|| ভাইফোঁটা ||

অর্পণ (শঙ্খচিল) ভট্টাচার্য্য
0 রেটিং
1010 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

আকাশের মুখ সকাল থেকেই খুশি খুশি। তবুও মনে হচ্ছে টিপ টিপ করে এক দু ফোঁটা পড়লে ভালো হয়।যদিও অসময়ের বৃষ্টি কারই বা ভালো লাগে?History নোটটাও মুখস্থ হতে চাইছে না,তাই জানলা দিয়েই বাইরের দিকে তাকিয়ে বাবান। মা,বাবা দিদুনবাড়ি গেছে,দিদুন খুব অসুস্থ। বাবানেরও ইচ্ছে ছিলো কিন্তু সামনেই যে টেস্ট ..! জীবনের প্রথম বোর্ড এক্সামটা হেলাফেলা করা চলবে না একদম। তারওপর বাবা বলেছে 85% পেলেই মোবাইল …এ সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়…!

তবে আজ মনটা বই খাতায় টিকছেই না। আকাশের দিকে তাকালেই কেমন যেন একটা অজানা মন খারাপ দানা বাঁধতে চাইছে। সকাল থেকেই অনেক শাঁখ আর উলুর আওয়াজ পেয়েছে বাবান।কিন্তু কি আছে আজ মনে পড়ছে না…এই তো সবে কালীপুজো গেলো…।

ক্যালেন্ডারটা পড়ার টেবিলের সামনেই ঝোলনো। চোখ রাখতেই চারদিটা যেন অন্ধকার হয়ে আসে। আজ তো ভাইফোঁটা…!! চোখের কোণায় জলটা অজান্তেই আসে । তারপর ধীরে ধীরে মায়ের ঘরে আসে বাবান। ড্রয়ার থেকে খুব যত্নে রাখা দোতলার ঘরের চাবি নিয়ে উঠে আসে ওপরে।

অনেকদিন হয়ে গেলো ঘরটা আর খোলা হয়না।চাদরে মোড়া আসবাবে ধুলো জমেছে। তানপুরা আর রবীন্দ্ররচনাবলী গুলো শোকেসে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। ঠিক চার বছর আগেও তানপুরাটায় সুরের মূর্ছনা জাগতো সন্ধ্যে হলেই।চার বছর আগের সেই দিনটা…. ভাইফোঁটাই ছিলো সেদিন। তাও বাবান মুখ গোমড়া করে বসেছিলো।দিদির অপারেশানটা আজই করতে হতো ডাক্তারকাকুকে? ধুর!! ফোঁটা নেওয়াই হলো না… সেদিনের বাচ্চা বাবান অভিমানে ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে জানে না…

ঘুম ভেঙেছিলো মায়ের কান্নায়। বাড়ি ভরতি লোক। দিদিকে সাদা চাদরে মুড়ে শোয়ানো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দিদিকে নিয়ে চলে গেছিলো সবাই…..
আজ দিদির মালা পড়ানো ছবিটায় ধুলো জমেছে। সব ছাপিয়ে বাবানের চোখ জুড়ে এখন শুধুই দিদির হাসিটা…।

বৃষ্টিটা এবার জোড়ে পড়ছে বেশ। কিন্তু বৃষ্টির আওয়াজটাও ছাপিয়ে বাবানের কানে ভাসছে-

‘কিরে স্নান করেছিস? যা স্নান করে নে। ফোঁটা দেব তো। এখনো শুয়ে আছিস।’
“হুঁহ। ফোঁটা নেব না।”
‘কেন? কি হলো?’
‘লাল মিষ্টি নেই। একটা কালোজাম বা পান্তুয়া আনতে পারতিস। তা না কি সব মিষ্টি অনলি। আমি মিষ্টির প্যাকেট খুলে দেখেছি।’
“লাল মিষ্টি? হুঁহ আমি আমার পছন্দের মিষ্টি এনেছি। যেটা এনেছি সেগুলো খাবি।”
‘খাব না। যা।’
‘খেতে হবে না। যা। আমি মাকে বলছি দাড়া।’
‘বল গিয়ে। ভয় পাই নাকি? তুই জানিস আমার লাল মিষ্টি ভালো লাগে।’
‘বেশ। আমি তোকে ফোঁটা দেব না। মা লুচি ভাজছে। সেটাও পাবি না। দাড়া মা কে বলি…ও মা…মা…’
‘গাট্টা খাবি দি ভাই…’

আসন পাতা। পাশে ধান দূর্বা। চন্দন। মিষ্টির প্লেট। জলের গ্লাস। প্রদীপ। বড্ড রাজকীয়। আর বোনের হাতের চন্দনের ফোঁটায় মুখ বিড়বিড় করে না শুনতে পাওয়া-
‘ ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমদুয়ারে পড়লো কাঁটা…… 💚 ‘ ।।

©শঙ্খচিল

চিত্র সৌজন্য : গুগল

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

নতুন প্রকাশিত

হোম
শ্রেণী
লিখুন
প্রোফাইল