আমাজন- পৃথিবীর ফুসফুস

নন্দিতা ব্যানার্জী
3.4 রেটিং
3757 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 5 , গড়ে : 3.4]

পাঠকদের পছন্দ

‘ধন্য ধান্যে পুষ্পে ভরা
আমাদের এই বসুন্ধরা-’

সত্যিই আমাদের পৃথিবীর মতো এত সুন্দর গ্রহ বোধয় এই মহাবিশ্বে নেই |আর পৃথিবীতে এই সোন্দর্যতা দান করেছে সবুজ বনানী আর পুষ্পরাজি | আমরা মানুষেরা তা উপলদ্ধি করলেও আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বারবার আঘাত হেনেছি এই বৃক্ষরাজির উপর- যারা বাসযোগ্য করে তুলেছে আমাদের ধরণীকে | আজ আমাদের সুজলা সুফলা ধরিত্রী পরিবেশ দূষণের জেরে ব্যাধিগ্রস্ত | আমাদের পৃথিবীকে যারা প্রতিনিয়ত শুদ্ধ করে চলেছে সেই সব বনভূমির মধ্যে অন্যতম আমাজন নদী অববাহিকার চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি যা ‘আমাজনিয়া’ বা আমাজনের জঙ্গল নামে পরিচিত| নিরক্ষরেখার উভয়পাশে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে আমাজন নদীর অধিকাংশ স্থান জুড়েই রয়েছে এই বৃষ্টি অরণ্য , যার আয়তন প্রায় ৫৫,০০০০০ বর্গ কিঃমিঃ | পৃথিবীর মোট জীবন্ত প্রজাতির ১০ শতাংশের বসবাস এইখানে| আমাজন ২.৫ লক্ষ পতঙ্গ ও ৪ লক্ষ উদ্ভিদ প্রজাতির আবাস্থল | এখানকার বিপুল উদ্ভিদরাজি প্রতিনিয়ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে চলেছে – যা পৃথিবীতে বিশুদ্ধ বায়ুর যোগান নিশ্চিত করছে| পৃথিবীর প্রায় ২০% অক্সিজেনের যোগান দেয় এই বৃষ্টি  অরণ্য | তাই আমরা আমাজন বৃষ্টি অরণ্যকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ শিরোপা দিয়ে ভূষিত করেছি ।

আমাজন নদীর অববাহিকা জুড়ে এই বৃহৎ পাতার বৃষ্টি অরণ্য সৃষ্টির কারণই হলো সারাবছর প্রচুর উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত| নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে এখানকার  বার্ষিক উষ্ণতা ২৫°– ২৭° সেঃ, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ২৫০ সেঃমিঃ – ৩০০ সেঃমিঃ | এত উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতই এখানে এত ঘন চিরহরিৎ বনভূমি গড়ে তুলেছে | এই অরণ্য প্রথিবীর বৃহত্তম ও নিবিড়তম চিরহরিৎ অরণ্য যা সেলভা  নামেও পরিচিত | এই অরণ্যের পাতাগুলি বড় ও শক্ত এবং গাছগুলি এত সন্নিবিষ্ট ভাবে জন্মায় যে অরণ্যের তলদেশে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না | তাই এই অরণ্যের তলদেশ স্যাঁতসেঁতে | এই অরণ্যের চার  রকম বৃক্ষের সমাবেশ দেখা যায় | ১ . তলদেশে প্রচুর ফার্ন, ছত্রাক, শৈবাল, আগাছা, ২. মধ্বর্তী স্তরে ১২ফুট উচ্চতার গাছ| 3. চাঁদোয়া স্তরে বৃহৎ পাতা গাছ ৪. সর্বোচ্চ স্তরে ২০০ ফুট উচ্চতার শক্ত কাঠের গাছ দেখা যায় | এছাড়াও এখানে বিষাক্ত এনাকোন্ডা সাপ, ট্যারেনটুলা মাকড়শা, মাছি, মাংসাশী পিঁপড়ে, রক্তচোষা বাদুড়, জোঁক প্রভৃতি প্রাণীর উপস্থিতি চোখে পড়ে |

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীব বৈচিত্র্যের সমাহার যেখানে সেই আমাজনের দুর্গম , অপ্রবেশ্য জঙ্গল ও মানুষের লোলুপ দৃষ্টির কবলে | বিংশ শতাব্দীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের বসতি বিস্তার, চারণভূমি, কৃষিজমির প্রসার ও সর্বোপরি শক্ত কাঠের চাহিদা আমাজন বনভূমির বিস্তারকে সংকুচিত করে তুলেছে | আমাজন বনভূমির এই হ্রাস শুধু দক্ষিণ আমেরিকা নয় সমস্ত পৃথিবীর নিরীখে  লাল সতর্কতা জারি করে | আমাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির লোভের কারণে আজ ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আক্রান্ত |

এখন প্রশ্ন হলো প্রকৃতির দান, পৃথিবীর আশীর্বাদ স্বরূপ এই অরণ্যকে রক্ষা করার স্বদিচ্ছা কি আমাদের আছে? ১৯৯০ সাল থেকে ব্রাজিল সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে এসেছে মানুষের আগ্রাসন থেকে আমাজন বৃষ্টি অরণ্যকে বাঁচাতে, তবুও আমাজনের গাছপালার বিলুপ্তি চলছেই, তবে বিলুপ্তির হরে সরকারি ও আন্তর্জাতিক চেষ্টায় কিছুটা লাগাম পরানো গেছে| পৃথিবীর পরিমণ্ডলকে সুন্দর রাখতে আইনের সাথে সাথে মানুষের শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটানো খুবই প্রয়োজন | শরীরের ফুসফুস’ই যদি বিকল হয়ে পড়ে তবে অস্তিত্ব সংকট হয়ে পড়ে |তাই আজ আমাদের সম্মিলিত  ভাবে এগিয়ে আসতে হবে পৃথিবীর ফুসফুসকে সুস্থ করতে যাতে আগামী প্রজন্ম শুদ্ধ বায়ুতে শ্বাস নিতে পারে ।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল