চেনো কি তোমরা কবি কে? (বিশেষ সংখ্যা:- শ্রাবণ ধারা)

অর্পণ (শঙ্খচিল) ভট্টাচার্য্য
3.7 রেটিং
1395 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 3 , গড়ে : 3.7]

পাঠকদের পছন্দ

অনুভবে রবীন্দ্রনাথ,শুধু বাইশে শ্রাবণ কিংবা পঁচিশে বৈশাখ নয়;রোজ ভোরেতেই কিন্তু রবির উদয় হয়…তাই নিত্যদিনের গন্ডিতেও বারেবারে তিনি…শুধু অনুভবে ভাবতে হয়- 

“বাঁধলে যে সুর তারায় তারায়
অন্তবিহীন অগ্নিধারায়
আজকে আমার প্রাণে প্রাণে
বাজাও সে বারতা….”
আসুন খুঁজে পেতে চেষ্টা করি  অন্য রবীন্দ্রনাথ কে…আমাদের জীবনের আনন্দ,দুঃখ,হাসি,কান্না সবের মাঝেই অবিচ্ছেদ্য আনাগোনা যাঁর;তাঁর প্রয়ানে শুধু দুঃখ সাজে না..

★ ★ ★ চেনো কি তোমরা কবি কে? ★ ★ ★

★ ১. শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম ছিলেন কথাশিল্পী প্রমথনাথ বিশী। তো,একবার প্রমথনাথ বিশী কবিগুরুর সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আশ্রমের একটি ইঁদারার পাশদিয়ে যাচ্ছিলেন। ওখানে একটি গাবগাছ লাগানো ছিল। কবিগুরু হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, ‘জানিস, এক সময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম? আমার ধারণা ছিল,এটা অশোক গাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো দেখি, ওটা অশোক নয়, গাব গাছ।’
অতঃপর কবিগুরু প্রমথনাথের দিকে সরাসরি তাকিয়ে স্মিতহাস্যে যোগ করলেন, ‘তোকেও অশোকগাছ বলে লাগিয়েছি, বোধ করি তুইও গাবগাছ হবি।’
★ ২. একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি এক সঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। তো গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল; আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।
গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।’ উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে।কারণ, আমি বিগত ষাটবছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
★ ৩. রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন, সেটা প্রথম দফা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন।শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরূপ পাঠের আসরে যোগদান করতেন।তা, একবার আসরে যোগদান কালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন।
রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন। তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ‘শরৎ, তোমার বগলে ওটা কী পাদুকা-পুরাণ?’ এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসাহাসি হয়েছিল।
★ ৪. একবার এক দোল পূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো,পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথ কে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।
আবির দ্বারা রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন, ‘এতদিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়,দেহ রঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’
★ ৫. মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজিও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। তো, একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথ নাথ বিশীকে বললেন, ‘গুরুদেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।’ অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন,‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে…।’
‘তা চিনির গান তো মিষ্টি হবেই। কিন্তু এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন? ’প্রমথ নাথ বিস্মিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন।
উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, ‘কেন, স্বয়ং গুরুদেবই আমাকে বলে দিয়েছেন।’
★ ৬. কবিগুরুর ৫০ বছর বয়সে পদার্পণ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের একটি কক্ষে সভাl বসেছিল, যেখানে তিনি স্বকণ্ঠে গান করছিলেন।তো, তিনি গাইলেন, ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি, শুধু কাশি শুনেছি।’ কবিগুরু এটা গেয়েছিলেন আচার্য যতীন্দ্রমোহন বাগচি উক্ত কক্ষে প্রবেশের পূর্বক্ষণে,তাই বাগচি মহাশয় কক্ষেপ্রবেশ করে বিস্ময় নয়নে সকলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
‘সিঁড়িতে তোমার কাশির শব্দ শুনেই গুরুদেব তোমাকে চিনেছেন’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তখন বাগচি মহাশয়কে বুঝিয়ে দিলেন, ‘তাই তো তাঁরগানের কলিতে বাঁশির স্থলেকাশি বসিয়ে তাঁর গানটি গেয়েছেন।’
★ ৭. সাহিত্যিক ‘বনফুল’ এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতেl অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বললেন, ‘কীহে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি’, তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’
রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘না কানাই নয়,এ যে দেখছি একেবারে শানাই।’
★ ৮. একবার কালিদাস নাগ ও তাঁর স্ত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।l রবীন্দ্রনাথ মৃদু হাস্যে নাগ-দম্পতিকে প্রশ্ন করলেন, ‘শিশুনাগদের (সাপের বাচ্চাদের) কোথায় রেখে এলে?’
★ ৯. আরেকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা করে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তুতার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে কপট বিরক্তির ভাবদেখিয়ে বললেন, ‘চা-কর বটে,কিন্তু সু-কর নয়।’
★ ১০. আরও একবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছেন শান্তিনিকেতনে, কলকাতা থেকে। একদিন সেই নাতনি দুজন কবিগুরুর পা টিপছিলেন; অমনি তিনি বলে উঠলেন, ‘পাণিপীড়ন, না পা-নিপীড়ন?’প্রথমটায় তারা কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে খুবই মজা পেয়েছিলেন।
★ ১১. সুধাকান্ত রায়চৌধুরীর সাথে রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াচ্ছিলেন । হঠাৎ গুরুদেবের কাতরক্তি শুনে সুধাকান্ত বাবু তার দিকে তাকাতেই, রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন , “পা-কে চরনকমল বা পাদ-পদ্ম কেন বলে জান?” প্রশ্ন শুনে সুধাকান্ত বাবুর চোখে বিষ্ময় দেখে রবীন্দ্রনাথ পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললেন “তাই যদি না হয়,তাহলে শরীরের এত জায়গা থাকতে মোজা ভেদ করে মৌমাছিটা পায়ের একেবারে তলায় হুলটা বিঁধালো কেন !!”
★ ১২. জীবনেরশেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনের দিকে ঝুঁকে উবু হয়ে লিখতেন।একদিন তাঁকে ওভাবে উবুহয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে বলল, ‘আপনার নিশ্চয় ওভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হচ্ছে।বাজারে এখন এ রকম অনেক চেয়ার আছে যেগুলোতে আপনি হেলান দিয়ে বেশ আয়েশের সঙ্গে লিখতে পারেন। ওরকম একটা আনিয়ে নিলেইতো পারেন।’ লোকটার দিকে খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, ‘তা তো পারি। তবেকি জানো, এখন উপুড়হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়! পাত্রের জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়।

©️শঙ্খচিল

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল