কাম অন মাহি, দিখা দো

পার্থ চক্রবর্তী
5 রেটিং
1028 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

সৌরভ তখন লড়ে যাচ্ছেন। বিরুদ্ধের বোলারের সাথে যতটা লড়ছেন,তার চেয়ে বেশি লড়ছেন বয়সের সঙ্গে, নির্বাচকদের সাথে, সমালোচকদের সাথে। লড়ছে তাঁর ব্যাট। ক্রমাগত অন সাইডের বল খেলছেন তিনি, শর্ট বল খেলার চেষ্টা করছেন, এমন কিছু ক্যাচ নিচ্ছেন যা দেখে তাজ্জব ভারতবাসী। তখন দরকার ছিলো ক্যাপ্টেনের দিক একটা ভরসার হাত। একটু সহযোগিতা একটু আস্থা।

ক্যাপ্টেন তখন ধোনি। কী করলেন তিনি? সবচেয়ে বড়ো কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ক্রমাগত বলতে লাগলেন সৌরভ টিমের পক্ষে ফিট নন। বাদ দাও, বাদ দাও। ফলস্বরূপ আরো ক্রিকেট মজুত থাকতেও খতম হলো তাঁর ক্যারিয়ার। সম্মান দেওয়া দূরের কথা রীতিমতো অসম্মানিত করে বিদায় দেওয়া হলো আধুনিক টিম ইন্ডিয়ার জনক কে। সেই থেকে আমি আমি ধোনি বিরোধী। রীতিমতো ঘৃনা করি তাঁকে। সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ১১ বিশ্বকাপের ফাইনালের ভিত গড়ে দেওয়া গম্ভীরের সাথে অন্যায় ব্যবহার, যুবরাজ সিং এর সাথে অবিচার। ক্রমাগত জ্বলেছি ধোনির ঔদ্ধতে। প্রতিবার খেলা দেখতে বসেছি ধোনির ব্যর্থতা কামনা করে। চেয়েছি ফেল করুক লোকটা। ধাক্কা খাক ঔদ্ধত্য। বিচার পাক অপমানিত নায়করা।

কিন্তু খেলা দেখতে বসে দেখেছি কি? দেখেছি মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক ক্ষিপ্র চিতা। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ভেঙে দেওয়া স্ট্যাম্প। একটু পা তুলেছ কী বেল উড়ে গেছে পলকে। স্ট্যাম্পের পিছনে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ওঁত পেতে থাকা লোকটা স্টেপ আউট করতে ভয় পাইয়ে দিয়েছে কতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে। কখনো পেয়েছি এক উড়ন্ত বাজপাখিকে। উড়ে গিয়ে ধরছে অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ। কিপারতো নয়, এক ক্ষুধার্ত সিংহ ঘাড় মটকাতে নেমেছে দলের সাথে। শিকার করেছে ধোনি। ৩২0 ক্যাচ আর ১২৩ স্ট্যাম্পিং এর রেকর্ড নিয়ে ভারতীয় কিপারদের মধ্যে তিনি অনন্য নজির গড়েছেন।

ব্যাট করতে নেমেছেন তিনি। ভারত ৪ উইকেট খুইয়ে ফেলেছে। প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা প্যাভিলিয়নে। আস্কিং রেট ৮/৯ এ উঠেছে। বিপক্ষ বোলাররা রক্তের গন্ধ পাওয়া বাঘ। নামলেন তিনি। আমি হিংস্র বাঘের সাথে যুদ্ধ করা গ্ল্যাডিয়েটর দেখিনি। কিন্তু মহেন্দ্র সিং বাহুবলিকে দেখেছি। তীব্র ঘৃণা করতে করতেও দেখেছি এক যোদ্ধাকে। তাপ উত্তাপ টেনশন নামক অনুভূতি বলে কিছু আছেতো লোকটার? বিপক্ষ বোলাররা আগুন ঝরাচ্ছে, ফিল্ডাররা ঘিরে ধরেছে, মাথায় একশো কোটির চাপ, তার মধ্যে এতো নির্বিকার কী করে থাকে মানুষ। আর তারপর খেলেছেন অবিশ্বাস্য সব ইনিংস। ৯ বলে ৩০, ৪৮ বলে ৮০ বা ৩০ বলে ৫৬। ধোনি ধোনি আওয়াজে কাঁপছে মাঠ। তিনি যেন ধ্যানে মগ্ন।মাঝে মাঝে নাক টানছেন, ব্যাস ওইটুকুই। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা যেন তাঁর। অর্জুনের মতো টার্গেট আর জয় ছাড়া কিছুই দেখছেন না। এবং ছিনিয়ে এনেছেন সেই জয়। একবার দুবার নয়, বারবার। বুক চিতিয়ে মেরেছেন এমন সব শট আমার মতো হেটারও চোখ কচলে বারবার হাঁ করে রিপ্লে দেখেছে। আর তাতেই তিনি কখন ওই ৫ নম্বরে নেমে ৫০ এর গড়ে পেরিয়ে গেছেন ১০০০০ হাজারের গণ্ডি। গোটা টপ অর্ডারের অভয়দাতা তিনি। বলেছেন খেলে যাও ভাই, আমি আছি। MSD.

ধোনি আছে তাই আছে বাঘের মতো সাহস, লোহার মতো দৃঢ় প্রত্যয় আর বরফের মতো ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক। যার চালে বরবাদ হয়েছে কতো বিপক্ষের গেম প্ল্যান। তাঁর পাতা ফাঁদে আটকা পড়েছে কতো স্ট্র্যাটেজি। তাঁর বোলিং চেঞ্জ, ম্যাচ রিডিং তাঁর নেতৃত্ব এনে দিয়েছে কতো অসামান্য জয়। বারবার বলেছি কী কপাল লোকটার। আর লোকটা টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ODI বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টেস্টে ১ র‍্যাংক, পরপর IPL জিতে বলেছে শুধু কপালের জোরে এসব হয়না ভাই। এবিলিটি লাগে, লাগে ক্ষমতা। আর তাই আমি মাহি। ক্যাপ্টেন কুল।

ধোনিকে ঘৃণা করেছি বারবার। কিন্তু যখন পঞ্চায়েত ভোট নিতে গেলাম প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে। প্রবল ঝামেলা বাইরে। একগাদা লোক ঘরের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করছে। হাজার কাগজপত্রের গাদায় আমি বেসামাল। আমায় অবাক করে দিয়ে মনে ভেসে উঠলো একটা মুখ। যাকে ঘৃণা করেছি বারবার। সেই মুখটা পথ দেখাল। বাইরের ঝামেলা সব বাইরে। আসল লড়াই নিজের ভেতরে। মগজে, স্নায়ুতে। সেগুলো ফেল করলেই তুমি ফেল। সেগুলোকে বশে রাখতে পারলেই তুমি রাজা। যেমন পারি আমি।শুধু মুশকিল নয়, নামুংকিন হয়ে ওঠা ম্যাচগুলো ছিনিয়ে আনি। একটাই অস্ত্র আত্মবিশ্বাস। পেরেছিলাম, সেই মুখটাকে স্মরন করে সেদিন ঠাণ্ডা মাথায় কাজ উদ্ধার করে নিরাপদে ফিরেছিলাম বাড়ি। তারপর বহুবার নানা জটিল পরিস্থিতিতে ওই মুখটা পথ দেখিয়েছে। প্লেয়ার নয় জীবনযুদ্ধের ময়দানে দিশারি হয়ে উঠেছে মুখটা। তবু ভালোবাসা অন্ধ। দাদাকে ভালোবাসি, তাই আজো চাই হারুক লোকটা।

আজ সক্ষমতার নদীতে পড়েছে বয়সের পলি।মুখে পাকা দাড়ি, জোর কমছে, কমছে রিফ্লেক্স। আজ তিনি কিছুটা মন্থর। এতদিনের লুকনো ছুরি গুলো আজ ঝলসে উঠছে। তাঁর কৃতকর্মের কথা স্মরন করিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছে তাঁকে। আজ সেই সৌরভকে কি মনে পড়ছে তাঁর? অনুভব করছেন বিপক্ষ দলের চাইতেও সমালোচকদের বিরুদ্ধে লড়াই কতোটা কঠিন? নাকি স্রেফ উপেক্ষা করছেন স্বভাবজাত ভঙ্গিমায়? আর কটা দিন তারপরেই হয়তো শেষ হবে মাহি যুগ। অবসান সব সব লড়াইয়ের সব সমালোচনার। দেখা যাক সব লড়াই জেতা লোকটা নিজের সাথে লড়াইটা জিততে পারে কি না?

তাঁকে ভালোবাসতে পারো, ঘৃণাও করতে পারো, কিন্তু তাঁর অবদানকে অস্বীকার করা অসম্ভব। ভারতের ক্রিকেট ভাণ্ডারে তিনি এনে দিয়েছেন সাগর ছেঁচা সমস্ত রত্ন।কিছুই অদেয় নেই তাঁর। তাই তিনি অনন্য। ভারতীয় ক্রিকেটের মহেন্দ্র বাহুবলি। তোমার জন্মদিন আজ। এই প্রথম চাইছি তুমি জেত। আমাদের জন্য। বয়স বাড়ছে আমাদেরও। দেখিয়ে দাও। বয়সটা স্রেফ নম্বর। মানসিকতাই আসল। যেতে যেতে শিখিয়ে দিয়ে যাও জেতার মহামন্ত্র। জীবন অনেক বড়। ক্রিকেটের গণ্ডী ছাড়িয়ে জীবনের যুদ্ধে সামিল হওয়া মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকবো কয়েকটা দিন। কাম অন মাহি, দিখা দো।

চিত্র সৌজন্য : গুগল

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল