বছরের শেষে ও নতুন বছরের শুরুতে কলেজের 1st Semester পরীক্ষার তোড়জোর করতে হয়েছে, ছুটতে হয়েছে কলেজ। Credit based Choice System বা CBCS এর কল্যাণে এ হল পরীক্ষার আর এক আর্যাবর্তে পরীক্ষার অকালবোধন শুরু হল। তবে এর মধ্যে ও কি বর্তমান অতীত কে ভোলার কোনো কথা নেই, তাই এবছর আর চিত্রকলা বিভাগের কাজ করা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু যে প্রাচীন ব্রিটিশ মানবী ভারতসম্রাজ্ঞীর স্মরণভিটায় যাওয়ার কথা হয়েছিল সেই জায়গার কথা হালের bff-গণ, ছোটো-বড় পরিবার, girlfriend-boyfriend প্রকৃতিপ্রেমী, সৌন্দর্যবিলাসী, কবি, artist এবং আমার খুব প্রিয় ছাত্রীরা,যদিও ওদের অভিযোগ ছিল, ভোলেনি, ভোলেও না কেউ, তা সে যতই অত্যাধুনিক বাঙালি হোক না কেন! বাঙালির শীত-অবসরের তীর্থ- ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’ এর। ১৯২১ সালে কাজ শেষ হয় এই museumএর। ব্রিটিশ রাজের শেষকাল ঘনিয়ে এসেছে।দেশজুড়ে প্রবল বিপ্লবের ঢেউ। সেই ইতিহাসের ঐতিহাসিক কাহিনীকার আমি নই। আমরা আজ সময়কে আরো কিছু বছর পিছিয়ে নেব ১৯৪৪এ, ব্রিটিশদের তৈরী এক সংস্থানের কথায়- ভারতীয় প্রত্নতত্ব সর্বেক্ষন আর্থাৎ Archaeological Survey of India(ASI).
সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে সেসময়ে অখন্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম পাঞ্জাবে, বর্তমানে পাকিস্তানের সাহিওয়াল প্রদেশ, হরপ্পার এক অতিপ্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষের খননকার্য। ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে যা স্বরূপ পাওয়া গেল তা নিচের ছবির মতো।
নগরের গঠনের যে বৈশিষ্ট্য গুলো দেখা যাচ্ছে- ১.নগরের চারদিকে প্রাচীর বা উচু দেওয়াল রয়েছে, ২.একপাশে Citadel বা দূর্গ, ৩.শস্য ভান্ডার, ৪.প্রধান রাজপথ ও তার সমান্তরাল রাস্তা, ৫.রাস্তার পাশে জনসাধারণের বাড়ি।
নগরের মধ্যেই ৩৮টি কঙ্কাল যেমন পাওয়া যায়, তেমনই তীর-তরোয়াল, কুঠার-কুড়ুল, মৃৎপাত্র, গয়নাগাটি ও বস্ত্রাদির সন্ধান মেলে।
প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষন দক্ষিণ আফ্রিকার যুদ্ধ ভূমি থেকে নিয়ে আসে মর্টিমার হুইলারকে। বিশ্বযুদ্ধের সেনানায়ক হরপ্পার মাটিতে পা দিয়েই দেখলেন যুদ্ধের পটভূমি। বৈদেশিক যাযাবর গোষ্ঠীর আক্রমণ। তিনি ধারণা দিলেন মধ্য-প্রাচ্য থেকে আর্যদের আগমন ও নৃশংস যাযাবরের ভবিষ্যতের পাঠান-মোঘলদের ঢঙে শহর লুট ও ধ্বংস যজ্ঞ, পরবর্তীতে ভারতীয় অনার্যদের সাথে incorporation. তাদের এই ঘটনায় অস্ত্র ও ঘোড়ার ব্যবহারে পারদর্শীতার ধারণার প্রমাণ হিসেবে ক্ষতচিহ্নযুক্ত ৩৮টি কঙ্কাল,যা উপছে পড়া লাশ বিশষনে বর্ণনা করেন, এবং সেই তীর-তরোয়াল অস্ত্র ইত্যাদির প্রমাণ পেশ করেন। বিপক্ষে নগরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে ১৯meters বেধবিশিষ্ট দূর্গ ও উচু পাঁচিলের কথা খাঁড়া করেন। হুইলার খ্রীস্ট পূর্ব ১৫০০ সাল হরপ্পায় আর্যদের আগমনের এবং উন্নত নগর সভ্যতার ঐতিহাসিক সময়কাল স্থির করেন। ওনার আরও পরে ঐতিহাসিক কোসাম্বি মহেঞ্জদাড়োতে একইভাবে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নগরের যাযাবর গোষ্ঠীর incorporated ইতিহাসের বিবরণ দেন। এই কথা আমাদের জানা সেই ক্লাস ফাইভ-সিস্ক থেকে। এই theory গুলো ভারত ও অন্য কিছু দেশেরও স্কুলে পড়ানো হয়।
এ ব্যাপারে কিছু প্রত্নতত্বের ব্যবহারিকের উদাহরণ দিই- হুইলার বা কোসাম্বির সময়ে geological dating ও scanning photography প্রচলন ছিল না। আধুনিক techniques ও technology ব্যবহার করে জানা যায় ওনাদের সময়কাল বর্ণনা সঠিক নয় আর কঙ্কালের ক্ষতচিহ্ন মৃত্যুকালিন নয় কিংবা fatal injury নয়; বা অস্ত্রগুলো শুধুমাত্র যুদ্ধের সামগ্ৰী নয়, সেগুলো চাষাবাদ ও শিকারের কাজে ও ব্যবহার হত। এই খুঁজে পাওয়া কঙ্কালগুলো মনে করা হয় ছোটো গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফলাফল মাত্র। সেই সময়ে যা ছিল মাত্রাতিরিক্ত। যদি আর্যরা সভ্যতার উন্নয়ন করে থাকে তাহলে বলতে হয়, হরপ্পা সভ্যতার সবথেকে উন্নতির সময়কাল খ্রীস্ট পূর্ব ২৬০০-১৯০০ সালের সময়ে। যা হুইলারের সময়রেখার অনেক আগে। সুতরাং ভারতের উত্তর পশ্চিম দিকে আগত আর্যদের তৎকালীন উপমহাদেশে সবরকম উপায়ে ও বিষয়ে অন্তর্ভূক্তি যা পরে সার্বিক প্রভাব ফেললো কীভাবে??? বা প্রভাবটি কী? কতটাই বাস্তবিক?
প্রথম পর্বে লিখেছিলাম ভাষাগোষ্ঠীর সম্বন্ধীয় আলোচনায় আর্য জনজাতির বিন্যাস। সেই ভাষার সূত্র ধরেই বলি বিশ্বের প্রথম লিখিত বই হল ঋগ্ বেদ। ঋগ্ বেদের সংস্কৃত ভাষা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। হুইলার বৈদিক দেবতা ইন্দ্রর উপস্থাপনা করেন তার হরপ্পা সম্পর্কিত মতামতে। হরপ্পায় নৃশংসতার প্রসঙ্গে ইন্দ্রের রোষানলের কথা বলেন।বিভিন্ন দিক থেকে বললে,বেদ যে আর্যজাতির সৃষ্ট- এই ধারণা খুবই জনপ্রিয় ও প্রচলিত। ধ্বংস, নৃশংস যুদ্ধ ও বেদের ব্যাপারে আর্যদের আরেক ভক্ত কথায় আসা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগমন যে ব্যক্তির হাত ধরে পোল্যান্ড চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য, তার নাৎসি বাহিনীর চিহ্ন ‘স্বস্তিকা’। মর্টিমার হুইলারের থেকে একটু এগিয়ে যেতে হবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের দায়িত্ব চেপেছে পরাজিত জার্মানির উপর। নতুন যুগের নতুন সূর্যের উদয় হওয়ার আদর্শ নিয়ে দেশবাসীর সামনে ‘Sense of Superiority’ এর জাতীয় কর্মসূচি রাখলেন- যা ছিল নাৎসি ভাবধারার কাঠামো।
নাৎসি অফিসার আলফ্রেড রোসেনবার্গ মনে করতেন নর্ডিক জাতি ই আর্য জনজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ইউরোপ তথা অধিকাংশ জনজাতির থেকে নিজেদের আলাদা, নাহ সর্বোচ্চ প্রমাণ করতে মনুষ্য প্রজাতির ককেশীয় শ্রেণীর নর্ডিক জাতির বৈশিষ্ট্যাবলীকে (সুঠাম দেহ, চওড়া কাঁধ, উন্নত নাক, ফর্সা রং) আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেন। আর্য জনজাতির ভেতর এই শ্রেণিবিভাগই পরে ‘master race’ theory জন্ম দেয়।
ঊনবিংশ শতকে United states এর দক্ষিণ ভাগে ক্রীতদাস প্রথার ব্যপক প্রচলন ছিল। আফ্রিকান ও তার বংশোদ্ভূত মানুষদের নিজেদের থেকে আলাদা করতে master কথার বাস্তবিক ও আক্ষরিক অর্থে প্রয়োগ হয়। আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের থেকে master নিজেদের থেকে আলাদা রাখতে এই সিস্টেম। আমাদের উপমহাদেশের এহেন অভিজ্ঞতা আছে। সেভাবেই ভারতের মধ্যে এপ্রকার বিভিন্নতাই হল তার বিবিধতা। যেমন আমাদের দেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভাগের সাংস্কৃতিক রীতির আলাদা নিয়ম ও ভাষা বিভাগ চোখে পরার মতো, আমার আগের issue তে এই নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আমরা সংমিশ্রন খোঁজার চেষ্টা করছি আর্য জনজাতির বা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সাথে দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর বা দক্ষিণ ভারতীয় জাতির। এমতে সুপ্রজননবিদ্যা বা Genetics কী তথ্য দেয় দেখা যাক। প্রাচীন উত্তর ভারতীয় জনগণ, Ancestral North Indian population (ANI) ও দক্ষিণ ভারতীয় জনগণ, Ancestral South Indian population (ASI) – population genetics এর গবেষণায় এই দুভাগে ভাগ করা হয় ভারতের জনসংখ্যাকে। তথাকথিত ধারণা আর্যদের উত্তরের জনসংখ্যায় মিশে আছে এবং দক্ষিণ ভারতীয় জনসংখ্যা এর থেকে আলাদা বলে মনে করে ও আর্যদের ভারতে আগমনের সময় খ্রীস্ট পূর্ব ২২০০ সাল নাগাদ ধরা হয়। সুতরাং ঐ সময়কালকে জনজাতির সংমিশ্রনের সময়ও ধরা যেতে পারে। কিন্তু population geneticist গবেষণায় উঠে এসেছে অন্য সময়কালের ধারণা। যে সময়কাল আরো আগের প্রায় খ্রিস্ট পূর্ব ৪২০০ এরো আগে। ভারতের জনজাতির মিশ্রন ঘটে গেছে বহু আগেই। এই অনুসন্ধানের আরো প্রাপ্তি হল আমাদের পিতৃপুরুষের ইতিহাসের একটি অধ্যায়- উত্তর ভারতীয় জনজাতির সঙ্গে অন্য ভারতীয় জনজাতি ও ইন্দো ইউরোপীয় জনজাতির ৩৯%- ৭১% মিল। এই মিল উচ্চ বর্ণ এবং ইউরোপীয় জনসংখ্যার সঙ্গে আরো বেশি। এরপর আমার মতো আপনাদের আর একটা প্রশ্ন থেকে যায় কি? প্রশ্ন একটা নয় বরং দুটো। এক. উপমহাদেশের প্রতি অংশে, অঞ্চলে যে বিবিধতা লক্ষ্য করা যায় সেজন্য ভারতকে কি সত্যিই দুটো ভাগে ভাগ করা যায়? বা সেটা কতটা যুক্তি সঙ্গত? দুই. ভারতীয় উপমহাদেশের আলোচিত আর্য-বৈচিত্র্যই এল কোথা থেকে? উকখন এর জন্ম ও কীভাবে?
উপরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজব। কিন্তু তার আগে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১৩সালে আন্দামান ভ্রমণের। বেড়ানোর তৃতীয় দিনে চলেছি বারাটাঙের উদ্দেশ্যে কিংবা বলা যায় জাড়োয়া দেখা র জন্যে, বারাটাঙের জঙ্গল এখনো মনে পড়ে। দ্বীপের মধ্যে চিরহরিৎ অরণ্য আজও আমাকে মুগ্ধ করে। সেইসঙ্গে রাস্তায় যাওয়ার সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কথায় একটা উপলদ্ধি হয় একালেও জনমানসে আদিবাসীদের আদিম রূপে ভাবা হয় এবং এটা একটা জ্ঞানের কথা বটে। এই কথা ধরেই আমাদের পরবর্তী এবং অন্তিম তদন্তে যাই। আমাদের শরীর অসংখ্য কোষ নিয়ে তৈরি। এই প্রত্যেকটি কোষের মস্তিষ্ক হল নিউক্লিয়াস নামক একটি অঙ্গাণু। নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে ক্রোমোজোম, যার মধ্যে এক বিশলাকৃতি অণু আছে সেটি হল- “Deoxyribonucleic Acid বা DNA-বংশগতির ধারক ও বাহক”। এর উপর যে যে স্থান কোষের তথা আমাদের দেহের বিভিন্ন কাজগুলো ঘটায় তারা হল জিন(gene)-“DNA-র কার্যগত একক”। আমরা যেরকম সেজেগুজে আমাদের ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে চেনাতে চাই, আমাদের এই DNA ও তার অংশকে আলাদা করে চেনাতে চাই এবং DNA-র ভেতর এই জায়গাগুলোর গুরুত্ব রয়েছে। এগুলো DNA র বিশেষ অংশ, সুপ্রজননবিদ্যায় যাকে বলে DNA Markers, এই marker বা চিহ্ন বংশ পরাম্পরায় থেকে যায়। আমরা তাই বুঝতে পারি মাটি খুঁড়ে পাওয়া কঙ্কাল কত বছর আগের কোন দেশের বাসিন্দা, এমনকি dinosaur না পিপঁড়ে কে আগে এসেছে বা কত আগে এসেছে। এই চিহ্ন মিলিয়ে দেখতে পারি আরশোলারা আমাদের ঠাকুরদা না গোরিলা। আমরা যদিও হিসাব আরো সহজে চাইছি। অত দূরের নয় কাছের হিসেব চাইছি। এই আমাদের প্রায় ৪০০০০ বছর আগের ঠাকুমা-ঠাকুরদাদের। এখনো মাথা গুলিয়ে গেলে আরো সহজে বলি কোনো বংশ দুলালের মধ্যে বাবার মত লেখক হবে না মার মত নাক পেলো এই কথাও বলা আছে সেই gene এ। সেরকম আমাদের হাজার হাজার বছর আগের ঠাকুরদাদাকে এভাবে খুঁজব ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে জিনের চিহ্নেও আর্য জাতির অবদান স্থির করা যাবে, ভারতে আগমনের তথা জাতির সংমিশ্রনের সত্যতা যাচাই করা যাবে।
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল,পূর্বপুরুষের গুণাবলী পরবর্তী পুরুষে সঞ্চারিত হয়। সন্তান মা-বাবার গুণের অংশ পায়। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। রোমিলা থাপারের মতামতকে সাক্ষী করে বিজ্ঞানীরা ভারতের উত্তর পশ্চিম দিকে পূর্ব ও মধ্য প্রাচ্যের আর্যজাতির আগমন এবং সূদূর প্রাচীন সেই সময়ে ভারতের আদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জিনের স্থানান্তর ও মিশ্রন ঘটিয়েছে, যার চিহ্ন বা mark এখনো আমরা বয়ে চলেছি। সেই পূর্ব ও মধ্য প্রাচ্যের ও ইউরোপের মানুষের সাথে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার মানুষের ধারা মিশে থাকবে। এই ধরনের গবেষণা থেকে উঠে আসে ভারতের নিম্ন বর্ণের ও আদিবাসীরা অন্যান্য উচ্চ বর্ণের লোকজনের সাথে ৮০%মিল আছে। এই মিল অনেক হাজার বছরের পুরোনো, নতুন ঘটনা নয়। তাই ভারতবর্ষের DNA তথাপি বংশগতির ধারাকে ভাষাতত্ত্ব অথবা বর্ণভেদ অনুসারে ভাগ করা হয় না। ভারতবর্ষের এই জিনসমষ্টি অতিপ্রাচীন কালে ইউরোপের জিনসমষ্টির অংশ অর্থাৎ এক পূর্ব পুরুষ।এখন এ উপায়ে আমরা বাঙালির দিক দিয়ে সহজ করে দেখি আমাদের কাছাকাছি কারা আছে- আমাদের সবচেয়ে কাছে হল শ্রীলঙ্কার অধিবাসি তারপর গুজরাতি ও তারও পরে চেন্চু আদিবাসী। ভারতের উত্তর পশ্চিম দিকে তাকালে দেখতে পাচ্ছি পাজ্ঞাবীরা পূর্ব ইউরোপীয়দের কাছের লোক, আবার মধ্য প্রাচ্য, জর্জিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপের জনজাতিরা রাজস্থানি আদিবাসী লাম্বাদিদের কাছাকাছি। পাকিস্তানের লোকজন ও লাম্বাদিদের মতো একইভাবে সম্পর্কিত। সুতরাং এর থেকে একটা কথা বোঝা যায় ভারতের জনজাতির ও ভাষাগোষ্ঠীর হিসেব আলাদা। সাম্প্রতিকে ৬৮১টি ব্রাহ্মন গোষ্ঠী ও ২১২৮ টি আদিবাসী গোষ্ঠীর DNA পর্যবেক্ষণে পাওয়া গেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য- ভারতীয় জনগণকে সেঅর্থে আলাদা কযা যায়না, তারা সবাই একই বংশের। গুরুত্বপূর্ণ অমিল কম ও আমরা সবাই এক পরিবারের তা সে যে বর্ণের হোক আর যে ভাষায় কথা বলুক, যাই পোষাক পরুক। প্রায় ৪০০০০ বছর বয়সের এই সংকর জাতির নাম ভারতীয়। প্লিস্টোসিনর বরফ যুগে যাদের সূচনা। অর্থাৎ তথাকথিত আর্য আগমনের (প্রায় খ্রীস্ট পূর্ব ২২০০) অনেক হাজার বছর আগের সময়রেখার প্রমাণ পাওয়া গেল।ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যের জনজাতির সঙ্গে আগেই জিন স্থানান্তর ও বৈশিষ্টৈর মিশ্রন সম্ভব হয়েছে।আর্য আগমনের কথিত সময়ের আগে সেই মিলন বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি নির্বিশেষে ভারতভর্ষের জনজাতিগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো জনজাতির অন্য জাতির সর্বস্তরের প্রভাব বিস্তারের জন্য অনেক সময় পেল, যা ক্ষুদ্র এক যাযাবর গোষ্ঠীর ইতিহাসের অনেক প্রাচীন এবং প্রভাবশালী।
এরপর ও অনুসন্ধিষ্ণু মন থেমে থাকে না। প্রশ্নের শেষ হয়না। আর্য জাতির আগমনের প্রচলিত ইতিহাসের ভিতটাই কমজোর করে দেয় আধুনিক প্রত্নতত্ব techniques, বর্তমান জীববিজ্ঞান technology সেই ভিতকে আরো নাড়িয়ে দেয়। প্রজননবিদ্যায় প্রমাণিত হয় ভারতীয় জনগোষ্ঠী বিশ্বের তিনটি প্রধান জাতির, মঙ্গোলীয়-ককেশীয়-নিগ্ৰোয়ডিও, সংকর, যাকে আলাদা করে চেনার সুনির্দিষ্ট উপায় নেই।সেই ভারতীয় উপমহাদেশের এরূপ বৈচিত্র্যের কারণ কী? কিভাবে বিবিধ আমদের দেশ? উল্টোটাও তো হতে পারে। আমরাই সেই চিহ্ন উপহার দিয়েছি বাকি বিশ্বকে। বিশ্বকে যোগ করেছি আমাদের সাথে। মধ্য প্রাচ্যের আর্য নামক এক কাল্পনিক যাযাবর শ্রেণীই শুধু নয়,নিকটবর্তী ইতিহাসে চোখ রাখি মাত্র ছয়শো-সাতশো বছরেরই কথা, পাঠান-মোঘলরাও এদেশে এসেছে। এদেশের মধ্যে থেকে গেছে। আলাদা করে বোঝার যো নেই। হাজার হাজার বছর আগেও বরফ যুগে ও যুগের পরবর্তীতে যে ভৌগোলিক পরিবর্তন হয়েছিল এবং মানুষের ও পরিবর্তন এসেছিল সেই সাথে। তার চিহ্ন আজও আমাদের মধ্যে বর্তমান। ভাষাগোষ্ঠী ও জনজাতি নিয়ে আগের সংখ্যায় আলোচনা শুরু করেছিলাম। ভাষার বিভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা এক জিনসমষ্টির অন্তর্ভুক্ত। ঔপনিবেশিক দ্বারা নির্ধারিত তত্ত্বের ভিত্তিতে নিজেদের এক কাল্পনিক জনজাতির বিজয়গর্বি ইতিহাসের অংশ মনে করে থাকার সময় ভারত পেরিয়ে এসেছে। আদিবাসী ও আঞ্চলিক জনজাতি যে ভারতের প্রাচীনতার শেষ ধ্বংসাবশেষ সে সময়ও শেষ অনেক আগেই হয়েছে। ভারতীয় উপনিবেশ থেকে ভারতবর্ষ হয়েছে ৭১ বছর হল। বিভেদ বর্ণ জাতি ও তার কাল্পনিক ইতিহাস থেকে মুক্ত হওয়ে নিজেদের উপর গর্বিত হওয়ার সময় আসন্ন। এই গর্ব আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ও বিবিধতার সাথে মুক্তির।
উল্লেখ:-
Boivin N. 2007. Anthropological, historical, archaeological and genetic perspectives on the origins of
caste in South Asia. In: Petraglia MD, Allchin B, editors. The evolution and history of human
populations in South Asia: inter‐disciplinary studies in archaeology, biological anthropology, linguistics
and genetics. Dordrecht: Springer. pp 341–361 Chakrabarti DK. 2008. The battle for ancient India: an essay in the sociopolitics of Indian archaeology. New Delhi: Aryan Books International. Chanda R. 1926. The Indus Valley in the Vedic period. Memoirs of the Archaeological Survey of India No. 31. Calcutta: Government of India Central Publication Branch. Chandrasekar A, Kumar S, Sreenath J, Sarkar BN, Urade BP, … Rao VR. 2009. Updating phylogeny of mitochondrial DNA macrohaplogroup M in India: dispersal of modern human in South Asian corridor. PLOS ONE 4(10): e7447. Danino M. 2009. A Dravido‐Harappan connection? The issue of methodology. In: Sridhar TS, Gandhi NM, editors. Indus civilization and Tamil language. Chennai: Department of Archaeology, Government of Tamil Nadu. pp 70–81 Indian Genome Variation Consortium. 2008. Genetic landscape of the people of India: A canvas for disease gene exploration. Journal of Genetics 87(1): 3–20 Walimbe SR. 2007. Population movements in the Indian subcontinent during the protohistoric period: physical anthropological assessment.In: Petraglia MD, Allchin B, editors. The evolution and history of human populations in South Asia: inter‐disciplinary studies in archaeology, biological anthropology, linguistics and genetics. Dordrecht: Springer. pp 297–319. Walimbe SR. 2014. Human skeletal biology. In: Chakrabarti DK, Lal M, editors. History of ancient India. Volume 2: Protohistoric foundations. New Delhi: Aryan Books International. Underhill PA. 2008. Interpreting patterns of Y chromosome diversity: pitfalls and promise. In: OsadaT, Uesugi A, editors. Linguistics, archaeology and the human past. Occasional Paper 5. pp 103–109. Underhill PA, Myres NM, Rootsi S, Metspalu M, Zhivotovsky LA, … Kivisild T. 2010. Separating the post‐glacial coancestry of European and Asian Y chromosomes within haplogroup R1a. European Journal of Human Genetics 18(4): 479–484. Bamshad M, Kivisild T, Watkins WS, Dixon ME, Ricker CE, … Jorde LB. 2001. Genetic evidence on
the origins of Indian caste populations. Genome Research 11(6): 994–1004