১।সালটা ১৯৪৫, মাসটা এই আগস্ট। দুটি পরমানু বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল জাপান। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। কয়েক মাস পরে জাপান সরকার জনগনের উদ্দেশ্যে আবেদন জানালো প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় কাজের পরে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা বিনা বেতনে নিজেদের কাজ করতে। এই অতিরিক্ত সময়ের উৎপাদনের আয় যাবে সরকারী কোষাগারে। এই ভাবে প্রতিটি মানুষ এক বছর এক ঘণ্টা করে শ্রম দান করলে, সেই অর্থে দেশ তার ক্ষতি অনেকটাই পূরণ করে নিতে পারবে।জনগন পরদিন থেকেই অতিরিক্ত শ্রম দিতে শুরু করলো মহানন্দে, দ্বিগুন উৎসাহে। কোন প্রতিবাদ নেই, সরকারের ওপর সব দায় চাপিয়ে দেওয়া নেই। আছে দেশের কাজ করার প্রেরনা। এইভাবে কেটে গেলো একবছর। প্রধানমন্ত্রী জনগনকে ধন্যবাদ দিয়ে জানালেন আপনাদের সাহায্যে সহায়তায় দেশ তার ক্ষতি পূরণ করে নিতে পেরেছে। কাল থেকে আর অতিরিক্ত শ্রম দানের প্রয়োজন নেই। জনগন পরদিন সরকারের কাছে গনদাবী জানালো, তাদের শ্রমদানে দেশের উপকার হয়েছে জেনে তারা আপ্লুত, তাদের জীবন সার্থক। তারা আরও একবছর একই ভাবে শ্রমদান করতে চায়।যাতে দেশ বিশ্বের প্রথমসারির দেশে পরিনত হতে পারে।
ফাঁকিবাজিতে বাজিমাত করতে চাওয়া ভারতবাসী কী কোনদিন ভাবতে পারবে এই দেশপ্রেমের কথা।
২।দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের সময়। জার্মানি হঠাৎই আক্রমন করে বসলো রাশিয়াকে। রাশিয়ার জনগন দলে দলে যোগ দিলো লাল ফৌজে। বাড়িতে রইল কেবল বৃদ্ধ শিশু ও গৃহবধূরা। যুদ্ধের কারনে খাদ্য সমস্যা চরমে। সরকার থেকে রেশনে মাপ করে খাদ্য দিচ্ছে। দিনে মাথা পিছু ২০০গ্রাম করে গম। এই সামান্য খাদ্যে খিদে মেটেনা কারোরই। তবু কোন অভিযোগ নেই। ৭ দিন অন্তর রেশন দেওয়া হয়। সকাল থেকে লাইন পড়ে।এক বৃদ্ধ রেশন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তাঁর পুত্রবধূ ওজন করে বললেন হিসাবে গন্ডগোল করে খাদ্য বেশি দিয়ে ফেলেছে। বৃদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, অতিরিক্ত খাদ্য ফেরত দেবার জন্য। কার ভাগের খাদ্য নিয়ে এলেন, সেই ভেবেই তিনি কুণ্ঠিত।
দেশপ্রেমের এই নমুনা মাথা নত করে দেয়না শ্রদ্ধায়?দেশের মানুষের জন্য এই স্বার্থত্যাগ দেখে মনে হয়না, আমাদের এই দেখনদারি দেশপ্রেম কত তুচ্ছ?
৩। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবল। ব্রাজিলের মাঠে জাপানের সঙ্গে কলম্বি
য়ার খেলা। জাপান ১-৪ গোলে হেরে গেলো। কলম্বিয়ানরা আনন্দ করতে করতে স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যাবার পর দেখা গেল জাপানি সমর্থকরা তখনও গ্যালারিতে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলছে। হেরে গেলেও সারা বিশ্বের মন জিতে নিয়েছিলো তারা। তাদের চেতনা দিয়ে। দেশের মাথা উঁচু করেছিলো তারা।
৪। ইংল্যান্ড ফ্রান্স ঘুরে এসে একজন বলেছিলেন কোনো রাস্তায় কোনো প্লাস্টিক, পলিথিন পড়ে থাকতে দেখেন নি। কাউকে কখনো সিগন্যাল ব্রেক করতে দেখেন নি। বরং কেউ রাস্তা পার হতে হতে সিগন্যাল হয়ে গেলেও কোনো গাড়ি হর্ন দেয় না, বিরক্ত হয়না, নীরবে অপেক্ষা করে। যারাই সকালে কুকুর নিয়ে হাঁটতে যান,সাথে প্যাকেট থাকে কুকুর পটি করলে নিজেরাই তা তুলে নিয়ে যান। পশুপ্রেম দেশপ্রেমকে খর্ব করেনা। প্রচার করতে হয় না স্বচ্ছ দেশ গঠনের।
৫। জাপানের ট্রেনে যারা চাপেন, ট্রেন শেষ স্টেশনে যাবার পর নিজেরাই কোচ পরিষ্কার করে তারপর নামেন। এটা তাদের গর্ব।
৬। জাপান, আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশে দরজায় তালা না লাগালেও চলে। কারণ অন্যের জিনিস চুরি করবে এটা নাগরিকরা ভাবতেই পারে না।
আজ স্বাধীনতা দিবস। দেশপ্রেমের বন্যা চারদিকে। স্লোগান, হুংকার, বক্তৃতায় মাতবো আমরা। কিন্তু এই ধরনের দেশপ্রেম কি কোনদিন দেখাতে পারব আমরা?দেশরক্ষার কাজে অতন্দ্র আছেন সেনারা। কিন্তু আমরা যারা দেশগঠনের দায়িত্বে আছি তারা কতোটা পালন করি নাগরিক দায়িত্ব? কতোটা ভালোবাসি দেশকে?আসুন, কাল জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আগে প্রশ্ন করি বিবেককে।শপথ নিই জাতীয়তাবাদের হুজুগ নয়, দেশ গঠনের কর্তব্যে থাকবো অবিচল।আমরা নিশ্চয়ই পারবো। যেদিন পারবো, সেই দিন সার্থক হবে আমাদের স্বাধীনতা। সার্থক হবে আমাদের দেশপ্রেম। সেই আশাতেই থাকলাম। জয়হিন্দ।
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
চিত্র সৌজন্য : গুগল