আমরা যারা কলকাতাবাসী তাদের কাছে চিড়িয়াখানা বলতে আলিপুর চিরিয়াখানার কথাই প্রথমে মনে আসে।কিন্তু অনেকের কাছেই বিষয়টি অজানা যে, ভারতের প্রথম চিড়িয়াখানা যা ব্যারাকপুরে অবস্থিত ছিল। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত এই ব্যারাকপুর জায়গাটি বিভিন্ন দিক থেকেই ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে আজও গুরুত্বপূর্ণ।
লর্ড ওয়েলেসলী ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ব্যারাকপুর চিড়িয়াখানা তৈরি করেছিলেন। এটি বর্তমানে ব্যারাকপুর লাট ভবনের পাশে অবস্থিত ছিল। যদিও ইংরেজরা ভারতবর্ষের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু তাদের এহেন ভাবনার তারিফ না করে পারলাম না। ওয়েলেসলী লন্ডনের কোর্ট অফ ডিরেক্টরের অনুমতি ব্যাতীতই এই চিড়িয়াখানা স্বচ্ছায় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সেই সময় এখানে নিলসা হরিণ, সাদা হরিণ, হায়েনা, বাঘ, গণ্ডার, ভালুক, কাশ্মীরি ছাগল, কচ্ছপ এরকম নানারকম পশুপাখি ছিল। এক্ষেত্রে একটু ছোট করে বলি যে, এখানে থাকত অদ্বৈত নামে এক কচ্ছপ।
অদ্বৈত ছিল বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। একে আনা হয়েছিল ভারত মহাসাগরের আলডেভরা দ্বীপ থেকে। আলডেভরা জায়েন্ট টরটয়েজ নামেই এরা আমাদের কাছে পরিচিত । ওদের বিজ্ঞানসম্মত নাম জিওচেইস জাইগ্যান্টিক। কেন এর কথা আলোচনা করা হল, কারন এই অদ্বৈতই ছিল একমাত্র প্রাণী যে কিনা ১৮৭৫ সালে আলিপুরে চিড়িয়াখানা স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সে এখানে ছিল। এরপর ২২শে মার্চ, ২০০৬-এ প্রায় ২৫০ বছর বেঁচে থাকার পর অদ্বৈত আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
ঔপনিবেশিক সরকারের হাত ধরে প্রথম উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের এধরনের চিন্তাকে কুর্নিশ না করে পারলাম না। কিন্তু একটা কথা ভেবে দুঃখ হচ্ছে, যে ব্যারাকপুর এত ইতিহাসে ঘেরা, যেখানে প্রথম চিড়িয়াখানা তৈরি হয়েছিল, যেখানে প্রথম সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক স্থানগুলো আরও বেশী করে চিহ্নিত করে তুলতে পারলে সারা ভারতবাসীর কাছে তথা সারা বিশ্বের কাছে আমরা যারা কলকাতাবাসী, আরও গর্বিত বোধ করতাম। এই চিড়িয়াখানার স্থানটি ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে স্বীকৃতি পেলে ভাল হয়।