চোর

প্রসূন রঞ্জন দাসগুপ্ত
3.9 রেটিং
4942 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 15 , গড়ে : 3.9]

পাঠকদের পছন্দ

আজ তিন্নি ও সুশোভনের বৌভাত। ঘরে প্রচুর ব্যস্ততা, সবাই দৌড়চ্ছে, সুশোভনই বা কোথায় কে জানে! তিন্নি জানলার ধারে গালে হাত দিয়ে বসে পুরনো কথা ভাবছে। দুবছর আগে দমদমের খাদ্যমেলায় প্রথম আলাপ সুশোভনের সাথে, সেখানে একটা ফুচকা খাওয়ার কম্পিটিশনে তিন্নি ফার্স্ট হয়েছিল সুশোভন সেকেন্ড, একটা ছেলে যে এভাবে মেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুচকা খেতে পারে তা তিন্নির কল্পনাতেও ছিল না। তিন্নিই প্রথম কথা বলেছিল, এক-দু কথায় গল্প শুরু হয়ে শেষে সারা সন্ধ্যেটাই কেটে গেছিল, জানা গেছিলো দুজনের প্রচুর মিল, দুজনের বাড়িই দমদম রোডে, দুজনেই ব্যাঙ্ক কর্মী, তিন্নি বেসরকারি সুশোভন সরকারী, আর দুজনের সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে দুজনেই অসম্ভব খাদ্যরসিক। তারপর ফোন নম্বর বিনিময়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সারারাত আড্ডা এবং কাজের ফাঁকে টুকটাক বেড়িয়ে পরা কোন সিনেমা দেখতে ও তারপর জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে। এভাবেই  একদিন দুজনেই বুঝতে পারলো যে দুজনে একসাথে বাকি জীবনটা দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায়, দুই পরিবারে জানানো হল, দুই পরিবারই অত্যন্ত আনন্দের সাথে উভয় কে মেনে নিয়ে ফাল্গুন মাসে বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। কিন্তু বিধি বাম, তারা ভুলে গেছিলেন মার্চে ব্যাঙ্কার দের বিয়ে হয় না, ইয়ার এন্ডিং এর এমন চাপ থাকে যে কেউই ছুটি পায় না এবং পেলও না। এবার বৈশাখে মানে এপ্রিলে কোন ঘরই পাওয়া যাচ্ছে না, সব নাকি 6 মাস আগে বুকিং, শেষে দুটি বাড়ি পাওয়া গেল বৃহস্পতি ও শনিবারের কম্বিনেশনে যেহেতু এই দুটি দিন অনেকেই আমিষ খাননা বলে বুকিং কম হয়। এরপর শপিং হল, দুই বাড়ি মিলে অনেক মজা হল এবং খাওয়াদাওয়াও হল, তিন্নি ও সুশোভন অনেক গবেষণা করে দুই বাড়ির মেনু ঠিক করলো। অবশেষে এল বিয়ের দিন, খুবই গরম তাড়াহুড়ায় AC বাড়ি পাওয়া যায় নি, সারাদিনের ধকল ও গরমে  দুজনেই কাহিল হয়ে পরল। আর তিন্নির যেটা সবচেয়ে খারাপ লাগলো অনেকেই আসেননি এমনকি ওর অনেক বন্ধু ও কলিগও আসেননি, অনেক খাবার নষ্ট হল, দুঃখে তিন্নি ঠিককরে খেতেই পারলো না।

আজ তিন্নি সুশোভনকে বলে দিয়েছে যে প্লেটের সংখ্যা কমাতে, নাহলে আবার শনিবার বলে অনেকে আসবে না, আবার সব নষ্ট হবে, আজ আবার তিন্নির প্রিয় আইটেম হয়েছে, ইলিশ মাছের পাতুরি। অতিথি আগমন সুরু হল, হাত জোর করতে করতে ও হাসতে হাসতে তিন্নির গালে ও কাঁধে ব্যথা হয়ে গেল, কত লোক রে বাবা! তিন্নির মাথায় তো পাতুরি ঘুরছে। কখন সবাই যাবে ও সে খেতে বসবে, হঠাৎ দেখে একি, ওর বন্ধু রাও এসে হাজির, তিন্নি অবাক, বলল “তোরা এখানে?” তারপর জানা গেল সুশোভনই ডেকেছে সবাইকে আর শনিবার বলে এসেওছে সবাই। তিন্নি খুব খুশি হল, এই সময় সুশোভন এক প্রস্থ অতিথি কে বিদায় জানিয়ে ওর পাশে এল, এবং ছবি তোলার পর সবাইকে নিয়ে খাওয়ার জায়গায় গেল, তিন্নি একা, পাশে ননদ, তিন্নি বলল “আমার খুব খিদে পেয়েছে দুটো পাতুরি নিয়ে আসবে ,” ননদ ও নতুন বউদির অনুরোধে সাথে সাথে প্লেটে দুটো পাতুরি সাজিয়ে নিয়ে এল , তিন্নি খেতে যাবে এমন সময় সুশোভনের বস ঢুকলেন , তিন্নি উঠতে গেল, হাত থেকে প্লেটটাই পরে গেল, তিন্নির মন খারাপ হয়ে গেল, এরপর ভাবলো নিজে গিয়েই নিয়ে আসি, বউ কে তো আর কেউ না করবে না, কিন্তু গিয়ে দেখে খাওয়ার জায়গায় তিল ধারনের জায়গা নেই, একজন পরিবেশক তো কার একটা গায়ে ঝোল ফেলে দিল, সে কি ঝামেলা, তিন্নি হতাশ হয়ে ওর এক বন্ধুকে বলল “ যদি পারিস আমার জন্য একটা পাতুরি নিয়ে আসিস”। পনের মিনিট বাদে বন্ধু টিস্যু তে মুড়িয়ে একটা পাতুরি দিয়ে গেল, তিন্নি কোনায় গিয়ে একটু মুখে দিয়ে ভাবল আহা! এই তো স্বর্গ, ঠিক এই সময়ে তিন্নির আদরের ভাইপো ভুটু পিসি পিসি করতে করতে এলো এবং পিসির কোলে উঠে, পিসির হাত থেকে পাতুরি টা নিয়ে খেয়ে নিল। তিন্নি ভাবল এবার সুশোভনকেই বলবে, কিন্তু কেন জানি বলতে পারলো না, আর আধ ঘন্টা ধরে ওকে দেখছেও না,  ঠিক করলো অনেক হয়েছে, এবার নিজেই যাই। এখন ভীর পাতলা এবং দেখা গেল যেখান থেকে পরিবেশন হচ্ছে সেখানেও মাত্র 2 জন বসে গল্প করছে, তিন্নি সন্তর্পণে দুটো পাতুরি ট্রে থেকে টিস্যু তে মুড়িয়ে তুলে নিল, এবং ভাবলো এবার বউ এর ঘরের বাথ্রুমে ঢুকে খাবো, যেন কেউ দেখতে না পায়।

সবে বাথ্রুমে ঢুকে দরজা আটকেছে, এমন সময় দরজায় ধাক্কা, প্রচণ্ড রেগে তিন্নি দরজা খুলে তিন্নি দেখে সুশোভন দাঁড়িয়ে আছে, বলল বাড়ির লোকেরা খেতে বসছেন, বউকে সবাই খুঁজছে। নিচে গিয়ে দেখে আরেক সমস্যা, ক্যাটারার কে প্লেট কমাতে বলা হয়েছিল এদিকে লোক এসেছেন হিসেবের থেকেও অনেক বেশি, খাবার প্রায় শেষ, ভাত আর মাংস ছাড়া প্রায় কিছুই নেই, তিন্নি দেখল সুশোভনের মা বাবাও অল্প ভাত ও দুটুকরো করে মাংস নিয়ে বসে আছেন, ওর খুব খারাপ লাগলো, ও দুটো পাতুরি দুজনের প্লেটে তুলে দিলো , জিজ্ঞেস করায় বলল পাশেই ছিল কেউ খেয়াল করেনি। তিন্নি আর সুশোভনও অল্প করে খেল , পেট তো ভরলই না উল্টে মাথা গরম হয়ে গেল। তিন্নি মনে মনে ঠিক করলো রাতে ফুলসজ্জ্যায় সুশোভন একবার কাছে আসার চেষ্টা করুক, ব্যাটাকে ধাক্কা মেরে খাট থেকে ফেলে দেবে।

রাত 1.30 নাগাদ ফটোগ্রাফারের উৎপাত শেষ হল। সবাই শুয়ে পরেছে, ওরা দুজন প্রথমবার রাতে এক ঘরে, এক খাটে একা, তিন্নির কত স্বপ্ন ছিল আজকের রাতটা নিয়ে কিন্তু এখন রাগে মাথা জ্বলছে ও খিদেয় পেট জ্বলছে, আর ব্যাটা সুশোভন খাটে না উঠে ওটা কি করছে? গিফটের প্যাকেট খুলছে কেন? পাগল হয়ে গেল নাকি? সুশোভন হাসিমুখে গিফটের থেকে একটা প্যাকেট তিন্নির হাতে দিয়ে বলল এটা তোমার, তিন্নি ভাবল কি না কি উপহার আছে, কিন্তু প্যাকেট টা খুলে বাক্রুদ্ধ হয়ে গেল, ওর মধ্যে আছে 6 টা পাতুরি। সুশোভন বলল “ আমি তো জানি এটা তোমার প্রিয় আইটেম আর লোকজন এর উপস্থিতি দেখে আগেই আন্দাজ করেছিলাম শেষ ব্যাচে খাবার কম পরবে তোমার জন্য সরিয়ে রেখেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তোমার জন্য নিজের রিসেপশনে নিজের রান্নাঘর থেকে চুরি করতে হল তার পর আবার দেখলাম তুমি নিজে যেদুটো পাতুরি নিজের জন্য সরিয়েছিলে সেগুল মা-বাবা কে দিয়ে দিলে, তাই এগুলো সব তোমার, আর যদি সম্ভব হয় 1-2 টো আমায় দিও, আমিও একটাও খাইনি “। তিন্নি বুঝতেই পারলো না কি বলবে, সুশোভনের বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলল। সুশোভন বলল আরে একি একি কাঁদছ কেন? তিন্নি শুধু একবার মুখ তুলে বলল, “তুমি না একটা যা তা, চোর একটা”।

©- প্রসূন রঞ্জন দাশগুপ্ত

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

  • Tamal Ghosh March 21, 2019 at 5:53 pm

    Ha ha mone holo jeno writer er nijer biyer golpo.

    • প্রসূন রঞ্জন দাসগুপ্ত March 27, 2019 at 8:42 am

      পুরোটাই কল্পনা

  • Sumit Karmakar March 23, 2019 at 12:03 am

    ভালো লাগলো লেখা টা পড়ে।
    স্বামী স্ত্রী এর মধ্যে প্রেম টা গভীর সেটা লেখাটার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।

  • নতুন প্রকাশিত

    হোম
    শ্রেণী
    লিখুন
    প্রোফাইল