ক্লাস সিক্স। স্কুল থেকে ফিরছি। মাঝি মোড়ে আসতেই হঠাৎ দেখি পুজো হচ্ছে। দূর্গা পুজো!!! এসময়ে দূর্গা পুজো ?! পুজো আসতে তো ঢের দেরি। এতো সবে april মাস। এখন পুজো???! ভুলে গেছে! নাকি আর অপেক্ষা করতে পারছে নাহ্?! শিশু মনে হাজার প্রশ্ন গিজ্গিজ করতে লাগল। তবে খুব তাড়াতাড়ি মনে ও পরল গল্পটা।
আমার জীবনে প্রথম গল্পের বই রামায়ণ ও মহাভারত। তাই ছোটো থেকেই ‘অকালবোধন’ শব্দের সাথে পরিচয় ছিল, এখন সরাসরি দেখা হয়ে গেল। অকালবোধনের কাহিনী আমাদের সবার পরিচিত। রাম-রাবনের যুদ্ধের প্রাক্বালে রাম দূর্গা পুজো করেছিলেন রাবন বধের উদ্দেশ্যে। আমাদের প্রিয় বাংলা র শ্রেষ্ঠ উৎসব সেই দূর্গা পুজোই হল সেই অকালবোধন। আর্যাবর্তের এমনই মহাকাব্যিক আঙ্গিক আর্যাবর্তের আর্যসন্তান বীরদের গাথা। আমার এই লেখার বিষয়বস্তু ও তাদের নিয়ে।
আর্যাবর্ত অর্থাৎ Abode of the Aryans অথবা আর্যদের আবাসস্থল। মনুস্মৃতিতে বলা হয় দক্ষিন-পশ্চিমে বিন্ধ্ব্য পর্বত ধরে আরব মহাসাগরের তীরভূমি থেকে পূর্বে বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে উত্তরে হিমালয় পর্যন্ত হল আর্যদের বাসভূমি। সুতরাং আর্যাবর্ত হল দাক্ষিনাত্য বাদে বাকি উত্তরে ভারতীয় ভূখন্ড। লোকসংস্কৃতিক ইতিহাস বলে আর্যরা এশিয়া মাইনর তথা মধ্য প্রাচ্যের যাযাবর গোষ্ঠী। আন্তর্জাতিক সীমানা ভৌগলিক সংবিধান অনুযায়ী এশিয়া মাইনর অঞ্চল বর্তমানে ইরান দেশের অন্তর্ভুক্ত এবং আভ্স্থা লিপি অনুসারে তারাই হলেন “এরিয়া” বা “অ্যরিয়া”। অতীতে ইরান ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ ও পারস্য সম্রাটগন নিজেদের আর্য-দেবতা রূপে প্রকাশিত করেছেন। প্রাচীন পারস্য ভাষায় এরিয়া কথার অর্থ – ইরানের বাসিন্দা। মধ্য প্রাচ্যের ধূসর প্রান্তরে যাযাবর গোষ্ঠীর ই প্রাধান্য,ভারতে তাদের আগমন খ্রীষ্ট পূর্ব ১৫০০ বছর আগে, হিন্দুকূশ পর্বত পেরিয়ে ভারতের উর্বর স্নিগ্ধ ভূমিতে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে ভাষাতত্ব অনুযায়ী ইন্দো ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী হল আর্য। যার শিকড় সুবিস্তৃত সমগ্র ইন্দো-ইউরোপীয় জনজাতির রক্তে।
সংস্কৃতে আর্য শব্দের প্রধান অর্থ হল সমাজে সম্নানীয় ব্যক্তি। সমাজের উন্নত শ্রেণি অথবা বলা যেতে পারে elite class যারা আর্য ধর্মের পালন করে চলে। এই ধারণা সূত্র ধরে আমরা সহজেই মহাকাব্য কাহিনীর বর্ণনা অনুসন্ধান পাই। এরকম elite class -র উদাহরণ ভবিষ্যতে নাৎসি supremacy মধ্যে দেখতে পাই।
প্রাচীন ভারতীয় ভাষায় আর্য শব্দের আগমন ইরানীয় ভাষার মাধ্যমে, যা পরে সঃস্কৃতে অন্তর্গত হয় এবং ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীভুক্ত হয়।
উন্নত নাসিকাও গ্ৰীবা, ফর্সা রঙ, সুঠাম লম্বা দেহ হল আর্যদের দেহবৈশিষ্ট্য। গোবনিউ master class theory যা Hitler জার্মানি কে আর্যদের দেশ হিসাবে উপস্থাপিত করেছিলেন জগতের সামনে। দেহসৈষ্টবের বিচারে Hitler নিজেদের nordic aryan রূপে তুলে ধরেন ,কিন্তু দেহগঠন ও বাহ্যিক আকারের মাপকাঠিতে কি একটি জনজাতি কে আর্য বলা যায়!? যারা শুধু একটি মাত্র দেশের অংশ!
(ক্রমশ)
অপেক্ষায় রইলাম