স্মৃতির সাতকাহন

কৃষ্ণা নন্দী
5 রেটিং
1207 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 1 , গড়ে : 5]

পাঠকদের পছন্দ

স্কুলের দু মাসের ছুটি। অলস সময় কাটছে। তা লেখার কথা মনে হতেই ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি মনের মণিকোঠায় ভেসে উঠলো। তোমাদের হয়তো মনে হবে এ নিছক ছেলেমানুষি। তা যাই হোক তখন ক্লাস সেভেনে কি এইটে পড়ি। পাড়ার বেশ কয়েকজন সমবয়স্কারা করা মিলে একটা ছোট্ট দল গঠন করেছি। নিজেরাই নাম দিয়েছি পঞ্চপান্ডব। যদিও দলে আমরা 8 জন। তখন পঞ্চপান্ডব সিরিজ মনে বেশ সাড়া ফেলেছিল, তারই ফলশ্রুতি। যাই হোক রোজ বিকেলে নিজেরা কোন না কোন খেলা যেমন লুকোচুরি, পিদ্দুপ বা এমনই কিছু খেলা বেশ হই হই করে খেলতাম। এই যুগের ছেলেমেয়েরা হয়ত এসব খেলার নামই জানে না। তারপর খেলা শেষে পঞ্চপান্ডব সিরিজের দৌলতে নিজেরা নিজেরাই অ্যাডভেঞ্চার এর পরিকল্পনা করতাম। বেশিরভাগ দিনই তা পরিকল্পনাই় থেকে যেত।
তবে যে দিনের কথা বলছি সেদিন কিন্তু আমরা মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি আজ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবোই। আমাদের দলের একজন, রানা। এসে বলল, জানিস এখানে একটা বাড়িতে না ভূত আছে। আর সে বয়সে ভূতের কথা শুনলেই বেশ গা শিউরে উঠত। ভূতকে চোখে দেখার একটা অদ্ভুত ইচ্ছে মনের মধ্যে জেগে উঠত। সেদিন বিকেলে আর কোন খেলা নয় ঠিক হলো রানার মুখে আজ ভূতের বাড়ির গল্প শোনা হবে। রানা বেশ চোখ বড় বড় করে গল্প জুড়লো। ও বাড়িতে নাকি পর পর দুজন গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে। কারণ অবশ্য জানা নেই। এরপর থেকে ও বাড়ির লোকেরা অন্যত্র বসবাস করে। দুবার ভাড়াটে এসেছিল। তারাও নাকি বেশি দিন থাকতে পারেনি। সেখানেও অবশ্য কারন অজানা। যাই হোক গল্প শুনতে শুনতে বিকেল গড়িয়ে গেল। সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরে ধীরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। সকলকেই ঘরে গিয়ে পড়তে বসতে হবে। এমন সময় আমাদের দলের পান্ডা ‘ভালো’, হাবভাব অনেকটা টেনিদার মতোই, বলে উঠলো চল বাড়ি ফেরার আগে ওই বাড়িতে আজ একবার যাই। দেখি ভূত বেটার দেখা পাই কিনা।

বাড়িটা আমাদের পাড়া থেকে খুব একটা দূরে নয। এ গলি ও গলি দিয়ে গেলে 5-7 মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায়। শোনার সাথে সাথে সকলেই লাফিয়ে উঠলাম চল চল যাবো। রানার কিন্তু কেমন একটা কিন্তু কিন্তু ভাব। সকলের কাছে ওর মনের ভাব খুব একটা পাত্তা পেল না। যাব যখন ঠিক হয়েছে তবে আজই যাব। আমাদের মধ্যে ঝুমার আবার তিথি নক্ষত্রের খুব ভালো ধারণা ছিল। ও বলল আজ অমাবস্যা। ওনারা তো আবার এসব দিনেই বেশি প্রকট হন। সন্ধ্যার অন্ধকার তখন বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে। বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে বকা খাওয়া হয়। আবার ভূত দেখার শিহরন। দুটো মিলে একটা বিশেষ অনুভূতি নিয়ে সকলে হাতে হাত ধরে এগিয়ে চললাম। আমাদের ছেলেবেলা দিনগুলোতেও জীবনের এত ব্যস্ততা ছিল না। গাড়ি ঘোড়ার এত বেশি হর্ন ছিল না। নিস্তব্ধতা অনুভব করা যেত। যাইহোক বাড়িটার সামনে এসে পড়ে সকলের চোখেই কৌতূহল। বাড়িটার নামটাও বেশ শিউরে ওঠার মতোই – ছায়ানীড়। সত্যি বাড়িটাতে কোন মানুষ জন নেই। মনুষ্য বসতির অভাবে মাকড়সার বসতির বাড়বাড়ন্ত চারদিকে বেশ চোখে পড়ছে। বাড়িটার চারপাশে সুপরি আর আম গাছে অন্ধকারকে যেন আরো নিবিড় করে তুলেছে। বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা 8 জন ফিসফিস করে বলছি কিরে ভেতরে ঢুকবি? এমন সময় পারো সতর্ক করল আজ কিন্তু অমাবস্যা। হঠাৎ রাজা সামনে এগিয়ে গিয়ে পাঁচিলে চড়ে বসলো। এমন সময় আম গাছের গোড়া থেকে বেশ একটা খসখস শব্দ শোনা গেল। আমি ওর হাত ধরে নিচে নামিয়ে আনলাম আর কানে কানে বললাম শুনছিস না কেমন একটা শব্দ হচ্ছে, ভিতরে যাস না। এমন সময় উল্টোদিকের বাড়ি থেকে এক বুড়ি ঠাকুমা বেরিয়ে এল। হাতে লাঠি পরনে সাদা থান। সাদা চুল গুলো ছোট ছোট করে ছাটা। আমার খুড়তুতো বোন সেও আমাদের দলের সদস্য, আমার থেকে কিছুদিনের ছোট, বলে উঠলো – চল না ওনাকে জিজ্ঞাসা করি, সত্যি এ বাড়িতে ভূত আছে কিনা। সকলেই বলে উঠলাম চল চল। ঠাকুমা তাদের ভাঙা বাড়ির রকে বসে আমাদের কেই দেখছিল। কাছে যেতেই জিজ্ঞাসা করল অন্ধকারে তোমরা এখানে কী করছো? আর পাঁচিলে উঠছ যে? জানো না এ বাড়িতে লোকজন থাকে না ? অন্ধকারে বিষাক্ত পোকামাকড় বেরোবে। যাও বাড়ি যাও। আমরা সকলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা ঠাকুমা এ বাড়িতে কি ভূত আছে? হঠাৎ ঠাকুমার কি জানি কেন ওনার হাতে লাঠিটা নিয়ে তাড়া করলেন। বলতে লাগলেন বেরো, বেরো বলছি। আমরাও তো কম যাই না। আমরাও সকলে মিলে চিৎকার করে বলতে বলতে ছুট লাগালাম, তাহলে তুমিই ভূত, তুমিই ভূত।

ছেলেবেলার সেই স্মৃতি মনকে নাড়া দেয় বটে কিন্তু আজ যখন রাস্তা দিয়ে যাই তখন ছেলেবেলার সাথে কোন মিল খুজে পাই না। আমাদের সেই ভূতের বাড়ি ‘ছায়ানীড়’ এখন মস্ত বড় অ্যাপার্টমেন্ট। কত লোকের বাস। কত আলো, কত ব্যস্ততা । আর এক পূর্ণবয়স্ক মানুষ হয়ে বুঝতে পারি, কেন ঠাকুমা সেদিন ছায়ানীড়কে ভূতের বাড়ি বলাতে আমাদের দিকে লাঠি নিয়ে তাড়া করেছিল।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল