বিদ্যাসাগর এবং তাঁর দর্শন ও ধর্মীয় চিন্তা

অর্পণ (শঙ্খচিল) ভট্টাচার্য্য
5 রেটিং
5653 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 5 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

বাঙালীর হৃদয়ে বিদ্যাসাগর নামটি আজও অনন্য ও বিস্ময়কর ! চাল নেই, চুলো নেই, ধন কৌলিন্য নেই, মাসিক ছ-টাকা বেতনের সওদাগরী অফিসের এক কেরাণীর ছেলে প্রধানত সংস্কৃত শিক্ষার পুঁজি ও ইংরেজীর ব্যবহারিক জ্ঞান নিয়ে সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি আন্দোলনের শীর্ষে আরোহন করলেন, হিমালয় সদৃশ উন্নত মস্তক পুরুষ হিসেবে বাঙালী জাতির প্রকৃত জনকের মর্যাদা পেলেন এ এক বিরলতম ঘটনা। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের ঘরের ছেলে শাস্ত্রীয় শিক্ষাকে সম্বল করে কি ভাবে শ্রেষ্ঠ মানবতাপ্রেমী, নিরীশ্বরবাদী ও যুক্তিবাদী সমাজ সংস্কারক হয়ে উঠলেন তা এখনও গবেষণার অপেক্ষায়। স্থিতাবস্থা ও অন্ধকারপন্থীদের নির্মম নিন্দা-মন্দ সত্বেও জীবিতকালেই বিদ্যাসাগরের ছবি বিক্রী হত।

এখন প্রশ্ন হলো বিদ্যাসাগর কি নাস্তিক ছিলেন?
প্রশ্নটি বার বার কখনো সমাজ সচেতনতামূলক আলোচনা,কিম্বা জাতীয়তাবাদী আলোচনা তে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রসঙ্গ এলেই ফিরে ফিরে আসে। এই কারণে ফিরে আসে যে, আশৈশব আমরা জেনেছি ঈশ্বরচন্দ্র নামক বাহ্যত ইস্পাত কঠিন পুরুষটি আসলে দয়া ও বিদ্যার সাগর। কিন্তু বহু ঘাঁটাঘাঁটির কারোর কারোর মোর একটি প্রায় না জানা বিষয় পাওয়া গেছে, তা হল ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ঘোর যুক্তিবাদী এবং নাস্তিক। ভাববাদী দর্শনের কুৎসীত বিষ, ধর্মীয় উন্মাদনা, যেভাবে আমাদের চৌকাঠ থেকে খিড়কিতে উঁকি মারছে তখন মনে হয় একবার অন্তত দু’শোতম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের মুহূর্তে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাস্তিক ও যৌক্তিক দিকটা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগরের বিজ্ঞান মনস্কতার অকাট্য প্রমাণ, ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিস্পৃহ মনোভাব। শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও ভাবেই বিদ্যাসাগরের মুখ থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে কোনও স্থির বিশ্বাস বা ভক্তির একটি কথাও আদায় করতে পারেন নি। যতদূর জানা যায় তিনি কোনও ধর্মযাজকের কাছে ঘেঁষেণ নি, মন্দির যান নি, পুজো আর্চা জপতপও করতেন না। কিন্তু তিনি মানবতায় উদ্বুদ্ধ দয়ার সাগর। এত সব সত্বও স্বয়ং বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে বলেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের পরেই তাঁর গুরু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পাঠ্য বিষয় দর্শন সম্পর্কে তাঁর উক্তি – কতগুলো কারণে সংস্কৃত কলেজে বেদান্ত ও সাংখ্য আমাদের পড়াতেই হয় —–কিন্তু সাংখ্য ও বেদান্ত যে ভ্রান্ত সে সম্পর্কে এখন আর বিশেষ মতভেদ নেই ‘।

শুধু তাই নয় আচার্য কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের লেখা থেকে জানা যায় – ঐবিদ্যাসাগর নাস্তিক ছিলেন, একথা বোধ হয় তোমরা জানো না, যাঁহারা জানিতেন তাহারা কিন্তু সে বিষয় লইয়া তাঁহার সঙ্গে বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হইতেন না —–। অত্যন্ত সখেদে বিদ্যাসাগর কালজয়ী কয়েকটি মন্তব্য করেছিলেন, তা নিচে বিধৃত হল:
‘দেশের লোক কোনও শাস্ত্র মানিয়া চলে না, লোকাচার ইহাদের ধর্মও’ – আজীবন এই ছিল বিদ্যাসাগরের ধারণা, তাই তিনি লোকাচার স্বরূপ কুসংস্কার থেকে ধর্মকে মুক্ত করতে গিয়ে সংশয়বাদী হয়ে ওঠেন। ‘ দুঃখের বিষয় আমি এ বিষয়ে ব্যালেনটাইনের সঙ্গে একমত নই।—–শাস্ত্রে যার বীজ আছে এমন কোনও বৈজ্ঞানিক সত্যের কথা শুনলে সেই সত্য সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও অনুসন্ধিৎসা জাগা দূরে থাক, তার ফল হয় বিপরীত। —-শাস্ত্রীয় কুসংস্কার আরও বাড়তে থাকে, তারা মনে করেন যেন শেষ পর্যন্ত শাস্ত্রেরই জয় হয়েছে। বিজ্ঞানের জয় হয় নি।

উত্তরকালের Raionalist বা যুক্তিবাদীদের জন্য তিনি এক মহামন্ত্র দিয়ে গিয়েছিলেন যা যুগে যুগে যুক্তির আকাশে ধ্রুবতারর মতো জ্বলজ্বল করবে। উক্তিটি ছিল, ‘ধর্ম যে কি তাহা মানুষের জ্ঞানের অতীত এবং বর্তমান অবস্থায় ইহা জানিবার কোনও প্রয়োজন নাই।’

এবার আসা যাক বিদ্যাসাগরের ধর্মাভাবনা সম্পর্কে তাঁর জীবনীকাররা কি বলেছেন সেই আলোচনায়। চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় একস্থানে উল্লেখ করেছেন, ‘তাঁহার নিত্যজীবনের আচার-ব্যবহার, ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন অবস্থাবান হিন্দুর অনুরূপ ছিল না, অপরদিকে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের পরিচয়ও কখনো পাওয়া যায় নাই’। পাশাপাশি আরও এক জীবনীকার বিহারীলাল সরকার অভিমান ভরে লিখেছেন, ‘দুঃখের বিষয় অধ্যাপকের বংশে জন্ম লইয়া ব্রাহ্ম্ণ পণ্ডিতের সন্তান হইয়া, হৃদয়ে অসাধারণ দয়া, পরদুঃখ কাতরতা প্রবৃত্তি পোষণ করিয়া হিন্দু শাস্ত্রের প্রতি, হিন্দু ধর্মের প্রতি তিনি আন্তরিক দৃষ্টি রাখিলেন না কেন? ইহাতে হিন্দুর অনিষ্ট হইয়াছে। হিন্দু ধর্মে আঘাত লাগিয়াছে। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বংশধর বিদ্যাসগর উপনয়নের পর অভ্যাস করিয়াও ব্রাহ্মণের জীবনসর্বস্ব গায়ত্রী পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন’।

২২শে জানুয়ারি, ১৮৫১ বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল হন। শিক্ষাকে তিনি জাত-ধর্মের আবদ্ধে বেঁধে রাখতে চাননি। সেই জন্যেই ১৮৫১ সালের ২৮শে মার্চ ভারত সরকারের শিক্ষাসচিবকে লেখা এক চিঠিতে তিনি হিন্দু কলেজে অব্রাহ্মণ হিন্দুদের পাঠাধিকার দানের সুপারিশ করেন। পরে সুবর্ণবণিক সমাজভুক্ত ছাত্রদের পাঠাধিকার নিয়ে তিনি সরব হন। সংস্কৃত কলেজের সংশ্রব ত্যাগ করার পরেও বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষাসংস্কারের কাজে হাত দেন। শিশুশিক্ষার কাজে হাত দিয়ে তিনি গ্রাম বাংলায় ১০১টি পাঠশালা তৈরির কাজে হাত দেন। অনুভব করেছিলেন শিশুদের পাঠোপযোগী পুস্তকের অভাব। রচিত হলো কালক্রমে, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, ঋজুপাঠ; ব্যাকরণ কৌমুদী, বর্ণপরিচয়, কথামালা, চরিতাবলী, মহাভারত, সীতার বনবাস, আখ্যান মঞ্জরী, শব্দমঞ্জরী প্রভৃতি পুস্তক।‘‘সর্বশুভঙ্করী পত্রিকা’’-র প্রথম সংখ্যায় ‘বাল্যবিবাহের দোষ’ নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। প্রবন্ধটির লেখক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর এই প্রথার কুফল নিয়ে বিভিন্ন সভা সমিতিতে আলোচনায় তাঁর মতামত প্রকাশ করেন। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের লেখাটি দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখাটি তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক প্রথম লেখা, যার ঐতিহাসিক মূল্য অনস্বীকার্য। এবং পরবর্তীকালে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বারবার শাস্ত্রের দোহাই দিলেও, বাল্যবিবাহ যে ‘অতিশয় নির্দয় ও নৃশংসের কর্ম’ তা প্রমাণে বিদ্যাসাগরকে কোনো শাস্ত্রের দোহাই দিতে হয়নি। এই প্রবন্ধে বিদ্যাসাগর মশাই দেখিয়েছিলেন যে, অল্পবয়সের মেয়েরা মা হলে তাঁদের কী কী দুর্গতি হতে পারে, যা কিনা আজকের দিনেও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুমোদন করে।বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজের পাঠক্রমে কলা-র ছাত্রদের গণিত শিক্ষার প্রস্তাব করেছিলেন। নিজে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের জীবনী নিয়ে খুব বেশি লিখেছিলেন বলে জানা নেই, কিন্তু শাসকের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে বিজ্ঞান তার জয়যাত্রা অব্যাহত রাখবেই এই প্রত্যয় তাঁর মনে ছিল বলেই, তিনি কোপারনিকাসের জীবনী বাংলায় রচনা করেন। বিজ্ঞানের বিষয়ে রচনার জন্য দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলেন আরেক প্রতিভাবান বাংলা সাহিত্যের লেখক অক্ষয়কুমার দত্ত-র সঙ্গে।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁকে দে‍‌খেছেন, ‘‘প্রাচীন ঋষির প্রতিভা আর প্রজ্ঞা, একজন ইংরেজসুলভ কর্মশক্তি এবং বাঙালি মায়ের মতো হৃদয়।’’ বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কারমুক্ত ও গতানুগতিকতাবর্জিত প্রকৃতই আধুনিক দৃষ্টির মানুষ। লোকহিত ও মানবসেবাই ছিল তাঁর জীবনের ধর্ম। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের মুখে শোনা একটি গল্প থেকে জানা যায়, একবার এক ভদ্রলোক বিদ্যাসাগরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘আপনি ভগবান মানেন?’’ উত্তরে বিদ্যাসাগর মশাই বলেছিলেন, ‘‘উনি যখন আমাকে নিয়ে খোঁচাখুঁচি করছেন না, তখন আমারই বা কি দরকার ওনাকে নিয়ে খোঁচাখুঁচি করা।’’ তাঁর ধর্ম সম্বন্ধীয় মতাদর্শ সম্বন্ধে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী বলেছেন, ‘‘বিদ্যাসাগর সেই শাক্যমুনি-প্রদর্শিত বৈরাগ্য মার্গের ও কর্ম মার্গের পথিক ছিলেন। তিনি যে মার্গে চলিতেন, তাহা আর্যশাস্ত্রসম্মত, মানবশাস্ত্রসম্মত সনাতন ধর্মমার্গ।’’ তিনি এ বিষয়ে আরও বলেছেন, ‘‘হে নাস্তিক, আস্তিকের গুরু।’’ বিদ্যাসাগর ছিলেন পরম আস্তিক্যবাদী, কারণ তিনি মানববাদী। মানুষের চেয়ে অধিকতর অস্তিত্ববান আর কে? প্রকৃতপক্ষে কী উক্ত ব্যাক্তিরা তাই ছিলেন ? ঐতিহাসিক অমলেশ এিপাঠি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ঐতিহ্যবাদী আধুনিকতাবাদী বলেছেন ।
একচুয়ালি তিনি অবশ্যই মুক্তমনা ছিলেন কিন্তু তিনি কখনই ঈশ্বরবিদ্বেষি ছিলেন না , ছিলেন না উগ্র কিংবা জ্ঞানপাপীদের মত ভ্রষ্ট ।

তার ধর্মবিশ্বাস, আধ্যাত্মিক চেতনা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিল । সমাজের অসঙ্গতিকে তুলে ধরেছিলেন সঠিক যুক্তির আলোকে প্রবঞ্চনার আলোকে নয় । শুধু তুলে ধরে ক্ষান্ত হননি প্র্যাকটিক্যালি সমাজের দৈন দশার পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন ।

শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে বলেছিলেন-“তোমার কর্ম সাত্ত্বিক কর্ম | সত্ত্বগুণ থেকে দয়া হয় | দয়ার জন্য যে কর্ম করা যায়‚ সে রাজসিক কর্ম বটে‚ কিন্তু এ রজোগুণ সত্ত্বের রজোগুণ‚ এতে দোষ নেই | শুকদেবাদি লোকশিক্ষার জন্যে দয়া রেখেছিলেন | ঈশ্বর-বিষয় শিক্ষা দেবার জন্যে | তুমি বিদ্যাদান‚ অন্নদান করছ‚ এও ভাল | নিষ্কাম করতে পারলেই এতে ভগবান লাভ হয় | কেউ কেউ করে নামের জন্যে‚ কেউ করে পুণ্যের জন্যে | তাদের কর্ম নিষ্কাম নয় | আর সিদ্ধ তো তুমি আছোই |”

বিদ্যাসাগর শ্রীরামকৃষ্ণের শেষ কথাটার অর্থ ঠিক ঠাওর করতে পারলেন না | জিজ্ঞেস করলেন‚ আমি সিদ্ধ ! কেমন করে ?
শ্রীরামকৃষ্ণ ভারি মিঠে করে উত্তর দিলেন‚ “আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয় | তা তুমি তো খুব নরম | তোমার অত দয়া !”
বিদ্যাসাগর রসিক মানুষ | মুহূর্তে বললেন‚ “কলাইবাটা সিদ্ধ তো শক্তই হয় |”
এবার ঠাকুর কী বলবেন ?
ঠাকুর বললেন‚ “তুমি তা নও গো | ‘শুধু‘পণ্ডিতগুলো দরকচাপড়া | তুমি তো শুধু পণ্ডিত নও | তুমি বিদ্যার সমুদ্র | শুধু পণ্ডিতগুলোর না এদিক‚ না ওদিক | শকুনি খুব উঁচুতে ওঠে | কিন্তু নজর ভাগাড়ে | যারা শুধু পণ্ডিত‚ শুনতেই পন্ডিত | কিন্তু তাদের কামিনীকাঞ্চনে আসক্তি — শকুনের মতো পচামড়া খুঁজছে |
আসক্তি অবিদ্যার সংসারে | দয়া‚ ভক্তি‚ বৈরাগ্য বিদ্যার ঐশ্বর্য |”

আসলেই সমস্যা টা কোথায় জানেন?
দেখবেন পরীক্ষার হলে যখন বিদ্যাসাগর আর গরুর রচনা আসতো তখন সবাই গরুর রচনাই লিখতো,
সমস্যা টা শিক্ষার!!হ্যাঁ,ভয় টা আমি এই  অশিক্ষিত দের পাচ্ছি,কারণ তারা যিনি শিক্ষার আলোকে সবাই কে আলোকিত করেছিলেন তাঁরই মাথা ভাঙ্গা হলো,অবশ্য আমাদের এখানেই এটাই স্বাভাবিক,যিনি ই একটু শিক্ষিত মতবাদ পেশ করেন তাঁকেই সরিয়ে দেওয়া হয়..এইটাই চিন্তার কারণ..

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল