আসলে মে ডের দুটো ছবি.. একটা শ্রমিক দের স্বার্থে,নাহ্ নাহ্ অপরটি পারিশ্রমিক এর স্বার্থে ভাববেন না.. কেনো পড়তে পড়তেই বুঝবেন..
পাতার ফাঁকেফাঁকে দেখুন বিশাল একটা মোটর সাইকেলে অবহেলায় বসে আছে দুই সুপুরুষ শাহেনশা। সামনের চাকার কাছে গড়াগড়ি খাচ্ছে এক মাতাল..। আর এপাশের রাস্তা দিয়ে হনহনাচ্ছেন এক শ্রমজীবী মহিলা।খুব প্রতীকী মনে হচ্ছে কি? শাসক শোষিত ইত্যাদির সহাবস্থান এক পরজীবীর মোবাইলে ?
ব্যাপারটা তা নয়। নেমিং আর শেমিং কখনো কখনো ঠিক কিনা মনস্থির করে উঠতে পারিনি এখনো, তাই দূর থেকে তুললাম কথা কাটাকাটির পর।
যাচ্ছিলাম কিছুদিন আগে নিজের কর্মের তাগিদে,পথে সামনে সদ্য তরুনী হাঁটা দিচ্ছিলো..ছেলেদুটো হঠাৎ চনমনে হয়ে উঠলো। একজন অবাঙালী টানে জিজ্ঞেস করল আরেকজনকে,
-আজ মে ডে হে না?
-মে ডে !!
খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসল রাজপুত্রের মতো দেখতে যেটা।
-আবে ইয়ার বাংলায় এটাকে বলে মেয়ে ডে।
মাল-দিবস।
-মেয়ে ডে বলছিস কেনো তাহলে ? বল ‘মেয়ে দে’। খ্যাঁক খ্যাঁক। চিল্লাকে বোল… মেয়ে দে। দে দে দে।
সবখানে ঝামেলায় জড়াই। বাড়ির লোক বিরক্ত হয়।ভ্রু তুলে নাক কুঁচকে বলি-
-হোয়াটস দ্য হেল ইউ মিন বাই মেয়ে দিবস? নো নাথিং এবাউট ফার্স্ট মে, 1886 – হে মার্কেট এন্ড…
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বুদ্ধি আর বদমাইশি ভরা দুটো চোখ ঝিকিয়ে উঠল,
পাশ থেকে আর একজন
আঙুল তুলে আমার সামনের মেয়েটিকে দেখিয়ে তারা সরে পড়ল বাইক নিয়ে।
শিক্ষিত বদমাইশ ! পয়সাওয়ালাও।
তবে এদের সিলেবাসে ভাঙর, ইউ এ পি এ নেই। ভাবাদিঘির বিস্তারে এরা পেচ্ছাপ করে। যশোর রোডের গাছের গায়েও তাই।এমনকি ঠান্ডা বিয়ার নিয়ে বসবার সময় খেয়ালও রাখবে না ঐ শীততাপনিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টের বাবা ম্যাকডোনাল্ড, কোকো, ফ্রাইডেজ বা চিলি’স এর বারোটি আউটলেট বন্ধ হয়ে গেছে খোদ ম্যারিকায় গত দুমাসে আর কর্মীদের কর্মসংস্থান না করেই। আনন্দবাজার বলে কিছু এদের জগতে নেই, তাতে আবার সাতশ ছাঁটাই !
অথচ তাতে মানেসর অথবা কোয়েম্বাটরে মে দিবসের আর একটা ছবি উঠে আসা আটকায় না। কোয়েম্বাটরে বিখ্যাত প্রাইকল প্রাইভেট লিমিটেডে শ্রমিকরা খাটেন রোজ বারো ঘন্টা। এক সেকেন্ড কম নয়। কন্ট্রাকচুয়াল লেবারদের কেউ কেউ কুড়ি বছর ধরে আছেন চাকরি পাকা হয়নি। একজোট হয়ে কোর্টে গেছেন সবাই। প্রমাণ পেশ করেছেন গত পাঁচ বছরের ডিয়ারনেস এলাউন্সের কোন উল্লেখ নেই স্যালারি স্লিপে। জেনে দিদিকেও মনে হয়েছে লক্ষ্মী মেয়ে। এক বছরে মাইনে বাড়ে একশ, বড়জোর দুশো টাকা। অথচ কম্পানির ভাঁড়ার ওপচানো লাভের পয়সায়।
এতো ক্ষোভের আগুনে বিস্ফোরণ হলে তবে না মানেসর হয়। চার বছর ধরে জেলের ঘানি টানলেন যারা, তারপর সাজা শুনলেন ১৪৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩১ জন, ১৩ জন যাবজ্জীবন কারণ এরাই ছিলেন ইউনিয়নের পদাধিকারী — এদের মে দিবসের ছবি কিন্তু অন্যরকম। এই মামলা চলার সময়২৪০০ স্থায়ী অস্থায়ী কর্মীকে তাড়ানো হল। লেবার আইনকে কলা দেখিয়ে নেওয়া হল নতুন চুক্তি শ্রমিক যাদের চুক্তির মেয়াদ মাত্র ছ মাস। তারপর আবার নতুন মুখ। হায়ার এন্ড ফায়ারের ভারতীয় সংস্করণ।
শ্রমিকের আন্দোলনকে দুর্বল করার আয়োজনে কর্পোরেটের কোন খামতি নেই। কলেজ থেকে কারখানা সর্বত্র একই ছক। পার্মানেন্ট, ক্যাজুয়াল,কনট্রাক্ট, এন্সিলারি ইউনিট ওয়ার্কার্স। শ্রম আইনে কারচুপির ফলে অবাধ অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ, ট্রেড ইউনিয়ন মুক্ত কর্মক্ষেত্র, অনেক বেশি কাজের সময়।
কিন্তু লড়াই থামেনি। মারুতির পর প্রাইকল। সমর্থনে ভারতের শ্রমজীবীর গরিষ্ঠ অংশ। চাঁদার টাকায় লড়াই আর প্রতিবাদের মিছিল।
ফেরার সময় দেখলাম মেয়ে খোঁজা ছেলেগুলো নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে।ভাবতে ভাবতে এলাম মে ডে নিয়ে যারা নতুন টিটকিরি খুঁজছেন বা হা হুতাশে নুয়ে পড়ছেন বা কিসসু হবে না জেনে বসে আছেন অথবা এমনিই দাঁতের ফাঁকে ঝুলে থাকা পাঁঠার মাংসের টুকর খুঁচিয়ে বার করে আবার সেটা চিবিয়ে পার করে দিলেন ছুটির দুপুর তারা ছবি দুটো পাশাপাশি রেখে দেখেছেন তো ?
প্রশ্ন উঠে আসেনি — মারুতি সুজুকির নিজস্ব শো রুম NEXA র আলো ঠিকরানো বাহারি কাচে বড় করে লেখা সেই প্রশ্ন, What makes an exceptional experience extraordinary ?
©️শঙ্খচিল