পিরিয়ড নারীত্বের এক অপ্রকাশিত যুদ্ধজয় !!

শাব্দিক প্রতিবেদন
0 রেটিং
3625 পাঠক
রেটিং দিন
[মোট : 0 , গড়ে : 0]

পাঠকদের পছন্দ

লেখক – হিমাদ্রি শেখর পাল

                 পিরিয়ড- নারীত্বের এক অপ্রকাশিত যুদ্ধজয়

পিরিয়ড ! হ্যাঁ জানি পিরিয়ড বলতেই সবার মাথায় তক্ষনাৎ ভেসে উঠলো “ফেবু পিরিয়ড কবি” কিংবা “প্যাড এর উপর আলতা, জবা ফুল ওয়ালা ছবি”, পিরিয়ড নিয়ে লিখে কেউ কারণে আবার কেউ অকারনে শুনছেন কটুক্তি। আর সচেতনতা? না সেটি আবার ফিরে যেতে বসেছে মধ্যযুগীয় জড়তায়। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে কিছু মানুষ যারা এ বিষয়ে লিখে সত্যিকারের সচেতনতার বিস্তার করছিলেন তাদের কলম আজ আটকে গেছে। একসময় পিরিয়ড মেয়েদের সবার থেকে অচ্ছ্যুৎ করে আলাদা করে রাখত , মাঝে সচেতনতা বাড়লেও আজ তা নিয়ে আলোচনাটুকুও হাস্যকর কিংবা অস্বস্তিজনক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে। তাহলে সমাজের পরিবর্তন কি হয়নি? অবশ্যই হয়েছে তখনকার অচ্ছুৎ থেকে আজকের হাস্যরসাত্মক টপিক হয়ে উঠেছে পিরিয়ড। আগেকার গোঁড়া রক্ষনশীল সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে শুরু করে আজ লড়াই এসে দাড়িয়েছে সহ-নাগরিকদের তাচ্ছিল্যের বিরুদ্ধে। তবে পিরিয়ডে নারী বন্দনার থেকেও যেটা বেশি জরুরি সেটা হল পিরিয়ড সম্বন্ধে স্পষ্ট জ্ঞান,সঠিক আত্ম-পরিচর্যা এবং প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করা।পিরিয়ড একজন মহিলার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক কারণ এটি তার শরীরকে গর্ভধারণ করতে এবং শিশুদের বহন করতে সক্ষম করার জন্য প্রস্তুত করে ।তাই মাসিক চক্র কিভাবে নারীত্বের পথে যাত্রা শুরু করে সেই বিষয়ে অবগত হওয়া এবং সুরক্ষিত থাকার জন্য কোন কাজ করা উচিত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।তবে চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক উক্ত বিষয়গুলি। 

  পিরিয়ড কী? 

মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড মেয়েদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।কেননা মাসিক নিয়মিত ও সঠিকভাবে হওয়ার অর্থ হচ্ছে সে নারী সন্তান ধারণে সক্ষম। এক সময়ে মাসিককে অপবিত্র ও নোংরা বলে মনে করা হত। এই দৃষ্টিভঙ্গী অনেকটা পরিবর্তন হলেও এখনো এ নিয়ে মেয়েদের এবং মায়েদের মধ্যে অনেক ভুল ধারনা বিদ্যমান। এখনো বেশিরভাগ মায়েরা মনে করেন এটা হল শরীরের দূষিত রক্ত, যা যত বেশি বের হয় ততই ভালো।

প্রতি চন্দ্রমাস পরপর কিছু হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে।মাসিক চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। 

একজন নারীর পিরিয়ড তাকে প্রতি মাসে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। আরেকটু সহজ ভাষায় বললে, প্রতিমাসে মেয়েদের গর্ভাশয় তার বাইরের আবরণটাকে মজবুত করে তোলে যাতে সে গর্ভবতী হওয়ার পর বাচ্চাকে আশ্রয় দিতে পারে। কিন্তু পরে যখন ভ্রূণ নিষিক্ত হয় না তখন সে তার সেই শক্ত আবরণটাকে ছিঁড়ে ফেলে সেটা সেই রক্তের সাথে বের হয়ে যায় এবং আবার পরের মাসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে।এই পুরো প্রক্রিয়া গড়ে ২৮ দিনের মধ্যে হয়।

একটি মেয়ে সাধারণত কখন তার প্রথম পিরিয়ডে প্রবেশ করে ?

প্রথম পর্যায় সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে শুরু হয় । তবে কিছু মেয়েদের তাড়াতাড়ি ১০ বছর বয়সের মধ্যে অথবা ১৫ বা ১৬ বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে । প্রথম মাসিকের বয়স কখনও কখনও নির্ভরশীল হতে পারে কখন তার মায়ের প্রথম মাসিক হয়েছিল তার উপরে । 

মেনোপজ কখন শুরু হয়?

একজন মহিলার যদি ১২ মাস ধরে মাসিক না হয় তাহলে মেনোপোজ বলে মনে করা হয় । মেনোপোজ আসার জন্য মহিলাদের গড় বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে । যদিও  এর  ব্যাতিক্রম  হিসেবে কিছু নারী তাদের ৩০-এর দশকে মেনোপজে প্রবেশ করে এবং অন্যরা ৬০-এর দশকে প্রবেশ না করা পর্যন্ত মেনোপজ পান না।

  পিরিয়ড ফেজ : এর তিনটি ধাপ রয়েছে-

  ১) মেন্সট্রুয়াল ফেজ:  এই ফেজে যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী এই রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া              

  লোহিত রক্তকনিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কনিকা, জরায়ুমুখের মিউকাস, জরায়ুর নিঃসৃত আবরণী,   

  ব্যাকটেরিয়া, প্লাজমিন, প্রস্টাগ্লানডিন এবং অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে থাকে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের 

  যৌথ ক্রিয়ায় এই পর্বটি ঘটে।

  ২) প্রলিফারেটিভ ফেজ: এই ফেজ ৮-১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শুধু ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এটি হয়।     

  এই সময় জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বাণুকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্ততি নেয়।

৩) সেক্রেটরি ফেজ: সবচেয়ে দীর্ঘ ফেজ, প্রায় ১০-১৪ দিন। একে প্রজেস্টেরন বা লুটিয়াল ফেজ-ও বলা হয়। এটিও ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন উভয় হরমোনের যৌথ কারণে হয়। এই সময় নিষিক্ত ডিম্বাণুর বৃদ্ধির জন্য জরায়ু সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়ে থাকে| ডিম্বাশয়ের কোনো ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হলে জরায়ু আবার মেন্সট্রুয়াল ফেজ-এ চলে যায়। এভাবেই পূর্ণ বয়স্ক মেয়েদের ঋতুচক্র চলতে থাকে।

স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন ব্যবহারের নিয়ম:

একটা সময় ছিল যখন মেয়েরা পুরানো বা ছেঁড়া নোংরা কাপড় এই সময় ব্যবহার করত। আজও যা গ্রামাঞ্চলচলে প্রচলিত।এমনকি কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বিচুলি ব্যবহার করতে বাধ্য হয় মেয়েরা। এর ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। এজন্য অবশ্যই প্যাড বা ন্যাপকিন ব্যবহার করা টা জরুরি। 

বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড-এর, বিভিন্ন ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড পাওয়া যায়। যে ধরনেরই হোক না কেন তা কোনভাবেই দীর্ঘক্ষণ পরা উচিত নয়। পিরিয়ড-এর প্রথম দুই-তিন দিন একটু বেশী রক্তক্ষরণ হয়, তাই দুই ঘন্টা পরপর প্যাড পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যদি প্যাড শুকনো না থাকে অর্থাৎ উপরের অংশে রক্ত ভেসে আসতে দেখা যায় তবে সাথে সাথে তা চেঞ্জ করা উচিত এবং কোনভাবেই চার ঘণ্টার বেশি একটি প্যাড পরা উচিত নয়।

কিন্তু চতুর্থ বা পঞ্চম দিন থেকে রক্তস্রাবের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। এসময় অনেকেই আছেন যারা একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কম ব্লিডিং হয়েছে ভেবে দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করেন। এতে করে সেই রক্ত দ্রুত শুকিয়ে সেখানে জীবানুর আক্রমণ হয় যা যোনিপথের সংস্পর্শে এসে যৌনাঙ্গের নানান রকম অসুখ ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি সৃষ্টি করে। বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে মেয়েরা চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে স্যানিটারি ন্যাপকিন পরে থাকে। কিন্তু এ ধরনের প্যাড দীর্ঘসময় শুকনো রাখার জন্য ‘সেলুলোজ জেল’ নামক উপাদান ব্যবহার করা হয় যা জরায়ুমুখের ক্যান্সার-এর জন্য দায়ী। তাই এ বিষয়ে নিজ দায়িত্বে সচেতন হতে হবে।

পিরিয়ডের সময় করণীয়:

১. এ সময়ে মেয়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর আয়রন ও ফোলিক আ্যসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। যেমন: দুধ, ডিম, শাকসবজি, মোচা, থোর ইত্যাদি খেতে হবে।

২. সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

৩. প্রর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করতে হবে।

৪. এ সময় কাপড় বা অন্য কিছুর পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উত্তম।                                    ৫. ন্যাপকিন ৪-৬ ঘণ্টার বেশি রাখা উচিত নয়।

৬. মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মনে রাখতে হবে, অস্বাস্থ্যকরভাবে ন্যাপকিন ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে জরায়ুর ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আর এ সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করলে দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতাসহ নানা সমস্যা। তাই পরিবারের নারী সদস্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখন থেকেই সতর্ক হন।

পিরিয়ডের সঙ্গে সংযুক্ত কিছু সমস্যা :

যন্ত্রণা, প্রিমেনস্ট্রিয়াল সিন্ড্রোম (পিএমএস), খিঁচ লাগা এবং শরীরের ব্যথা ব্যতীত আপনার মাসিকের সাথে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন-

১) মেনরোজিয়া :

এই পাঁচ থেকে সাত দিন স্থায়ী হতে পারে যে ভারী রক্তপাত তাকে এই নাম দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেসটেরোনের মত হরমোন স্তরের ভারসাম্যহীনতার কারণে মেনরিজিয়া হয় । যোনিতে সংক্রমণ, প্রদাহযুক্ত সার্ভিক্স, হাইপোথাইরয়েডিজম, গর্ভাশয়ে ফাইব্রয়েড ইত্যাদি অবস্থা কারণেও হতে পারে ।

২) আমেনোরিয়া :

এছাড়াও একে অনুপস্থিত মাসিক বলা হয়, আপনি বিভিন্ন কারণে আপনার মাসিক না পেতে পারেন । প্রাথমিক আমেনোরিয়া হয় যখন আপনি ১৬ বছর বয়স হওয়ার পরও আপনি ঋতুস্রাব না পান । এটি বয়ঃসন্ধিকালে বিলম্ব, প্রজনন সিস্টেমের জন্মগত ত্রুটি বা পিটুইটারি গ্রন্থিতে সমস্যার কারণে হতে পারে । সেকেন্ডারি আমেনোরিয়া হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যানোরেক্সিয়া, ডিম্বাশয়ে সংক্রামক, গর্ভাবস্থা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা অথবা আকস্মিক ওজন বৃদ্ধি বা কমার কারণে হতে পারে ।

৩) ডেসমেনোরিয়া :

ডেসমেনোরিয়াতে আপনার পিরিয়ডের সময় আপনি গুরুতর ব্যথা অনুভব করতে পারেন । পিএমএসের সময় খিঁচ লাগা স্বাভাবিক কারণ গর্ভাশয় প্রসারিত হয় এবং সংকুচিত হয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্যাথা হয় । এটি পেলেভিসে ব্যথা, ফাইব্রয়েড, বা এন্ডোমেট্রিওসিস (জরায়ুতে টিস্যু অস্বাভাবিক বৃদ্ধি)-এর প্রদাহের কারণে হতে পারে ।

  পিরিয়ড এবং মুড সুইং : 

       পিরিয়ড হলে আসলে মেয়েদের শরীরে হরমোনের নানারকম পরিবর্তন হয়। মেয়েদের শরীরে একটা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হল           ইস্ট্রোজেন।ইস্ট্রোজেন আমাদের মুডকে ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। পিরিয়ড শুরু হলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নেমে যায়। ফলে তখন মুড ঘন ঘন অফ হয়। মেজাজ ঠিক থাকে না। এছাড়া পেটে ব্যথা তো একটা সাধারণ সমস্যা। এসময় কোনো কাজও করতে ইচ্ছে করে না। অল্পেতেই মাথা গরম হয়ে যায়। রেগে গিয়ে আপনার পার্টনার, হতে পারে তিনি আপনার স্ত্রী বা খুব কাছের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী–হয়ত আপনাকে এমন কিছু কথাও শুনিয়ে দিলেন যা আপনার প্রাপ্য নয়। এছাড়া এসময় হরমোনের ওঠানামার কারণে মস্তিষ্কে সেরাটোনিনের মাত্রাও কমে যায় যার ফলে ডিপ্রেশন, মন খারাপ ও ইমোশনাল নানারকম সমস্যা হতে পারে। এতে অসহিষ্ণু হবেন না। বরং মেয়েটির প্রতি সহানুভূতিশীল হন। বোঝার চেষ্টা করুন যে সে কেন এরকম আচরণ করছে বা কোথায় তার কষ্ট হচ্ছে। আপনি পালটা রেগে যাবেন না। বরং তাকে সামলান। তাকে বুঝুন। সম্ভব যদি হয় তাহলে তার পিরিয়ডের দিন মনে রাখুন। কাজের চাপের মাঝে তাকে যতটা সম্ভব সঙ্গ দিন। আপনি যদি অফিস যান, তাহলে সেখান থেকে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে ফোন করে খবর নিন। তবে বারবার জিজ্ঞেস করবেন না পেট ব্যথা হচ্ছে কিনা। কারণ পেট ব্যথা এইসময়ের একটা কমন সমস্যা। বারবার তাই এটা জিজ্ঞেস করলে মেয়েদের ইরিটেশন আরও বেড়ে যায়। বরং ওই নিয়ে কথাই বলবেন না। অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলুন। আপনার সঙ্গিনীকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। এসময় মেয়েদের খেতে ইচ্ছেই করে না। তাই আপনি চেষ্টা করুন তার পছন্দের খাবার এনে তাকে খাওয়াতে।

              এই খাবারগুলি মুড ভালো করতে সাহায্য করে-

১)ডার্ক চকোলেট :মুড ভালো করার সর্বোত্তম খাবার হল ডার্ক চকোলেট।এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মস্তিষ্কে সেরাটোনিন মাত্রা বাড়িয়ে মুড ভালো করে; এছাড়াও, 

২)তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ

৩)আয়রন সমৃদ্ধ শাক সবজি

৪)ফলমূল ইত্যাদি। 

 আপনার কখন একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত?

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আপনার একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে:

১) আপনি ১৫ বছর বয়সেও আপনার প্রথম মাসিক না হলে ।

২) আপনার স্তন বিকশিত হয়নি বা আপনি স্তন বিকাশের ৩ বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়নি ।

৩) মাসিক ৯০ দিনের জন্য হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ।

৪) অনিয়মিত মাসিকচক্র ।

৫) আপনার সাত দিন ধরে রক্তপাত হয় ।

৬) আপনার প্রচুর রক্তপাত হয় এবং প্রতি দুই ঘন্টার মধ্যে একাধিক প্যাড বা ট্যাম্পোন ব্যবহার        করতে হয় ।

৭) আপনার দুটি মাসিক সময়ের মধ্যে রক্তপাত হয় ।

৮) আপনার মাসিককালে গুরুতর খিঁচ এবং ব্যথা অনুভব করেন ।

৯) আপনাত ট্যাম্পোন ব্যবহার করার পরে জ্বর হয় ।

পিরিয়ড নিয়ে বহুল প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা :

পিরিয়ড নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা এবং কুসংস্কার চিরকাল ধরে সমাজে বিদ্যমান।লজ্জা আর কুসংস্কারে আমরা আমাদের শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলি।দেখে নেওয়া যাক বহুল প্রচলিত কিছু কুসংস্কার ও তাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-

১)চুল ধোয়া :

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হলে বলা হয়, মেয়েদের দু’দিন চুল ধোয়া উচিত নয়। এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং চিকিৎসকরা বলে থাকেন মাথায় জল দিলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটা কমে এবং এতে আরাম পাওয়া যায়৷

২)পিরিয়ডের দিনে সাঁতার :

আগেরকার দিনে পুকুরে স্নান করতো অনেকেই। তাই হয়ত জল নোংরা হওয়ার ভয়ে এ নিয়ম চালু হয়েছিল, মাসিক হলে স্নান করা যাবে না। কিন্তু এখনকার দিনে সে ধরনের কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি ট্যাম্পন পরে অনেকে সাঁতারও কাটে এ সময়ে।

৩)অচ্ছুৎ ও অভিশপ্ত :

মাসিকের চারদিন মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, যেন তারা অচ্ছুৎ এবং অভিশপ্ত। তাদের তুলসী গাছে জলও দিতে দেয়া হয় না। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা, তাদের দেয়া জলে অশুদ্ধ হয়ে গাছ নাকি মরে যাবে । এমনকি অনেক বাড়িতে আচার ছুঁতে দেয়া হয় না মেয়েদের, এতে নাকি আচারও নষ্ট হয়ে যাবে যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।

৪)রান্নাঘরে ঢুকতে মানা :

অনেক হিন্দু পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না। বিশেষ করে যুক্ত পরিবারে এ ধরনের কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে এতে খাবার দূষিত হয়। এই ধারণা একেবারেই ভুল৷

৫)বিছানায় শুতে না দেয়া

অনেক পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের বিছানায় শুতে দেয়া হয় না। মাটিতে শুতে বলা হয়৷ কোনো কোনো পরিবারে তো ঘরে নয়, বরং বাইরে, অর্থাৎ বারান্দায় এমনকি গোয়ালঘরে শুতে দেয়া হয় তাদের৷ অথচ এতে যে ঐ মেয়েটির কষ্ট আরো বেড়ে যায়, তা কেউই লক্ষ্য করে না।

৬) অপবিত্র রক্ত :

অনেকেই বলে থাকেন, মাসিকের রক্ত অপবিত্র। তাদের ধারণা এই রক্ত দিয়ে জাদু, ঝাড়ফুকও করা যায়। আশ্চর্যের বিষয়, শুধুমাত্র অশিক্ষিত পরিবারে নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এ ধারণা প্রচলিত আছে। অতএব, আমাদের আজকের যুগে এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

কোনো নতুন খবর আছে নাকি? বিয়ের পর নতুন বউকে এ কথা জিজ্ঞেস করে থাকেন অনেকেই। এতে কোনো লজ্জাবোধ না থাকলেও ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই। তাছাড়া এ মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কারও৷আমাদের এই লজ্জা আর কুসংস্কার ভাঙতে প্রয়োজন ডাক্তার পুরুষ হোক বা মহিলা হোক তাদের সাথে সমস্যার কথা পরামর্শ করা। প্রয়োজন একজন আরেক জনকে বলা, যেন সমস্যার সমাধানটি বের হয়ে আসে।ফার্মেসির দোকানে একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গেলে কত রকম সংকোচ, বক্রদৃষ্টি উপেক্ষা করে তবে কেনা যায় তা একটি মেয়েই জানে। অর্থাৎ ড্রাগ সেবন এর মতো পিরিয়ডকে একটি নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। 

এই নেগেটিভ আচরণের সিংহভাগই আসে ছেলেদের দিক থেকে।এর একমাত্র কারণ হল পিরিয়ড সম্বন্ধে তাদের ছোট থেকে কেউ শিক্ষা দেয় না। স্কুল-কলেজের মেয়ে সহপাঠীদের কাপড়ের দাগ ও আচরণগত পরিবর্তন থেকে ছেলেরা আবিষ্কার করে সেই “আদিম গোপন যৌনরসাত্মক রহস্য” , আর ঠিক এই অজ্ঞতার জায়গা থেকে শুরু হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই নেগেটিভ আচরণের বীজ রোপণ! কিন্তু কাল এরাই তো হবে কারো স্বামী, কারো বাবা, আবার কারো দাদা।তাদেরও তো তাই পিরিয়ড সম্পর্কে জানাটা সমানভাবে জরুরি। 

‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউকে’ নামক মার্কিন যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, স্কুলের ছেলে ও মেয়েদেরকে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড সম্পর্কে এক সাথে শিক্ষা দান করা উচিত এবং এ নিয়ে কথা না বলাটাই ক্ষতিকর, তাই শ্রেণীকক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

এই প্রতিষ্ঠানটি ১৪ থেকে ২১ বছর বয়েসের মেয়েদের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, অর্ধেক মেয়েই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করে। মেয়েদের প্রতি সাতজনের একজন বলেন, তাদের যখন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয় তখন তারা জানতেন না যে এটা কি হচ্ছে। এই সমীক্ষায় আভাস পাওয়া যায় যে মাত্র ২৪ শতাংশ মেয়ে তাদের পুরুষ বন্ধুদের সাথে এ বিষয়ে নি:সংকোচে কথা বলতে পারে।

এদের একজন নিনা, যার ১২ বছর বয়েসে পিরিয়ড শুরু হয়। নিনা বলেন, ‘আমি নিচে তাকিয়ে দেখলাম রক্ত। দেখে আমার তো প্রায় পাগল হবার দশা। তখন আমার মা আমাকে একটা স্যানিটারি টাওয়েল দিলেন, কিন্তু বিশেষ কিছু বললেন না। আমি ভাবছিলাম, যদি এর ফলে আমি মারা যাই তাহলে কি হবে।’

ইনেস (১৮) পিরিয়ড নিয়ে তার চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কথা জানান,তাকে এই নিয়ে তার ছেলে বন্ধুদের সাথে কথা বলতেও গলদঘর্ম হতে হয়েছে,তিনি জানান – “ আমি একটা স্যানিটারি টাওয়েল কিনতে গেলাম, কিন্তু ছেলেরা এটা বুঝে ফেললো , তারা বলতে লাগলো, আমরা বাতাসে লোহার গন্ধ পাচ্ছি। আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। ”

আজকাল অবশ্য কিছু মানুষকে সচেতনতা প্রসারের উদ্দেশ্যে স্যানিটারি প্যাড বিনামূল্যে ভেন্ডিং মেশিন এ করে পার্ক, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জায়গায় রাখছেন মা-বোনেদের জন্য যা সত্যিই প্রশংসার উর্ধ্বে। 

কিন্তু এখন আসল কথা হল,এত শারীরিক কষ্ট, প্রতিবন্ধকতার জন্য মেয়েরা কি থেমে গেছে? না থামেনি তারা, মায়েরা সংসারের সব কাজ সম্পন্ন করেন কাউকে বুঝতে অবধি দেন না কষ্ট। সত্যিই এ যেন নারীত্বের এক অপ্রকাশিত যুদ্ধজয়! মেয়েরা স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্রে সকলের সাথে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে।তারা আরও এগিয়ে যাবে, কিন্তু দরকার অনুকূল পরিস্থিতি, পরিবর্তিত সমাজ আর সংকোচবিহীন এক মানসিকতা, যা ছেলেদের পিরিয়ড নিয়ে কবিতা লেখা কিংবা প্যাডের ওপর আলতা-জবা ফুল দিয়ে ছবি তোলার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন:

রেটিং ও কমেন্টস জন্য

  • chitta saha August 20, 2021 at 10:41 pm

    খুব ভালো লেখা । পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম
    ধন্যবাদ

  • নতুন প্রকাশিত

    হোম
    শ্রেণী
    লিখুন
    প্রোফাইল