ভোটের ডিউটির পাঁচালী

প্রসূন রঞ্জন দাসগুপ্ত
4.3 রেটিং
1380 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 3 , গড়ে : 4.3]

পাঠকদের পছন্দ


শোন শোন গুণীজন শোন দিয়া মন
ভোটের ডিউটি কি রকম তাহা করিব বর্ণন
হাই স্কুলের শিক্ষক অনির্বাণ দাস
পায়নি আগে থেকে এই বিপদের পূর্বাভাস
হঠাৎ স্কুলে একদিন চৈত্রের প্রাতে
প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটির চিঠি এল তার হাতে
শুনে সকল সহকর্মীর পূর্ব অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট অর্ডারে
অনির্বাণ ভাবল সে বুঝি যাচ্ছে বর্ডারে
হিন্দু স্কুলে প্রথম ট্রেনিংয়ে গিয়ে দেখে মহা গন্ডগোল
শয়ে শয়ে লোক করছে অতি হট্টগোল


একেকজনের একেক রকম আছিল কোয়ারি হাবিজাবি
কোথায় হবে অ্যাটেনডেন্স, কোথায় জমা হবে EDC-12B
সব সামলে অনির্বাণ ট্রেনিংয়ের ঘরে গেল
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ট্রেনিং সমাপন হল
এবারের ভোটে নতুন সংযোজন হলো VVPAD
অতি সুখি যন্ত্র এটি, যখন তখন বিগড়াতে পারে এর প্যাট
এর জন্য নতুন সংযোজন, ধারা 49MA
যদি এপ্লাই হয় তবে ভোট যাবে থেমে
ট্রেনিং করে অনির্বাণ খানিকটা বুঝতে পারল
প্রিসাইডিং অফিসারের হ্যান্ড বুক নিয়ে বাড়িতে ফিরলো
বাড়ি এসে গোটা বই পড়ে সে ফেলল
সকল কাজের বহর দেখে রাতের ঘুম ছুটলো
এরপরে hands on training এতে গিয়ে
BU-CU-VVPAD এর সংযোগ তারা দিলেন দেখিয়ে
এরপর দেখানো হচ্ছিল সিলিং
অনির্বাণের হচ্ছিল অত্যন্ত ভয়ের ফিলিং
ছিল ADDRESS TAG, SPECIAL TAG, STRIP SEAL, GREEN PAPER SEAL,PINK PAPER SEAL জোড়া জোড়া
মনে হচ্ছিল যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া
তৃতীয় ট্রেনিংয়ে পুরো টিমের সাথে হল পরিচয়
মনে হলো সকলেরই মনে রয়েছে ভয়
P-1 ডে তে সকলে RC তে মিলিত হল
আধঘন্টা লাইন দিয়ে মেটেরিয়াল নিল
ছিল তাতে ফর্ম ও জিনিস হাজার রকম
ঘন্টাখানেক ধরে মিলিয়ে তারা প্রায় হল জখম
এরপর করতে হলো পুলিশ,গাড়ি ও ক্যামেরা ট্যাগিং
এর থেকে বুঝি ভালো ছিল কলেজের রাগিং
অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠে দেখে ড্রাইভার বেপাত্তা
আরো দুটি টিম আসার পরে পাওয়া গেল তার পাত্তা
ভোট কেন্দ্র ছিল এক জুনিয়র হাই স্কুল
অবস্থা দেখে সকলে চোখে দেখে সরষে ফুল
ঘর বাথরুম অতি নোংরা মেঝে ভাঙাচোরা
পাখার গতি – শব্দ শুনলে মনে হয় এক অতি বৃদ্ধ ঘোড়া
নিজেরাই পরিষ্কার করে কাজে তারা বসলো
কাজের চাপে খাওয়া-দাওয়া মাথায় উঠল
হাজার রকম কাগজ আর হাজার রকম খাম
সবই অতি মূল্যবান, শুধু নেই তাদের জীবনের দাম
পার্টি এজেন্টরা এসে দেখা করে গেল
“কোন চিন্তা নেই দাদা” অভয় বাণী শোনাল
কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল গোটা চার
সত্যিই ভয় লাগে দেখে তাদের আকার
চিড়ে মুড়ি দই দিয়েই তারা ডিনার সাড়লো
ভাঙা বেঞ্চ-মেঝে তেই কিছুক্ষনের জন্য টানটান হল
বিনিদ্র রজনী কাটল অনির্বানের অন্য কারণে
কালকে ইন্ডিয়ান টয়লেটে যাবে কেমনে,
কমোড ছাড়া এই নোংরা বাথরুমে সে কি করে যাবে
সকলের সামনে বুঝি কাপড়ে-চোপড়ে হবে
ভোর সাড়ে চারটেয় উঠে বাথরুমে এ সে গেল
সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তৈরি হয় সকলে রুমে বসল
ছটার মধ্যে চলে এল সকল এজেন্ট
Form 10 এ তারা নিয়ে এলো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট
মক পোল শেষ করে ভোট পর্ব শুরু হল


অনির্বাণ কাজের পাহাড়ে ডুবে গেল
ফর্ম তো কম নয় সংখ্যায় অনেক বেশি
কিন্তু আসলে কাজে লাগে P.O Diary,PS05 ও 17C
এখনো যন্ত্রণার হয়নি অবশেষ
ঘন্টায় ঘন্টায় পাঠাতে হচ্ছে SMS
গরমে ঘামে সারা শরীর করছে কিটকিট
অক্লান্ত ভাবে সই করিয়ে যেতে হচ্ছে Agent Movement ও Visit Sheet
এর মাঝে দুপুরে চাপ কম থাকায় সামান্য খাওয়া জুটলো
এত কিছুর মাঝে সেটা অমৃত মনে হলো
6 টায় ভোট পর্ব শেষে শুরু হলো সিল
অনির্বাণ সই করে চলে সকল ফর্ম ও বিল
এজেন্টরা হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিল
আবার গাড়ির জন্য অপেক্ষা শুরু হলো
7.30 এ এসে পৌছালো RC তে
দেখে আগে দুটো পার্টি অলরেডি দাড়িয়ে আছে লাইনে তে
চূড়ান্ত অনভিজ্ঞ দুজন RC স্টাফ
Harras করে ভুলিয়ে দিচ্ছে প্রিসাইডিং এর নেম অফ বাপ
9.20 তে জমা পর্ব সাঙ্গ হল
রিলিজ নিয়ে ও বাকিদের রিলিজ দিয়ে অনির্বাণ বাইরে এলো
যথারীতি বাহিরে বাড়ি ফেরার নেই কোন গাড়ি
দৌড়ে অনির্বাণ মেট্রো স্টেশনে দিল পারি
যথারীতি লাস্ট মেট্রো গেছে ছেড়ে
আবার অনির্বাণ পরল আতান্তরে
শেষমেষ সারচার্জ দিয়ে বুক করলো উবের
ঠাণ্ডা হাওয়ায় বসে নিজেকে মনে হচ্ছিল রাজা কুবের
রাত্রি 11 টায় ঘরে ফিরে
দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে দরজা ধরে
মা বললেন কিরে খোকা কোন গণ্ডগোল হয়নি তো
অনির্বাণ বলল বয়স হয়েছে, এত চিন্তা করোনা তো
না ঘুমিয়ে তো তোমার চোখ হয়ে আছে রক্তবর্ণ
আরে মোটের উপর ভোটের ডিউটি ছিল শান্তিপূর্ণ

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল