবা সবই টাকার খেলা! এরে কয় পকেট পুজো। তুমি ওসব বুঝবে না। তোমার তো আর পকেট নেই, পর তো বাঘছাল।
কতবার বলেছি এসব ব্যাকডেটেট ড্রেস ছাড়ো, তুমি যদি আমার একটা কথা শোন। উমার মুখে, ত্রিনয়নে আক্ষেপ ঝরে পরে!
মহাদেব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন– ওদিকে ফল স্বরূপ মর্ত্যধামের আকাশে নিন্মচাপের রেখা ফুটে ওঠে।
উমা মা হেলিকপ্টারে চেপে বসেন….. পুত্র কন্যা সহ।
ওদিকে নন্দীভৃঙ্গী তো আনন্দে আট খানা কারন এবার বোতল আরো বেশ কিছু দিন আগে উদরসাৎ হবে।
মহাদেবের পদতলে বসে পা টিপে দিতে দিতে– প্রভু বোতল বেড় করি?
মহাদেব নিস্তব্ধ হয়ে ধ্যানমগ্ন।
দীর্ঘকাল পর চোখ খুলে– না ওই চারদিনই বোতল খুলবি। জবরদস্তি তুলে নিয়ে গেলেই পুজো হয় না। তার জন্য প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়। মনে ভক্তি, ভালবাসা শ্রদ্ধা আনতে হয়…. তবেই সেটা পুজো।ম্লেচ্ছরা নিজেদের পকেট ভরতে পারে, নাম কিনতে, যশ কিনতে পারে কিন্তু ভক্তি কিনতে পারে না।ও বুকের অনেক ভিতর থেকে আসে,যার আসে তারই পুজো।
দুগ্গাপুজো ২০১৯ পর্ব ৩
মহাদেব বোতল গুলি নন্দীভৃঙ্গী কে লুকোনোর আদেশ দিলে তারা মহা উৎসাহে বোতল লুকোবার কাজে লেগে পড়ে! কিন্তু বিধিবাম, যেখানেই বোতল লুকোয় বরফ গলে জল হয়ে বোতল দৃশ্যমান হয়ে পড়লে তারা দু’ জন মহাদেবের পায়ে হুমড়ি খেয়ে ….
প্রভু পৃথিবীতে এতো পলিউশন বরফ গলে যাচ্ছে। কিছু করুন।
মহাদেব সবে গাঁজায় এক টান দিয়েছেন… এ সময় এই ঝঞ্ঝাটে বিরক্ত হন।
সব মরবে।মানুষ হল সব চেয়ে নিকৃষ্ট জীব। অমন সুন্দর গ্রহ দিলাম তার কি দশা করেছে, ছ্যাঃ।
প্রভু কিছু করুন।সুমেরু, কুমেরু সব গলে যাচ্ছে ।
আমি কি আর করব বল? মানুষ যদি নিজের ভালো নিজে না বোঝে কে বোঝাবে?
ওরা যে বলে ওরা জাগতের শ্রেষ্ঠ প্রাণী!
ওরা নিজেরাই ওসব বলে, ওরা সব আহাম্মক। না হলে রাস্তা হবার পর কেউ আবার তার টানতে রাস্তা খোঁড়ে? একটা বাচ্চাও জানে কোন কাজ টা আগে করতে হবে।
প্রভু কিছু একটা করুন…. এখন স্টক করতে না পারলে, মা মর্ত্যে যাবার পর আপনার গলা ভেজানোর জন্য আর কিছুই থাকবে না।
এইবার মাহাদেব বেশ একটু উতলা হন।চারদিন উমা বাপের ঘর গেলে ওনার ওই চারদিন পুরো বিন্দাস লাইফ। ওই চারদিন কিচ্ছু দাঁতে কাটেন না! শুধু ‘পান’ করেন! কাজেই বিপুল স্টক থাকা খুবই দরকার।
এ হেন অবস্থায় বরফ গলা খুবই বিড়ম্বনা।
তিনি মহাদেব বলে কথা, তাঁর হাতে উপায় নেই এমন হতেই পারে না।
তিনি দিব্যচক্ষু দিয়ে একটা জায়গা নির্বাচন করে নন্দীভৃঙ্গীকে বোতল লুকতে বলতে যাবেন কি,এমন সময় উমা হাজির।
উমা নন্দীভৃঙ্গীকে তিন চক্ষে দেখতে পারেন না। ওনার বদ্ধমূল বিশ্বাস তার পতিদেবতাকে উচ্ছন্নে পাঠাতে এই দু’ আপদের হাত আছে।
মহাদেবের কাছে ওদের দেখে উমা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে…..
এ্যই তোরা এখানে কি করছিস? কি কুমন্ত্রণা দিচ্ছিস?
রান্না ঘরে যা, মোচা ছাড়া তারপর ডাল বাটবি।ফাঁকিবাজ কোথাকারে।
নন্দীভৃঙ্গী পালাতে পারলে বাঁচে।
মহাদেবকে –
এখনো চান করনি? কতবার বলেছি এই সব বাঘছাল ব্যাক ডেটেড,যাও শিগগিরি চান করে বারমুডা পর।
অগত্যা মহাদেব চানে যান….আর মনে মনে একপ্রস্ত হেসে দিন গোনেন – পুজোর আর ক’ দিন বাকি।
সংসার, চার ছেলেমেয়ে নিয়ে নাজেহাল উমা। বছরে মাত্র চার দিন ছুটি। সেই আশায় শুধু মর্ত্যভূমি নয় তিনি নিজেও দিন গোনেন…..
সবচেয়ে মুখোরা লক্ষ্মী ।সংসারে অশান্তি নিত্যকার ঘটনা। সরস্বতী বলে শিক্ষা না থাকলে জীবন অচল,আর লক্ষ্মী বলে টাকা না থাকলে দিন অচল…. গনশার শুধু খাওয়া,তার ফাইফরমাশের চোটে একটা রান্নার লোক টেকে না। আর কার্তিক? তার নিত্য নতুন গার্ল ফ্রেন্ড।আজকাল ফেসবুকের কল্যাণে তার গার্ল ফ্রেন্ডের সংখ্যা ঊর্ধ্বগতি…
নন্দীভৃঙ্গীকে একদিন আটা মাখতে বলেছে তো তারা জলের বদলে হুইস্কি দিয়ে আটা মেখেছে! চা করেছে ভদকা দিয়ে! কচুরিতে গাঁজার পুর ভরেছে! সংসারের কাজ নন্দীভৃঙ্গীকে দিয়ে কিচ্ছু হয় না। শুধুই গোলমাল পাকায়।
অগত্যা উমা একাই দশভুজা।
মহাদেব অত্যন্ত মোলায়েম ভাবে উমাকে– প্রিয়ে এবারও কি তুমি তৃতীয়াতে মর্ত্যে যাবে?
উমা– প্রভু তোমার মনে হয় না এই পুজো শুধুই টাকার অপচয়?
মহাদেব চক্ষু মুদিয়া– তা কেন হবে? এক বছর পুজো না হলে কত মানুষের পেটে টান পড়বে, এই যে ‘থিম ‘পুজো –কত মানুষ এই ক’ দিন কাজ করে, প্রায় ছ’ মাসের ভাতের জোগাড় করে…. তারপর এই পুজোয় যারা পরোক্ষভাবে যুক্ত — সে ঢাকি থেকে বেলুন ওয়ালা, ফুলওয়ালা,ফুটপাথে জামাকাপড় , জুতো,গয়না, বেচা সংসারী মানুষ গুলো, আরো যে কত জন…. গুনে শেষ হবে না…. তারাও কিছু রোজগার করে! তাহলে ভেবে দেখো পুজো বন্ধ হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ কি ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়বে!
উমা মুচকি হেসে -আমি বাপের বাড়ী না গেলে! তুমিও ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়বে! তোমার একারই কি দিব্যচক্ষু আছে? আমার নেই? কোথায় কোথায় বোতল লুকিয়েছ, আমি সব জানি।
মহাদেব বাক্যহারা। দীর্ঘশ্বাস গলায় আটকে!
ধুত্তেরি!! নিকুচি এই বিবাহিত জীবনের , ছ্যাঃ !!
(সব চরিত্র কাল্পনিক)
©️শঙ্খচিল